এবার মেয়র পদে মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুকে নিয়ে জোর তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

মেয়র পদে নির্বাচন করেছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনিরুল হক সাক্কু। সাক্কু দুইবারই দলীয় নেতাকর্মীদের এককাট্রার কারণে জয়ী হয়েছেন। আবার হেরেছেন দুইবার। এখন সাক্কু বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার। দলে নেই তিনি। দলে ফেরার সম্ভাবনাও এই মুহুর্তে ক্ষীণ (যদিও গত ঈদে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ব্যবহার করে নগরে ফটক দিয়েছেন)। কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে দলের নেতাকর্মীদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারণ করা হয়েছে। যদিও দলীয় সব কর্মসূচি তাঁর অনুসারিদের নিয়ে আলাদাভাবে পালন করছেন।

এছাড়া কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে কায়সার মেয়র পদে টানা দুইবার নির্বাচন করায় আজীবনের জন্য দল থেকে বহিস্কৃত। তাঁর সঙ্গেও দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ করতে বারণ করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। যদিও কায়স- ারই তাঁর ভগ্নিপতি বিএনপির চেয়ারপার- সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের রাজনীতি দেখভাল করে আসছেন। দলের কর্মসূচিতে সার্বক্ষণিক যুক্ত থাকেন। তাঁরও দলে ফেরার সম্ভাবনা এই মুহুর্তে

ক্ষীণ ।

এদিকে সাক্কু ও কায়সারের টানা দুইবারের পরাজয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা মহাবিরক্ত। তাঁদের দাবি, কুমিল্লার মেয়র মানেই বিএনপির লোক। কিন্তু নিজেদের কোন্দলে গত দুইবার বিএনি পর লোক হেরেছেন। এবার মেয়র পদে

নতুন প্রার্থী খুঁজছেন তাঁরা। একজনকে প্রার্থী করাতে চান। এইক্ষেত্রে মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য প্রথমেই মুখ খুলেছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু। পাড়া মহল্লার খেলাধূলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবুর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই নগরের লাকসাম সড়কের পৌর মার্কেটে জড়ো হন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাঁর কর্মীরা আবুর প্রার্থী হওয়ার বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু ১৯৯৮ সালে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে বহিঃক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। জ তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রচার সম্পাদক, সদস্য পদে ছিলেন। কুমিল্লা শহর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য ছিলেন। পরে তিনি কুমিল্লা মহানগর যুবদলের সভাপতি, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, আহবায়ক ও বর্তমানে সভাপতি পদে আছেন।

গত ৪ আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবে তিনি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দি আদর্শ সদর উপজেলার আলেখারচর ই অংশে আন্দোলনে সরাসরি উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ৫৪ টি মামলা ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ৩১ টি চলমান। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৬ বছরে আটবারে

২০ মাস কারাবরণ করেন। ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এনকাউন্টারে তাঁকে মারার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয় বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর বিএন-ি পর সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু বলেন, নির্বাচন করার জন্য মুখিয়ে আছি। সবার সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করব। আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। প্রত্যেকেরই একটা ইচ্ছে থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার। দলের

নেতাকর্মীরা করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করি। আগামী সিটি নির্বাচনে চান, আমি সিটিদলের কাছে মেয়র পদে মনোনয়ন চাইব। নির্বাচন করার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। সেই লক্ষে কাজ করছি কুমিল্লা নগরের ২৭ টি ওয়ার্ডে । দলীয় নেতাক- মীরাও আমার পক্ষে একাট্টা।' কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আমিরুজ্জামান বলেন, আবু আমার ছোট ভাই। একসঙ্গে তিন দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করছি। যেকোন নেতারই ইচ্ছে থাকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার। আবুরও তাই। কিন্তু প্রার্থী ঠিক করবে, দলের হাইক- মান্ড। আবুর নির্বাচন করার মতো গ্রহণযোগ্যতা, নেতৃত্ব সবগুণই আছে। আছে বিশাল কর্মীবাহিনী। আগে মাঠ গুছাক। কাজ করুক। 'তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যখনই নির্বাচনে হবে, বিএনপি সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে একক প্রার্থী দেবে। এখানে কে প্রার্থী হবেন তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই নির্ধারণ করবেন। তবে দলের বাইরে গিয়ে কুমিল্লা পৌরসভা ও সিটিতে বিএনপির কেউ চেয়ারম্যান ও মেয়র হতে পারেননি। সাক্কু ও কায়স- ারের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিতে হবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের। নির্বাচন করে ওরা জিততেও জিততেও পারেনি, আবার আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার হল। মানসিক শান্তি হিসেবে পেল দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ না করার বার্তাও।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত