বিপাকে শিক্ষার্থী-চাকরিজীবীরা

এক দশকে মেস ভাড়া তিনগুণ বৃদ্ধি

Thumbnail image

কুমিল্লা শহর ও আশপাশের এলাকায় গত এক দশকে মেস ভাড়া বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। ২০১৫ সালের দিকে যেখানে একটি সাধারণ মেস রুমের ভাড়া ছিল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে, বর্তমানে একই রুমের ভাড়া ২০০০ টাকা বা তারও বেশি। এতে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, কলেজ পড়ুয়া তরুণ এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের চাকরিজীবীরা।

বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা পলিটেকনিক ও বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আশপাশে ব্যাচেলর বাসা ও মেসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাসা ভাড়ার এই ঊর্ধ্বগতিতে তারা পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন।

কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জ, চকবাজার, কোটবাড়ি, কান্দিরপাড়, মনোহরপুর, সদর হাসপাতাল রোড, ধর্মপুর, অশোকতলা, ছায়া বিতান, করভবন এলাকা, ঠাকুরপাড়া, দৌলতপুর, টমছমব্রিজ, বাগিচাগাঁও এলাকার অন্তত ২০টি মেসে ঘুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব এলাকাতেই এখন ব্যাচেলরদের জন্য ভাড়া ২০০০ টাকার নিচে পাওয়া দুষ্কর। এর মধ্যেই আছে বিদ্যুৎ বিল, ওয়াইফাই বিল ও বুয়া বিল। যা ভাড়া হিসেবে গণ্য করা হয়। কোথায় কোথাও এই ভাড়া দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত গড়ায়।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সজিব মিয়া প্রায় আট বছর ধরে বিভিন্ন মেসে থাকছেন। তিনি বলেন, একসময় ৭০০ টাকায় ভালো একটা রুম পাওয়া যেত। এখন একই রুমের ভাড়া ২০০০ টাকার কমে পাওয়া যায় না। ২০০০ টাকার কমেও কিছু মেসে থাকা যায় কিন্তু থাকার পরিবেশের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। অথচ আয় বা টিউশন ফি আগের মতোই আছে। মাসের শেষ দিকে টাকার চিন্তায় পড়তে হয়।

শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, মেসে থাকা অনেক ছোট চাকরিজীবীও একই সংকটে পড়েছেন। শহরের কান্দিরপাড় এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বেতন সামান্য বেড়েছে, কিন্তু খরচ বেড়েছে বহুগুণ। আগের তুলনায় ভাড়া, খাবার, বিদ্যুৎ—সব মিলিয়ে জীবনযাত্রা এখন কঠিন হয়ে উঠেছে।

ভাড়া বৃদ্ধিতে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মনির হোসেনও। তিনি দৈনিক আমার শহরকে বলেন, একজন শিক্ষার্থী বেশি বাসা ভাড়া দিতে বেশি টিউশন করার প্রয়োজন হয়। বেশি টিউশন করলে তার পড়াশোনা থেকে মন সরে যায়। এতে করে সামগ্রিক জীবনে প্রভাব পড়ে। আমরা চাই বাসাবাড়ির মালিকরা যেন বাসার ভাড়া কিছুটা হলেও কমিয়ে আনেন।

স্থানীয় বাসা মালিকদের দাবি, বাড়িভাড়া বাড়ানোর পেছনে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, ট্যাক্সসহ বিভিন্ন খরচের বৃদ্ধি। তবে শিক্ষার্থীদের মতে, মেস ভাড়ায় এখন কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বাড়িওয়ালারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দৈনিক আমার শহরকে বলেন, মেস ও ব্যাচেলর বাসার এই অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধির কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বাধ্য হচ্ছে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করতে। এতে শিক্ষার মানেও প্রভাব পড়ছে।

তিনি বলেন, যদি বাসা বাড়ির মালিকদের মাঝে সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরি করা যায় তাহলে হয়তো এটি একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত