নগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো ছিটানো থাকে ময়লা

Thumbnail image

কুমিল্লা নগরে ঘর থেকে বের হলেই নাকে আসে বিদঘুটে গন্ধ। কারণ নগরের মোড়ে মোড়ে ময়লার স্তূপ। অনেকে ঘরের ময়লা এনে বাসা-বাড়ির সামনের সড়কে স্তূপ করে রাখেন। আবার অনেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ময়লা ফেলছেন সড়কে। এতে করে যেমন বিদ্ঘুটে গন্ধ ছড়ায়, তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। আর নোংরা পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরাও হচ্ছেন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।

গতকাল বুধবার কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন সড়ক ও গলি ঘুরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার তাগিদ থাকলেও যেন কেউই এসবের কর্ণপাত করছেন না। নগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের ময়লার ডাম্পিং পয়েন্ট থাকলেও এতে ময়লা ফেলে হাতেগোনা বাসিন্দা। কিন্তু বেশির ভাগই ময়লা ফেলার জন্য সড়ককে বেছে নেন।

নগরের ঠাকুরপাড়া, নজরুল অ্যাভিনিউ, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, শাসনগাছা, টমছমব্রিজ, মহিলা কলেজ রোড, মেডিকেল রোড, দক্ষিণ চর্থা, আশ্রাফপুর, ইপিজেড গেট এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও গলি ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে পড়ে আছে ময়লার ছোট ছোট স্তূপ। কোনোটি গতকালের, আবার কিছু স্তূপে কয়েকদিনের ময়লাও রয়েছে। কোনো কোনো ময়লার স্তুপে আছে পয়োবর্জ্য। কোনোটিতে আছে হাসপাতালের বর্জ্যও।

স্থানীয় দোকানদার ও বাসিন্দারা বলছেন, এসব ময়লার স্তূপে সাধারণত ভোরে বা রাতে ময়লা ফেলে স্থানীয় বাসিন্দারা। সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন একাধিক অভিযান ও শাস্তি প্রদান করলেও তাতে সুফল পাওয়া যায়নি।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার এলাকার ২৭ টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন প্রায় ২০০ টন বর্জ্যের ১৬৫-১৭০ টন সংগ্রহ করে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল্ডে ডাম্পিং করা হয়। যার শতকরা হার ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ। অপরদিকে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে ময়লার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বর্জ্য ব্যবস্থপনা শাখার অধীনে একজন কর্মকর্তা, চারজন নিয়মিত ও ২৪৯জন দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারীসহ সর্বমোট ২৫৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে সেবা প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে। সকাল এবং বিকেল দুই শিফটে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের জন্য ৩২টি গাড়ি ব্যবহার করা হয়।

উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্থান না থাকায় সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতিদিন সংগৃহীত বর্জ্য আংশিক সীমানা প্রাচীরবেষ্টিত খোলা জায়গায় এ ডাম্পিং করতে হয় বিধায় আশেপাশের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হয়। কিন্তু আমাদের এছাড়া বর্তমানে বিকল্প পথ নেই।

নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, স্থানীয়রা ময়লা ফেলতে ফেলতে এখন এটা ভাগাড়ের মতো হয়ে গেছে। এখন এখানে সবাই ফেলে ময়লা।

বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক নাকে হাত দিয়ে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে যাচ্ছিলেন বাসায়। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বৃষ্টি হলে এসব পানি মাড়িয়ে আবার আমরা বাসায় যাই। অসুস্থ হই। এরপরেও কিছু মানুষের বিবেকে নাড়া দেয় না।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ২৭টি ওয়ার্ডে ড্রেন ও ৯টি খাল পরিষ্কার করার জন্য নয় কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। ইতিমধ্যে লটারির মাধ্যমে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, পরিষ্কার/পরিচ্ছন্ন ও পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এই লক্ষ্যে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে আরো বেশি সচেতন হওয়া, নির্ধারিত সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলার অভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রশাসক মহোদয়, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় ও প্রকৌশলী মহোদয়ের নির্দেশনা ও সহযোগিতায় কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও পরিচ্ছন্ন নগরী বির্নিমানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তোলার লক্ষে আলোচনা সভা, র‌্যালি, ভ্রাম্যমাণ আদালত, উচ্ছেদ অভিযান ও ব্যাপক প্রচার প্রচারণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৬নং ওয়ার্ডে পাইলট প্রকল্প হিসাবে রাতের বেলা বর্জ্য অপসারণ কাজ শুরু হয়েছে। এই ওয়ার্ডের সাফল্য অর্জিত হলে অন্যান্য ওয়ার্ডে বাস্তবায়ন করা হবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত