ভুয়া খাদির অবস্থা রমরমা
তৈয়বুর রহমান সোহেল

কুমিল্লার চান্দিনার বেলাশ্বর। মহাসড়ক লাগোয়া চান্দিনা বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম। এই গ্রামে আছে ডেনিম গার্মেন্ট। যেখানে কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। গার্মেন্ট সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার কাছে খাদি কাপড়ের উৎপাদন হয় কোথায় জানতে চাই। কেউ উত্তর দিতে পারেন না। দুই-একজন পাশের থানগাঁও গ্রাম দেখিয়ে দেন। যে গ্রামের খাদি সারা দুনিয়া মাত করেছে, সেই গ্রামে খাদি কাপড় কোথায় তৈরি হয় তা জানেন না এখানকার যুবসমাজ, ভাবতেই মন খারাপ হয়ে ওঠে। একটু পূর্ব দিকে যেতে চোখে পড়ে ছোট টং দোকান। দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। নাম ক্ষিতিশ দেবনাথ। একটু কথা বলে জানা গেল এই ক্ষিতিশ দেবনাথ ও তাঁর ভাতিজা মতিলাল দেবনাথ এই গ্রামে এখনো খাদি কাপড়ের উৎপাদন ধরে রেখেছেন। পরিচয় হওয়ার পর ক্ষিতিশ দেবনাথ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূল ঘর থেকে দক্ষিণ দিকে কাচারি ঘরের মতো একটি ঘর। ঘরের ভেতর চরকি, চরকা আর হ্যান্ডলুম মেশিন। যে মেশিনে হাতের সাহায্যে তাঁত বোনা হয়। গর্তে বসে দুই হাত দিয়ে টেনে সুতা থেকে কাপড় তৈরি হয়। তুলা থেকে সুতা বানানো হয় চরকায়। পাশে চৌকির ওপর সুতা ও থান কাপড়ের ভাঁজ ফেলে রাখা হয়েছে।
ক্ষিতিশ দেবনাথ জানান, ৪০ বছর ধরে আমি এই কাজ করছি। বাবা ও আমরা সাত ভাই মিলে খাদি কাপড় তৈরি করতাম। আমি পরিবারের ছোট ছেলে। বাবা ও চার ভাই মারা গেছেন। দুই ভাইয়ের অনেক বয়স। তারা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমার তিন মেয়ে, ছেলে নেই। তাছাড়া আমার বয়স এখন ৬৫, শ্বাসকষ্ট আছে। এক ভাতিজা ছাড়া কেউ এই পেশায় রইল না। দুঃখ হয়, আমার মৃত্যুর পর এই গ্রামে কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদিকে কেউ ধরে রাখবে বলে মনে হয় না।
তিনি আফসোস করে বলেন, ছোট বেলায় অন্য কাজ শিখিনি। ছেলে সন্তানও নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা আগে কাজে সহায়তা করতো। এখন কেউ কাজে সহযোগিতা করে না। দিনে ১২ থেকে ১৫ গজ কাপড় বানাই। শীত মৌসুমে ওইসব কাপড় বিক্রি করি। গড়ে প্রতিগজ কাপড়ে ২০ টাকা লাভ হয়। এ কাপড়ের একটি অংশ শহরে পাঠাই। বাকি অংশ সিঙ্গাপুর ও জাপানের কিছু কাস্টমার নিয়ে যান।
তিনি জানান, এ কাপড়ের চাহিদা কমেনি। পুরো বছরের বানানো কাপড় কখনো কখনো এক সপ্তাহেই বিক্রি হয়ে যায়। সমস্যা হলো, উৎপাদন আগের মতো নেই। যেমন, করোনার পূর্বে আমার ও মতিলালের আটটি হ্যান্ডলুম মেশিন ছিল। এখন আছে দুটি। শহরে অনেকবার ঋণের জন্য গিয়েছি। চার শতাংশ সুদে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ঋণের টাকা অন্যদের দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করেও হতাশ হই। এভাবে আমরা তাঁত শিল্পী, যারা এ পেশা ধরে রেখেছি, সবাইকেই বঞ্চিত করা হয়। নতুনদেরও এ পেশায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে না। কোনো মার্কেটিং নেই। মোটকথা, খাদিকে বাঁচাতে প্রশাসনের কোনো সুদৃষ্টি গত ১০ বছর চোখে পড়েনি।
খাদির বর্তমান অবস্থা
কুমিল্লার মুরাদনগরের সাঁইচাইল ও চান্দিনার বেলাশ্বরের ( বেলাশহর) অন্তত এক হাজার পরিবার খাদি কাপড় উৎপাদনের সাথে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেবীদ্বারের বরকামতায় ৫০টি পরিবার সাঁইচাইল থেকে এসে খাদি কাপড় উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে এই তিন গ্রামের মোট সাতটি পরিবার খাদি কাপড় উৎপাদনের সাথে জড়িত আছেন। যাদের দিনে গড় উৎপাদন ১০০ গজ কাপড়। যার একটি অংশ বিদেশিরা কিনে নেন।
এদিকে, বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরের রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত এসব দোকানের অবস্থান। এসব দোকানের তিন-চারটি বাদে বাকি সব দোকানেই মেশিনে ( পাওয়ার লুম) তৈরি কাপড় বিক্রি হয়। ওইসব দোকানে খাদিকাপড়ের পাশাপাশি পাওয়ার লুমে তৈরি কাপড় বিক্রি হয় বেশি। পাঞ্জাবি, ফতোয়া, থ্রি-পিস ও চাদরের চাহিদা বেশি।
দিনে যে পরিমাণ পোশাক বিক্রি হয়, তাতে অন্তত ২০ হাজার গজ কাপড়ের দরকার হয়।
খাদি কুটিরের স্বত্বাধিকারী অরুপ সরকার বলেন, দিন দিন মানুষ ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকে গেছে। তারা নিখুঁত কাপড় পছন্দ করেন। হাতে তৈরি খাদি কাপড় পরতে বেশ আরামদায়ক। কিন্তু টেকসই নয়। হাতে তাঁত বোনার কারণে এসব কাপড় নিখুঁতও হয় না। অপরদিকে মেশিনে বোনা কাপড় নিখুঁত ও টেকসই। তবে, অরিজিনাল খাদির মতো আরামদায়ক নয়। বেশিরভাগ মানুষ মেশিনের চকচকে জিনিসটাই বেছে নিচ্ছেন।
খাদি ভূষণের স্বত্বাধিকারী চন্দন দেব রায় জানান, নব্বইয়ের দশকে মেশিনারি কাপড়ের উৎপাদন বেড়ে যায়। দামের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। খাদি আমাদের ঐতিহ্য, এটা ব্র্যান্ড। প্রকৃত খাদি কাপড়ের চাহিদাও অনেক। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতো।
খাদির ইতিহাস
খাদে বসে হ্যান্ডলুমে তাঁত বোনা হয় বলে এ কাপড়ের নাম খাদি হয়েছে- খাদির জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ কথাটি প্রচলিত আছে। দুর্গাপূজার দশমীর দিন কুমিল্লায় খাদি কাপড় বিক্রির জোয়ার সৃষ্টি হতো। ব্যবসায়ীরা দলবেঁধে এসে খাদি কাপড় নিয়ে যেতেন।
কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন আহসানুল কবির। তিনি বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে একশ বছরেরও বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে যায়। মহাত্মা গান্ধী নিজেও খাদির চাদর পরিধান করতেন। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। এটার প্রচলন গত ৩০ বছর পূর্বেও ব্যাপকহারে ছিল।
তিনি আরও বলেন, খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। একে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার মহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন জানান, চান্দিনায় খাদি নিয়ে একটি প্রকল্প বহুদূর এগিয়ে গিয়েছিল। প্রকল্পটি সবুজপাতায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছু বরাদ্দও আসে। পরবর্তীতে বেসলাইন থেকে নেতিবাচক রিপোর্ট যাওয়ায় প্রকল্পটি আগায়নি। বরাদ্দকৃত টাকাও ফেরত যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি তাঁতবোর্ডে রয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, খাদি শিল্পীরা তাঁদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সাহায্য করা হবে। জমি বা ঋণ সংক্রান্ত কাজে সহায়তা চাইলেও জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় কুমিল্লার খাদি।

