ওজন বাড়াতে জোরপূর্বক নল দিয়ে ছাগলকে খাওয়ানো হচ্ছে পানি, ৯ জনকে জেল-জরিমানা

চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি
Thumbnail image

দক্ষিণ কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী মিরশ্বান্নী গরুর হাটে প্রতি বুধবার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া বেচাকেনা হয়। দূর-দূরান্তের শত শত মানুষ বিভিন্ন উপলক্ষে এখান থেকে পশু ক্রয় করে। হাটে চাহিদা থাকায় অসাধু বিক্রেতারা ওজন বাড়াতে জোরপূর্বক ছাগলকে পানি খাইয়ে দিয়ে শরীর মোটাতাজা করছে।

দীর্ঘদিনের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আজ বুধবার(৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন মিরশ্বান্নী হাটে অভিযান চালায়। হাটের কিছু দূরে নল দিয়ে জোরপূর্বক ছাগলকে পানি খাওয়ানোর সময় হাতেনাতে ধরে ৯ জনকে জেল-জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন। দন্ডপ্রাপ্তরা হলো; নাঙ্গলকোটের খান্নাপাড়ার মোঃ ইসমাইল, হেদায়েত উল্লাহ, ইয়াছিন, চৌগুরীর নুরুল আমিন, মোঃ সবুজ, মাসুদ, জাকির হোসেন, মৌকরার মহিবুল্লাহ ও সদর দক্ষিণের মঙ্গলমুড়ার আবদুল লতিফ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বুধবার অসাধু ছাগল বিক্রেতারা হাটের আশ-পাশে সকাল বেলায় অবস্থান করে জোরপূর্বক নল দিয়ে ছাগলকে পানি খাওয়ায়ে পেট বড় করে রাখে। এতে ছাগলকে সাময়িক সুন্দর ও তরতাজা দেখায়। ওই ছাগলগুলো সাইজে বড় দেখায় হাটে ক্রেতাদের বেশি পছন্দ হয়। বেশি দামে বিক্রি করে বিক্রেতারা। তবে অনেক সময় ক্রেতারা ছাগল কিনে বাড়িতে নিয়ে গেলে ছাগলকে হাছি-কাশি ও সুইয়ে থাকতে দেখে টেনশন বেড়ে যায়। আগামী দিন এ ছাগল বেঁচে থাকবে কি না এ চিন্তায় অনেক ক্রেতা ছাগলকে জবাই করে দেয়। দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে জেল-জরিমানা করেছে।

আজ বুধবার(৯ এপ্রিল) সরেজমিন মিরশ্বান্নী হাটে দেখা গেছে, পাশ্ববর্তী উপজেলা নাঙ্গলকোট, কচুয়া ও সদর দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকার অসাধু ব্যবসায়ীরা হাটে ছাগল নিয়ে আসে। কথা হয়, নাঙ্গলকোট থেকে ছাগল নিয়ে আসা ব্যবসায়ী সবুজ ও মাসুদের সাথে। নল দিয়ে পানি খাওয়ায়ে ছাগলের পেট বড় করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, পেট খালি থাকলে ছাগল ছোট দেখা যায়। তাই জোর করে পানি খাওয়ায়ে পেট ফুলা করলে ক্রেতা মনে করে, ছাগল স্বাস্থ্যবান। তখন সহজে ছাগল বিক্রি করা যায়।

ছাগল ক্রয় করতে আসা আলিম মিয়া বলেন, জোর করে নল দিয়ে পানি খাওয়া এবং স্বাভাবিকভাবে খাওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। জোর করে ছাগলকে পানি খাওয়ালে অনেক সময় মারাও যায়।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিভিন্ন বাজারে কিছু অসাধু ছাগল ব্যবসায়ী জোর করে নল দিয়ে পানি খাওয়ায়ে বাজারে নেয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনী এবং অমানবিক। একটা ছাগল বা পশু যার প্রাণ আছে, তাকে যদি আমরা জোরপূর্বক কোন কিছু খাওয়াই-এর কিছু পরিমাণ শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে নিমোনিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে ছাগলের প্রাণ হানি ঘটে। এ সময় যদি কোন খামারী এ ছাগলটি ক্রয় করে, তাহলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। সুতরাং, বাজারে গিয়ে ক্রেতাদের উচিত বেশি সুন্দর ও পেট ফুলা ছাগল ক্রয় থেকে বিরত থাকা’।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জামাল হোসেন বলেন, ‘পশুর সাথে অসাধু ব্যবসায়ীরা অমানবিক আচরণ করছে। জোরপূর্বক ছাগলকে পানি খাওয়ানোর পর বেশি দামে বিক্রি করা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা। বুধবার অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে’।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত