একে একে ভরাট হচ্ছে কুমিল্লা নগরের পুকুর ও দিঘি

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

প্রাচীনকালে কুমিল্লার পরিচিতি ছিল ট্যাংক (পুকুর, দিঘি) ও ব্যাংকের শহর হিসেবে। তখন শহরের একেকটা বাড়ির সামনে শান বাঁধানো ঘাট করা পুকুর ছিল।

পড়ন্ত বিকেলে কিংবা জোছনাময় রাতে পাড়ার ছেলেমেয়েরা সেখানে আড্ডা দিত। গল্পগুজবে মেতে উঠতো। দুষ্টু ছেলেরা পুকুরে দাপাদাপি করত। সেই পরিচয় এখন অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। ব্যাংকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়লেও একে একে ভরাট হচ্ছে যাচ্ছে পুকুর ও দিঘি। বাদ পড়ছে না ছোট ছোট ডোবাও। জমির দাম বাড়ায় অনেকটা প্রতিযোগিতা করেই অবাধে দিঘি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। এসব দিঘি ও পুকুরের স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন। কেউ কেউ প্লট করে জমি বিক্রি করছে। এতে করে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না ।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০০৫ সালে তৎকালীন কুমিল্লা পৌর এলাকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল ১৫১। এর মধ্যে সরকারি ৪৮টি, ব্যক্তি মালিকানার ১০২টি এবং পৌরসভার ১টি পুকুর। গত প্রায় দুই দশকে কুমিল্লা নগরে কমপক্ষে ৫০টি বড় দিঘি ও পুকুর ভরাট হয়ে গেছে । ২০০০ সালে কুমিল্লা পৌরপার্কের পুকুর ভরাট করে বিলুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

এরপর একে একে ভরাট করা হয় চকবাজার বাসস্ট্যান্ডের পুকুর, গর্জনখোলা পুকুর, কালীবাড়ি পুকুর, রাজগঞ্জ পুকুর, তেরোপট্টি পুকুর, চর্যার ড্রাইভার সমিতির পুকুর, পানপট্টি পুকুর, ঠাকুরপাড়া হাজি এয়াকুব আলী পুকুর, মুরাদপুর পুকুর, ঠাকুরপাড়া জোড় পুকুর, মদিনা মসজিদ পুকুর, শিক্ষাবোর্ডের পেছনের পুকুর, রামমালা পুকুর, কাপ্তানবাজারের ২টি পুকুর, দক্ষিণ চর্থা কালু মিয়ার পুকুর, তালতলা মাজারসংলগ্ন পুকুর, মুন্সেফ বাড়ির সোনারং কমপাউন্ড পুকুর, ঠাকুরপাড়া মদিনা মসজিদসংলগ্ন পুকুর, পুরাতন চৌধুরীপাড়ার লালদিঘি, ছোটরা রেজিস্ট্রি অফিসের পেছনের দিঘি, ফরিদা বিদ্যায়তনের পূর্ব পাশের ২টি পুকুর ও ডিগাম্বরীতলা মসজিদসংলগ্ন পুকুর, রেসকোর্সের কবরস্থানসংলগ্ন পুকুর ও স্বয়ং সিটি করপোরেশন ক্যাম্পাসের পুকুর। সাম্প্রতিক সময়ে ভরাট করা হয় কুমিল্লা পুলিশ লাইন্স এলাকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দপ্তরের পেছনের পুকুর, রামঘাট এলাকার পুকুরের উত্তর ও পূর্ব পাড়ের কিছু অংশ, নতুন চৌধুরীপাড়া কবরস্থানের পশ্চিম দিকের পুকুর, ঝাউতলা খ্রিস্টানপাড়া পুকুর। এছাড়া কুমিল্লা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায় নিউ মার্কেটের উত্তর পাশে ও এসআর কমিউনিটি সেন্টারের দক্ষিণ পাশে শত বছরের পুরনো প্রায় ১ একর জায়গার একটি গভীর পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নগরীর সুজানগর বখশিয়া দরবার শরিফসংলগ্ন ৬০ শতকের প্রাচীন ‘পাটনাইয়া পুকুর দিনে-দুপুরে ভরাট করা হয়েছে।

এখন ভরাট করা হচ্ছে সংরাইশ এলাকার একটি পুকুর। কুমিল্লা ফায়ার অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরের কোথাও আগুন লাগলে পুকুর থেকে পানি নেওয়া হতো। তখন কুমিল্লা নগরে ফায়ার সার্ভিসের ব্যবহারযোগ্য পুকুরের সংখ্যা ছিল ৮৩ টি। বর্তমানে এ সংখ্যাও ৩০ এর নিচে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুকুর ও দিঘি ভরাটের পেছনে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাঁরা সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট করতে একটুও সংকোচ করছেন না। কিছুমিছু পেয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ভরাট কাজে সহযোগিতা করছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কারণে একে একে পুকুর ও দিঘি ভরাট করা হচ্ছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূঁঞা বলেন, পুকুর ভরাট করলে প্লট কিংবা ফ্লট করে বিক্রি করলে লাভ বেশি হবে। এই ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে কুমিল্লায় পুকুর ভরাট হয়ে থাকে। এই বিষয়ে সিটি করপোরেশন তৎপর আছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত