আবদুল্লাহ আল মারুফ
সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সড়ক। তার দুই পাশে ছিল জঙ্গল। দিন দুপুরেও ছিল না মানুষের আনাগোনা। বিকেল হলেই শিয়ালের ডাক। ভয়ে চলাচল ছিল না মানুষের। মাঝে মাঝে মিলত মানুষের মৃতদেহ। সেই স্থানে এখন অর্ধলাখ মানুষের কর্মসংস্থান। যার মধ্যে ৬৬ ভাগ নারী। আর কাঁচা ঘর থেকে হয়েছে পাকা ঘর। পরিবর্তন হয়েছে আশেপাশের অর্থনৈতিক অবস্থা। পালটে গেছে মানুষের জীবন ধারা। জাতীয় অর্থনীতিতে যার ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। বলছি কুমিল্লা ইপিজেডের কথা।
সরকার ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গায় নিয়ে ইপিজেড প্রকল্প শুরু করেন এবং ২০০০ সাল থেকে তার রপ্তানি প্রকিয়াকরণ শুরু হয়। কালক্রমে পরিবর্তন হতে থাকে ওই এলাকার মানুষের জীবন। খালি স্থানগুলো ভরে যায় বিভিন্ন দালান কোঠায়। বাড়তে থাকে মানুষের কর্মসংস্থান। বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে বেকাররা। কমতে থাকে আশেপাশের বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে এ ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তার সাথে উন্নয়ন হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। একটি অন্ধকার অঞ্চলকে আলোতে আনতে জাদুর কাঠির মতো কাজ করেছে এই ইপিজেড।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ। গত তিন বছরে এখান থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর রপ্তানি গত তিন বছরকে ছাড়িয়ে এক হাজার মিলিয়ন ডলার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা ইপিজেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসে (জুন থেকে জানুয়ারি) ৬১৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাকি পাঁচ মাসে এটি এক হাজার মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত যেতে পারে। বিগত বছরগুলোতে এমন রপ্তানির রেকর্ড নেই। এই সাফল্য এবারই প্রথম।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চর্থা এলাকায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। এখানে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে কর্মরত আছেন ৫০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত তিন অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করেছে দুই হাজার ৯৩৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কুমিল্লার অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ইপিজেড এ ৫০ হাজার লোকবল কাজ করছে। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। যারা এখানে পরিবার নিয়ে কেউ একা বসবাস করেন। প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ৫০ হাজার কর্মীর জন্য ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি বছর তা দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা হয়। যা কুমিল্লার বাজারে সরাসরি খরচ হচ্ছে। কুমিল্লার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
এছাড়াও কুমিল্লা ইপিজেড ঘিরে তৈরি হয়েছে আরও কর্মসংস্থান। তৈরি হয়েছে নতুন বাজার ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। যাতে আশ্রাফপুরসহ শহরতলীর ইয়াছিন মার্কেট, পকেট গেট, নেউরা, চর্থা, মেডিকেল রোড এলাকায় বেড়েছে অর্থনৈতিক লেনদেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ায় সেখানেও বেড়েছে কর্মসংস্থান। বেড়েছে বাড়ি ভাড়া। কাঁচাঘর থেকে হয়েছে পাকাঘর। একতলা ভবন হয়েছে বহুতল।
কুমিল্লা ইপিজেডে শ্রমিক-কর্মচারীদের ৬৬ শতাংশই নারী উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইপিজেড। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার লোক অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। এখানে কর্মরত ২৭০ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকর্মী শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। সবার জীবনযাত্রার জন্য ব্যয় হওয়া অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।’
ইপিজেড ঘিরে ব্র্যান্ডশপ
কুমিল্লা ইপিজেড ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন ব্র্যান্ডশপ। দেশ সেরা শপিং ব্র্যান্ড স্বপ্ন, ডেইলি শপিং, রোশো ব্র্যান্ড শপসহ বিভিন্ন ব্যাংক তাদের ইপিজেড কেন্দ্রিক তাদের শাখা চালু করেছে। এতে করে এই এলাকা অর্থনীতির নতুন হাব হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
যার মাঝে ২০১৩ সালে রোসা সুপারশপ, ২০১৬ সালে স্বপ্ন সুপারশপ ও ২০২১ সালে ডেইলি শপিংসহ ২০২০ সালে সিঙ্গার ও রিগ্যালপর শো রুম ও বেস্ট বাইসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড শপ যাত্রা শুরু করে। ইপিজেডের শ্রমিকসহ এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দ্রব্য কিনতে পারে এসব সুপারশপ থেকে। সুপারশপ তৈরিতে কর্মসংস্থান হয় বেকার স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইপিজেড গেটে বিভিন্ন সুপারশপ হওয়াতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। ডিউটি শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে বাচ্চাদের পছন্দ মতে বিভিন্ন ধরনের গোস্ত, মাছ, শাক-সবজি, ফল-মুল প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রয় করতে পারি।
সিঙ্গার শো-রুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. নাঈম উদ্দিন জানান, সিঙ্গার বাংলাদেশে ১৯০৫ সালে থেকে গ্রাহকদের মন জয় করে আসছে। ইপিজেডকে কেন্দ্র করে এখানে সিঙ্গারের ব্রাঞ্চ হওয়াতে ইপিজেডের কর্মীরা তাদের প্রয়োজন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লাইয়েন্স পণ্যের চাহিদা পূরণ করছে। এখানে শো-রুম চালু হয়ার পর থেকে আমরা সফলতার সাথে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এতে গ্রাহকরাও সন্তুষ্ট।
দক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা মো. সোহাগ জানান, ছোট বেলায় আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। ইপিজেড হওয়ায় বাবার রেখে যাওয়া দশ গণ্ডা জায়গায় আমি টিন সেট ঘরে সিঙ্গেল সিঙ্গেল রুম করি এবং তা ইপিজেডের শ্রমিকদের ভাড়া দেই। তা থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে আমার পরিবার খুব সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছে এবং অতিরিক্ত অর্থ আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করছি।
ইপিজেডের এক নম্বর গেটের দোকানদার আবুল কালাম বলেন, আমি ইপিজেড হওয়ায় পরে এখানে এসে একটি দোকান দেই। বর্তমানে আমার দোকানে আয় দিয়ে আমার সংসার ভালো ভালো চলে যাচ্ছে। আমার ছেলে মেয়েদেরকে ভালো স্কুল এবং মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি। ইপিজেডের পাশে আমার একটি পাঁচ তলায় বাড়িও রয়েছে যা আমি শ্রমিকদের নিকট ভাড়া দিয়ে মাসে ভালো টাকা আয় করতেছি।
আবুল কালামের দোকানের শ্রমিক মো. হাসান মিয়া জানায়, আমার পরিবারের বড় ছেলে আমি। আমার পরিবারের সদস্য ছয়জন। বাবা কৃষক হওয়ায় আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারে নাই। তাই আমি কাজের খোঁজে আসি ইপিজেডে। এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় আমার চাকরি হয়। এখন সব মিলিয়ে বেতন পায় পনেরো হাজার, দুই ঈদে আবার বোনাসও পাই। আমার খরচের টাকা রেখে বাকিগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দেই, সে টাকা দিয়ে ছোট ভাই বোনের লেখাপড়াসহ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই যাচ্ছে আমাদের পরিবারের দিনগুলো।
ইপিজেডের সামনে সবজি বিক্রেতার মফিজ জানায়, আমার শারীরিক জটিলতার কারণে ভারী কোন কাজ কর্ম করতে ডাক্তার নিষেধ করেছে। এলাকার একজনের সহযোগিতায় কিছু অর্থ নিয়ে ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রয় শুরু করি ইপিজেডের সামনে। আজ দুই বছর হয়েছে এখানে সবজি বিক্রয় করি। সবজি বিক্রি করে যে টাকা পেয়ে থাকি তা দিয়ে আমার সংসার খুব সুন্দর চলছে। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়েছি স্কুলে।
কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, কুমিল্লার অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ ইপিজেড। এই এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এই ইপিজেডের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে অনেক কোম্পানির চাহিদা বেড়েছে। যদি তাদের চাহিদা মতো আমরা সুযোগ করে দিতে পারতাম তাহলে আরও কর্মসংস্থান বাড়তো। আশা করি, সরকার বিষয়টি নজর দেবে।
সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সড়ক। তার দুই পাশে ছিল জঙ্গল। দিন দুপুরেও ছিল না মানুষের আনাগোনা। বিকেল হলেই শিয়ালের ডাক। ভয়ে চলাচল ছিল না মানুষের। মাঝে মাঝে মিলত মানুষের মৃতদেহ। সেই স্থানে এখন অর্ধলাখ মানুষের কর্মসংস্থান। যার মধ্যে ৬৬ ভাগ নারী। আর কাঁচা ঘর থেকে হয়েছে পাকা ঘর। পরিবর্তন হয়েছে আশেপাশের অর্থনৈতিক অবস্থা। পালটে গেছে মানুষের জীবন ধারা। জাতীয় অর্থনীতিতে যার ভূমিকা অবিচ্ছেদ্য। বলছি কুমিল্লা ইপিজেডের কথা।
সরকার ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ ২৬৭ দশমিক ৪৬ একর জায়গায় নিয়ে ইপিজেড প্রকল্প শুরু করেন এবং ২০০০ সাল থেকে তার রপ্তানি প্রকিয়াকরণ শুরু হয়। কালক্রমে পরিবর্তন হতে থাকে ওই এলাকার মানুষের জীবন। খালি স্থানগুলো ভরে যায় বিভিন্ন দালান কোঠায়। বাড়তে থাকে মানুষের কর্মসংস্থান। বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে বেকাররা। কমতে থাকে আশেপাশের বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে এ ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। তার সাথে উন্নয়ন হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। একটি অন্ধকার অঞ্চলকে আলোতে আনতে জাদুর কাঠির মতো কাজ করেছে এই ইপিজেড।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য রপ্তানিতে রেকর্ড গড়েছে কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ। গত তিন বছরে এখান থেকে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। চলতি বছর রপ্তানি গত তিন বছরকে ছাড়িয়ে এক হাজার মিলিয়ন ডলার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা ইপিজেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাত মাসে (জুন থেকে জানুয়ারি) ৬১৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বাকি পাঁচ মাসে এটি এক হাজার মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত যেতে পারে। বিগত বছরগুলোতে এমন রপ্তানির রেকর্ড নেই। এই সাফল্য এবারই প্রথম।
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ চর্থা এলাকায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা ইপিজেড। এখানে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে কর্মরত আছেন ৫০ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। গত তিন অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করেছে দুই হাজার ৯৩৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কুমিল্লার অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা
ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা ইপিজেড এ ৫০ হাজার লোকবল কাজ করছে। তাদের বেশির ভাগই স্থানীয়। যারা এখানে পরিবার নিয়ে কেউ একা বসবাস করেন। প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ৫০ হাজার কর্মীর জন্য ২০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি বছর তা দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা হয়। যা কুমিল্লার বাজারে সরাসরি খরচ হচ্ছে। কুমিল্লার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
এছাড়াও কুমিল্লা ইপিজেড ঘিরে তৈরি হয়েছে আরও কর্মসংস্থান। তৈরি হয়েছে নতুন বাজার ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। যাতে আশ্রাফপুরসহ শহরতলীর ইয়াছিন মার্কেট, পকেট গেট, নেউরা, চর্থা, মেডিকেল রোড এলাকায় বেড়েছে অর্থনৈতিক লেনদেন। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ায় সেখানেও বেড়েছে কর্মসংস্থান। বেড়েছে বাড়ি ভাড়া। কাঁচাঘর থেকে হয়েছে পাকাঘর। একতলা ভবন হয়েছে বহুতল।
কুমিল্লা ইপিজেডে শ্রমিক-কর্মচারীদের ৬৬ শতাংশই নারী উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইপিজেড। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার লোক অস্থায়ীভাবে কাজ করেন। এখানে কর্মরত ২৭০ জন বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকর্মী শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। সবার জীবনযাত্রার জন্য ব্যয় হওয়া অর্থ দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে।’
ইপিজেড ঘিরে ব্র্যান্ডশপ
কুমিল্লা ইপিজেড ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন ব্র্যান্ডশপ। দেশ সেরা শপিং ব্র্যান্ড স্বপ্ন, ডেইলি শপিং, রোশো ব্র্যান্ড শপসহ বিভিন্ন ব্যাংক তাদের ইপিজেড কেন্দ্রিক তাদের শাখা চালু করেছে। এতে করে এই এলাকা অর্থনীতির নতুন হাব হিসেবে তৈরি হচ্ছে।
যার মাঝে ২০১৩ সালে রোসা সুপারশপ, ২০১৬ সালে স্বপ্ন সুপারশপ ও ২০২১ সালে ডেইলি শপিংসহ ২০২০ সালে সিঙ্গার ও রিগ্যালপর শো রুম ও বেস্ট বাইসহ কয়েকটি ব্র্যান্ড শপ যাত্রা শুরু করে। ইপিজেডের শ্রমিকসহ এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দ্রব্য কিনতে পারে এসব সুপারশপ থেকে। সুপারশপ তৈরিতে কর্মসংস্থান হয় বেকার স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের।
কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইপিজেড গেটে বিভিন্ন সুপারশপ হওয়াতে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। ডিউটি শেষ করে বাসায় যাওয়ার পথে বাচ্চাদের পছন্দ মতে বিভিন্ন ধরনের গোস্ত, মাছ, শাক-সবজি, ফল-মুল প্রয়োজন অনুযায়ী ক্রয় করতে পারি।
সিঙ্গার শো-রুমের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মো. নাঈম উদ্দিন জানান, সিঙ্গার বাংলাদেশে ১৯০৫ সালে থেকে গ্রাহকদের মন জয় করে আসছে। ইপিজেডকে কেন্দ্র করে এখানে সিঙ্গারের ব্রাঞ্চ হওয়াতে ইপিজেডের কর্মীরা তাদের প্রয়োজন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লাইয়েন্স পণ্যের চাহিদা পূরণ করছে। এখানে শো-রুম চালু হয়ার পর থেকে আমরা সফলতার সাথে গ্রাহক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এতে গ্রাহকরাও সন্তুষ্ট।
দক্ষিণ চর্থা এলাকার বাসিন্দা মো. সোহাগ জানান, ছোট বেলায় আমার বাবা মারা যায়। তারপর থেকে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না। ইপিজেড হওয়ায় বাবার রেখে যাওয়া দশ গণ্ডা জায়গায় আমি টিন সেট ঘরে সিঙ্গেল সিঙ্গেল রুম করি এবং তা ইপিজেডের শ্রমিকদের ভাড়া দেই। তা থেকে যে অর্থ আসে তা দিয়ে আমার পরিবার খুব সুন্দরভাবে চলে যাচ্ছে এবং অতিরিক্ত অর্থ আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করছি।
ইপিজেডের এক নম্বর গেটের দোকানদার আবুল কালাম বলেন, আমি ইপিজেড হওয়ায় পরে এখানে এসে একটি দোকান দেই। বর্তমানে আমার দোকানে আয় দিয়ে আমার সংসার ভালো ভালো চলে যাচ্ছে। আমার ছেলে মেয়েদেরকে ভালো স্কুল এবং মাদ্রাসায় পড়াচ্ছি। ইপিজেডের পাশে আমার একটি পাঁচ তলায় বাড়িও রয়েছে যা আমি শ্রমিকদের নিকট ভাড়া দিয়ে মাসে ভালো টাকা আয় করতেছি।
আবুল কালামের দোকানের শ্রমিক মো. হাসান মিয়া জানায়, আমার পরিবারের বড় ছেলে আমি। আমার পরিবারের সদস্য ছয়জন। বাবা কৃষক হওয়ায় আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারে নাই। তাই আমি কাজের খোঁজে আসি ইপিজেডে। এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় আমার চাকরি হয়। এখন সব মিলিয়ে বেতন পায় পনেরো হাজার, দুই ঈদে আবার বোনাসও পাই। আমার খরচের টাকা রেখে বাকিগুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দেই, সে টাকা দিয়ে ছোট ভাই বোনের লেখাপড়াসহ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই যাচ্ছে আমাদের পরিবারের দিনগুলো।
ইপিজেডের সামনে সবজি বিক্রেতার মফিজ জানায়, আমার শারীরিক জটিলতার কারণে ভারী কোন কাজ কর্ম করতে ডাক্তার নিষেধ করেছে। এলাকার একজনের সহযোগিতায় কিছু অর্থ নিয়ে ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রয় শুরু করি ইপিজেডের সামনে। আজ দুই বছর হয়েছে এখানে সবজি বিক্রয় করি। সবজি বিক্রি করে যে টাকা পেয়ে থাকি তা দিয়ে আমার সংসার খুব সুন্দর চলছে। ছেলেমেয়েকে ভর্তি করিয়েছি স্কুলে।
কুমিল্লা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, কুমিল্লার অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ ইপিজেড। এই এলাকার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এই ইপিজেডের ভূমিকা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে অনেক কোম্পানির চাহিদা বেড়েছে। যদি তাদের চাহিদা মতো আমরা সুযোগ করে দিতে পারতাম তাহলে আরও কর্মসংস্থান বাড়তো। আশা করি, সরকার বিষয়টি নজর দেবে।