হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ

নির্বিচারে শিকার ও কীটনাশক প্রয়োগ

তিতাস প্রতিনিধি
Thumbnail image

কুমিল্লার তিতাসের নদী, খাল ও বিল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। পানি প্রবাহে বাঁধা, ফসলি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ হাট-বাজারে দেখা মেলছে না।

জানা যায়, স্থানীয় কৃষকরা জমিতে ফলন বাড়াতে অধিক মাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। বর্ষার সময় এ বিষাক্ত পদার্থগুলো বৃষ্টির পানির সাথে নদী-নালা, খাল ও পুকুরে মিশে যাচ্ছে। এতে পানির প্রাণবৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে এবং প্রজনন ও জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে স্থানীয়ভাবে পরিচিত নানা দেশি মাছ যেমন, পুঁটি, কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, টাকি, চিংড়ি, বাইম, বেদা, গজার, বেলে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

জিনিয়াস ক্যাডেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছে ভাতে বাঙালি বলা সেই প্রবাদ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন বাজারে গেলে দেশি মাছের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, বরং প্রজেক্টের (চাষকৃত) মাছে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এইসব মাছে তেমন কোনো স্বাদ ও গন্ধ নেই। উপজেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে যদি পানি প্রভাব বাড়ানো যায়, তাহলে কিছুটা হলেও এলাকার মানুষ দেশি মাছের স্বাদ পাবে।

মজিদপুর ইউনিয়নের কাকিয়াখালী গ্রামের মাছ শিকারি কার্তিক ও হারাধন বলেন, এক সময় খাল বিলে প্রচুর মাছ মিলত। ফসলি জমিতে হালচাষ দিলে হালের সঙ্গে দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। এখান আর সেই মাছ পাওয়া যায় না, প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা জানান, আগে জাল মারলে জালে মাছ ভরে উঠতো, এখন আর ওঠে না তেমন। দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষণাবেক্ষণ যদি এখন করা না হয়, তাহলে এই মাছ হারিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা. নাজমা আক্তার বলেন, বিভিন্ন কারণে দেশীয় মাছ বর্তমানে বিলুপ্ত হতে চলছে। একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ মাছ আর দেখবে না। তবে আমাদের মৎস্য অধিদপ্তর এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, দেশীয় মাছ কমে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, জলাশয়ে পানি সংকট, মৎস্য অভয়াশ্রম কম থাকা, মৎস্য আবাস ভূমির চ্যানেল বন্ধ হওয়া উল্লেখযোগ্য। এসব মাছ ধরে রাখার জন্য আমরা কারেন্ট জাল ও চায়না জালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। বিশেষ করে মৎস্য আইন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত