ছয় দশক পর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে তিন নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১৫: ০৪
Thumbnail image

প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে প্রথম শ্রেণির পদে প্রেষণে তিন নারী কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে। তাঁরা হলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে অধ্যাপক রুনা নাছরীন, বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে রীতা চক্রবর্তী ও উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ শাখা) পদে কাজী আপন তিবরানী। তাঁদের নেতৃত্বে পরীক্ষা ও বিদ্যালয় শাখা পরিচালিত হচ্ছে। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে তাঁরা সেবা দিচ্ছেন বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার বাসিন্দাদের।

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালের ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫ টি জেলা নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। বোর্ডে প্রেষণের পদ ১৪ টি। এ পর্যন্ত কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ৩৫ জন চেয়ারম্যান ও ২২ জন সচিব দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠার ৬৩ বছরেও বড় দুইটি পদে কোন নারী চেয়ারম্যান ও সচিব হননি। কলেজ পরিদর্শক, , উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা), উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দুইটি, উপসচিব (একাডেমিক), উপসচিব (প্রশাসনিক), উপকলেজ পরিদর্শক ও উপবিদ্যালয় পরিদর্শক পদে কোন নারী কর্মকর্তার স্থান হয়নি।

বোর্ড প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পর ২০২৪ সালের ১০ জুন বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে যোগদান করেন বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক রীতা চক্রবর্তী। তিনিই প্রেষণে বোর্ডের প্রথম শ্রেণির প্রথম নারী কর্মকর্তা। প্রথম নারী বিদ্যালয় পরিদর্শক। তিনি ২০০৫ সালের ২ জুলাই ২৪তম ব্যাচের বিসিএস সাধারণ শিক্ষা কর্মকর্তা । তাঁর পদায়নের মধ্য দিয়ে বোর্ডে নারীর অংশগ্রহণ শুরু হয়।

জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিদর্শক রীতা চক্রবর্তী বলেন, ‘নারী সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। যখন স্কুল ভিজিটে যাই, তখন ক্লাসরুমে, শিক্ষকরুমে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি টের পাই।’

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার চরণ ‘পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীস্বর, নারী চাপা ছিল এতোদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর।’ উদ্ধৃতি করে রীতা চক্রবর্তী বলেন,‘ নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন, সমতা ও কন্যার উন্নয়ন হয়েছে, হচ্ছে। সব অন্ধকার দূর করে এগিয়ে যাচ্ছে।’

অধ্যাপক রুনা নাছরীন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের প্রথম নারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তিনি চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি যোগদান করেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালের ৮ আগস্ট বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।

গত কয়েকদিনের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে অধ্যাপক রুনা নাছরীন বলেন,‘প্রশাসনিক এই কাজে আসব কখনো ভাবিনি। কাজটি খুবই উপভোগ করছি। এখানে বহুমাত্রিক কাজ। চ্যালেঞ্জিং কাজ বেশি। কাজের চাপ বেশি। ’

নারীদের এগিয়ে চলা নিয়ে তিনি বলেন,‘নারীরা এখন আগের চেয়ে এগিয়েছে। আগে কোন নারী ফুটপাতে ব্যবসা করার সাহস পেতো না। এখন রাতবিরাতে সর্বত্রই নারীরা দোকান দিচ্ছে, ব্যবসা করছে, চাকরি করছে। কাজ করছে। এইক্ষেত্রে পুরুষদের সহযোগিতাও আছে। ’

গত ৩০ জানুয়ারি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা কাজী আপন তিবরানী কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ( সনদ শাখা) পদে যোগদান করেন। তিনি ৩২তম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

কাজী আপন তিবরানী বলেন,‘ সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করছি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী কোটা দেওয়ার কারণে তাঁরা এখন কর্মক্ষেত্রে ভালো করেছে। শিক্ষকতা পেশায় নারীরা ভালো করছেন। আমি বোর্ডের যে দায়িত্ব পালন করছি, তা চ্যালেঞ্জিং। এখানে বহুমাত্রিক কাজ, সবাই এসেই সঙ্গে সঙ্গে সেবা চায়। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ভালো লাগছে কাজটা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও কুমিল্লার বিশিষ্ট নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম বোর্ডসহ বিভিন্ন বোর্ডে নারীরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে প্রতিষ্ঠার ৬২ বছর পর্যন্ত কোন নারী মুখ দেখা যায়নি। গত সাতমাসে তিনজন কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে প্রেষণে পদায়ন করা হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক।

কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সৈয়দা বিলকিস আরা বেগম বলেন, রাষ্ট্রনীতিতেই নারী উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। সব জায়গায় নারীরা কাজ করলেও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এ সুযোগ আমাদের সময়ে হয়নি। শত চেষ্টা করেও যেতে পারিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব মমিনুল হক চৌধুরী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। সর্বক্ষেত্রেই নারীরা দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। পুরুষরা প্রেষণে যেতে পারলে নারীরা পিছিয়ে থাকবে কেন? বোর্ডের শীর্ষ পদগুলোতেও নারীদেও পদায়ন করা উচিত।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত