দেবীদ্বার প্রতিনিধি
কুমিল্লার দেবীদ্বার ৫০ সয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যারাসিটামল, গ্যাষ্টিক, প্রেসার, ডায়াবেটিস ও বিভিন্ন গ্রুপের এ্যান্টিবায়েটিকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ নেই ৬ মাস ধরে। কবে ঔষধ আসবে তারও কোন দিনক্ষন দিতে পারছেননা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন।
দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালে ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতির কারনে চলতি অর্থবছরের বরাদ্ধকৃত ৯৬ লক্ষা টাকা আগামী জুনে ফেরত চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফলে ৫ টাকার টিকেটে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাজার হাজার দরিদ্র ও সাধারন রোগিরা পড়েছে ভোগান্তিতে।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগির সংখ্যার দিক থেকে ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ ও ‘সদর হাসপাতালের’ পরের স্থান। ৫০ সয্যার হাসপাতাল হলেও মাঝে মাঝে ভর্তি রোগির পরিমান থাকে শতাধিক। হাসপাতালটি উপজেলা সদর এবং ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা-সড়কের পাশে হওয়ায় ‘জরুরী বিভাগ’ ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগির পরিমান দাড়ায় সহস্রাধিক। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগি স্বল্প আয়ের এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশদারিত্ব বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, গত বছর ২০২৪-২০২৫ অর্থ বৎসরে দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালের ঔষধ ও এমএসআর সমগ্রী ক্রয়ের জন্য সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী এহসান এবং তার আনুগত কয়েকজন কর্মচারি ও কর্মকর্তার সহযোগীতায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে পছন্দের ই-জিপিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যালকে কাজ পাইয়ে দেন। দরপত্রে ‘ঔষধ নন-ইডিসিএল’, ‘এমএসআর যন্ত্রপাতি সামগ্রী’, ‘গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা সামগ্রী’, ‘লিলেন সামগ্রী’, ‘ক্যামিকেল রি-এজেন্ট সামগ্রী’ ও ‘আসবাবপত্র’সহ ছয় গ্রুপের ছয়টি আইডিতে প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকার দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে। দরপত্র দাখিলের (এবং কার্যাদেশ দেয়ার) সর্বশেষ সময়সীমা ও ছিল গত বছরের ২৪ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ৪ ডিসেম্বর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চাহিদা প্রদানকৃত ঔষধসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্যাম্পল(নমুনা) জমা দেয়া এবং এসকল স্যাম্পলগুলো মূল্যায়ন কমিটির কর্তৃক বাছাইকৃত সামগ্রীর গায়ে স্বাক্ষর থাকার কথা। যা অডিটকালীন সময় পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখার কথা। বাস্তবে কোন সামগ্রীরই স্যাম্পল রাখা হয়নি। ইজিপির শর্তানুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে ঔষধ ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহের কথা থাকলেও শর্ত ভেঙ্গে গত ২২ জানুয়ারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা স্বাধীন কোম্পানীর কিছু ঔষধ ও মালামাল সরবরাহ করছেন।
প্রশাসনিক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালের প্রধান সহকারী শিল্পী রানী দত্ত, ইপিআই টেকনেশিয়ান মো. জসীম উদ্দিন ও আরএমও ডা. কবীর হোসেনের সার্বিক সহোযোগীতায় তিনি দেবীদ্বার অবস্থান না করেও একই দিনে টেন্ডারের বাধ্যবাধকতা নির্বাচিত দরপত্র দাতার প্রতি নোটিফিকেশন এওয়ার্ড (নোআ) ইস্যু করণ, জামানত বা সিকিউরিটি জমাদান, তিন শত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এগ্রিমেন্ট সাইন করণ এবং সর্বপরি ওয়ার্ক অর্ডার বা কার্যাদেশ প্রদান করাসহ যাবতীয় অনিয়মগুলো একই দিনে সম্পন্ন করে যান। যা কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও ৪ ডিসেম্বর বিকেলে তিনি কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেবীদ্বার কর্মস্থলে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তার নিকট দায়ীত্ব বুঝিয়ে দেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি আনাস ও জহিরুল ইসলামের সাথে কথা হয় ও এ সংক্রান্ত সাপ্লাই ভাউচার হস্তগত হয় যার ফলে এই অনিয়ম ও জালিয়াতি গুলো প্রকাশ্যে আসে যা অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছিলো।
এখানেই শেষ নয়, ই-জিপিতে দরপত্র আহব্বান করেও সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উক্ত সহোযোগী প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক সহযোগীতায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিটি এমএসআর গ্রুপের জন্য দুুইটি করে কার্যাদেশ প্রদান করে যান। ই-জিপি সিডিউল প্রতিটি গ্রুপ লট বা লট মালামালের সংখ্যা বা পরিমান নির্দিষ্ট ছিলো, যা ই-জিপি শর্তাবলী মোতাবেক আইটিটি ধারা ৫৩.১ এ প্রতিটি আইটেম শতকরা ২০% কমাতে বা বাড়ানোর এখতিয়ার সিমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু তিনি প্রতিটি কার্যাদেশেই তাঁর আর্শিবাদ পুষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যালকে (বাড়ী নং ২৭, রোড নং ০৮, ব্লক-ই, রামপুরা, বনশ্রী, ঢাকা ১২১৯) নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ই-জিপিতে আইডি নং ১০২৭৫১৯ ঔষধ (নন ইডিসিএল) ৫১ টি আইটেমের স্থলে এক কার্যাদেশেই ৩৩ টি আইটেম এবং অপরটিতে ২০ টি আইটেমের ঔষধের চাহিদা চাওয়া হয়েছিলো। তাছাড়া শর্তানুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে মালামাল সরবনাহের কথা থাকলেও সে শর্ত মানা হয়নি।
যে ঔষধ ও মালামালগুলো নিম্নমানের, মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এবং অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক সরবরাহ মালামাল গ্রহন না করায় সেগুলো বহিঃর্বিভাগে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মালামাল সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় গুদাম না থাকায় এবং বহিঃর্বিভাগে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা সরবরাহকৃত মালামালের আবর্জনা সড়িয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বার বার লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তা সরিয়ে নেয়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অবশেষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. মহিবুস ছালাম খাঁন গত ২৩ ফেব্রুয়ারী দেবীদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। (ডায়েরী নং-১১২১)। যা এখনো হাসপাতালের বহিঃবিভাগে পড়ে আছে।
ফলে দরপত্র বাতিল বা পুনঃদরপত্র আহবান অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ফাইল বন্দী হয়ে আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহে আইনী জটিলতায় গরিব সাধারণ রোগিরা ঔষধ ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের শতাধিক দালাল ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে গরিব ও সাধারন রোগিরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবায় সর্বশান্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার জানান, ডা. মো. আলী এহসান আহব্বানকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে দরপত্র মূল্যায়ন করার পূর্বেই পাবনা জেলার ঈশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে যান। বদলী আদেশ পাওয়ার পর তিনি গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অত্যন্ত গোপনে দরপত্র মূল্যায়ন করেই প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েদেন এবং ৩ ডিসেম্বরই গোপনে দেবীদ্বার ত্যাগ করেন।
ওই ঠিকাদার আরো জানান, অভিযুক্ত ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলী এহসান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে (কোড নং, ১১০০৯৪) প্রকাশিত সিভিল সার্জন ফিটলিস্ট ক্রমিক নং ২৮-এ অবস্থান করছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর মন্ত্রনালয়ে ওই সিভিল সার্জন লিস্টভূক্ত হন। এই ধরণের জালিয়াতি ও অপকর্মের হোতা যদি ভবিষৎতে কোন জেলার সিভিল সার্জন হিসাবে নিয়োগ পান তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনদূর্ভোগ চরমে দাড়াবে।
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসীক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. কবির হোসেন জানান, নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিম্মমানের, অপ্রয়োজনীয় ও মেয়াদ শেষ পর্যায়ের ঐষধ সরবরাহ করায় মূল্যায়ন কমিটি এসব মালামাল গ্রহন করেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. মহিবুস ছালাম খাঁন জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়মে পূর্বের দরপত্র বাতিল এবং নতুন দরপত্র আহবানের পূর্বে ইউডিসিএল থেকে কোন ঔষধ সরবরাহ হবেনা। পূর্বের কর্মকর্তার অনিয়মের দায় আজ দেবীদ্বারে জনগনের উপর যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনি আমরা দায়িত্বশীলরাও বিব্রত আছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নর্দেশের অপেক্ষায় আছি।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. বশির আহমেদ বলেন, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দরপত্র আহবান এবং ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ে অনীয়মের জটিলতায় ঔষধ সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিপিইউটির মতামত বা সিদ্ধান্ত পেতে বিলম্ব হলে চলতি অর্থবছরের বরাদ্ধ ৯৬ লক্ষ টাকা আগামী জুনে ফেরত চলে যাবে। রোগিরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিতি হবে। তিনি আরো জানান, এ হাসপাতালে ঔষধ সংকটের কারনে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ২ হাজার এ্যান্টিবায়োটিক টেবলেট সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি।
কুমিল্লার দেবীদ্বার ৫০ সয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্যারাসিটামল, গ্যাষ্টিক, প্রেসার, ডায়াবেটিস ও বিভিন্ন গ্রুপের এ্যান্টিবায়েটিকসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ নেই ৬ মাস ধরে। কবে ঔষধ আসবে তারও কোন দিনক্ষন দিতে পারছেননা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগন।
দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালে ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ে অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতির কারনে চলতি অর্থবছরের বরাদ্ধকৃত ৯৬ লক্ষা টাকা আগামী জুনে ফেরত চলে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ফলে ৫ টাকার টিকেটে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হাজার হাজার দরিদ্র ও সাধারন রোগিরা পড়েছে ভোগান্তিতে।
সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগির সংখ্যার দিক থেকে ‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ ও ‘সদর হাসপাতালের’ পরের স্থান। ৫০ সয্যার হাসপাতাল হলেও মাঝে মাঝে ভর্তি রোগির পরিমান থাকে শতাধিক। হাসপাতালটি উপজেলা সদর এবং ‘কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহা-সড়কের পাশে হওয়ায় ‘জরুরী বিভাগ’ ছাড়াও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগির পরিমান দাড়ায় সহস্রাধিক। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগি স্বল্প আয়ের এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অংশদারিত্ব বেশী।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, গত বছর ২০২৪-২০২৫ অর্থ বৎসরে দেবীদ্বার সরকারি হাসপাতালের ঔষধ ও এমএসআর সমগ্রী ক্রয়ের জন্য সাবেক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী এহসান এবং তার আনুগত কয়েকজন কর্মচারি ও কর্মকর্তার সহযোগীতায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে পছন্দের ই-জিপিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যালকে কাজ পাইয়ে দেন। দরপত্রে ‘ঔষধ নন-ইডিসিএল’, ‘এমএসআর যন্ত্রপাতি সামগ্রী’, ‘গজ-ব্যান্ডেজ-তুলা সামগ্রী’, ‘লিলেন সামগ্রী’, ‘ক্যামিকেল রি-এজেন্ট সামগ্রী’ ও ‘আসবাবপত্র’সহ ছয় গ্রুপের ছয়টি আইডিতে প্রায় ৯৬ লক্ষ টাকার দরপত্র আহব্বান করা হয়েছে। দরপত্র দাখিলের (এবং কার্যাদেশ দেয়ার) সর্বশেষ সময়সীমা ও ছিল গত বছরের ২৪ নভেম্বর। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ৪ ডিসেম্বর। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চাহিদা প্রদানকৃত ঔষধসহ বিভিন্ন সামগ্রীর স্যাম্পল(নমুনা) জমা দেয়া এবং এসকল স্যাম্পলগুলো মূল্যায়ন কমিটির কর্তৃক বাছাইকৃত সামগ্রীর গায়ে স্বাক্ষর থাকার কথা। যা অডিটকালীন সময় পর্যন্ত সংরক্ষণে রাখার কথা। বাস্তবে কোন সামগ্রীরই স্যাম্পল রাখা হয়নি। ইজিপির শর্তানুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে ঔষধ ও অন্যান্য মালামাল সরবরাহের কথা থাকলেও শর্ত ভেঙ্গে গত ২২ জানুয়ারী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা স্বাধীন কোম্পানীর কিছু ঔষধ ও মালামাল সরবরাহ করছেন।
প্রশাসনিক অনুমোদন প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালের প্রধান সহকারী শিল্পী রানী দত্ত, ইপিআই টেকনেশিয়ান মো. জসীম উদ্দিন ও আরএমও ডা. কবীর হোসেনের সার্বিক সহোযোগীতায় তিনি দেবীদ্বার অবস্থান না করেও একই দিনে টেন্ডারের বাধ্যবাধকতা নির্বাচিত দরপত্র দাতার প্রতি নোটিফিকেশন এওয়ার্ড (নোআ) ইস্যু করণ, জামানত বা সিকিউরিটি জমাদান, তিন শত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে এগ্রিমেন্ট সাইন করণ এবং সর্বপরি ওয়ার্ক অর্ডার বা কার্যাদেশ প্রদান করাসহ যাবতীয় অনিয়মগুলো একই দিনে সম্পন্ন করে যান। যা কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও ৪ ডিসেম্বর বিকেলে তিনি কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দেবীদ্বার কর্মস্থলে নতুন যোগদানকৃত কর্মকর্তার নিকট দায়ীত্ব বুঝিয়ে দেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধি আনাস ও জহিরুল ইসলামের সাথে কথা হয় ও এ সংক্রান্ত সাপ্লাই ভাউচার হস্তগত হয় যার ফলে এই অনিয়ম ও জালিয়াতি গুলো প্রকাশ্যে আসে যা অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছিলো।
এখানেই শেষ নয়, ই-জিপিতে দরপত্র আহব্বান করেও সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উক্ত সহোযোগী প্রতিষ্ঠানকে সার্বিক সহযোগীতায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রতিটি এমএসআর গ্রুপের জন্য দুুইটি করে কার্যাদেশ প্রদান করে যান। ই-জিপি সিডিউল প্রতিটি গ্রুপ লট বা লট মালামালের সংখ্যা বা পরিমান নির্দিষ্ট ছিলো, যা ই-জিপি শর্তাবলী মোতাবেক আইটিটি ধারা ৫৩.১ এ প্রতিটি আইটেম শতকরা ২০% কমাতে বা বাড়ানোর এখতিয়ার সিমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু তিনি প্রতিটি কার্যাদেশেই তাঁর আর্শিবাদ পুষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড সার্জিক্যালকে (বাড়ী নং ২৭, রোড নং ০৮, ব্লক-ই, রামপুরা, বনশ্রী, ঢাকা ১২১৯) নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ই-জিপিতে আইডি নং ১০২৭৫১৯ ঔষধ (নন ইডিসিএল) ৫১ টি আইটেমের স্থলে এক কার্যাদেশেই ৩৩ টি আইটেম এবং অপরটিতে ২০ টি আইটেমের ঔষধের চাহিদা চাওয়া হয়েছিলো। তাছাড়া শর্তানুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে মালামাল সরবনাহের কথা থাকলেও সে শর্ত মানা হয়নি।
যে ঔষধ ও মালামালগুলো নিম্নমানের, মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এবং অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় মূল্যায়ন কমিটি কর্তৃক সরবরাহ মালামাল গ্রহন না করায় সেগুলো বহিঃর্বিভাগে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। মালামাল সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় গুদাম না থাকায় এবং বহিঃর্বিভাগে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা সরবরাহকৃত মালামালের আবর্জনা সড়িয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বার বার লিখিত ও মৌখিক ভাবে জানানো হলেও তা সরিয়ে নেয়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অবশেষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. মহিবুস ছালাম খাঁন গত ২৩ ফেব্রুয়ারী দেবীদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। (ডায়েরী নং-১১২১)। যা এখনো হাসপাতালের বহিঃবিভাগে পড়ে আছে।
ফলে দরপত্র বাতিল বা পুনঃদরপত্র আহবান অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ফাইল বন্দী হয়ে আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহে আইনী জটিলতায় গরিব সাধারণ রোগিরা ঔষধ ও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৩৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের শতাধিক দালাল ও বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে গরিব ও সাধারন রোগিরা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য সেবায় সর্বশান্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার জানান, ডা. মো. আলী এহসান আহব্বানকারী কর্তৃপক্ষ হিসাবে দরপত্র মূল্যায়ন করার পূর্বেই পাবনা জেলার ঈশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী হয়ে যান। বদলী আদেশ পাওয়ার পর তিনি গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অত্যন্ত গোপনে দরপত্র মূল্যায়ন করেই প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চট্রগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েদেন এবং ৩ ডিসেম্বরই গোপনে দেবীদ্বার ত্যাগ করেন।
ওই ঠিকাদার আরো জানান, অভিযুক্ত ওই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলী এহসান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে (কোড নং, ১১০০৯৪) প্রকাশিত সিভিল সার্জন ফিটলিস্ট ক্রমিক নং ২৮-এ অবস্থান করছেন। গত ২৬ ডিসেম্বর মন্ত্রনালয়ে ওই সিভিল সার্জন লিস্টভূক্ত হন। এই ধরণের জালিয়াতি ও অপকর্মের হোতা যদি ভবিষৎতে কোন জেলার সিভিল সার্জন হিসাবে নিয়োগ পান তাহলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনদূর্ভোগ চরমে দাড়াবে।
দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসীক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মো. কবির হোসেন জানান, নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিম্মমানের, অপ্রয়োজনীয় ও মেয়াদ শেষ পর্যায়ের ঐষধ সরবরাহ করায় মূল্যায়ন কমিটি এসব মালামাল গ্রহন করেনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. মহিবুস ছালাম খাঁন জানান, টেন্ডার প্রক্রিয়ার নিয়মে পূর্বের দরপত্র বাতিল এবং নতুন দরপত্র আহবানের পূর্বে ইউডিসিএল থেকে কোন ঔষধ সরবরাহ হবেনা। পূর্বের কর্মকর্তার অনিয়মের দায় আজ দেবীদ্বারে জনগনের উপর যেমন প্রভাব ফেলেছে, তেমনি আমরা দায়িত্বশীলরাও বিব্রত আছি। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও নর্দেশের অপেক্ষায় আছি।
জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মো. বশির আহমেদ বলেন, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দরপত্র আহবান এবং ঔষধ ও এমএসআর সামগ্রী ক্রয়ে অনীয়মের জটিলতায় ঔষধ সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিপিইউটির মতামত বা সিদ্ধান্ত পেতে বিলম্ব হলে চলতি অর্থবছরের বরাদ্ধ ৯৬ লক্ষ টাকা আগামী জুনে ফেরত চলে যাবে। রোগিরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিতি হবে। তিনি আরো জানান, এ হাসপাতালে ঔষধ সংকটের কারনে প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে ২ হাজার এ্যান্টিবায়োটিক টেবলেট সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি।