আমার শহর ডেস্ক

ক্যালেন্ডার বলছে, আজ ১৩ নভেম্বর। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র, শব্দের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ-এর ৭৮তম জন্মদিন। তার কলম থেমে গেলেও কর্ম অবিচল। রসবোধের সঙ্গে লৌকিকতা আর অলৌকিকতার সমগ্র সুন্দরের মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন, সেই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ।
১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নানাবাড়িতে তাঁর জন্ম। লক্ষণীয়, দেশভাগের পরের বছর। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর এক আশ্চর্য পৃথিবী। সেখানে বিশ্বনেতৃত্বে বড় ধরনের বদল এসেছে। পূর্ববাংলাও এক অধীনতা থেকে এসে আরেক অধীনতায়। অর্থনীতি অবিকশি বকশিত সমাজ পশ্চাৎপদ। মানবকুলের বিরাট অংশ অপমানিত, অবমানিত, মৃত। তাই সাম্যাবস্থা আনতে চাই প্রকৃতি। সেই সময়ে মানুষের সমাজে এক বিচিত্র ঘটনা ঘটে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য শিশুর জন্ম হয়। ১৯৪৬-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া শিশুরা বেবি বুমার্স প্রজন্ম।
সারাবিশ্বে বিপুল সংখ্যায় জন্ম নেওয়া শিশুরা সেই সময়ে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বুমার্সদের এই প্রভাব অন্তত দুই দশক বজায় থাকার কথা। যুদ্ধোত্তর অর্থনীতিকে প্রথমে তারা আক্রমণ, পরে চাঙ্গা করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানও এগোচ্ছে। ১৯২৮ সালে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পরপরই তো বিপ্লব ঘটে গেছে। ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের মৃত্যুহার আগের মতো হলো না। মানুষ তখন একে অপরকে বাঁচতে শেখাচ্ছে।
বাংলায় রেনেসাঁ-পরবর্তী শিশু-কিশোররা সৌভাগ্যবান। কারণ ততদিনে বিপুল শিশু ও কিশোরপাঠ্য পূর্ববাংলার শিশুদের হাতে চলে এসেছে। গ্রন্থকাররা একেকটি নক্ষত্র। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, বিভূতিভূষণ, সুকুমার, হেমেন্দ্রকুমার, শিবরাম, গৌরকিশোর। লেখাগুলোর কিছু তখনই ধ্রুপদি, আর কিছু লেখা পরবর্তীকালে ধ্রুপদি হয়ে উঠবে। হুমায়ূন সেই সময়ের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অনেক কিশোরের মতোই সেই সমস্ত গ্রন্থের সাহচর্য পেলেন। অর্থাৎ তাঁর রসবোধ, ভাষাদক্ষতা ধ্রুপদি যুগের চেতনাপ্রবাহে স্নাত। আত্মবোধনের পর হুমায়ূন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এই প্রবাহকে নতুন পথ দিয়েছিলেন।
হুমায়ূন যে সময়ে বড় হয়ে উঠেছেন; পঞ্চাশ-ষাটের দশক, সময়টা পূর্ববাংলার জন্য মৌষলকাল। আমরা যারা এখনকার সময়ের
মানুষ তারা জানি, তখন এক নতুন দেশের জন্ম প্রক্রিয়া চলছিল। হুমায়ূন সেই জন্ম প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেলেন। ভবিষ্যৎ মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগের এই নিয়ন্তা তখন কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। এরপর ১৯৭০ সালে ব্যর্থ কবির নির্মোক ছেড়ে একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিকের জন্ম হবে। শিল্পীর জন্ম হয় দুবার। জৈব জন্ম, শিল্পী জন্মা। কথায় বলে— ইট নিড্স আ ভিলেজ টু রেইজ আ চাইল্ড। একটি মানবশিশুকে বড়
করতে আস্ত এক গ্রামের দরকার হয়। একজন শিল্পীর জন্মের পরও এ কথা সত্য। কোন ছিল নব্য শিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রতিবেশ? ভালোই তো। কজন শিল্পী আহমদ ছফার মতো অভিভাবক পান; আহমদ শরীফের মতো প্রশংসাকারী পান।
হুমায়ূন আমাদের বিশেষ কী দিয়েছেন? আমার মনে হয়, দিয়েছেন সহ্যক্ষমতা। মানুষের সমাজের ভেতর থেকে অনাচার কখনও বিদায় নেবে না। তবে তার মাত্রা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এই হ্রাস-বৃদ্ধি দুটোই সাময়িক। যা ধ্রুপদি, তা দুঃখ। এর ওপরেই তো সিদ্ধার্থের দর্শন দাঁড়িয়ে গেল। হুমায়ূন চেয়েছেন দুঃখকে যেন আমরা কৌতুকের চশমা চোখে দেখি। চশমা অতি গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ চশমা পরে নীল ফুলের দিকে তাকালে তা সবুজ দেখায়। হুমায়ূন আহমেদ নীল দুঃখের দিকে তাকিয়ে দেখার জন্য আমাদের হলুদ চশমা হয়েছেন। তাই যখন আমরা ভারাক্রান্ত হই; অবিশ্রান্ত বোধ করি, হুমায়ূন আহমেদের একটি বই আমরা হাতে নিই। আমাদের মন শান্ত হয়ে ওঠে। দুঃখ সবুজ হয়ে ওঠে।
আমাদের হলুদ চশমা হওয়ার সিদ্ধান্ত হুমায়ূন নিজেই বেছে নিয়েছেন। তিনি চাননি আমরা সারাক্ষণ এই চশমা চোখে বসে থাকি। তার সংকেতও তিনি দিয়ে গেছেন। হুমায়ূনের গাছে গাছে দস্তায়ভঙ্গি, রবীন্দ্রনাথ, নাট হামসুন, রবার্ট ফ্রস্ট, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ, উইলিয়াম গোল্ডিং, মুরাকামি।
শুভ জন্মদিন, হুমায়ূন আহমেদ।

ক্যালেন্ডার বলছে, আজ ১৩ নভেম্বর। বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র, শব্দের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ-এর ৭৮তম জন্মদিন। তার কলম থেমে গেলেও কর্ম অবিচল। রসবোধের সঙ্গে লৌকিকতা আর অলৌকিকতার সমগ্র সুন্দরের মিশেলে বাংলা কথাসাহিত্যকে যিনি সমৃদ্ধ করেছেন, সেই কিংবদন্তির জন্মদিন আজ।
১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নানাবাড়িতে তাঁর জন্ম। লক্ষণীয়, দেশভাগের পরের বছর। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর এক আশ্চর্য পৃথিবী। সেখানে বিশ্বনেতৃত্বে বড় ধরনের বদল এসেছে। পূর্ববাংলাও এক অধীনতা থেকে এসে আরেক অধীনতায়। অর্থনীতি অবিকশি বকশিত সমাজ পশ্চাৎপদ। মানবকুলের বিরাট অংশ অপমানিত, অবমানিত, মৃত। তাই সাম্যাবস্থা আনতে চাই প্রকৃতি। সেই সময়ে মানুষের সমাজে এক বিচিত্র ঘটনা ঘটে। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য শিশুর জন্ম হয়। ১৯৪৬-১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া শিশুরা বেবি বুমার্স প্রজন্ম।
সারাবিশ্বে বিপুল সংখ্যায় জন্ম নেওয়া শিশুরা সেই সময়ে অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। বুমার্সদের এই প্রভাব অন্তত দুই দশক বজায় থাকার কথা। যুদ্ধোত্তর অর্থনীতিকে প্রথমে তারা আক্রমণ, পরে চাঙ্গা করেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানও এগোচ্ছে। ১৯২৮ সালে অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পরপরই তো বিপ্লব ঘটে গেছে। ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের মৃত্যুহার আগের মতো হলো না। মানুষ তখন একে অপরকে বাঁচতে শেখাচ্ছে।
বাংলায় রেনেসাঁ-পরবর্তী শিশু-কিশোররা সৌভাগ্যবান। কারণ ততদিনে বিপুল শিশু ও কিশোরপাঠ্য পূর্ববাংলার শিশুদের হাতে চলে এসেছে। গ্রন্থকাররা একেকটি নক্ষত্র। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, নজরুল, বিভূতিভূষণ, সুকুমার, হেমেন্দ্রকুমার, শিবরাম, গৌরকিশোর। লেখাগুলোর কিছু তখনই ধ্রুপদি, আর কিছু লেখা পরবর্তীকালে ধ্রুপদি হয়ে উঠবে। হুমায়ূন সেই সময়ের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অনেক কিশোরের মতোই সেই সমস্ত গ্রন্থের সাহচর্য পেলেন। অর্থাৎ তাঁর রসবোধ, ভাষাদক্ষতা ধ্রুপদি যুগের চেতনাপ্রবাহে স্নাত। আত্মবোধনের পর হুমায়ূন স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে এই প্রবাহকে নতুন পথ দিয়েছিলেন।
হুমায়ূন যে সময়ে বড় হয়ে উঠেছেন; পঞ্চাশ-ষাটের দশক, সময়টা পূর্ববাংলার জন্য মৌষলকাল। আমরা যারা এখনকার সময়ের
মানুষ তারা জানি, তখন এক নতুন দেশের জন্ম প্রক্রিয়া চলছিল। হুমায়ূন সেই জন্ম প্রক্রিয়ার অংশ হয়ে গেলেন। ভবিষ্যৎ মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগের এই নিয়ন্তা তখন কবিতা লেখার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। এরপর ১৯৭০ সালে ব্যর্থ কবির নির্মোক ছেড়ে একজন শক্তিমান কথাসাহিত্যিকের জন্ম হবে। শিল্পীর জন্ম হয় দুবার। জৈব জন্ম, শিল্পী জন্মা। কথায় বলে— ইট নিড্স আ ভিলেজ টু রেইজ আ চাইল্ড। একটি মানবশিশুকে বড়
করতে আস্ত এক গ্রামের দরকার হয়। একজন শিল্পীর জন্মের পরও এ কথা সত্য। কোন ছিল নব্য শিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রতিবেশ? ভালোই তো। কজন শিল্পী আহমদ ছফার মতো অভিভাবক পান; আহমদ শরীফের মতো প্রশংসাকারী পান।
হুমায়ূন আমাদের বিশেষ কী দিয়েছেন? আমার মনে হয়, দিয়েছেন সহ্যক্ষমতা। মানুষের সমাজের ভেতর থেকে অনাচার কখনও বিদায় নেবে না। তবে তার মাত্রা কমিয়ে আনা যেতে পারে। এই হ্রাস-বৃদ্ধি দুটোই সাময়িক। যা ধ্রুপদি, তা দুঃখ। এর ওপরেই তো সিদ্ধার্থের দর্শন দাঁড়িয়ে গেল। হুমায়ূন চেয়েছেন দুঃখকে যেন আমরা কৌতুকের চশমা চোখে দেখি। চশমা অতি গুরুত্বপূর্ণ। হলুদ চশমা পরে নীল ফুলের দিকে তাকালে তা সবুজ দেখায়। হুমায়ূন আহমেদ নীল দুঃখের দিকে তাকিয়ে দেখার জন্য আমাদের হলুদ চশমা হয়েছেন। তাই যখন আমরা ভারাক্রান্ত হই; অবিশ্রান্ত বোধ করি, হুমায়ূন আহমেদের একটি বই আমরা হাতে নিই। আমাদের মন শান্ত হয়ে ওঠে। দুঃখ সবুজ হয়ে ওঠে।
আমাদের হলুদ চশমা হওয়ার সিদ্ধান্ত হুমায়ূন নিজেই বেছে নিয়েছেন। তিনি চাননি আমরা সারাক্ষণ এই চশমা চোখে বসে থাকি। তার সংকেতও তিনি দিয়ে গেছেন। হুমায়ূনের গাছে গাছে দস্তায়ভঙ্গি, রবীন্দ্রনাথ, নাট হামসুন, রবার্ট ফ্রস্ট, বিভূতিভূষণ, জীবনানন্দ, উইলিয়াম গোল্ডিং, মুরাকামি।
শুভ জন্মদিন, হুমায়ূন আহমেদ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। এই বিধান রেখে গণভোট অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। পৃথক ব্যালট পেপারে চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে হবে এই গণভোট।
১ দিন আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামী ২৯ নভেম্বর (শনিবার) মক ভোটিং (পরীক্ষামূলক ভোট)র আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
১ দিন আগে
গণভোট অধ্যাদেশ-২০২৫ এর খসড়া নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
১ দিন আগে