স্মরণীয় যাঁরা

গাজীউল হক সোহাগ
Thumbnail image

একাত্তরের মার্চ মাস। তখন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ছিলেন এ কে এম সামসুল হক খান ও জেলা পুলিশ সুপার ছিলেন মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ। দুজনই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর শুরুতেই শহীদ হন। দুজনকে ধরে নেওয়া হয় একদিনে। হত্যা করাও হয় একই দিন । একসঙ্গে ডিসি ও এসপিকে তুলে নিয়ে হত্যার ঘটনা আর একটিও নেই। দুজনই মরনোত্তর স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। নতুন প্রজন্মের জন্য এই দুই কীর্তিমান শহীদের পরিচিতি তুলে ধরা হল-

শহীদ জেলা প্রশাসক এ কে এম সামসুল হক খান : ১৯৭১ সালের ১ মার্চ কুমিল্লায় জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন এ কে এম সামসুল হক খান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শুনে নগরের ছোটরা এলাকার সরকারি বাসভবন ছেড়ে সার্কিট হাউজে অবস্থান নেন জেলা প্রশাসক সামসুল হক খান। এরপর তিনি কুমিল্লার শীর্ষ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে মুক্তিকামী জনতাকে সহযোগিতা করা নিয়ে পরিকল্পনা করেন। এক পর্যায়ে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসে অবস্থানরত পাকিস্তানী হানাদারবাহিনীর রেশন, পেট্রল, পানি ও বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেন। ওই খবর পেয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সকাল আটটা ৩০ মিনিটে কুমিল্লা সার্কিট হাউজ থেকে আটক করে। এরপর তাঁকে ময়নামতি সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। চারদিন শারিরিক ও মানসিক, পৈশাচিক নির্যাতনের পর ৩০ মার্চ সেনানিবাসের ৪০ ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্সের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে চোখ বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনিই একমাত্র জেলা প্রশাসক যিনি পাক বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে শহীদ হন। তাঁর নামে কুমিল্লা নগরে শহীদ সামসুল হক সড়ক ( ঝাউতলা থেকে ছোটরা পর্যন্ত) রয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশে তোরণ ও ‘অহংকার' শিরোনামের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। বর্তমানে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের আঙিনায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে শহীদ এ কে এম সামসুল হক খান পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১০ সালে সামসুল হক মরনোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। তিনি নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া ইউনিয়নের আখতারাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নামে শহীদ এ কে এম সামসুল হক ফাউন্ডেশন রয়েছে। এর মাধ্যমে সেবামূলক কাজ হয়।

শহীদ পুলিশ সুপার মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ : ১৯৭০ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেছিলেন মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ। সাতই মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে তলে তলে সম্পৃক্ত হন। এক পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা পুলিশ লাইন্সে রোলকলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ সদস্যদের মুক্তির সংগ্রামে প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য উজ্জীবিত করেন। এরপর পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে অস্ত্রাগারের চাবি দিতে চাপাচাপি করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৬ মার্চ সকালে উজিরদিঘির পাড়ের জেলা পুলিশ সুপারের বাংলো থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নামতি সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর নামে কুমিল্লা ঈদগাহের পূর্ব দিকের সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। পুলিশ লাইন্সে তোরণ ও পরিচিত দিয়ে ছবি সংবলিত নামকরণ লাগানো হয়।

চেতনায় ৭১ ভাস্কর্য করা হয়। জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে তাঁর প্রতিকৃতি রয়েছে। ২০১৪ সালে মরনোত্তর স্বাধীনতা পুরষ্কার পেয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার কাটারবাড়ি গ্রামে ।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত