তিতাসে জলাবদ্ধতায় অনাবাদি ২০০ বিঘা জমি

তিতাস প্রতিনিধি
Thumbnail image

কুমিল্লার তিতাসে খাল দখল করে মৎস্য প্রজেক্ট নির্মাণ এবং বিএডিসির পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হওয়ায় ২০০ বিঘা জমিতে ১০ বছর যাবত জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। এতে কৃষকের লাখ লাখ টাকার ফসলি জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে এই সকল জমির মালিকরা প্রকৃত মূল্যে জমি বিক্রি করতে পারছেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কলাকান্দি ইউনিয়নের কালাইচান্দকান্দি থেকে ঘোষকান্দি সড়কের পূর্ব দিকে, দক্ষিণ মানিকনগর ও কাউলিয়ার চরের গোমতী নদীর বাঁধের পশ্চিমে, পুনিয়ারটন ও ঘোষকান্দির উত্তর পাশে, বড় মাছিমপুর খানেবাড়ির সড়কের দক্ষিণপাশে প্রায় সাড়ে ৩শ বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে কৃষক চাষাবাদ করেছে। বাকি ২শ বিঘা জমিতে জলবাদ্ধতা বিরাজ করছে। পুরো জলাবদ্ধতা জুড়ে কচুরিপানা ও আগাছায় ভরা। যেখানে প্রায় কোমড় সমান পানি রয়েছে। কালাইচান্দকান্দি গ্রামের প্রয়াত সামাদ হামিদের বাড়ি সংলগ্ন পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি খাল রয়েছে। খালের ওপর কালর্ভাট আছে। তবে কালর্ভাটের উভয় পাশে স্থানীয় লোকজন খালটি দখল করায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। অপরদিকে, এই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিএডিসি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১১২৫ মিটারের অবকাঠামোসহ ভূ-গর্বস্থ ড্রেনেজ পাইপ লাইন নির্মাণ করা আছে। যার মাধ্যমে উক্ত ফসলি জমির পানি গোমতী নদীতে পতিত হয়। তবে বর্তমানে এটি বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। তাই জলাবদ্ধতা স্থায়ী হচ্ছে।

কালাইচান্দকান্দি গ্রামের মো. আর্শাদ মিয়া বলেন, ছোট বেলা ঘোষকান্দি থেকে নৌকা বাইচ হতো যা কলাকান্দি গিয়ে শেষ হতো। আবার শুষ্কা মৌসুমে পানি থাকতো না। তখন আমরা পুরা এই বিলের জমি চাষ করতে পারতাম। এখন বাড়ি-ঘর এবং রাস্তা-ঘাট হওয়ায় পানি সরে না। গ্রামের মাঝখানের খালের বাঁধ ছুটানো হলেও তা পুরোপুরি ছুটে নাই।

কলাকান্দি গ্রামের কাঠমিস্ত্রি খোকন মিয়া জানান, জলাবদ্ধতার মধ্যে আমার ৮ শতক জমি রয়েছে। ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আমি জমিটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। তবে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় আর বিক্রি সম্ভব হয়নি। গ্রাম সংলগ্ন জমি লাখ টাকা শতক বিক্রি হলেও এখানে ২০-২৫ হাজার টাকা শতক দাম উঠায় আমি তা বিক্রি করি নাই।

কালাইচান্দকান্দি গ্রামের মো. হোসেন মিয়া বলেন, একসময় এখানে আমরা অনেক রকম ফসল ফলাতাম। বিগত ১০ বছর যাবত জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। অনেকে খাল দখল করায় পানি সরতে পারছে না। অন্যদিকে সরকারিভাবে যে ড্রেন নির্মাণ করেছে সেটিও বিভিন্ন ব্যক্তি মাছ ধরার জন্য বালুর বস্তা ফেলে বন্ধ করে রাখায় পানি সরতে পারছে না।

কলাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম সরকার মুঠোফোনে জানান, এখানে প্রায় ২০০ বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন যাবৎ জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। খালে বাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষ এবং বিএডিসির ড্রেনেজ ব্যবস্থার তদারকি না থাকায় মূলত জলাবদ্ধতা স্থায়ী হচ্ছে। অথচ এই জমিতেগুলোতে কৃষক তিন ফসল উৎপাদন করতে পারতো।

বিএডিসির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম সৌরভ জানান, জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেব। তারপরও আমি সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত মাসের ২৭ তারিখে স্থানীয় লোকজন পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি দরখাস্ত করেছিল। আমরা খালের ওপর বাঁধ দিয়ে মৎস্য প্রজেক্ট করা বাঁধ ভেঙে দিয়েছে। তারপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমাইয়া মমিন বলেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে খালের ওপর দেওয়া বাঁধটি আমরা অপসারণ করেছিলাম। বিএডিসির ড্রেনের কি সমস্যা এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাকে পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেছি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত