কুমিল্লা থেকে দূরদূরান্তে ছুটছে মানুষ, নেই ভাড়ার নৈরাজ্য

Thumbnail image

কুমিল্লার পরিবহন সেক্টরে ঈদেও ব্যস্ততা ২৬ মার্চ থেকে। ব্যস্ততার সঙ্গে বেড়েছে চালক ও সহযোগীদের নির্ঘুম পথ চলা। তাই কোথাও কোথাও যাত্রী থাকলেও বাস সংকট দেখা গেছে। তবে এবারের ঈদে কুমিল্লার কোন বাস স্ট্যান্ডেই বাড়তি ভাড়া নেয়ার নজির নেই।

শনিবার কুমিল্লা নগর ও শহরতলির শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া, পদুয়ার বাজার ও চকবাজার ঘুরে যাত্রী, চালক ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শাসনগাছা বাস স্ট্যান্ড থেকে কুমিল্লা জেলার ভেতরে ও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ১০টির বেশি পারিবহনের তিন শতাধিক বাসের চলাচল। জাঙ্গালিয়া থেকে কুমিল্লা জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় যায় ১৫টির বেশি পরিবহনের পাঁচ শতাধিক বাস। এছাড়া চকবাজার থেকে যায় পাঁচটি পরিবহনের শতাধিক বাস। আর পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে দেশের সব এলাকায় কয়েকশ বাসের যাতায়াত।

শাসনগাছা এলাকা ঘরে দেখা গেছে, শাসনগাছা থেকে গৌরীপুর হয়ে হোমনা যাওয়া একতা পরিবহন পূর্বের ভাড়া ১৩০ টাকাতেই যাত্রী সেবা দিচ্ছে, মুরাদনগরগামী এসি রয়েল সুপার ৮০ টাকা পূর্বে ভাড়াই নিচ্ছে। সিলেটের কদমতলী এলাকা যাচ্ছে রিয়েল কোচ। সেটিও পূর্বের ভাড়া ৫৫০ টাকা নিচ্ছে। এছাড়াও ইলিয়টগঞ্জগামী লাব্বাইক, দাউদকান্দিগামী পাপিয়া, কুটি চৌমুহনীগামী সুগন্ধা, কোম্পানিগঞ্জগামী ফারজানা, কুটুম্বপুরগামী সততা পরিবহনসহ প্রায় প্রত্যেক পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে পূর্বের ভাড়াতেই যাচ্ছেন তারা।

কুটুম্বপুরগামী সততা পরিবহনের যাত্রী রাবেয়া আক্তার কুমিল্লার বিসিক শিল্পনগরীতের চাুরি করেন। পরিবার নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে। বাস থেকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান, নিয়মিত যেই ভাড়া দিয়ে যেতেন, এখনও সেই ভাড়াতেই যাচ্ছেন। সব কিছুই স্বাভাবিক বর্ণনা করে তিনি অতিরিক্ত যাত্রীর রয়েছে বলে জানান।

সিলেটের কদমতলি এলাকার বাস চালক মো. হেলাল বলেন, এবারে সিলেট রুটে চলছে ৩৫টি বাস। যার মধ্যে ৫৫০টাকা ভাড়াতে সব বাস ছাড়ছে। কোথাও ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না।

তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে, জাঙ্গালিয়া বাস স্ট্যান্ডে। এখানে প্রত্যেক বাস কাউন্টারের সামনে আছে যাত্রীদের ভিড়। এই বাসস্ট্যান্ড থেকে চাঁদপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ আন্তজেলার বাস যায়। যার মাঝে, চাঁদপুরগামী বোগদাদ, আইদি, নোয়াখালীগামী উপকূল, ঢাকাগামী তিশা, এশিয়া এয়ারকন, মিয়ামি, চট্টগ্রামগামী তিশা পরিবহনের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীর তুলনায় পরিবহন সংকটে ভোগান্তিও ছিল। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাননি অনেক যাত্রী। পেলেও তা বিলম্ব হচ্ছে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত।

উপকূল বাসের যাত্রী মনিরুজ্জামান বলেন, প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে টিকিট পেলাম। জানতাম এমন ঝামেলা হবে। তাই পরিবারকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছি। ভাড়া আগের দামেই নিচ্ছে। তবে বাস নেই।

এদিকে চকবাজার থেকে চৌদ্দগ্রামগামী মদিনা পরিবহনের যাত্রী ওবায়েদ হোসেন মজুমদার বলেন, আমরা আগে যেই বাড়াতে যেতাম এখনও সেই ভাড়াতেই যাচ্ছি। এই বছর আর তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না।

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ছেড়ে যাওয়া হানিফ এন্টাপ্রাইজ, দেশ ট্রাভেলস, শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, তিশা প্লাটিনাম বাসের কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে যাত্রীদের লাইন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জানিফ ও শ্যামলী পরিবহনের বাসগুলো রংপুর রুটেও যাত্রী সেবা দিচ্ছেন। এসব বাসে কুমিল্লা থেকে ৯০০ ও চট্টগ্রাম থেকে ১৪০০ টাকা ভাড়া নিতেন। এখনও তাই নিচ্ছে।

হানিফ কাউন্টার কুমিল্লার সহযোগী আফসার উদ্দিন বলেন, ভাড়া বাড়তির কোন অভিযোগ নেই। কেউ দালালের খপ্পরে পড়লে আমাদের জানালে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেব আমরা। আমরা ভাড়া আগের মতই নিচ্ছি।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের বলেছেন তারা অতিরিক্ত ভাড়া নেবেন না। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকবেন। আমরা শুধু কথাতে থেমে থাকিনি। নিয়মিত তদারকিও করছি। বেশি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ এখনও পাইনি। তবে প্রত্যেক স্ট্যান্ডে ব্যস্ততা আছে।

বাস মালিক সমিতি কুমিল্লা জেলার সভাপতি তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, বাস ট্রাক মালিক সমিতি, চালক সমিতি ও পরিবহনের সকল সমিতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। টার্মিনালের বাইরে কোথাও যেন যাত্রী না ওঠানামা করা হয় তার জন্য কঠোরভাবে বলা হয়েছে। এছাড়া বেশি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে কঠোরভাবে বলা হয়েছে। আমরা জানিয়েছি কেউ এমন করলোই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত