• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> কুমিল্লা জেলা
> দেবীদ্বার

ঘুটঘুটে অন্ধকার গ্রামে আলোর ঝলকানি

দেবীদ্বারের চান্দপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫১
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫৪
logo

ঘুটঘুটে অন্ধকার গ্রামে আলোর ঝলকানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৫১
Photo

নদীপাড়ের গ্রাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝেমধ্যে নিভু নিভু আলোর দেখে মেলে। ওই গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে হতো হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে। সম্প্রতি সেই গ্রাম বদলে গেছে। তরুণদের উদ্যোগে ওই গ্রামে এখন আলোর ঝলকানি।

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চান্দপুর গ্রামের চিত্র এটি। এটি বদলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণরা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে, নিজেদের খরচে ও স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁরা এঁকেছেন এক ভিন্ন চিত্র। এ গ্রামকে তাঁরা সাজিয়েছেন ভিন্ন রূপে। যেন ইউরোপের আদলে আধুনিক গ্রাম। সড়কের পাশে সবুজ সাইনবোর্ডে নাম-পরিচয়সহ ঠিকানা লেখা। পিচ ঢালা সড়ক তো বটেই, সরু কাঁচা রাস্তায় ইটের গাঁথুনিতে চিত্রকর্মের ছোঁয়া। সন্ধ্যা নামলে ল্যাম্পপোস্টে সৌরবিদ্যুতের বাতি জ্বলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় সন্ধ্যা নামলে ডুবে যেত অন্ধকারে। গৃহস্থ বাড়ির কেরোসিন বাতির ক্ষীণ আলো, জোনাকির ঝিকিমিকি আলো ছড়াত। নব্বইয়ের দশকে ঘরবাড়িতে বিদ্যুতের আলো এলেও গ্রামের রাস্তা, বাঁধ আর প্রান্তর ছিল অন্ধকারে। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় পেত। রাতের নিস্তব্ধতায় চুরিও ঘটত।

২০২৩ সালের অক্টোবরে স্থানীয় তিন সামাজিক সংগঠন মিলে উদ্যোগ শুরু। প্রবাসী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রথমে প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে গোমতী বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। পরে গ্রামজুড়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ। প্রতিটি বাড়ি, সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের নামে বসানো হয় নির্দেশক বোর্ড। সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কলেজের সড়কে দুপাশে লাগানো হয় সুপারি ও ফুলগাছ।

সড়কে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর দায়িত্ব নেয় ‘চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠন’। সাইনবোর্ড স্থাপন করে ‘চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠন’। গাছ রোপণ ও রং করে ‘হাতটা ধরো যুব সমাজ’।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন জানান, রাতের অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে আসে গ্রামের যুব সমাজ। আমরা ঠিক করি, গ্রাম নিজেরা আলোকিত করব। একাধিক বৈঠক করা হয়। আলোচনা করি, কীভাবে পথঘাটে আলো পৌঁছানো যায়। এর পর প্রবীণ ও গণ্যমান্যের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত হয় সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি বসানো হবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। সেই সঙ্গে উন্নত দেশের আদলে প্রতিটি রাস্তা, পাড়া ও বাড়ির নামফলক লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হয় সারি সারি সুপারি গাছ।

এ ছাড়া কবরস্থান সংস্কার, বৃক্ষরোপণ, দরিদ্র পরিবারগুলোকে টিউবওয়েল দেওয়া, গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে।

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া রাজিব জানান, এই গ্রামের আয়তন ৩ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার। কৃষি ও আবাদি জমি আছে ১২৩ একর। হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস।

ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এই গ্রামে সাতটি পাড়া। সাত হাজারের বেশি লোকের বসবাস। সাইনবোর্ড স্থাপন শেষ। সড়কবাতি স্থাপন শেষ হওয়ার পথে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. জামাল হোসেন বলেন, সৌরবাতি বসিয়ে আনাচে-কানাচে আলো ছড়িয়েছে যুব সমাজ। রাতে পথে বের হলে মনটা ভালো হয়ে যায়। এখন চোর-ডাকাতের ভয় নেই। পথচলা যায় নির্বিঘ্নে। যুব সমাজ চাইলে যে একটা গ্রাম বদলে দিতে পারে, তার উদাহরণ হচ্ছে চান্দপুর।

চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি ও ব্যবসায়ী হান্নান সরকার জানান, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে সদস্য করা হয়। প্রত্যেক সদস্য যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনে প্রতিমাসে চাঁদা দিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, এই গ্রামের তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনে যুক্ত। এর মধ্যে একটি বড় অংশ তরুণ।

গ্রাম উন্নয়নে শ্রম-ঘাম দিয়ে যারা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন, তাদের অন্যতম রবিউল, সাকিব, মেহেদী হাসান ও আবু হানিফ। তাঁরা চান বড়দের দেখানো পথে হাঁটতে। অন্যের যে কোনো প্রয়োজনে ডাকলে ছুটে যান। তাদের স্বপ্ন, ছবির মতো শান্তিময় গ্রাম গড়ে উঠুক।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব কাজ মূলত সবার অংশগ্রহণে হচ্ছে। আগামীতে সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি হান্নান সরকার। তিনি বলেন, সংগঠনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গ্রামের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে থাকেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের ভূমিকাও কম নয়। এদেরই একজন মো. কামাল হোসেন, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এখানে আমার জন্ম, বসবাস। তাই গ্রামের যে কোনো কাজে আমার দায় আছে। সেই দায় থেকে যুবসমাজ যখন যে কাজে ডাকে, তাদের পাশে দাঁড়াই। সাধ্যমতো সহযোগিতা করি।

যুবসমাজের পাশে থেকে নিয়মিত আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন আরেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রাম আমাদের শিকড়। এখানে আমরা বড় হয়েছি। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা একত্রে গ্রামটাকে সাজাই।

উদ্যোগটি শুধু এই গ্রামে নয়, আশপাশের গ্রামগুলোতেও সাড়া ফেলেছে। চান্দপুর গ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতোমধ্যে পাশের লক্ষ্মীপুরের গোমতী সেতু থেকে বেশ কিছু সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পাশের গ্রামের অনেকে পরামর্শ নিতে ও দেখতে আসছেন চান্দপুরে।

স্থানীয় গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের শিক্ষক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে আলোকিত করার এই উদ্যোগ কেবল প্রযুক্তির নয়, সামাজিক জাগরণের প্রতীক। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। চাইলে এই মডেল অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের মতে, ভালো কাজের উদ্যোগ ও ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। এর মাধ্যমে সব সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব। তিনি বলেন, স্থানীয় দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ নিরসনে গ্রামের বড়রা ভূমিকা রাখেন। সালিশ দরবারে সমাজসেবীরা খুব একটা যান না। তবে প্রয়োজনে মুরব্বিরা নির্দেশনা দেন।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, চান্দপুর গ্রামের তরুণরা নিজেদের উদ্যোগে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে যেভাবে আলোকিত করেছে, তা সত্যি প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। সরকারি সহায়তা ছাড়া তারা গ্রামীণ উন্নয়নের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তরুণ প্রজন্মের এই ইতিবাচক চিন্তা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এমন উদ্যোগে পাশে থাকবে।

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, আলো থাকায় গ্রামের নিরাপত্তা বেড়েছে, অপরাধ কমেছে। এ উদ্যোগ অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।

Thumbnail image

নদীপাড়ের গ্রাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝেমধ্যে নিভু নিভু আলোর দেখে মেলে। ওই গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে হতো হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে। সম্প্রতি সেই গ্রাম বদলে গেছে। তরুণদের উদ্যোগে ওই গ্রামে এখন আলোর ঝলকানি।

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চান্দপুর গ্রামের চিত্র এটি। এটি বদলে দিয়েছেন গ্রামের তরুণরা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে, নিজেদের খরচে ও স্বেচ্ছাশ্রমে তাঁরা এঁকেছেন এক ভিন্ন চিত্র। এ গ্রামকে তাঁরা সাজিয়েছেন ভিন্ন রূপে। যেন ইউরোপের আদলে আধুনিক গ্রাম। সড়কের পাশে সবুজ সাইনবোর্ডে নাম-পরিচয়সহ ঠিকানা লেখা। পিচ ঢালা সড়ক তো বটেই, সরু কাঁচা রাস্তায় ইটের গাঁথুনিতে চিত্রকর্মের ছোঁয়া। সন্ধ্যা নামলে ল্যাম্পপোস্টে সৌরবিদ্যুতের বাতি জ্বলে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় সন্ধ্যা নামলে ডুবে যেত অন্ধকারে। গৃহস্থ বাড়ির কেরোসিন বাতির ক্ষীণ আলো, জোনাকির ঝিকিমিকি আলো ছড়াত। নব্বইয়ের দশকে ঘরবাড়িতে বিদ্যুতের আলো এলেও গ্রামের রাস্তা, বাঁধ আর প্রান্তর ছিল অন্ধকারে। সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় পেত। রাতের নিস্তব্ধতায় চুরিও ঘটত।

২০২৩ সালের অক্টোবরে স্থানীয় তিন সামাজিক সংগঠন মিলে উদ্যোগ শুরু। প্রবাসী, চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষ যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতার হাত বাড়ান। প্রথমে প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে গোমতী বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সৌরবাতি স্থাপন করা হয়। পরে গ্রামজুড়ে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০-এ। প্রতিটি বাড়ি, সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের নামে বসানো হয় নির্দেশক বোর্ড। সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কলেজের সড়কে দুপাশে লাগানো হয় সুপারি ও ফুলগাছ।

সড়কে ল্যাম্পপোস্ট বসানোর দায়িত্ব নেয় ‘চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠন’। সাইনবোর্ড স্থাপন করে ‘চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠন’। গাছ রোপণ ও রং করে ‘হাতটা ধরো যুব সমাজ’।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন জানান, রাতের অন্ধকার দূর করতে এগিয়ে আসে গ্রামের যুব সমাজ। আমরা ঠিক করি, গ্রাম নিজেরা আলোকিত করব। একাধিক বৈঠক করা হয়। আলোচনা করি, কীভাবে পথঘাটে আলো পৌঁছানো যায়। এর পর প্রবীণ ও গণ্যমান্যের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত হয় সৌরবিদ্যুৎচালিত সড়কবাতি বসানো হবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। সেই সঙ্গে উন্নত দেশের আদলে প্রতিটি রাস্তা, পাড়া ও বাড়ির নামফলক লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সৌন্দর্য বাড়াতে লাগানো হয় সারি সারি সুপারি গাছ।

এ ছাড়া কবরস্থান সংস্কার, বৃক্ষরোপণ, দরিদ্র পরিবারগুলোকে টিউবওয়েল দেওয়া, গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে।

ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া রাজিব জানান, এই গ্রামের আয়তন ৩ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার। কৃষি ও আবাদি জমি আছে ১২৩ একর। হাজারের বেশি পরিবারের বসবাস।

ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সদস্য আশরাফুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এই গ্রামে সাতটি পাড়া। সাত হাজারের বেশি লোকের বসবাস। সাইনবোর্ড স্থাপন শেষ। সড়কবাতি স্থাপন শেষ হওয়ার পথে।

অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. জামাল হোসেন বলেন, সৌরবাতি বসিয়ে আনাচে-কানাচে আলো ছড়িয়েছে যুব সমাজ। রাতে পথে বের হলে মনটা ভালো হয়ে যায়। এখন চোর-ডাকাতের ভয় নেই। পথচলা যায় নির্বিঘ্নে। যুব সমাজ চাইলে যে একটা গ্রাম বদলে দিতে পারে, তার উদাহরণ হচ্ছে চান্দপুর।

চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি ও ব্যবসায়ী হান্নান সরকার জানান, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে আগ্রহীদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণের মাধ্যমে সদস্য করা হয়। প্রত্যেক সদস্য যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনে প্রতিমাসে চাঁদা দিয়ে থাকেন। তিনি আরও জানান, এই গ্রামের তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনে যুক্ত। এর মধ্যে একটি বড় অংশ তরুণ।

