কিটো ডায়েট সবার জন্য প্রযোজ্য নয়

অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
Thumbnail image

বর্তমানে শুধু ইউটিউব ও ফেসবুকের তথ্যের উপর ভিত্তি করে নিজেদের জন্য কিটো ডায়েট ব্যবহার করে যাচ্ছেন অনেকে। নিজেদের শরীরের চাহিদা না জেনে কিটো ডায়েট করা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ডাইটেসিয়ানের পরামর্শে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ ও শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য লাভ করা অত্যন্ত সহজ।

আমাদের শারীরিক মেকানিজম জ্বালানী হিসাবে দুটি দ্রব্য ব্যবহার করতে পারে। এর একটি গ্লুকোজ ও অন্যটি কিটোন বডি। স্বাভাবিকভাবে শক্তি বা ক্যালরির মূল উৎস হচ্ছে গ্লুকোজ। যা শর্করা জাতীয় খাদ্য হতে উৎপন্ন হয়। শরীরকে শর্করা সরবরাহ বন্ধ করে দিলে তা শরীরের চর্বি ভঙ্গ করে কিটোন বডি তৈরি করে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা শুরু করে। কেউ প্রয়োজনের তুলনায় ক্যালরি বেশি গ্রহণ করলে তা দেহে চর্বিরূপে জমা হয় এবং তার শরীরের ওজন বাড়ে। কিটো ডায়েটের ফর্মূলা হল দেহে শর্করা সাপ্লাই কমিয়ে দিয়ে তেল চর্বি সরবরাহ করা অর্থাৎ দেহে গ্লুকোজের পরিবর্তে কিটোন বডি থেকে শক্তি সংগ্রহের ব্যবস্থা করা। যেহেতু কিটোন বডি চর্বি থেকে আসে, সুতরাং খাদ্যের এবং দেহের চর্বি গলিয়ে কিটোন বডি তৈরি হয়ে দেহের ক্যালরি চাহিদা মেটাতে থাকে ফলে ওজনও কমতে থাকে —এটাই প্রত্যাশা।

বর্তমান সময়ে দ্রুত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এ ডায়েট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের দৈনন্দিন শক্তির বেশির ভাগই আসে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থেকে। বাকি ১৫-২০ শতাংশ আসে প্রোটিন বা আমিষ থেকে। ২৫-৩০ শতাংশ পূরণ হয় ফ্যাট বা চর্বি থেকে। কিন্তু কিটো ডায়েটে এ মাত্রা ভিন্ন। একজন ব্যক্তি যখন কিটো ডায়েট গ্রহণ করেন, তখন তিনি দৈনিক ৭৫ শতাংশ গ্রহণ করেন ফ্যাট থেকে ২০ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং বাকি ৫ শতাংশ পুষ্টি গ্রহণ করেন শর্করা বা কার্বহাইড্রেট থেকে। এমন ধরনের পুষ্টি তালিকা সবার জন্য সুবিধাজনক বা কল্যানকর নয়।

অধিক চর্বি ও প্রোটিন গ্রহণের ফলে ডায়েরিয়া হওয়ার সম্ভবনা যেমন থাকে অপরদিকে কিটো ডায়েটে ফাইবারের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে কোষ্টকাঠিন্যও দেখা দিতে পারে। এছাড়া গর্ভবতী নারী, দুগ্ধদানকারী মা, হরমোনাল ইমব্যালেন্স যাদের থাকে এমন লোক, আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য কিটো ডায়েট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। না জেনে বাড়তি বয়সে এ ডায়েট অনুসরণ করলে অনেক ক্ষেত্রেই ঋতুস্রাবের সমস্যা হয় এবং পরবর্তী সময়ে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এ ছাড়া প্যানক্রিয়াসের জটিলতা, হজম শক্তি কমে যাওয়া, ত্বকের উজ্জলতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া এমনকি চুল পড়ে যাওয়ার মত সমস্যার কারণ হতে পারে এ কিটো ডায়েট। তাই না জেনে শুধু ওজন কমানোর তাগিদে যে কোন বয়সেই কারও জন্য কিটো ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়।

কিটো ডায়েট মূলতঃ তৈরি করা হয়েছিল, এপিলেপসি বা মৃগী রোগীদের জন্য। মৃগী রোগীদের পুষ্টি চাহিদা নিবারণের জন্য এ ডায়েট চার্টে যুক্ত করা হয় উচ্চ ফ্যাট, অধিক প্রোটিন এবং অল্প কার্বোহাইড্রেট। পরবর্তী সময়ে আরও গবেষণার পর এ ডায়েট মৃগী রোগীদের জন্যও বাতিল করা হয়। কিটো ডায়েট করার ফলে হয়তো সাময়িকভাবে আপনার ওজন হ্রাস হচ্ছে এবং শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি কমে গিয়ে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন, কিন্তু দীর্ঘদিন এ ডায়েট অনুসরণ করলে রক্তের সাধারণ পিএইচ লেভেল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে রক্তে প্রাথমিকভাবে কিটোসিস এবং পরবর্তী সময়ে কিটোএসিডোসিস দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে তেমন কোন সমস্যা না হলেও কয়েক সপ্তাহ পর দূর্বল বোধ করা, শরীর কাঁপা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, বুক ধরফরসহ কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা এবং ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হ্রাস, মেজাজ খিটখিটে বা হঠাৎ রেগে যাওয়া, সারাদিন পানির পিপাসা পাওয়াসহ অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত