• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> বাংলাদেশ
> কুমিল্লা

একাত্তরে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে বয়ে যায় রক্তগঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২: ২৪
logo

একাত্তরে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে বয়ে যায় রক্তগঙ্গা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২: ২৪
Photo

সময়টা ছিল ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক বিকেল চারটা ৩০ মিনিট। সূর্য পশ্চিম আকাশে ক্রমাগত হেলে যাচ্ছে। বিকেলের আলোয় আকাশ ছিল ফকফকা। হঠাৎ জানালায় উঁকি দিয়ে দেখি মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এ কে এম সামসুল হক খান ও পুলিশ সুপার মুন্সী কবীর উদ্দিনকে মাঠের মধ্যে দাঁড় করানো হয়েছে।

এরপর তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। চোখের সামনে ওই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে কুঁকড়ে যাই । ওই ঘোর না কাটতেই মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে পাকহানাদার বাহিনীর এক সদস্য। তখন আমার সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন সগির আহমেদ সিদ্দিকী। আকস্মিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে আমাদের ওপর গুলি চালায়। মুহুর্তের মধ্যে ওই ঘর রক্তে ভেসে যায়। তখন আমার ডান চোখের কোণায়, ডান হাতের কব্জি ও পিঠে তিনটি গুলি লাগে। আর অন্য দুইজন মারা যান। এরপর আহত অবস্থায় টিপরা বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে বুড়িচং থানা এলাকা দিয়ে ভরাসার বাজার হয়ে চলে আসি।

ময়নামতি সেনানিবাসের সেই দুঃসহ সময় (২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) মনে এলে, এখনও ভাবি কত লাশ ফেলা হয় সেখানে। পুরো সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের কঙ্কাল। বাংলাদেশের আর কোন সেনানিবাসে এত বধ্যভূমি আছে কিনা আমার জানা নেই। কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের হত্যাযজ্ঞের জীবিত সাক্ষী গোলন্দাজ বাহিনীর বাঙালি সেনা কর্মকর্তা লে. ইমামুজ্জামানের স্মৃতিতে এইসব কথা ভেসে আসে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ময়নামতি সেনানিবাসের এমআর চৌধুরী গ্রাউন্ডের পাশে রয়েছে গণকবর। সেখানে আনুমানিক ৩০০ সেনা সদস্য, ২৪ জন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও শত শত বাঙালিকে গুলি করে হত্যার পর গর্তে ফেলা হয়। ওই গর্তেই মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ কুমিল্লা শহর এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মাটি চাপা দেয়। সেখানকার গণকবরে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। ওই স্মৃতিসৌধে ১০৩ জনের নাম লেখা আছে। অন্যদের সম্প্রতি সরেজমিনে সেনানিবাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেনানিবাসের ভেতরে স্কোয়াশ নামের দুই কক্ষেও একটি ভবন রয়েছে। ওই ভবনে বহু লোককে এনে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। কালের সাক্ষী হিসেবে ভবনটি এখনও রয়েছে। ওই স্কোয়াশের চারপাশে বহু স্থানে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বহু নিরীহ মানুষের লাশ। পরবর্তীতে সেগুলোকে গণকবর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এ ছাড়া সেনানিবাসের ১১৮ ফিল্ড ওয়ার্কশপ এলাকায় রয়েছে গণকবর। ওই গণকবরকে সংরক্ষণ করে শহীদদের এখানে রয়েছে ৫৩ জন শহীদের নাম। ওই নাম পাথরে খোদাই করা হয়েছে। দরজাবিশিষ্ট একটি টর্চারসেল রয়েছে। স্মৃতিকে অমলিন রাখা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে এক কেবল তাই নয়, ময়নামতি সেনানিবাসের ব্রিগেড দপ্তরে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধরে এনে রাখা হয়। একাত্তরের ২৯ মার্চ রাতে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকেও ওই স্থানে আনা হয়। পরবর্তীতে তাঁর আর হদিস মেলেনি। এখানকার বধ্যভূমিতেই জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানের লাশ রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিগেড দপ্তরের চারপাশে রয়েছে বহু গণকবর।

লে. ইমামুজ্জামান বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনীতে থাকা তাঁদের কর্মকর্তারা বাঙালি নিধনের পায়তারায় মেতে ওঠে। ওই সময় কুমিল্লা সেনানিবাসে আমি যোগদান করি। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২০ বছর। ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত এ সেনানিবাসে যা দেখেছি, তা এখনও চোখে ভাসে। কুমিল্লা শহর থেকে ট্রাকে করে বেসামরিক লোকজনকে ধরে এনে মোটর গ্যারেজে রাখা হত। ৩০ মার্চ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি আগরতলায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেই। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে কুমিল্লার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নোয়াখালীতে যুদ্ধ করি। পরবর্তীতে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ফেনীর বিলোনিয়া হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যাই। এখনও বেঁচে আছি, এটাই বড় কথা । সেনানিবাসের গণকবরগুলো আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করে ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ করা দরকার।'

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, 'ময়নামতি সেনানিবাসে অসংখ্য গণকবর রয়েছে। এ সব গণকবরে নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালি ও সেনা কর্মকর্তাদের মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ গুলোর আরও সংরক্ষণ হওয়া দরকার। একই সঙ্গে টর্চারসেলগুলোর ইতিহাসও নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার।'

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক আবুল কাশেম হৃদয় তাঁর একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘ কুমিল্লা সেনানিবাসের ব্রিগেড মসজিদের উত্তর পাশে, হেলিপ্যাডের দক্ষিণের নিম্নভূমিতে, ব্রিগেডিয়ারের বাসার পশ্চিমে, ব্রিগেড মসজিদের পশ্চিমে স্কোয়াশ রুমের আশপাশে, একটি টিলার পাদদেশে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থ গর্তে তাঁদের (এখানে হত্যা করা লোকদের) মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ সময় মোট ১২ টি গণসমাধি খনন করে প্রায় সাত হাজার নর কঙ্কাল পাওয়া যায় বলে মুক্তিযুদ্ধের পর তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুর রহমান কুমিল্লার অন্তত চারজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত একাত্তরের ২২ মার্চ থেকে ময়নামতি সেনানিবাসে পাকিস্তানের কমান্ডো ও গোলন্দাজ বাহিনী চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারদিকে পরিখা খনন করে। তখনই তারা বাঙালি অফিসারদের কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে।

একই সঙ্গে বাঙালি সেনা অফিসারদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তাঁরা সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কুমিল্লা সেনানিবাসের ১৪নং ডিবিশনের কার্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করা হয়। এরপর সেখান থেকে ২৫ মার্চ কালো রাত্রে কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। ২৬ মার্চ সকালে ৫৩ ব্রিগেড গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান লে. কর্ণেল ইয়াকুব মালিকের নির্দেশে সেনানিবাসে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এক্ষেত্রে নেতৃত্বে ছিলেন চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাক কমান্ডিং কর্মকর্তা লে. কর্ণেল খিজির হায়াত খান, ব্রিগেডিয়ার আসলাম, অন্য শাখার নেতৃবৃন্দ। তাঁরা একে একে জেলা প্রশাসক এ কে এম সামসুল হক, জেলা পুলিশ সুপার কবির উদ্দিন আহমেদ ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও কুমিল্লা শহর থেকে লোকজন এনে সেনানিবাসে হত্যা করে।

২৫ মার্চ কালো রাত্রি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ছাড়া ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের এনে রাখা হয়। এ ছাড়া শহর থেকেও নারীদের এনে ওই প্রতিষ্ঠানে বন্দি রাখা হয়। ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বন্দিশিবির। সেখানে অন্তত ৭০০ জন নারীকে বন্দি রাখা হয়। বন্দিশিবিরে তখন নারীদের আর্তচিৎকার শোনা যেত।’

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে পাকহানাদার বাহিনী। ১৭ ডিসেম্বর সকালে ময়নামতি সেনানিবাসে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার শেখ মঞ্জুর হোসেন আতিক, আরও দুইজন ব্রিগেডিয়ার, ৯৬ জন কর্মকর্তা ও দুই হাজার ২০০ জন সৈনিক সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

Thumbnail image

সময়টা ছিল ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ। ঘড়ির কাঁটায় আনুমানিক বিকেল চারটা ৩০ মিনিট। সূর্য পশ্চিম আকাশে ক্রমাগত হেলে যাচ্ছে। বিকেলের আলোয় আকাশ ছিল ফকফকা। হঠাৎ জানালায় উঁকি দিয়ে দেখি মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক এ কে এম সামসুল হক খান ও পুলিশ সুপার মুন্সী কবীর উদ্দিনকে মাঠের মধ্যে দাঁড় করানো হয়েছে।

এরপর তাঁদের গুলি করে হত্যা করা হয়। চোখের সামনে ওই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে কুঁকড়ে যাই । ওই ঘোর না কাটতেই মিনিট পাঁচেকের মধ্যে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে পাকহানাদার বাহিনীর এক সদস্য। তখন আমার সঙ্গে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন সগির আহমেদ সিদ্দিকী। আকস্মিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে আমাদের ওপর গুলি চালায়। মুহুর্তের মধ্যে ওই ঘর রক্তে ভেসে যায়। তখন আমার ডান চোখের কোণায়, ডান হাতের কব্জি ও পিঠে তিনটি গুলি লাগে। আর অন্য দুইজন মারা যান। এরপর আহত অবস্থায় টিপরা বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে বুড়িচং থানা এলাকা দিয়ে ভরাসার বাজার হয়ে চলে আসি।

ময়নামতি সেনানিবাসের সেই দুঃসহ সময় (২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ) মনে এলে, এখনও ভাবি কত লাশ ফেলা হয় সেখানে। পুরো সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের কঙ্কাল। বাংলাদেশের আর কোন সেনানিবাসে এত বধ্যভূমি আছে কিনা আমার জানা নেই। কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের হত্যাযজ্ঞের জীবিত সাক্ষী গোলন্দাজ বাহিনীর বাঙালি সেনা কর্মকর্তা লে. ইমামুজ্জামানের স্মৃতিতে এইসব কথা ভেসে আসে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ময়নামতি সেনানিবাসের এমআর চৌধুরী গ্রাউন্ডের পাশে রয়েছে গণকবর। সেখানে আনুমানিক ৩০০ সেনা সদস্য, ২৪ জন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা ও শত শত বাঙালিকে গুলি করে হত্যার পর গর্তে ফেলা হয়। ওই গর্তেই মুক্তিযুদ্ধকালীন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ কুমিল্লা শহর এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের মাটি চাপা দেয়। সেখানকার গণকবরে নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ। ওই স্মৃতিসৌধে ১০৩ জনের নাম লেখা আছে। অন্যদের সম্প্রতি সরেজমিনে সেনানিবাস এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেনানিবাসের ভেতরে স্কোয়াশ নামের দুই কক্ষেও একটি ভবন রয়েছে। ওই ভবনে বহু লোককে এনে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়। কালের সাক্ষী হিসেবে ভবনটি এখনও রয়েছে। ওই স্কোয়াশের চারপাশে বহু স্থানে তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বহু নিরীহ মানুষের লাশ। পরবর্তীতে সেগুলোকে গণকবর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এ ছাড়া সেনানিবাসের ১১৮ ফিল্ড ওয়ার্কশপ এলাকায় রয়েছে গণকবর। ওই গণকবরকে সংরক্ষণ করে শহীদদের এখানে রয়েছে ৫৩ জন শহীদের নাম। ওই নাম পাথরে খোদাই করা হয়েছে। দরজাবিশিষ্ট একটি টর্চারসেল রয়েছে। স্মৃতিকে অমলিন রাখা হয়। সেনানিবাসের ভেতরে এক কেবল তাই নয়, ময়নামতি সেনানিবাসের ব্রিগেড দপ্তরে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ধরে এনে রাখা হয়। একাত্তরের ২৯ মার্চ রাতে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকেও ওই স্থানে আনা হয়। পরবর্তীতে তাঁর আর হদিস মেলেনি। এখানকার বধ্যভূমিতেই জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানের লাশ রয়েছে। এ ছাড়া ব্রিগেড দপ্তরের চারপাশে রয়েছে বহু গণকবর।

লে. ইমামুজ্জামান বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার সেনাবাহিনীতে থাকা তাঁদের কর্মকর্তারা বাঙালি নিধনের পায়তারায় মেতে ওঠে। ওই সময় কুমিল্লা সেনানিবাসে আমি যোগদান করি। যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ২০ বছর। ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত এ সেনানিবাসে যা দেখেছি, তা এখনও চোখে ভাসে। কুমিল্লা শহর থেকে ট্রাকে করে বেসামরিক লোকজনকে ধরে এনে মোটর গ্যারেজে রাখা হত। ৩০ মার্চ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি আগরতলায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেই। এরপর সেখান থেকে ফিরে এসে কুমিল্লার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম ও নোয়াখালীতে যুদ্ধ করি। পরবর্তীতে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে ফেনীর বিলোনিয়া হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যুদ্ধ করতে যাই। এখনও বেঁচে আছি, এটাই বড় কথা । সেনানিবাসের গণকবরগুলো আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করে ইতিহাসের পাতায় উল্লেখ করা দরকার।'

কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, 'ময়নামতি সেনানিবাসে অসংখ্য গণকবর রয়েছে। এ সব গণকবরে নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালি ও সেনা কর্মকর্তাদের মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ গুলোর আরও সংরক্ষণ হওয়া দরকার। একই সঙ্গে টর্চারসেলগুলোর ইতিহাসও নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার।'

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক আবুল কাশেম হৃদয় তাঁর একটি বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘ কুমিল্লা সেনানিবাসের ব্রিগেড মসজিদের উত্তর পাশে, হেলিপ্যাডের দক্ষিণের নিম্নভূমিতে, ব্রিগেডিয়ারের বাসার পশ্চিমে, ব্রিগেড মসজিদের পশ্চিমে স্কোয়াশ রুমের আশপাশে, একটি টিলার পাদদেশে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থ গর্তে তাঁদের (এখানে হত্যা করা লোকদের) মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ সময় মোট ১২ টি গণসমাধি খনন করে প্রায় সাত হাজার নর কঙ্কাল পাওয়া যায় বলে মুক্তিযুদ্ধের পর তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুর রহমান কুমিল্লার অন্তত চারজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মূলত একাত্তরের ২২ মার্চ থেকে ময়নামতি সেনানিবাসে পাকিস্তানের কমান্ডো ও গোলন্দাজ বাহিনী চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের চারদিকে পরিখা খনন করে। তখনই তারা বাঙালি অফিসারদের কমান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সেনানিবাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে।

একই সঙ্গে বাঙালি সেনা অফিসারদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়। এরপর তাঁরা সেনানিবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কুমিল্লা সেনানিবাসের ১৪নং ডিবিশনের কার্যালয়ে হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা চুড়ান্ত করা হয়। এরপর সেখান থেকে ২৫ মার্চ কালো রাত্রে কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে। ২৬ মার্চ সকালে ৫৩ ব্রিগেড গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান লে. কর্ণেল ইয়াকুব মালিকের নির্দেশে সেনানিবাসে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এক্ষেত্রে নেতৃত্বে ছিলেন চতুর্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের পাক কমান্ডিং কর্মকর্তা লে. কর্ণেল খিজির হায়াত খান, ব্রিগেডিয়ার আসলাম, অন্য শাখার নেতৃবৃন্দ। তাঁরা একে একে জেলা প্রশাসক এ কে এম সামসুল হক, জেলা পুলিশ সুপার কবির উদ্দিন আহমেদ ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও কুমিল্লা শহর থেকে লোকজন এনে সেনানিবাসে হত্যা করে।

২৫ মার্চ কালো রাত্রি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ছাড়া ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের এনে রাখা হয়। এ ছাড়া শহর থেকেও নারীদের এনে ওই প্রতিষ্ঠানে বন্দি রাখা হয়। ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বন্দিশিবির। সেখানে অন্তত ৭০০ জন নারীকে বন্দি রাখা হয়। বন্দিশিবিরে তখন নারীদের আর্তচিৎকার শোনা যেত।’

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে পাকহানাদার বাহিনী। ১৭ ডিসেম্বর সকালে ময়নামতি সেনানিবাসে পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার শেখ মঞ্জুর হোসেন আতিক, আরও দুইজন ব্রিগেডিয়ার, ৯৬ জন কর্মকর্তা ও দুই হাজার ২০০ জন সৈনিক সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

২

নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

৩

গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

৫

আবারও বাড়ছে করোনা, প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ নির্দেশনা

সম্পর্কিত

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এই আইনের আওতায় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা আছে।

৫ দিন আগে
নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

৬ দিন আগে
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

৬ দিন আগে
সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

পোস্টের এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।”

৯ দিন আগে