কুমিল্লার চান্দিনার বেলাশ্বর। মহাসড়ক লাগোয়া চান্দিনা বাজার থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি গ্রাম। এই গ্রামে আছে ডেনিম গার্মেন্ট। যেখানে কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। গার্মেন্ট সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার কাছে খাদি কাপড়ের উৎপাদন হয় কোথায় জানতে চাই। কেউ উত্তর দিতে পারেন না। দুই-একজন পাশের থানগাঁও গ্রাম দেখিয়ে দেন। যে গ্রামের খাদি সারা দুনিয়া মাত করেছে, সেই গ্রামে খাদি কাপড় কোথায় তৈরি হয় তা জানেন না এখানকার যুবসমাজ, ভাবতেই মন খারাপ হয়ে ওঠে। একটু পূর্ব দিকে যেতে চোখে পড়ে ছোট টং দোকান। দোকানে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। নাম ক্ষিতিশ দেবনাথ। একটু কথা বলে জানা গেল এই ক্ষিতিশ দেবনাথ ও তাঁর ভাতিজা মতিলাল দেবনাথ এই গ্রামে এখনো খাদি কাপড়ের উৎপাদন ধরে রেখেছেন। পরিচয় হওয়ার পর ক্ষিতিশ দেবনাথ তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যান।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূল ঘর থেকে দক্ষিণ দিকে কাচারি ঘরের মতো একটি ঘর। ঘরের ভেতর চরকি, চরকা আর হ্যান্ডলুম মেশিন। যে মেশিনে হাতের সাহায্যে তাঁত বোনা হয়। গর্তে বসে দুই হাত দিয়ে টেনে সুতা থেকে কাপড় তৈরি হয়। তুলা থেকে সুতা বানানো হয় চরকায়। পাশে চৌকির ওপর সুতা ও থান কাপড়ের ভাঁজ ফেলে রাখা হয়েছে।
ক্ষিতিশ দেবনাথ জানান, ৪০ বছর ধরে আমি এই কাজ করছি। বাবা ও আমরা সাত ভাই মিলে খাদি কাপড় তৈরি করতাম। আমি পরিবারের ছোট ছেলে। বাবা ও চার ভাই মারা গেছেন। দুই ভাইয়ের অনেক বয়স। তারা এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। আমার তিন মেয়ে, ছেলে নেই। তাছাড়া আমার বয়স এখন ৬৫, শ্বাসকষ্ট আছে। এক ভাতিজা ছাড়া কেউ এই পেশায় রইল না। দুঃখ হয়, আমার মৃত্যুর পর এই গ্রামে কুমিল্লার ঐতিহ্য খাদিকে কেউ ধরে রাখবে বলে মনে হয় না।
তিনি আফসোস করে বলেন, ছোট বেলায় অন্য কাজ শিখিনি। ছেলে সন্তানও নেই। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ওরা আগে কাজে সহায়তা করতো। এখন কেউ কাজে সহযোগিতা করে না। দিনে ১২ থেকে ১৫ গজ কাপড় বানাই। শীত মৌসুমে ওইসব কাপড় বিক্রি করি। গড়ে প্রতিগজ কাপড়ে ২০ টাকা লাভ হয়। এ কাপড়ের একটি অংশ শহরে পাঠাই। বাকি অংশ সিঙ্গাপুর ও জাপানের কিছু কাস্টমার নিয়ে যান।
তিনি জানান, এ কাপড়ের চাহিদা কমেনি। পুরো বছরের বানানো কাপড় কখনো কখনো এক সপ্তাহেই বিক্রি হয়ে যায়। সমস্যা হলো, উৎপাদন আগের মতো নেই। যেমন, করোনার পূর্বে আমার ও মতিলালের আটটি হ্যান্ডলুম মেশিন ছিল। এখন আছে দুটি। শহরে অনেকবার ঋণের জন্য গিয়েছি। চার শতাংশ সুদে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে ঋণের টাকা অন্যদের দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করেও হতাশ হই। এভাবে আমরা তাঁত শিল্পী, যারা এ পেশা ধরে রেখেছি, সবাইকেই বঞ্চিত করা হয়। নতুনদেরও এ পেশায় উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে না। কোনো মার্কেটিং নেই। মোটকথা, খাদিকে বাঁচাতে প্রশাসনের কোনো সুদৃষ্টি গত ১০ বছর চোখে পড়েনি।
খাদির বর্তমান অবস্থা
কুমিল্লার মুরাদনগরের সাঁইচাইল ও চান্দিনার বেলাশ্বরের ( বেলাশহর) অন্তত এক হাজার পরিবার খাদি কাপড় উৎপাদনের সাথে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতার পর দেবীদ্বারের বরকামতায় ৫০টি পরিবার সাঁইচাইল থেকে এসে খাদি কাপড় উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে এই তিন গ্রামের মোট সাতটি পরিবার খাদি কাপড় উৎপাদনের সাথে জড়িত আছেন। যাদের দিনে গড় উৎপাদন ১০০ গজ কাপড়। যার একটি অংশ বিদেশিরা কিনে নেন।
এদিকে, বর্তমানে কুমিল্লা শহরে খাদির নাম সংযুক্ত দোকান আছে চার শতাধিক। নগরের রাজগঞ্জ বাজারের পশ্চিম দিক থেকে কান্দিরপাড়ের রামঘাটলা পর্যন্ত এসব দোকানের অবস্থান। এসব দোকানের তিন-চারটি বাদে বাকি সব দোকানেই মেশিনে ( পাওয়ার লুম) তৈরি কাপড় বিক্রি হয়। ওইসব দোকানে খাদিকাপড়ের পাশাপাশি পাওয়ার লুমে তৈরি কাপড় বিক্রি হয় বেশি। পাঞ্জাবি, ফতোয়া, থ্রি-পিস ও চাদরের চাহিদা বেশি।
দিনে যে পরিমাণ পোশাক বিক্রি হয়, তাতে অন্তত ২০ হাজার গজ কাপড়ের দরকার হয়।
খাদি কুটিরের স্বত্বাধিকারী অরুপ সরকার বলেন, দিন দিন মানুষ ফ্যাশনের দিকে ঝুঁকে গেছে। তারা নিখুঁত কাপড় পছন্দ করেন। হাতে তৈরি খাদি কাপড় পরতে বেশ আরামদায়ক। কিন্তু টেকসই নয়। হাতে তাঁত বোনার কারণে এসব কাপড় নিখুঁতও হয় না। অপরদিকে মেশিনে বোনা কাপড় নিখুঁত ও টেকসই। তবে, অরিজিনাল খাদির মতো আরামদায়ক নয়। বেশিরভাগ মানুষ মেশিনের চকচকে জিনিসটাই বেছে নিচ্ছেন।
খাদি ভূষণের স্বত্বাধিকারী চন্দন দেব রায় জানান, নব্বইয়ের দশকে মেশিনারি কাপড়ের উৎপাদন বেড়ে যায়। দামের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। খাদি আমাদের ঐতিহ্য, এটা ব্র্যান্ড। প্রকৃত খাদি কাপড়ের চাহিদাও অনেক। ভালো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প ঘুরে দাঁড়াতো।
খাদির ইতিহাস
খাদে বসে হ্যান্ডলুমে তাঁত বোনা হয় বলে এ কাপড়ের নাম খাদি হয়েছে- খাদির জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ কথাটি প্রচলিত আছে। দুর্গাপূজার দশমীর দিন কুমিল্লায় খাদি কাপড় বিক্রির জোয়ার সৃষ্টি হতো। ব্যবসায়ীরা দলবেঁধে এসে খাদি কাপড় নিয়ে যেতেন।
কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণা করেন আহসানুল কবির। তিনি বলেন, খাদির গোড়াপত্তন হয়েছে একশ বছরেরও বেশি সময় আগে। ওই সময় শুধু খাদি কাপড় নয়, কুমিল্লার বেনারসি শাড়িরও তুমুল চাহিদা ছিল। সারা বিশ্বেই কুমিল্লার শাড়ি ও খাদি কাপড়ের নামডাক ছিল। স্বদেশি আন্দোলনের সময় মহাত্মা গান্ধী বিদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দেন। মোটা কাপড়, মোটা ভাত-সর্বত্র এমন আওয়াজ ওঠে। স্বদেশি আন্দোলনের পর খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে যায়। মহাত্মা গান্ধী নিজেও খাদির চাদর পরিধান করতেন। কুমিল্লার মানুষ খাদি কাপড় পছন্দ করতেন। বড় বড় নেতারা খাদির পায়জামা, চাদর, পাঞ্জাবি পরে গৌরববোধ করতেন। এটার প্রচলন গত ৩০ বছর পূর্বেও ব্যাপকহারে ছিল।
তিনি আরও বলেন, খাদি কুমিল্লাকে ব্র্যান্ডিং করে। একে ভালোভাবে টিকিয়ে রাখা জরুরি।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুমিল্লার মহাব্যবস্থাপক মুনতাসীর মামুন জানান, চান্দিনায় খাদি নিয়ে একটি প্রকল্প বহুদূর এগিয়ে গিয়েছিল। প্রকল্পটি সবুজপাতায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছু বরাদ্দও আসে। পরবর্তীতে বেসলাইন থেকে নেতিবাচক রিপোর্ট যাওয়ায় প্রকল্পটি আগায়নি। বরাদ্দকৃত টাকাও ফেরত যায়। বর্তমানে প্রকল্পটি তাঁতবোর্ডে রয়েছে।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, খাদি শিল্পীরা তাঁদের যেকোনো সমস্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সাহায্য করা হবে। জমি বা ঋণ সংক্রান্ত কাজে সহায়তা চাইলেও জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায় কুমিল্লার খাদি।