ব্রাহ্মণপাড়া প্রতিনিধি
বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ-বেত শিল্প। তবে একসময় এই কুটির শিল্পের তৈরি সরঞ্জামাদির কদর থাকলেও বর্তমানে আধুনিক মেশিনে তৈরি প্লাস্টিকসামগ্রী বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমেছে।
এছাড়াও কাঁচামালের সংকট আর ন্যায্যমূল্যের অভাবে শিল্পটি টানাপোড়েনে পড়েছে। এতে বাঁশ-বেত শিল্পের অধিকাংশ কারিগরই এ পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা। ফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে এ শিল্পটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
তবে জৌলুশ হারানো এই শিল্প থেকে সরে গিয়ে অধিকাংশ কারিগর অন্য পেশা বেছে নিলেও এই শিল্পের সঙ্গে এখনো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন পঞ্চান্ন বছর বয়সী রাধা চন্দ্র নম। রাধা চন্দ্র নম উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার প্রয়াত শ্রীধাম চন্দ্র নমর ছেলে। পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া পেশাকে টিকিয়ে রাখতে ও এ পেশার প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে এই পেশাকে লালন করে চলেছেন তিনি।
গত সোমবার বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকায় দেখা যায়, বাঁশ-বেত দিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যবহার উপযোগী নানারকম পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর রাধা চন্দ্র নম। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মঞ্জু রানী নম। বাঁশ-বেত দিয়ে তারা পারিবারিক কাজে ব্যবহার উপযোগী নানারকম পণ্য তৈরি করছেন। কোনো ক্রেতা চোখে না পড়লেও এ কাজের প্রতি তাদের ভালোবাসা সত্যি অবিশ্বাস্য।
রাধা চন্দ্র নমর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এটি আমাদের বংশগত পেশা। বাবার হাত ধরে এ পেশায় এসেছি। আমার বাবা এসেছেন তার বাবার হাত ধরে। এভাবে বংশপরম্পরায় চলে এসেছে এ পেশা। তবে এ পেশার আয় দিয়ে একসময় সংসার চালানো গেলেও এখন আর সংসার চালানো যায় না। তবুও এই পেশায় জড়িয়ে আছি। বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশায় মায়া বসে গেছে, তাই ইচ্ছে হলেও এ পেশা ছাড়তে পারি না।
পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন বাবার হাত ধরে কাজ শিখতে শিখতে বাবাকে কাজে সহযোগিতা করেছি, তখন দেখেছি, কতটা কদর ছিল বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের। সেসময় আমাদের বহু পূর্বপুরুষ এ কাজে নিয়োজিত ছিল। তখনকার সময়ে পণ্য তৈরি ও বিক্রির দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। সেসময় এ পেশায় কতটা সুদিন ছিল এখনকার প্রজন্মের মানুষ তা বিশ্বাসই করবে না। আমাদের সন্তানরাও এসব বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের পরবর্তী বংশধররা এ পেশায় নিজেদের জড়াতে আগ্রহী নয়। তারা বেছে নিচ্ছে ভিন্ন পেশা।
রাধা চন্দ্র নম বলেন, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি আমাদের পণ্য মানুষ সাংসারিক যেসব কাজে ব্যবহার করেন। এসব পণ্যের বেশিরভাগ পণ্য এখন আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এগুলোর দামও কম। পাওয়াও যাচ্ছে হাতের নাগালে। তাই আমাদের এই পেশায় এখন দুঃসময় যাচ্ছে। আর তাছাড়া একসময় এই কাজের কাঁচামাল সহজেই পাওয়া যেত, তবে এখন কাঁচামালের সংকট থাকায় কাঁচামাল সংগ্রহও করতে হয় চড়া দামে। যে কারণে আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের দামও পড়ে বেশি। তবে আমাদের তৈরি জিনিসপত্র প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের তুলনায় টেকসই বেশি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, একসময় গ্রামাঞ্চলে বাঁশ-বেত শিল্পে ব্যবহারযোগ্য প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেত। তবে মানুষের আবাসস্থল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের আবাদও কমে এসেছে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগররা কাঁচামাল সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের বিকল্প হিসেবে বাজারে প্লাস্টিকের পণ্য এখন সহজলভ্য। এজন্য বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের চাহিদাও এখন তুলনামূলক কম।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব। তবে এ শিল্পটি এ দেশের প্রাচীন শিল্প। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই শিল্পটির হারানো জৌলুশ আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহ্য বাঁশ-বেত শিল্প। তবে একসময় এই কুটির শিল্পের তৈরি সরঞ্জামাদির কদর থাকলেও বর্তমানে আধুনিক মেশিনে তৈরি প্লাস্টিকসামগ্রী বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের চাহিদা কমেছে।
এছাড়াও কাঁচামালের সংকট আর ন্যায্যমূল্যের অভাবে শিল্পটি টানাপোড়েনে পড়েছে। এতে বাঁশ-বেত শিল্পের অধিকাংশ কারিগরই এ পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন পেশা। ফলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া থেকে এ শিল্পটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
তবে জৌলুশ হারানো এই শিল্প থেকে সরে গিয়ে অধিকাংশ কারিগর অন্য পেশা বেছে নিলেও এই শিল্পের সঙ্গে এখনো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন পঞ্চান্ন বছর বয়সী রাধা চন্দ্র নম। রাধা চন্দ্র নম উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার প্রয়াত শ্রীধাম চন্দ্র নমর ছেলে। পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া পেশাকে টিকিয়ে রাখতে ও এ পেশার প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে এই পেশাকে লালন করে চলেছেন তিনি।
গত সোমবার বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকায় দেখা যায়, বাঁশ-বেত দিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যবহার উপযোগী নানারকম পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর রাধা চন্দ্র নম। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মঞ্জু রানী নম। বাঁশ-বেত দিয়ে তারা পারিবারিক কাজে ব্যবহার উপযোগী নানারকম পণ্য তৈরি করছেন। কোনো ক্রেতা চোখে না পড়লেও এ কাজের প্রতি তাদের ভালোবাসা সত্যি অবিশ্বাস্য।
রাধা চন্দ্র নমর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এটি আমাদের বংশগত পেশা। বাবার হাত ধরে এ পেশায় এসেছি। আমার বাবা এসেছেন তার বাবার হাত ধরে। এভাবে বংশপরম্পরায় চলে এসেছে এ পেশা। তবে এ পেশার আয় দিয়ে একসময় সংসার চালানো গেলেও এখন আর সংসার চালানো যায় না। তবুও এই পেশায় জড়িয়ে আছি। বংশপরম্পরায় পাওয়া এই পেশায় মায়া বসে গেছে, তাই ইচ্ছে হলেও এ পেশা ছাড়তে পারি না।
পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন বাবার হাত ধরে কাজ শিখতে শিখতে বাবাকে কাজে সহযোগিতা করেছি, তখন দেখেছি, কতটা কদর ছিল বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের। সেসময় আমাদের বহু পূর্বপুরুষ এ কাজে নিয়োজিত ছিল। তখনকার সময়ে পণ্য তৈরি ও বিক্রির দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে। সেসময় এ পেশায় কতটা সুদিন ছিল এখনকার প্রজন্মের মানুষ তা বিশ্বাসই করবে না। আমাদের সন্তানরাও এসব বিশ্বাস করে না। তাই আমাদের পরবর্তী বংশধররা এ পেশায় নিজেদের জড়াতে আগ্রহী নয়। তারা বেছে নিচ্ছে ভিন্ন পেশা।
রাধা চন্দ্র নম বলেন, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি আমাদের পণ্য মানুষ সাংসারিক যেসব কাজে ব্যবহার করেন। এসব পণ্যের বেশিরভাগ পণ্য এখন আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এগুলোর দামও কম। পাওয়াও যাচ্ছে হাতের নাগালে। তাই আমাদের এই পেশায় এখন দুঃসময় যাচ্ছে। আর তাছাড়া একসময় এই কাজের কাঁচামাল সহজেই পাওয়া যেত, তবে এখন কাঁচামালের সংকট থাকায় কাঁচামাল সংগ্রহও করতে হয় চড়া দামে। যে কারণে আমাদের তৈরি জিনিসপত্রের দামও পড়ে বেশি। তবে আমাদের তৈরি জিনিসপত্র প্লাস্টিকের জিনিসপত্রের তুলনায় টেকসই বেশি।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, একসময় গ্রামাঞ্চলে বাঁশ-বেত শিল্পে ব্যবহারযোগ্য প্রচুর বাঁশ পাওয়া যেত। তবে মানুষের আবাসস্থল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঁশের আবাদও কমে এসেছে। তাই এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারিগররা কাঁচামাল সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের বিকল্প হিসেবে বাজারে প্লাস্টিকের পণ্য এখন সহজলভ্য। এজন্য বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্যের চাহিদাও এখন তুলনামূলক কম।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও বাঁশ-বেতের তৈরি পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য পরিবেশবান্ধব। তবে এ শিল্পটি এ দেশের প্রাচীন শিল্প। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এই শিল্পটির হারানো জৌলুশ আবারও ফিরিয়ে আনা সম্ভব।