এবার কাতল মাছের মেলায় বিক্রি ৪ কোটি টাকার ওপরে

আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২: ৪৬
Thumbnail image

লাফাাচ্ছে কাতল মাছ। কেউ পাল্লায় তুলছেন, কেউ ওজন দিচ্ছেন, কেউ দেখছেন। আবার পাশেই কেউ কাতলা মাছ কাটছেন। নববর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজার থেকে মোগলটুলি এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে এমন দৃশ্য ছিল। শতবর্ষের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কুমিল্লা নগরের রাজগঞ্জ বাজারে কাতল মাছের মেলা বসে। দুই দিনে এই মেলায় আনুমানিক চার কোটি টাকার মাছ বিক্রির কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মেলা ঘুরে ক্রেতা, বিক্রেতা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এই মেলা প্রায় শতবছরেরও অধিকসময় ধরে চলছে। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বড় বড় কাতল মাছ নিয়ে হাজির হন। তারা কেউ কেউ পানিতে রাখা জীবিত কাতল মাছও বিক্রি করেন। মাছের আকার ও ওজন অনুযায়ী দরদাম নির্ধারণ হয়। মেলা চলে দুইদিন। প্রথম দিন স্বাভাবিক ভাবে বৈশাখের প্রথম দিন। এরপর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বৈশাখের দ্বিতীয় দিন নববর্ষ পালন করেন। তাই সেদিনও মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে রাজগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকায় নানান শ্রেণির মানুষের ঢল নামে। সঙ্গে যুক্ত হয় উৎসুক জনতা। এতে করে মূল মাছ বাজার ছাড়িয়ে মেলার বিস্তৃতি সড়ক ও গলিতে গিয়ে পৌঁছেছে। একদিকে রাজগঞ্জ মোড়, অন্যদিকে মোগলটুলির কুমিল্লা হাইস্কুলের প্রধান ফটক পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সারি সারি মাছের ডালা। এর মধ্যে জীবিত কাতল মাছ ও মরা কাতল মাছ রয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী সামুদ্রিক মাছ নিয়েও হাজির হন। অনেকে আবার দেশী ছোট ও মাজারি আকারের মাছও বিক্রির জন্য আনেন। দেশি মাছের চাহিদা বেশি, দামও বেশি।

কাতল মাছ হলেও বিক্রি হয় অন্য মাছও-

কাতল মাছের মেলা হলেও এই বাজারে বিক্রি হয় অন্য প্রজাতির মাছও। তবে তা পরিমাণ ও সংখ্যায় হাতেগোণা। অনেকে নিজের চাষের মাছ নিয়ে আসেন। অনেকে আবার অন্যমাছের সাথে তারতম্য বুঝাতে নিয়ে আসেন।

বাজারের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচার এলাকা থেকে এসেছেন। পিকআপে মাছ নিয়ে এসেছেন তিনি। জামাল বলেন, কাতল মাছ এনেছি। সঙ্গে এসেছি রুই, সিলভার কার্প, বিগ হেড, মৃগেলসহ সিলভার কার্প জাতীয় অন্য অনেক মাছ।

এ সময় তিনি বলেন, শুধু কাতল মাছের মেলা হলেও এই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সমুদ্রের ভাগাইড়, বোয়াল, ইলিশ, বাইম, শোলমাছসহ সামুদ্রিক ও দেশি নানান ধরনের মাছ। যা বাজারে আসা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাচ্ছে।

দিনে বিক্রি কোটি টাকা—

বাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে, মাছের দাম আকার ও ওজন অনুযায়ী পরিবর্তন হয়। যেসব মাছের ওজন ৪ থেকে ৫ কেজি। সেসব মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫ থেকে ৭ কেজির মাছ বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়া ৮ থেকে ১২ কেজি বা ১৫ কেজির মাছ দোকান ভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন বিকেলের দিকে ক্রেতা কম থাকলে এই দামের তুলনায় আরও কমে যেতে পারে দাম। এছাড়াও অনেকে মাছ কম থাকলে কম দামে বিক্রি করে দোকান ছেড়ে যান।

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা থেকে মাছ বিক্রি করতে আসা তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা দিঘির মাছ নিয়ে এসেছি। এখানে কোন কোন দোকান আছে, যেখানে ১৫ লাখ টাকাও দিনে বিক্রি হয়েছে। আবার কারো হয়েছে ৫০ হাজার। অনেকে আবার তার বেশি কমও করেছে। অনেকের একাধিক দোকানও আছে। সব মিলিয়ে রাজগঞ্জ বাজার ও মেলায় মাছের দোকান প্রায় ২০০। গড়ে যদি এক লাখ টাকাও বিক্রি হয় তাহলে দিনে দুই কোটি টাকা বিক্রি। তা দুই দিনে চার কোটি টাকা স্বাভাবিক ভাবেই হয়।

এসময় তিনি শেষ দিন অর্থ্যাৎ গতকালের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রথম দিন মাছ ছিল কম কিন্তু বিক্রি ছিল বেশি। অনেকে ফিরেও গেছে। আজ (গতকাল) আমরা মাছ নিয়ে এলাম আজ দেখি মানুষ নেই। তবে মানুষ কম থাকলেও আজকের বাজার অতটাও খারাপ না। যারাই আসছেন মাছ নিচ্ছেন। কারণ দাম কম। আর আস দর্শনার্থীও কম মানুষ নির্বিঘ্নে মাছ কিনতে পারছে।

চান্দিনা সদর থেকে আসা শ্যামল দাস নেচে নেচে মাছ বিক্রি করছেন। ‘জলের দামে শরবত, দেশী দেশী, দেশী মধু নিয়া যান বলে হাকাচ্ছেন তিনি’। তিনি বলেন, মাছ ব্যবসায়ীদের বৈশাখ বাজারেই কাটে। এখানে মাছ বিক্রি করেই তারা বৈশাখের আনন্দ খুঁজে পান। পরিবহন খরচ ও উৎপাদন খরচ বেশি থাকায় মাছের দাম বেড়ে যায়। মেলায় অনেকে বড় মাছ দেখতে আসেন। কিন্তু সবাই মাছ কেনেন না। তবে এই বাজার থেকে মাছ নিয়ে কখনও ব্যবসায়িরা বাড়ি যেতে হয়না। মাছ বিক্রি করেই যান।

তিনি বলেন, গড়ে এক লাখের বেশি বিক্রি হয়। তবে এই বাজারে যে কম বিক্রি করে সেও ২০/৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেই।

মাছ কিনতে আসা কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ইকরামুজ্জমান শান্ত বলেন, ৩০ কিলোমিটার দূর থেকে মাকে নিয়ে এসেছি। মায়ের পছন্দের সবচেয়ে বড় মাছটা কিনেছি। প্রতিবছর এই মেলা হয়। এখানে ক্রেতারা অনেক দূর থেকে আসনে। এটা একটা আনন্দ।

কুমিল্লা নগরের মুন্সেফ কোয়ার্টারের প্রবীণ বাসিন্দা একেএম আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ছোটবেলায় দাদার সাথে আসতাম এই বাজারে। বাবার সাথেও এসেছি বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে। তখনকার বাজার আরও ছোট ছিল। তবে মাছ ছিল আরও বড়। দামও খুবই কম ছিল। গত দুই দশক বাজার বড় হয়েছে। কিন্তু দাম নিয়ে একটি প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা যেহেতু এই ঐতিহ্যের অংশ একটা হলেও মাছ প্রতিবছর ঘরে নেই। এমন অনেকেই আছেন যারা কাতল মাছের মেলার অপেক্ষায় থাকেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত