সেপ্টেম্বরে চালু হচ্ছে দেবীদ্বারের ১০০ শয্যার হাসপাতাল

এবিএম আতিকুর রহমান বাশার
Thumbnail image

কুমিল্লার দেবীদ্বারে ৫ বছর পর চালু হচ্ছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীত অত্যাধুনিক ১০০ শয্যার মা, শিশু ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল। গতকাল বেলা ১১টায় জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশন মা, শিশু ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া শেষে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার কথা ঘোষণা দেন সংশ্লিষ্টরা।

ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মীত কুমিল্লার সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক ১০০ শয্যার এ হাসপাতালটি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশন মা, শিশু ও ডায়াবেটিক হাসপাতাল নামে এ হাসপাতালটি ২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৮০ শতাংশ এবং জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের ২০ শতাংশ অর্থায়নে ২০১৭ সালের ১ জুলাই দেবীদ্বার পৌর এলাকার বারেরা গ্রামে ২১ শতাংশ জমির ওপর ৬ তলা বিশিষ্ট ৯ হাজার স্কয়ার ফিটের অত্যাধুনিক জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশন মা, শিশু ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কার্যাদেশ অনুসারে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩০ জুন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ভবনের লিফট ক্রয়ে জটিলতা দেখিয়ে প্রথমে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এবং পরে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই হাসপাতালটি চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

স্থানীয়রা এ দীর্ঘসূত্রতার কারণ হিসেবে বলছেন, ঠিকাদারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের গাফলতি এবং করোনাকালীন কারণে তিন দফায় সময় বৃদ্ধি করার পর, জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নতুন করে ৬ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন।

এরই মধ্যে ৫ বছর আগে ক্রয়কৃত বিভিন্ন আসবাব ও চিকিৎসা সামগ্রীসহ লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল ও যন্ত্রপাতি নষ্ট এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে বলেও হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তারা আরো জানান, কোনো ধরনের রোগীর সেবা প্রদান বা হাসপাতালের এক টাকা আয় না করেই জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশন প্রতি মাসে ৪৯ হাজার ৬ শত টাকা করে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে, এ ছাড়াও নিরাপত্তা প্রহরীসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করতে হচ্ছে প্রচুর টাকা। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অত্যাধুনিক এ হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করার আগে নষ্ট ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও আসবাব সামগ্রী কেনাকাটায় ব্যয় হবে কোটি টাকার ওপরে।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পিসি এন্ড এমএসসি (জেভি) এর স্বত্বাধিকারী মো. কেফায়েত উল্লাহ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের জাপানি হিটাচি কোম্পানির লিফট কেনার ক্ষেত্রে ৭০ লাখ টাকায় কেনা হিটাচি কোম্পানির নকল সিল মারা লিফট সরবরাহ করেন। যা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়, পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে এ অনিয়মের কারণে হাসপাতাল চালু কার্যক্রম পিছিয়ে পড়ে। দুইবছর পর হিটাচি কোম্পানির লিফটের কাজ শেষ করে ভবনটি হস্তান্তর করা হয়। এ ছাড়াও ফাউন্ডেশনের একটি চক্র চাকরি দেয়ার নামে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পদে চাকরি প্রত্যাশীরা টাকা ফেরত পেতে মানববন্ধনও করেছেন।

জালাল উদ্দিন ফাউন্ডেশনের পরিচালনা কমিটির সভাপতি একেএম সফিকুল আলম কামাল বলেন, লিফটসহ নানা জটিলতা নিরসন করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। এ হাসপাতালে রোগীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও নার্সিং সেবা, ডায়াবেটিক রোগীদের স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা প্রদান, মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাস ও সমাজের হতদরিদ্র, অসহায়, গরিব রোগীদের জন্য হাসপাতালে ৩০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। যারা নিয়োগের জন্য টাকা দিয়েছেন তাঁরা আমাদের কাউকে জানিয়ে দেয়নি।

দেবীদ্বার সমাজসেবা কর্মকর্তা বরুণ কুমার দাস বলেন, হাসপাতালটিতে সরকার ৮০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে ৩০ শতাংশ গরিব অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার জন্য। হাসপাতালে নিয়োগের বিষয়টি এবং বেতনভাতাদি ফাউন্ডেশনের হাতে, সরকারিভাবে কোনো নিয়োগ বা বেতন দেয়ার সুযোগ নেই।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত