চলচ্চিত্রের চেয়েও নাটকীয় জীবন: রহস্যজনকভাবে প্রয়াত হলেন আশ্রমে জন্ম নেওয়া সেই নির্মাতা

আমার শহর ডেস্ক
Thumbnail image

দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাতা শিন সাং-হুন মারা গেছেন। বয়স হয়েছিল ৪০ বছর। কোরিয়ান সংবাদমাধ্যম ওএসইএন জানিয়েছে, তাঁর মৃত্যু ঘটে চলতি বছরের মে মাসে, তবে বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। পরিবারের কেউ খুঁজে না পাওয়ায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ‘নো-রিলেটিভ বুরিয়াল’ হিসেবে। 

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর ঘটনায় কোনো আত্মহত্যার নোট পাওয়া যায়নি এবং শিনের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতারও কোনো প্রমাণ মেলেনি। এক বন্ধুর সন্দেহ থেকেই মৃত্যুর বিষয়টি সামনে আসে। বেশ কিছুদিন যোগাযোগ না পেয়ে তিনি শিনের বাসায় গেলে নির্মাতাকে মৃত অবস্থায় পান।

​শিন সাং-হুনের জীবন ছিল যেন চলচ্চিত্রের চেয়েও বেশি নাটকীয়। এক অনাথ আশ্রমে জন্ম নেওয়ার পর দত্তক সন্তান হিসেবে তাঁর বেড়ে ওঠা। কিন্তু তাঁর জীবনের কঠিন অধ্যায় শুরু হয় দত্তক মায়ের জুয়া আসক্তির কারণে, যার ফলস্বরূপ পরিবারটির ওপর প্রায় ১৬ কোটি কোরিয়ান উওন ঋণের বোঝা চেপে বসে। তবে দৃঢ়চেতা শিন নিজেই সেই বিশাল ঋণ পরিশোধ করেন এবং আইনি প্রক্রিয়ায় দত্তক সম্পর্কের ইতি টানেন। অতীতের কঠিন সময় নিয়ে কথা বললেও তিনি কখনও তিক্ত হননি; বরং জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে ছিলেন পরিশ্রমী ও অবিচল।

২০২২ সালে এক সাক্ষাৎকারে শিন বলেছিলেন, ‘যদি আপনি নিয়মিত বাণিজ্যিক ছবি না বানান, পরিচালক হিসেবে টিকে থাকা খুবই কঠিন। ছোট ও স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অবস্থা আরও করুণ-তারা শুধু সেটা প্রকাশ্যে বলে না। যতদিন আপনি সিনেমা বানাতে পারবেন না, প্রতিদিনই মনে হবে যুদ্ধ চলছে।” চলচ্চিত্রের কাজ না থাকলে জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি কাজ করতেন খণ্ডকালীন শ্রমিক হিসেবে—প্যাকেট বহন, ট্রাক আনলোড কিংবা ডেলিভারি সার্ভিসে। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “একদিন এমন কাজ করে বুঝেছিলাম কত কষ্টের জীবন এটা। সারা শরীর ব্যথায় ভরে যেত। তখনও মনে হয়েছিল, হয়তো আমাকে পরিচালকের পথেই এগোতে হবে।’

২০০২ সালে গায়ক হিসেবে বিনোদনজগতে পা রাখেন শিন সাং-হুন। এরপর ছোট ছোট অভিনয়ের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। ধীরে ধীরে মনোনিবেশ করেন চলচ্চিত্র নির্মাণে। ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর চলচ্চিত্র ‘জাজাংমিয়ন থ্যাঙ্ক ইউ’ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা পায়। ছবিটি ৭ম হলিউড ব্লুবার্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতে। পাশাপাশি বিশ্বের নানা দেশে ৮০টিরও বেশি পুরস্কারে সম্মানিত হয় এই সিনেমা। পরবর্তীতে তিনি নির্মাণ করেন ‘আন্ডারএজ’ (২০২৪) এবং ‘গড’স চয়েস’ (২০২৫)—যা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। মৃত্যুর সময় তিনি কাজ করছিলেন ‘আন্ডারএজ ২’ ছবির পরিকল্পনায়, যা ২০২৫ সালে মুক্তির কথা ছিল।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত