নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমতল ভূমির ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো সাজানো গ্রাম বিজয়পুর। বছর জুড়েই ওই গ্রাম ও আশপাশের আরও ছয়টি গ্রামে নানা ব্যস্ততা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বংশের বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় মাটির তৈরি ঘর সাজানো দ্রব্যাদি তৈরিতে মহাব্যস্ত। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কাজ শুরু হয়। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে তাঁদের ব্যস্ততা বাড়ে। বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্রে তৈরি হচ্ছে মাটির পাতিল, ঢাকনা, টব, ফুলদানি, ক্রেস্ট, গারলিকপট, বাসন, মগ, জগ, গ্লাস, দইয়ের পাতিল, ব্যবহারিক তৈজষপত্র, শোপিস ও মনীষীদের প্রতিকৃতি। ওই মৃৎশিল্প সামগ্রীর চাহিদা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দাম নাগালের মধ্যে হওয়ায় সৃজনশীল ও রুচিবান মানুষদের কাছে এর কদর বেশি। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ এলে বিক্রি বেড়ে যায়। পুরো বৈশাখ মাস জুড়েই ব্যস্ততা ও বিকিকিনি বেড়ে যায়। এমনটাই জানালেন সেখানকার মহাব্যবস্থাপক শংকর চন্দ্র পাল । ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিজয়পুর গ্রাম। ওই গ্রামের উত্তর পাড়ায় (উত্তর বিজয়পুর) রয়েছে বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্র । যা বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি নামে পরিচিত। ওই সমিতিতে মেশিনের মাধ্যমে মাটির তৈরি সামগ্রী বানানো হয়। অন্যদিকে কুমারপাড়ার সাতটি গ্রাম উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, দুর্গাপুর, তেঘরিয়াপাড়া, গাংকুল, বারপাড়া ও নোয়াপাড়া গ্রামের ঘরে ঘরে ল মাটির তৈরি সামগ্রীর পসরা দেখা গেছে। হাতে তৈরি মাটির পাতিল ও ঢাকনা তৈরি করা হয়। শতবর্ষ আগ থেকে কুমারপাড়ায় এসব সামগ্রী তৈরি হতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ষাটের দশকে বিজয়পুরে 'প্রগতি' নামে একটি সংগঠন ছিলো। তখন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা পদ্ধতির জনক ড. আখতার হামিদ খান ওই সংগঠনের আমন্ত্রণে এলাকায় যান। তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন । এক পর্যায়ে তিনি হিন্দু অধ্যুষিত সাতি গ্রামের পাল বংশের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। এরপর তিনি ১৫ জন দিয়ে
সমিতি চালু করেন। সমিতির নাম দেওয়া হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল মুৎশিল্প সমবায় সমিতি। শুরুতে সমিতির সদস্যরা ৫০ পয়সা চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। একই সঙ্গে ১০ টাকা করে শেয়ার কেনেন। মোট ১৫৭ দশমিক ৫০ টাকা দিয়ে ওই সমিতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের ২৯ আগস্ট এটি নিবন্ধিত হয় (রেজি. নং-৩৯)। উত্তর বিজয়পুরের প্রায় ৮৭ দশমিক ৫০ শতক ন জায়গা নিয়ে ওই সমিতি । এখানেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্র। বছরের বিভিন্ন সময়ে ২০ জন করে বিভিন্ন ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে একজন প্রশিক্ষণার্থী কারিগর হয়ে উঠে। ব্যবহারিক এবং তাত্ত্বিক জ্ঞানের সমন্বয়ে নবীন মৃৎশিল্পীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । পরবর্তীতে এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মৃৎশিল্পের কাজ করে। এ রকম শত শত মুৎশিল্প কারিগর বের হয়েছে ওই কেন্দ্র থেকে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামে কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা হয় এখানকার পদ্ধতি ব্যবহার করে। বর্তমানে বিজয়পুরের ওই সমিতিতে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। খণ্ডকালীন কাজ করেন আরও ছয়জন। বর্তমানে ওই বর্তমানে ওই সমিতির সদস্য সংখ্যা ২১১ জন। প্রতি মাসে একবার সভা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিন বছর মেয়াদী সমিতির নয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাপস কুমার পাল ও মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) শংকর চন্দ্র পালের নেতৃত্বে চলছে সমিতি।
সমিতির অন্তত তিনজন সদস্য জানান, বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের সুনাম যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সরকার ওই সমিতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী সমিতির অফিস ও মৃৎশিল্প উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয় । তখন ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৭২ সালে '
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় আসেন। ওই সময়ে তিনি ওই সমিতির জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দেন । পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বিসিকের মাধ্যমে ওই সমিতির নামে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করা হয়। ওই টাকা পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯-২০১০ অর্থ বহরে ওই সমিতির নামে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সমবায় অধিদপ্তর ওই টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১০ সালের জুন মাসে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং সেন্টার ও স্থাপনা তৈরি করা হয়। বর্তমানে তিনটি গ্যাস চালিত চুলার মাধ্যমে মাটির তৈরি সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। প্রায় তিন হাজার ধরনের মাটির সামগ্রী তৈরি হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, ট্রে, টব, ব্যবহারিক তৈজষপত্র, শোপিস, মনীষীদের কে প্রতিকৃতি ও সাংস্কৃতিক মডেল ইত্যাদি। কার্তিক মাস থেকে জৈষ্ঠ মাসের মধ্যে বিক্রি ভালো হয় । নববর্ষে বিক্রি ভাল ।
বর্ষাকালে বিদেশে রপ্তানি বেশি হয় । দরদাম : ফুলদানি রঙ ছাড়া (আকৃতি অনুযায়ী) ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, রঙকরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ফুলের টব ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, দইয়ের হাঁড়ি ১২ টাকা, দধির কাপ ৪ টাকা, মনীষীদের প্রতিকৃতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, ওয়ালপ্লেট ৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, জীবজন্তুর মডেল ন ১০০ থোক ৩৫০ টাকা, খাবার প্লেট ৮০ থেকে ১২০ টাকা, মগ ৫০ টাকা, জাগ ১৬০ ই টাকা ও পানির গ্লাস ৪০ টাকা। সরেজমিনে একদিন : সম্প্রতি এক সকালে ওই মৃৎশিল্পে গিয়ে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বসে কাজ করছেন। কেউ মাটি দিয়ে ফুলদানি তৈরি করছেন। কেউ নকশা করছেন। আবার কেউ উৎপাদিত পণ্যেও মধ্যে রঙ করছেন। এদের একজন সরস্বতী পাল। তিনি বলেন, 'এখানে কাজ করতে ভাল লাগে ।
সবার মধ্যে আন্তরিকতা আছে।' পুরো মৃৎশিল্প কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি ভবন রয়েছে এগুলোতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শন ও অফিসকক্ষসহ উৎপাদনকক্ষ রয়েছে।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শংকর চন্দ্র পাল বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে উৎপাদিত পণ্যের মান মাঝে মধ্যে ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তখন মাটি কম পোড়া হয়। এরপরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি । প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত কাজ হয়। আসন্ন বৈশাখ উপলক্ষে বেশি সময় কাজ হচ্ছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৮ ও ২০১১ সালে এ সমিতি জাতীয় পর্যায়ে সমবায় পুরস্কার পেয়েছে। ঐতিহ্যের ওই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও ধরে রাখতে চান মৃৎশিল্পীরা।
কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সমতল ভূমির ছায়া সুনিবিড় ছবির মতো সাজানো গ্রাম বিজয়পুর। বছর জুড়েই ওই গ্রাম ও আশপাশের আরও ছয়টি গ্রামে নানা ব্যস্ততা।
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বংশের বাসিন্দারা বংশ পরম্পরায় মাটির তৈরি ঘর সাজানো দ্রব্যাদি তৈরিতে মহাব্যস্ত। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই কাজ শুরু হয়। চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। তবে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে তাঁদের ব্যস্ততা বাড়ে। বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্রে তৈরি হচ্ছে মাটির পাতিল, ঢাকনা, টব, ফুলদানি, ক্রেস্ট, গারলিকপট, বাসন, মগ, জগ, গ্লাস, দইয়ের পাতিল, ব্যবহারিক তৈজষপত্র, শোপিস ও মনীষীদের প্রতিকৃতি। ওই মৃৎশিল্প সামগ্রীর চাহিদা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দাম নাগালের মধ্যে হওয়ায় সৃজনশীল ও রুচিবান মানুষদের কাছে এর কদর বেশি। প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ এলে বিক্রি বেড়ে যায়। পুরো বৈশাখ মাস জুড়েই ব্যস্ততা ও বিকিকিনি বেড়ে যায়। এমনটাই জানালেন সেখানকার মহাব্যবস্থাপক শংকর চন্দ্র পাল । ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিজয়পুর গ্রাম। ওই গ্রামের উত্তর পাড়ায় (উত্তর বিজয়পুর) রয়েছে বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্র । যা বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি নামে পরিচিত। ওই সমিতিতে মেশিনের মাধ্যমে মাটির তৈরি সামগ্রী বানানো হয়। অন্যদিকে কুমারপাড়ার সাতটি গ্রাম উত্তর বিজয়পুর, দক্ষিণ বিজয়পুর, দুর্গাপুর, তেঘরিয়াপাড়া, গাংকুল, বারপাড়া ও নোয়াপাড়া গ্রামের ঘরে ঘরে ল মাটির তৈরি সামগ্রীর পসরা দেখা গেছে। হাতে তৈরি মাটির পাতিল ও ঢাকনা তৈরি করা হয়। শতবর্ষ আগ থেকে কুমারপাড়ায় এসব সামগ্রী তৈরি হতো বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ষাটের দশকে বিজয়পুরে 'প্রগতি' নামে একটি সংগঠন ছিলো। তখন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা পদ্ধতির জনক ড. আখতার হামিদ খান ওই সংগঠনের আমন্ত্রণে এলাকায় যান। তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন । এক পর্যায়ে তিনি হিন্দু অধ্যুষিত সাতি গ্রামের পাল বংশের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। এরপর তিনি ১৫ জন দিয়ে
সমিতি চালু করেন। সমিতির নাম দেওয়া হয় বিজয়পুর রুদ্রপাল মুৎশিল্প সমবায় সমিতি। শুরুতে সমিতির সদস্যরা ৫০ পয়সা চাঁদা দিয়ে সদস্য হন। একই সঙ্গে ১০ টাকা করে শেয়ার কেনেন। মোট ১৫৭ দশমিক ৫০ টাকা দিয়ে ওই সমিতির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬১ সালের ২৭ এপ্রিল এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২ সালের ২৯ আগস্ট এটি নিবন্ধিত হয় (রেজি. নং-৩৯)। উত্তর বিজয়পুরের প্রায় ৮৭ দশমিক ৫০ শতক ন জায়গা নিয়ে ওই সমিতি । এখানেই প্রতিষ্ঠা করা হয় বিজয়পুর মৃৎশিল্প কেন্দ্র। বছরের বিভিন্ন সময়ে ২০ জন করে বিভিন্ন ব্যাচে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে একজন প্রশিক্ষণার্থী কারিগর হয়ে উঠে। ব্যবহারিক এবং তাত্ত্বিক জ্ঞানের সমন্বয়ে নবীন মৃৎশিল্পীকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । পরবর্তীতে এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে মৃৎশিল্পের কাজ করে। এ রকম শত শত মুৎশিল্প কারিগর বের হয়েছে ওই কেন্দ্র থেকে। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ গ্রামে কল্যাণপুর মৃৎশিল্প সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা হয় এখানকার পদ্ধতি ব্যবহার করে। বর্তমানে বিজয়পুরের ওই সমিতিতে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করেন। খণ্ডকালীন কাজ করেন আরও ছয়জন। বর্তমানে ওই বর্তমানে ওই সমিতির সদস্য সংখ্যা ২১১ জন। প্রতি মাসে একবার সভা হয়। ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিন বছর মেয়াদী সমিতির নয় সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি তাপস কুমার পাল ও মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল ম্যানেজার) শংকর চন্দ্র পালের নেতৃত্বে চলছে সমিতি।
সমিতির অন্তত তিনজন সদস্য জানান, বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের সুনাম যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সরকার ওই সমিতিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য এগিয়ে আসে। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী সমিতির অফিস ও মৃৎশিল্প উৎপাদন কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয় । তখন ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৭২ সালে '
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কুমিল্লায় আসেন। ওই সময়ে তিনি ওই সমিতির জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা অনুদান দেন । পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে বিসিকের মাধ্যমে ওই সমিতির নামে তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করা হয়। ওই টাকা পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯-২০১০ অর্থ বহরে ওই সমিতির নামে দুই কোটি ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। সমবায় অধিদপ্তর ওই টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১০ সালের জুন মাসে সেখানে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং সেন্টার ও স্থাপনা তৈরি করা হয়। বর্তমানে তিনটি গ্যাস চালিত চুলার মাধ্যমে মাটির তৈরি সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। প্রায় তিন হাজার ধরনের মাটির সামগ্রী তৈরি হয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুলদানি, ট্রে, টব, ব্যবহারিক তৈজষপত্র, শোপিস, মনীষীদের কে প্রতিকৃতি ও সাংস্কৃতিক মডেল ইত্যাদি। কার্তিক মাস থেকে জৈষ্ঠ মাসের মধ্যে বিক্রি ভালো হয় । নববর্ষে বিক্রি ভাল ।
বর্ষাকালে বিদেশে রপ্তানি বেশি হয় । দরদাম : ফুলদানি রঙ ছাড়া (আকৃতি অনুযায়ী) ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত, রঙকরা ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ফুলের টব ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, দইয়ের হাঁড়ি ১২ টাকা, দধির কাপ ৪ টাকা, মনীষীদের প্রতিকৃতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, ওয়ালপ্লেট ৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা, জীবজন্তুর মডেল ন ১০০ থোক ৩৫০ টাকা, খাবার প্লেট ৮০ থেকে ১২০ টাকা, মগ ৫০ টাকা, জাগ ১৬০ ই টাকা ও পানির গ্লাস ৪০ টাকা। সরেজমিনে একদিন : সম্প্রতি এক সকালে ওই মৃৎশিল্পে গিয়ে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ এক সঙ্গে বসে কাজ করছেন। কেউ মাটি দিয়ে ফুলদানি তৈরি করছেন। কেউ নকশা করছেন। আবার কেউ উৎপাদিত পণ্যেও মধ্যে রঙ করছেন। এদের একজন সরস্বতী পাল। তিনি বলেন, 'এখানে কাজ করতে ভাল লাগে ।
সবার মধ্যে আন্তরিকতা আছে।' পুরো মৃৎশিল্প কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি ভবন রয়েছে এগুলোতে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শন ও অফিসকক্ষসহ উৎপাদনকক্ষ রয়েছে।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির জেনারেল ম্যানেজার শংকর চন্দ্র পাল বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকার কারণে উৎপাদিত পণ্যের মান মাঝে মধ্যে ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তখন মাটি কম পোড়া হয়। এরপরেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি । প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত কাজ হয়। আসন্ন বৈশাখ উপলক্ষে বেশি সময় কাজ হচ্ছে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৮ ও ২০১১ সালে এ সমিতি জাতীয় পর্যায়ে সমবায় পুরস্কার পেয়েছে। ঐতিহ্যের ওই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও ধরে রাখতে চান মৃৎশিল্পীরা।