গ্রাম উন্নয়নে শ্রম-ঘাম দিয়ে যারা অগ্রণী ভূমিকা রাখেন, তাদের অন্যতম রবিউল, সাকিব, মেহেদী হাসান ও আবু হানিফ। তাঁরা চান বড়দের দেখানো পথে হাঁটতে। অন্যের যে কোনো প্রয়োজনে ডাকলে ছুটে যান। তাদের স্বপ্ন, ছবির মতো শান্তিময় গ্রাম গড়ে উঠুক।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, এসব কাজ মূলত সবার অংশগ্রহণে হচ্ছে। আগামীতে সিসি ক্যামেরা লাগানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে জানান চান্দপুর আদর্শ সমাজসেবা সংগঠনের সভাপতি হান্নান সরকার। তিনি বলেন, সংগঠনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গ্রামের প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা পাঠিয়ে থাকেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীদের ভূমিকাও কম নয়। এদেরই একজন মো. কামাল হোসেন, পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এখানে আমার জন্ম, বসবাস। তাই গ্রামের যে কোনো কাজে আমার দায় আছে। সেই দায় থেকে যুবসমাজ যখন যে কাজে ডাকে, তাদের পাশে দাঁড়াই। সাধ্যমতো সহযোগিতা করি।

যুবসমাজের পাশে থেকে নিয়মিত আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকেন আরেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রাম আমাদের শিকড়। এখানে আমরা বড় হয়েছি। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা একত্রে গ্রামটাকে সাজাই।

উদ্যোগটি শুধু এই গ্রামে নয়, আশপাশের গ্রামগুলোতেও সাড়া ফেলেছে। চান্দপুর গ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইতোমধ্যে পাশের লক্ষ্মীপুরের গোমতী সেতু থেকে বেশ কিছু সড়কবাতি স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পাশের গ্রামের অনেকে পরামর্শ নিতে ও দেখতে আসছেন চান্দপুরে।

স্থানীয় গঙ্গামণ্ডল মডেল কলেজের শিক্ষক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে আলোকিত করার এই উদ্যোগ কেবল প্রযুক্তির নয়, সামাজিক জাগরণের প্রতীক। অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের এমন দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। চাইলে এই মডেল অন্য জেলাতেও ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।

চান্দপুর মানবকল্যাণ সংগঠনের সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের মতে, ভালো কাজের উদ্যোগ ও ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পারস্পরিক সুসম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। এর মাধ্যমে সব সামাজিক দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব। তিনি বলেন, স্থানীয় দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ নিরসনে গ্রামের বড়রা ভূমিকা রাখেন। সালিশ দরবারে সমাজসেবীরা খুব একটা যান না। তবে প্রয়োজনে মুরব্বিরা নির্দেশনা দেন।

দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, চান্দপুর গ্রামের তরুণরা নিজেদের উদ্যোগে সৌরশক্তি ব্যবহার করে গ্রামকে যেভাবে আলোকিত করেছে, তা সত্যি প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয়। সরকারি সহায়তা ছাড়া তারা গ্রামীণ উন্নয়নের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অন্যদের জন্য প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তরুণ প্রজন্মের এই ইতিবাচক চিন্তা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এমন উদ্যোগে পাশে থাকবে।

দেবীদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, আলো থাকায় গ্রামের নিরাপত্তা বেড়েছে, অপরাধ কমেছে। এ উদ্যোগ অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

বগুড়ার এসপি হলেন বরুড়ার শাহাদাত

২

বিএনপি নেতা কায়কোবাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

৩

চান্দিনায় ৩০টি স্টলে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী

৪

লটারিতে কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান

৫

মনোহরগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ - ২০২৫ উপলক্ষে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী উদ্বোধ ও আলোচনা সভা

সম্পর্কিত

বগুড়ার এসপি হলেন বরুড়ার শাহাদাত

বগুড়ার এসপি হলেন বরুড়ার শাহাদাত

৭ ঘণ্টা আগে
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

বিএনপি নেতা কায়কোবাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

৭ ঘণ্টা আগে
চান্দিনায় ৩০টি স্টলে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী

চান্দিনায় ৩০টি স্টলে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনী

৮ ঘণ্টা আগে
লটারিতে কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান

লটারিতে কুমিল্লার নতুন পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান

১১ ঘণ্টা আগে