যে কারণে ছাত্রশিবির ডাকসুতে জিতল

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ২৩ টি পদেই ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত‘ ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা বড় জয় পেয়েছে। হলগুলোতেও তাদের জয়জয়কার। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারেনি, সেখানে এমন জয় পুরো দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের জয় এটা ভিন্ন মতের অনেকের কাছে এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। ছাত্রশিবিরের প্যানেলের জয়ের নেপথ্যে কিছু সাংগঠনিক তৎপরতা ও দীর্ঘমেয়াদী কাজ ছিল। এতেই শিবির বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম শুরু করে। হলগুলোতে তারা প্রায় একক আধিপত্য তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তাদের নানাভাবে সাহায্য করে। তাদের কার্যক্রম ছিল গুছানো। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব, শিবিরের নেতাদেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলে রাখা ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির জিতল বলে মনে করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের রাজনৈতিক ধরণ একই। নিজেরা কামড়াকামড়ি ও সহ অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারায় স্বাধীনতার পর শিবির একতরফাই জিতল।

ছাত্রশিবিরের অন্তত তিনজন নেতার দাবি, ছাত্রশিবির নিজ নামে প্যানেল না দিয়ে ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের’ নামে প্যানেল দিয়ে সাধারণ ও নিরীহ ক্যারিশম্যাটিক কিছু ছেলে ও মেয়ের মধ্যে নেতৃত্ব জাগ্রত করেছে এই নির্বাচনে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ওরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যায়। ওরা ভোটের প্রচারণা করে। এটিও ভোটের ক্ষেত্রে বড় ধরনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। এর মধ্যে রোকেয়া হলে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা ও সাধারণ ছাত্রীরা মিলে ভোটের বড় ব্যবধান গড়ে তুলে। জামায়াতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্রশিবির ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জেলাভিত্তিক কাজ করে। ধাপে ধাপে সাংগঠনিক নেতৃত্ব ওরা তৈরি করে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগের ভেতরে শিবির অনুপ্রবেশ করে।

গত সোমবার বিকেলে মধুর ক্যান্টিনে একটি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তাকে দেখা গেছে। শিবির পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ছিল। জামায়াত কেন্দ্রীয়ভাবে এই নির্বাচন মনিটরিং করেছে। তার ওপর দেশের ৪০ টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ আছে। তাঁরাও নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। শিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ আমলে রাজনীতি না করলে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল ভিন্ন ভাবে। ওই কারণে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছাকাছি যেতে পারছে। ওদের কর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেছে। নির্বাচনে শিবির টাকাও খরচ করেছে। ছাত্রলীগের সমর্থক শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ তলে তলে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটকে ভোট দিয়েছে। শিবিরের ভোটের চিত্র দেখে সহজে সেটা বুঝা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আহসানুল কবীর বলেন, শিবির রাজনৈতিক কৌশল বদলে এই নির্বাচন করেছে। তা না হলে সবখানেই ওদের বিশাল জয় হতো না।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত