• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> বাংলাদেশ
> কুমিল্লা

পল্লী উন্নয়নের পথিকৃৎ বার্ড: অতীত ও বর্তমান

সাইফ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১৩: ১৮
logo

পল্লী উন্নয়নের পথিকৃৎ বার্ড: অতীত ও বর্তমান

সাইফ উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ : ২৭ মে ২০২৫, ১৩: ১৮
Photo

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) পল্লী উন্নয়নে নিয়োজিত একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের পথিকৃৎ এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ৬৬ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতেই অর্থাৎ ১৯৫৯ সালের ২৭ মে তারিখে। কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কি:মি: দূরে কোটবাড়ীতে ১৫৬ একরের সুপরিসর ক্যাম্পাসে এক নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে বার্ড অবস্থিত। আজকের এদিনে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী বিশ্ববরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান-কে। ড. খানের গতিশীল ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের ফসল পল্লী উন্নয়নের কুমিল্লা মডেল দেশ-বিদেশে বার্ডের খ্যাতি ও সুনাম বৃদ্ধি করে। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বার্ড ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০২২ সালে সিরডাপ কর্তৃক প্রদত্ত “আজিজ-উল-হক রুরাল ডেভেলপন্টে অ্যাওয়ার্ড-২০২২” লাভ করে। বার্ড গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে জাতিকে অনেকগুলো উদ্ভাবনী কর্মসূচি/মডেল উপহার দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বার্ড-এর উদ্ভাবনসমূহের ফসল বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), বিএডিসি’র সাথে একীভূত থানা সেচ কর্মসূচি, উপজেলা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু উপজেলা কমপ্লেক্স, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) ও সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী (সিভিডিপি) এ দেশের পল্লী উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখে চলেছে। একুশ শতকের পরিবর্তিত উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে বার্ডের সার্বিক কার্যক্রমে নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, এর ফলে পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান হয়েছে ও বাংলাদেশের হত-দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান অবদান রেখে চলেছে।

একাডেমির অন্যতম প্রধান কাজ পল্লী উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গ্রামীণ নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মে, ২০২৫ পর্যন্ত ৯৩৭৯টি প্রশিক্ষণ কোর্স, সেমিনার, কর্মশালা ও অবহিতকরণ কর্মসূচিতে ৩২৫৬৫৭ জন দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, সার্কভুক্ত দেশ, আফ্রিকান দেশসমূহ এবং কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ একাডেমির প্রশিক্ষণে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গ্রামীণ এলাকায় আত্ম-কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বার্ড সূচনালগ্ন থেকেই পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। গ্রামীণ জীবনে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও কার্যকর সমাধানের উপায় উদ্ভাবনই বার্ডের গবেষণার মূল লক্ষ্য। বার্ডের গবেষণার ফলাফল সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়া বার্ডের গবেষণা ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে বার্ড অতীতে যেমন গবেষণা পরিচালনা করেছে তেমনিভাবে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সরকারের প্রাধিকারভুক্ত বিষয়ের আলোকে পল্লী উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নকে টেকসই করতে বার্ড গবেষণা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মে, ২০২৫ পর্যন্ত বার্ড মোট ৭৪৭টি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। একাডেমির গবেষণার মূল বিষয়সমূহ হচ্ছে- টেকসই উন্নয়ন, পল্লী প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার, দারিদ্র বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন, গ্রামীন অর্থনীতি, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, জেন্ডার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন, সমাজ পরিবর্তন ও জনমিতি, পল্লী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, সুশাসন এবং উন্নয়ন যোগাযোগ। বার্ড প্রতি বছর গড়ে ২০টি গবেষণা পরিচালনা করে থাকে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বার্ড তার কার্যপরিধি অনুযায়ী প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে এবং প্রায়োগিক গবেষণালব্ধ ফলাফলের আলোকে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ নীতি সহায়তা প্রদান করছে। ষাটের দশকে বার্ড গবেষণা চালিয়ে গ্রামে বিরাজিত সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করে এবং চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য অগ্রাধিকার নির্ণয় করে। অতঃপর নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বার্ড পল্লী উন্নয়নের বেশ কয়েকটি সফল মডেল উদ্ভাবন করে যেগুলো সমন্বিতভাবে ‘কুমিল্লা মডেল’ নামে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করে। বার্ডের সফল প্রায়োগিক গবেষণার অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সেবা প্রদানে গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্র করে সমন্বিত উন্নয়নের জন্য সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী (সিভিডিপি) এবং বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা প্রচলন করে, যা বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) হিসাবে দেশব্যাপী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অর্জিত অভিজ্ঞতা প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিতরণের ফলে বার্ডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়। পল্লী উন্নয়নে বার্ড এ পর্যন্ত ৭৩টি প্রায়োগিক গবেষণা বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে বার্ড রাজস্ব বাজেটের আওতায় (১) মহিলা শিক্ষা, আয় ও পুষ্টি উন্নয়ন (মশিআপুউ); (২) পল্লী এলাকায় উন্নত সেবা সরবরাহে ই-পরিষদ; (৩) বার্ড প্রদর্শনী দুগ্ধ, ছাগল ও পোল্ট্রি খামার; (৪) গ্রাম সংগঠন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পল্লীর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন; (৫) কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও যৌথ খামার ব্যবস্থাপনা; (৬) কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন; (৭) অভিযোজন পদ্ধতিতে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মানোন্নয়ন; (৮) ইনকিউবেটরের মাধ্যমে গ্রামীণ পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়ন ও মহিলাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ; (৯) মাশরুম উন্নয়ন ও চাষ; (১০) বার্ড ক্যাম্পাসে ট্রাইকো-কম্পোস্ট উৎপাদন ও গবেষণা প্রদর্শনী; (১১) বার্ড প্লান্ট মিউজিয়াম; (১২) বার্ড প্রদর্শনী মৎস্য খামার ; (১৩) বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদন; (১৪) কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মসংস্থান সৃৃজন শীর্ষক প্রকল্প এবং পল্লী পর্যটনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রায়োগিক গবেষণা বাস্তবায়ন করছে।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রামের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও পরিবর্তন হচ্ছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি রূপন্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বার্ড সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সব সময় স্বচেষ্ট এবং পল্লী উন্নয়নের চাহিদার নিরিখে নতুন নতুন উন্নয়ন কৌশল উদ্ভাবনে সর্বদা নিয়োজিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে দ্রুত ইতিবাচক সমাজ পরিবর্তনের ব্যাপারে বার্ড সম্পূর্ণ সচেতন। বার্ড বিশ্বাস করে পল্লী উন্নয়ন কোনো খন্ডিত বিষয় নয়; বরং টেকসই উন্নয়ন, সত্যিকার জন সম্পৃক্তি ও উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমেই সামগ্রিক পল্লী উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে বার্ড তার সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সাইফ উদ্দিন আহমেদ: মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।

Thumbnail image

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) পল্লী উন্নয়নে নিয়োজিত একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের পথিকৃৎ এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় আজ থেকে ৬৬ বছর আগে ঠিক এই দিনটিতেই অর্থাৎ ১৯৫৯ সালের ২৭ মে তারিখে। কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কি:মি: দূরে কোটবাড়ীতে ১৫৬ একরের সুপরিসর ক্যাম্পাসে এক নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে বার্ড অবস্থিত। আজকের এদিনে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বার্ডের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী বিশ্ববরেণ্য সমাজবিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান-কে। ড. খানের গতিশীল ও উদ্ভাবনী নেতৃত্বের ফসল পল্লী উন্নয়নের কুমিল্লা মডেল দেশ-বিদেশে বার্ডের খ্যাতি ও সুনাম বৃদ্ধি করে। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বার্ড ১৯৮৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার এবং ২০২২ সালে সিরডাপ কর্তৃক প্রদত্ত “আজিজ-উল-হক রুরাল ডেভেলপন্টে অ্যাওয়ার্ড-২০২২” লাভ করে। বার্ড গবেষণা ও প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে জাতিকে অনেকগুলো উদ্ভাবনী কর্মসূচি/মডেল উপহার দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বার্ড-এর উদ্ভাবনসমূহের ফসল বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), বিএডিসি’র সাথে একীভূত থানা সেচ কর্মসূচি, উপজেলা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু উপজেলা কমপ্লেক্স, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) ও সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী (সিভিডিপি) এ দেশের পল্লী উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখে চলেছে। একুশ শতকের পরিবর্তিত উন্নয়ন প্রেক্ষাপটে বার্ডের সার্বিক কার্যক্রমে নতুন নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, এর ফলে পল্লী উন্নয়ন কার্যক্রম আরও বেগবান হয়েছে ও বাংলাদেশের হত-দরিদ্র মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান অবদান রেখে চলেছে।

একাডেমির অন্যতম প্রধান কাজ পল্লী উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গ্রামীণ নেতৃবৃন্দ এবং তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেয়া। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মে, ২০২৫ পর্যন্ত ৯৩৭৯টি প্রশিক্ষণ কোর্স, সেমিনার, কর্মশালা ও অবহিতকরণ কর্মসূচিতে ৩২৫৬৫৭ জন দেশী-বিদেশী প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, সার্কভুক্ত দেশ, আফ্রিকান দেশসমূহ এবং কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ একাডেমির প্রশিক্ষণে নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গ্রামীণ এলাকায় আত্ম-কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, পরিবেশ উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অধিকতর অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।

বার্ড সূচনালগ্ন থেকেই পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। গ্রামীণ জীবনে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও কার্যকর সমাধানের উপায় উদ্ভাবনই বার্ডের গবেষণার মূল লক্ষ্য। বার্ডের গবেষণার ফলাফল সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়া বার্ডের গবেষণা ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে বার্ড অতীতে যেমন গবেষণা পরিচালনা করেছে তেমনিভাবে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং সরকারের প্রাধিকারভুক্ত বিষয়ের আলোকে পল্লী উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নকে টেকসই করতে বার্ড গবেষণা পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মে, ২০২৫ পর্যন্ত বার্ড মোট ৭৪৭টি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। একাডেমির গবেষণার মূল বিষয়সমূহ হচ্ছে- টেকসই উন্নয়ন, পল্লী প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার, দারিদ্র বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন, গ্রামীন অর্থনীতি, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা, জেন্ডার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন, সমাজ পরিবর্তন ও জনমিতি, পল্লী প্রতিষ্ঠান, সামাজিক মনোবিজ্ঞান, সুশাসন এবং উন্নয়ন যোগাযোগ। বার্ড প্রতি বছর গড়ে ২০টি গবেষণা পরিচালনা করে থাকে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বার্ড তার কার্যপরিধি অনুযায়ী প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে এবং প্রায়োগিক গবেষণালব্ধ ফলাফলের আলোকে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ নীতি সহায়তা প্রদান করছে। ষাটের দশকে বার্ড গবেষণা চালিয়ে গ্রামে বিরাজিত সমস্যাসমূহকে চিহ্নিত করে এবং চিহ্নিত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য অগ্রাধিকার নির্ণয় করে। অতঃপর নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বার্ড পল্লী উন্নয়নের বেশ কয়েকটি সফল মডেল উদ্ভাবন করে যেগুলো সমন্বিতভাবে ‘কুমিল্লা মডেল’ নামে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করে। বার্ডের সফল প্রায়োগিক গবেষণার অভিজ্ঞতার আলোকে গ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও সেবা প্রদানে গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্র করে সমন্বিত উন্নয়নের জন্য সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচী (সিভিডিপি) এবং বাংলাদেশে ক্ষুদ্র কৃষক ও ভূমিহীন শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা প্রচলন করে, যা বর্তমানে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ) হিসাবে দেশব্যাপী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অর্জিত অভিজ্ঞতা প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে বিতরণের ফলে বার্ডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়। পল্লী উন্নয়নে বার্ড এ পর্যন্ত ৭৩টি প্রায়োগিক গবেষণা বাস্তবায়ন করেছে। বর্তমানে বার্ড রাজস্ব বাজেটের আওতায় (১) মহিলা শিক্ষা, আয় ও পুষ্টি উন্নয়ন (মশিআপুউ); (২) পল্লী এলাকায় উন্নত সেবা সরবরাহে ই-পরিষদ; (৩) বার্ড প্রদর্শনী দুগ্ধ, ছাগল ও পোল্ট্রি খামার; (৪) গ্রাম সংগঠন ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পল্লীর জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন; (৫) কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও যৌথ খামার ব্যবস্থাপনা; (৬) কমিউনিটি এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন; (৭) অভিযোজন পদ্ধতিতে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মানোন্নয়ন; (৮) ইনকিউবেটরের মাধ্যমে গ্রামীণ পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়ন ও মহিলাদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ; (৯) মাশরুম উন্নয়ন ও চাষ; (১০) বার্ড ক্যাম্পাসে ট্রাইকো-কম্পোস্ট উৎপাদন ও গবেষণা প্রদর্শনী; (১১) বার্ড প্লান্ট মিউজিয়াম; (১২) বার্ড প্রদর্শনী মৎস্য খামার ; (১৩) বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদন; (১৪) কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মসংস্থান সৃৃজন শীর্ষক প্রকল্প এবং পল্লী পর্যটনের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্পসহ মোট ১৫টি প্রায়োগিক গবেষণা বাস্তবায়ন করছে।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রামের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও পরিবর্তন হচ্ছে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি রূপন্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বার্ড সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জাতীয় আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে সব সময় স্বচেষ্ট এবং পল্লী উন্নয়নের চাহিদার নিরিখে নতুন নতুন উন্নয়ন কৌশল উদ্ভাবনে সর্বদা নিয়োজিত। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক তথা বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে দ্রুত ইতিবাচক সমাজ পরিবর্তনের ব্যাপারে বার্ড সম্পূর্ণ সচেতন। বার্ড বিশ্বাস করে পল্লী উন্নয়ন কোনো খন্ডিত বিষয় নয়; বরং টেকসই উন্নয়ন, সত্যিকার জন সম্পৃক্তি ও উন্নয়নের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমেই সামগ্রিক পল্লী উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে বার্ড তার সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সাইফ উদ্দিন আহমেদ: মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

২

নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

৩

গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

৪

সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

৫

আবারও বাড়ছে করোনা, প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ৭ নির্দেশনা

সম্পর্কিত

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : আইন উপদেষ্টা

গুম বিষয়ে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। এই আইনের আওতায় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা আছে।

৫ দিন আগে
নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর

৫ দিন আগে
গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু মারা গেছেন

৫ দিন আগে
সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

সোশ্যাল মিডিয়ায় কুৎসার জবাবে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

পোস্টের এক পর্যায়ে তিনি লিখেছেন, কারও নিন্দা করার আগে একটু জেনে নিন। আল্লাহ আছেন, আমাদের সবাইকে একদিন জবাব দিতে হবে।”

৯ দিন আগে