মোগল আমলের কুমিল্লার শাহসুজা মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪২
Thumbnail image

তখন ছিলো মোগল শাসনামল । সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে শাহসুজা ছিলেন বাংলার সুবেদার। শাহসুজা ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০

খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। ১৬৫৮ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে নির্মিত হয় এই মসজিদ। ৩৬৪ বছরের ঐতিহ্যে লালিত

তিন গম্বুজ মসজিদটি কুমিল্লার অন্যতম ঐতিহাসিক প্রাচীন নিদর্শন। কুমিল্লার ইতিহাস, ঐহিত্য ও গৌরবের যত স্থাপনা আছে, এর মধ্যে অন্যতম শাহসুজা মসজিদ। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদ দেখতে আসেন। এখানে নামাজ পড়েন।

রাজমালা গ্রন্থে ইতিহাসবিদ কৈলাস চন্দ্র সিংহ উল্লেখ করেন, গোমতী নদীর তীরে কুমিল্লা নগরে শাহসুজা মসজিদ একটি ইস্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ । শাহসুজা ত্রিপুরা রাজ্য জয় করে চির স্মরণীয় হওয়ার জন্য এটি নির্মাণ করেন। একই গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে ,ত্রিপুরার মহারাজা গোবিন্দ মাণিক্য সুজার নাম স্মরণীয় রাখার জন্য নিমচা তরবারি ও হিরকাঙ্গুরীয়ের বিনিময়ে অনেক অর্থ কড়ি ব্যয় করে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। যেভাবেই মসজিদ নির্মাণ হোক না কেন -এটি কুমিল্লার অন্যতম স্থাপত্যশৈলী।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, তিন গম্বুজ আয়তাকার মসজিদে ছয়টি মিনার আছে। মসজিদের দৈর্ঘ্য ৫৮ ফুট, প্রস্থ ২৮ ফুট। কিবলা প্রাচীরের পুরুত্ব ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। পূর্ব প্রাচীরের পুরুত্ব চার ফুট ২ ইঞ্চি । বারান্দার প্রস্থ ২৪ ফুট। এতে তিনটি মেহরাব রয়েছে । এ মসজিদের কেন্দ্রীয় গম্বুজ নির্মাণে খিলান পদ্ধতি, দুইপাশের গম্বুজ নির্মাণে স্কুইঞ্চ ও পেনডেনটিভ উভয় পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।

গম্বুজের শীর্ষে পদ্মফুলের নকশা ও তার উপরে রয়েছে কলস। গম্বুজের চারদিকে রয়েছে পদ্ম পাপড়ির মারলন নকশা। মসজিদের বাহিরের অংশে রয়েছে খোপ নকশা। কিবলা প্রাচীরের পুরুত্ব অবতল আকৃতির কেন্দ্রীয় মেহরাবটি ফুল লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত। মসজিদের খিলানগুলো চতুকেন্দ্রীক রীতিতে তৈরি। মসজিদের ফটক ধবধসে সাদা রংয়ের এ মসজিদের উদ্বোধনী খুতবা পড়েন সম্রাট শাহজানের আত্নীয় ও মোগল বংশের লোক কাজী মনসুরুল হক। ইতিহাসবিদদের মতে, বার বার এই মসজিদ সংস্কার হয়। ১৮৮২ সালে জনৈক ইমাম উদ্দিন এই মসজিদের বারান্দা নির্মাণ করেন।

২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি শাহ সুজা মসজিদ কমিটি দুইটি ফলকে মসজিদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এতে পর্যটক ও নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ইতিহাস জানতে পারেন। মসজিদ কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাছির আহমেদ বলেন, প্রায় চার বছরের পুরোনো মসজিদ। এটি কুমিল্লার অন্যতম ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন আমরা মসজিদের মুল নকশা ঠিক রেখেই সংস্কার কাজ করি। কোথাও কোন দেয়াল ধসে গেলে কিংবা পলেস্তরা খসে পড়লে সংস্কার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদ বলেন, এই মসজিদের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ মুসল্লিদের মুগ্ধ করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নতুন নতুন মুসল্লি যুক্ত হন। এই মসজিদ মোগলটুলি এলাকাকে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে

স্থানীয় ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, শাহসুজা ছিলের পরাক্রমশালী সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে । তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে এই অঞ্চলে রাজত্ব করেন। এই অঞ্চল কে মেহেলকুল বলা হতো। এখানে মসজিদ নির্মিত হওয়ায় মুসলমানদের নামাজের ব্যবস্থা হল । এই মসজিদই শাহসুজা মসজিদ। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত