আবদুল্লাহ আল মারুফ

মিশুকে আহত রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে মিশুকে করেই। এ যেন এক মিশুকের শহর। কুমিল্লা শহরের এমন চিত্র এখন প্রতিদিনের। এসব মিশুক যেন মরণফাঁদ। মৃত্যু নিশ্চিত না হলেও পঙ্গুত্ববরণ নিশ্চিত হচ্ছে অনেক যাত্রী ও পথচারীর। কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক।
কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ির চালক ও যাত্রী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী এবং ট্রাফিক পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, বেপরোয়াভাবে কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে অটোরিকশা ও মিশুক। বিদ্যুৎ-চালিত এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোনও প্রশিক্ষণ। চালাতে চালাতে শিখবেন, এমন চিন্তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুমিল্লায় আসেন তারা।
অটোরিকশার সংখ্যা জানে না কেউ
কুমিল্লা শহরের গণপরিবহন বলতেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক। তাই যাতায়াতের একমাত্র উপায় এসব যানবাহন। বিশেষ করে যারা প্রতিনিয়ত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে স্কুল ও কলেজ এবং বৃদ্ধ ও অসুস্থদের নিয়ে চলাফেরা করেন। কিন্তু যাচ্ছেতাইভাবে চলা এসব যানকে নিয়ন্ত্রণে শুধু উদ্যোগই নেওয়া হয়, বাস্তবায়ন নেই বলে অভিযোগ কুমিল্লা নগরবাসীর। এসবের সংখ্যাও সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংগঠনের কাছে নেই।
সূত্রে জানা গেছে, এক এগারোর সময় মাত্র ৪০০ ইজিবাইক দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু ইজি বাইকের যাত্রা। তবে সেই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। তবে আচমকা বেড়ে যায় ২০২২ সালের ১৫ জুনের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের পর। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই সংখ্যা অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে।
ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সূত্র বলছে, কুমিল্লা নগরে প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত ৪০ হাজারের বেশি অটোরিকশা ও মিশুক। এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
বেপরোয়া গতির কারণ
চালক, যাত্রী, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এসব অটোরিকশা ও মিশুকের মালিকরা সিন্ডিকেট করে চলেন। একজন চালককে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আবার কখনও ৬০০ টাকা পর্যন্ত গাড়ির জমা দিতে হয়। মালিকদের ইচ্ছাই শেষ কথা। তাই জিম্মি হয়ে চালক এসব চালাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বয়সী অন্তত ২০ জন চালকের সঙ্গে কথা হয় আমার শহরের এই প্রতিবেদকের।
নগরের শুভপুর এলাকার আরেক চালক বলেন, বাইরে থেকে যারা আসে, তাদের কারণেই মূলত বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা খালি রাস্তা পেলেই জোরে টান দেয়। গতিতে গাড়ি চালানোর আরেকটি কারণ নিজের দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ করা। এদের বেশির ভাগই তরুণ। তারাই দুর্ঘটনা ঘটায়।
তিনি আরও বলেন, যখন কোনও তরুণী বা কম বয়সী নারী গাড়িতে উঠে বসেন, তখন তারা বিভিন্ন কায়দায় এদিক-ওদিক দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাড়ি চালায়, যা খুবই ভয়ানক। এসব তরুণ চালকের অত্যন্ত গতিতে গাড়ি চালানোয় আমরা বিপদে পড়ি।
শাসনগাছা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, আরেক হাতে সিগারেট। এসব লোকের কাছে আপনি কীভাবে নিরাপদ যাত্রা প্রত্যাশা করবেন? তাদের গাড়িতে কোনও মিটার নেই! কোন স্থান থেকে কোন স্থানের দূরত্ব কত, কোন জায়গায় এলে কত গতিতে গাড়ি চালাতে হবে বা কোন স্থানে কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে, তারা কিছুই বোঝে না। এদের কাছে জীবনের কোনও মূল্য নেই।
প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা
সম্প্রতি কুমিল্লা শহরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কুমিল্লার এক সংবাদকর্মী। গত সোমবার বিকেল পাঁচটায় নগরের বাদুরতলা এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন এনটিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু। দুর্ঘটনায় পায়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনও চিকিৎসা চলমান।
তিনি বলেন, আমি মোটরসাইকেল পার্ক করছিলাম। এমন সময় একটি অটোরিকশা এসে আমার শরীরে আঘাত করে। আমি পাশেই ছিলাম, কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তিনি বলেন, এসব পরিবহন ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরে চলার উপযোগী নয়। কারণ একটি পরিবহনের শুধু মাত্র পায়ের ব্রেক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আর এসব পরিবহনের ফিটনেসও নেই। বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো যদি আমি না সরতাম।
অটোরিকশায় চড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন বৈশাখী টিভির কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন। তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় একাধিকবার তাকে নেওয়া হয়েছে ঢাকায়। প্রায় দুবছর ধরে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারছেন না তিনি।
বৈশাখী টিভির কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন জানান, কোনও কারণ ছাড়াই দুর্ঘটনা ঘটে, যার ভুক্তভোগী হই আমরা। প্রশাসনের নজিরদারি বাড়ালে এসব চালক আর নগরে ঢুকতে পারে না।
দুর্ঘটনায় নিজের স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছেন কুমিল্লার একসময়কার মাঠ কাঁপানো খেলোয়ার রফিকুল ইসলাম সোহেল। স্পাইনাল কর্ডের গুরুতর জখমে একরকম দিশেহারা তিনি। একযুগের বেশি সময় হাঁটতে পারেন না তিনি। হুইলচেয়ারে কাটছে জীবন।
রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমার স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটি পরিবার। দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ। একজন স্ত্রীর সখ আর ভালোবাসা। হঠাৎই সব শেষ। আমি এখন হুইলচেয়ারে বসেই জীবন কাটাতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই বেঁচে যাবে অনেক জীবন।
এদিকে কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ক্লিনিকের তথ্যে জানা গেছে, প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু ঝামেলা মনে করে চিকিৎসার আগে বা পরে তেমন কেউই অভিযোগ করেন না।
যানজটের অপর নাম কুমিল্লা শহর
অবৈধ এসব যানের কারণে কুমিল্লা শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দীর্ঘক্ষণ লেগে থাকে যানজট। এসব যানজটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ ভয়ঙ্করভাবে অটোরিকশা চালানো।
ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি পরিবহন হওয়ায় যানজটে নাকাল হয়ে যায় কুমিল্লা শহরবাসী। বিশেষ করে অফিস ও স্কুল ছুটির সময় নগরের প্রতিটি মোড়েই যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লেগে থাকে এই যানজট। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে চলে এসব পরিবহন। স্ট্যান্ড ছাড়াই দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালানোয় দুর্ভোগ কমে না এই শহরে।
হাসপাতালেও বাড়ছে রোগী
হাসপাতালে আগের তুলনায় বেড়েছে আহত রোগীর সংখ্যা। যার অধিকাংশই অটোরিকশায় দুর্ঘটনায় আহত। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিনহাজুর রহমান তারেক বলেন, হাসপাতালে আমরা আগে যে পরিমাণ রোগী পেতাম তার দ্বিগুণ পাই। যার প্রায় সব অটোরিকশায় আহত। অনেক রোগীর তো অঙ্গহানিও হয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, আমি আসার পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটি, ট্রাফিক বিভাগ ও পুলিশের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শহরের মূল যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো বাছাই করেছি। সেখানে কীভাবে যানজট নিরসন করা যায় তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে যেহেতু নির্বাচন সামনে, তাই অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক কমানোর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কি না তাও দেখেশুনে আগাচ্ছি।
কুমিল্লার ট্রাফিক ইনচার্জ সারোয়ার মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, যে পরিমাণ অটোরিকশা, সে তুলনায় আমাদের লোকবল কিছুই না। কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছি না। আমাদের লোকজনের গায়েও উঠিয়ে দেয় অটোরিকশা। চেষ্টা করছি তাদের ট্রাফিক আইনের বিষয়ে শেখাতে। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু অটোরিকশা চিহ্নিত করে তাদের শুধুমাত্র শহরে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার একটি প্রচেষ্টাও চলছে। তবে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে এটি খুব সহজ কাজ নয়।

মিশুকে আহত রোগী হাসপাতালে যাচ্ছে মিশুকে করেই। এ যেন এক মিশুকের শহর। কুমিল্লা শহরের এমন চিত্র এখন প্রতিদিনের। এসব মিশুক যেন মরণফাঁদ। মৃত্যু নিশ্চিত না হলেও পঙ্গুত্ববরণ নিশ্চিত হচ্ছে অনেক যাত্রী ও পথচারীর। কুমিল্লার বিভিন্ন সড়কে দাপিয়ে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক।
কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়ির চালক ও যাত্রী, ফুটপাতের ব্যবসায়ী এবং ট্রাফিক পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, বেপরোয়াভাবে কুমিল্লা নগরের বিভিন্ন এলাকায় চলছে অটোরিকশা ও মিশুক। বিদ্যুৎ-চালিত এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোনও প্রশিক্ষণ। চালাতে চালাতে শিখবেন, এমন চিন্তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুমিল্লায় আসেন তারা।
অটোরিকশার সংখ্যা জানে না কেউ
কুমিল্লা শহরের গণপরিবহন বলতেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মিশুক। তাই যাতায়াতের একমাত্র উপায় এসব যানবাহন। বিশেষ করে যারা প্রতিনিয়ত ছেলে-মেয়েদের নিয়ে স্কুল ও কলেজ এবং বৃদ্ধ ও অসুস্থদের নিয়ে চলাফেরা করেন। কিন্তু যাচ্ছেতাইভাবে চলা এসব যানকে নিয়ন্ত্রণে শুধু উদ্যোগই নেওয়া হয়, বাস্তবায়ন নেই বলে অভিযোগ কুমিল্লা নগরবাসীর। এসবের সংখ্যাও সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংগঠনের কাছে নেই।
সূত্রে জানা গেছে, এক এগারোর সময় মাত্র ৪০০ ইজিবাইক দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু ইজি বাইকের যাত্রা। তবে সেই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। তবে আচমকা বেড়ে যায় ২০২২ সালের ১৫ জুনের কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের পর। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সেই সংখ্যা অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে।
ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সূত্র বলছে, কুমিল্লা নগরে প্রতিদিন চলাচল করে অন্তত ৪০ হাজারের বেশি অটোরিকশা ও মিশুক। এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
বেপরোয়া গতির কারণ
চালক, যাত্রী, ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, এসব অটোরিকশা ও মিশুকের মালিকরা সিন্ডিকেট করে চলেন। একজন চালককে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আবার কখনও ৬০০ টাকা পর্যন্ত গাড়ির জমা দিতে হয়। মালিকদের ইচ্ছাই শেষ কথা। তাই জিম্মি হয়ে চালক এসব চালাতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বয়সী অন্তত ২০ জন চালকের সঙ্গে কথা হয় আমার শহরের এই প্রতিবেদকের।
নগরের শুভপুর এলাকার আরেক চালক বলেন, বাইরে থেকে যারা আসে, তাদের কারণেই মূলত বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা খালি রাস্তা পেলেই জোরে টান দেয়। গতিতে গাড়ি চালানোর আরেকটি কারণ নিজের দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ করা। এদের বেশির ভাগই তরুণ। তারাই দুর্ঘটনা ঘটায়।
তিনি আরও বলেন, যখন কোনও তরুণী বা কম বয়সী নারী গাড়িতে উঠে বসেন, তখন তারা বিভিন্ন কায়দায় এদিক-ওদিক দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাড়ি চালায়, যা খুবই ভয়ানক। এসব তরুণ চালকের অত্যন্ত গতিতে গাড়ি চালানোয় আমরা বিপদে পড়ি।
শাসনগাছা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং, আরেক হাতে সিগারেট। এসব লোকের কাছে আপনি কীভাবে নিরাপদ যাত্রা প্রত্যাশা করবেন? তাদের গাড়িতে কোনও মিটার নেই! কোন স্থান থেকে কোন স্থানের দূরত্ব কত, কোন জায়গায় এলে কত গতিতে গাড়ি চালাতে হবে বা কোন স্থানে কীভাবে গাড়ি চালাতে হবে, তারা কিছুই বোঝে না। এদের কাছে জীবনের কোনও মূল্য নেই।
প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা
সম্প্রতি কুমিল্লা শহরে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন কুমিল্লার এক সংবাদকর্মী। গত সোমবার বিকেল পাঁচটায় নগরের বাদুরতলা এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন এনটিভির কুমিল্লা প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু। দুর্ঘটনায় পায়ে গুরুতর আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনও চিকিৎসা চলমান।
তিনি বলেন, আমি মোটরসাইকেল পার্ক করছিলাম। এমন সময় একটি অটোরিকশা এসে আমার শরীরে আঘাত করে। আমি পাশেই ছিলাম, কিন্তু তার নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তিনি বলেন, এসব পরিবহন ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহরে চলার উপযোগী নয়। কারণ একটি পরিবহনের শুধু মাত্র পায়ের ব্রেক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আর এসব পরিবহনের ফিটনেসও নেই। বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো যদি আমি না সরতাম।
অটোরিকশায় চড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন বৈশাখী টিভির কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন। তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় একাধিকবার তাকে নেওয়া হয়েছে ঢাকায়। প্রায় দুবছর ধরে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতেও পারছেন না তিনি।
বৈশাখী টিভির কুমিল্লার স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন জানান, কোনও কারণ ছাড়াই দুর্ঘটনা ঘটে, যার ভুক্তভোগী হই আমরা। প্রশাসনের নজিরদারি বাড়ালে এসব চালক আর নগরে ঢুকতে পারে না।
দুর্ঘটনায় নিজের স্বাভাবিক জীবন হারিয়েছেন কুমিল্লার একসময়কার মাঠ কাঁপানো খেলোয়ার রফিকুল ইসলাম সোহেল। স্পাইনাল কর্ডের গুরুতর জখমে একরকম দিশেহারা তিনি। একযুগের বেশি সময় হাঁটতে পারেন না তিনি। হুইলচেয়ারে কাটছে জীবন।
রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমার স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল একটি পরিবার। দুটি সন্তানের ভবিষ্যৎ। একজন স্ত্রীর সখ আর ভালোবাসা। হঠাৎই সব শেষ। আমি এখন হুইলচেয়ারে বসেই জীবন কাটাতে হবে। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেই বেঁচে যাবে অনেক জীবন।
এদিকে কুমিল্লার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য ক্লিনিকের তথ্যে জানা গেছে, প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু ঝামেলা মনে করে চিকিৎসার আগে বা পরে তেমন কেউই অভিযোগ করেন না।
যানজটের অপর নাম কুমিল্লা শহর
অবৈধ এসব যানের কারণে কুমিল্লা শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে দীর্ঘক্ষণ লেগে থাকে যানজট। এসব যানজটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ ভয়ঙ্করভাবে অটোরিকশা চালানো।
ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি পরিবহন হওয়ায় যানজটে নাকাল হয়ে যায় কুমিল্লা শহরবাসী। বিশেষ করে অফিস ও স্কুল ছুটির সময় নগরের প্রতিটি মোড়েই যানজট তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লেগে থাকে এই যানজট। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টো পথে চলে এসব পরিবহন। স্ট্যান্ড ছাড়াই দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো ও প্রতিযোগিতামূলকভাবে চালানোয় দুর্ভোগ কমে না এই শহরে।
হাসপাতালেও বাড়ছে রোগী
হাসপাতালে আগের তুলনায় বেড়েছে আহত রোগীর সংখ্যা। যার অধিকাংশই অটোরিকশায় দুর্ঘটনায় আহত। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিনহাজুর রহমান তারেক বলেন, হাসপাতালে আমরা আগে যে পরিমাণ রোগী পেতাম তার দ্বিগুণ পাই। যার প্রায় সব অটোরিকশায় আহত। অনেক রোগীর তো অঙ্গহানিও হয়।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহ আলম বলেন, আমি আসার পরই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা কমিটি, ট্রাফিক বিভাগ ও পুলিশের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শহরের মূল যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো বাছাই করেছি। সেখানে কীভাবে যানজট নিরসন করা যায় তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে যেহেতু নির্বাচন সামনে, তাই অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, মিশুক কমানোর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কি না তাও দেখেশুনে আগাচ্ছি।
কুমিল্লার ট্রাফিক ইনচার্জ সারোয়ার মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, যে পরিমাণ অটোরিকশা, সে তুলনায় আমাদের লোকবল কিছুই না। কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছি না। আমাদের লোকজনের গায়েও উঠিয়ে দেয় অটোরিকশা। চেষ্টা করছি তাদের ট্রাফিক আইনের বিষয়ে শেখাতে। আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু অটোরিকশা চিহ্নিত করে তাদের শুধুমাত্র শহরে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার একটি প্রচেষ্টাও চলছে। তবে এত বিশাল জনগোষ্ঠীর মাঝে এটি খুব সহজ কাজ নয়।