ফারহানা ইসলাম
পরিবারকে বলা হয় মৌল সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিষ্ঠানটি তার নানাবিধ কার্যক্রম দ্বারা মানবজাতির প্রাণ প্রবাহকে গতিশীল রেখে চলেছে। সন্তান জন্মদান, লালন পালন, প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মনোবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াদি, সামাজিকীকরণ এবং ধর্মীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলী ইত্যাদি অগ্রগণ্য। সময়ের পরিক্রমায় পারিবারিক মূল্যবোধে অনেক বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য আধুনিক সময়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অত্যাধিক ব্যবহার এ পরিবর্তন সাধনে কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে।
মূল্যবোধ একটি মানসিক অবস্থাগত ধারণা। ব্যক্তির সামগ্রিক কার্যাবলীতে এর প্রভাব ব্যাপক। ন্যায় -অন্যায় উচিত-অনুচিতের যে ধারণা ব্যক্তি ধারণ করে এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ তার সমগ্র ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে থাকে। দেশ জাতি বর্ণ স্থান কাল পাত্র ভেদে এর আবার রকমফের আছে। এক সমাজে যেটাকে স্বীকৃতি দেয় সহজেই অন্যত্র সেটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ বলেও স্বীকৃতি পেতে পারে। রয়েছে সমাজ স্বীকৃত ও আইনগত প্রচলিত নানা নিয়ম নীতি যা দ্বারা মূল্যবোধকে নিরূপণ করা হয়। পরিবারেই যেহেতু শিশুর জন্ম বেড়ে ওঠা তাই পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ই প্রথম মূল্যবোধের ধারণার সাথে পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে পরিবারটির সামাজিক অবস্থানও বেশ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
কোনো পরিবার যেসব আচরণ স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয় অন্য পরিবারে আবার সেসবই সৌজন্য পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। তাই পারিবারিক মূল্যবোধ ব্যক্তির মনন চিন্তন মেধা প্রতিভা প্রজ্ঞা ইত্যাদি সমস্ত কিছুকেই প্রভাবিত করে। যা দ্বারা চালিত হয়ে ব্যক্তি সমস্ত কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে। জেনারেশন গ্যাপ বলতে যে শব্দটি বহুল প্রচলিত রয়েছে তার ভাবগত অর্থ হতে পারে প্রজন্মগত ব্যবধান। স্বভাবতই পরবর্তী প্রজন্মের সাথে পূর্ববর্তী প্রজন্মের সময়গত পার্থক্য থাকবেই। সেই সময়গত পার্থক্যের সাথে যুক্ত হয়েছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ। প্রযুক্তি যখন হাতের মুঠোয় তখন মুহূর্তের মধ্যেই আমরা হাজারো রকম তথ্য অনায়াসেই পেতে পারি। আকাশ সংস্কৃতি এক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ভিন দেশের সমাজ সংস্কৃতি পোশাক পরিচ্ছদ খাদ্যাভ্যাস কৃষ্টি কালচার ইত্যকার প্রপঞ্চের সাথে তরুণ প্রজন্ম খুব সহজেই অভিযোজন লাভ করছে।
একটা সময় ছিল যখন প্রবীণদের কথা অবধারিত ভাবে মান্য করা হতো।প্রতিবাদ তো দূরের কথা ভিন্ন মত প্রকাশ করলেও সেটা অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হতো। আগেকার রীতিনীতি কৃষ্টি কালচার নীতি নৈতিকতার ব্যাপক পরিবর্তনে আমরা যারা পূর্ব প্রজন্মের তাদের মনন চিন্তা ও ধারনায় দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ইদানিং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণের প্রভাব আমিত্ববোধ জাগতিক ব্যস্ততা নারী পুরুষের কর্মে অংশগ্রহণের ফলে সামাজিক জীবনে নতুন আবহ তৈরি করছে। ইদানিং শিশুরা চাইলেও খেলার সাথী পায় না প্রতিবেশীর সাথে মিশতে নানা জটিলতা আত্মীয়দের সাথে নিয়ম করে বেড়াতে পারে না নিয়ত ডিভাইস নির্ভরতা এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা সমাজ বাস্তবতায় যান্ত্রিক এবং রোবোটিক প্রাণীতে পরিণত করছে। ছাড় দেয়ার মানসিকতার বদলে ভোগবাদের ক্রমবিকাশ নানাবিধ অস্থিরতা তৈরি করছে।
বর্তমানে প্রচার করা হয় তরুণদের কথা বেশি শুনতে হবে। তার মতামতকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। তার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করলে আপনি মাঝে মধ্যে আত্মহত্যার হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন। যা কিনা মূল্যবোধ পরিবর্তনের কারণে ঘটে চলেছে। শিক্ষার প্রসার সমাজ সচেতনতা যোগাযোগের অসামান্য অগ্রগতি যৌথ পরিবারের নিষ্ক্রিয়তা কৃষি থেকে নগর সমাজে রুপান্তর আর্থিক কাঠামোর শক্ত ভিত্তি উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রযুক্তি নির্ভরতা এসব ই নিয়ত পারিবারিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রভাব ই রয়েছে। মূল্যবোধের পরিবর্তনে প্রজন্ম রসাতলে চলে যাচ্ছে এমন ভাবার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
নতুন নতুন আইডিয়ার জন্ম কিন্তু তাদের হাত ধরেই আসছে।গুরুজনেরা যুগ যুগ ধরে যেসব মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন তাদের পক্ষে এমন পরিবর্তন মেনে নেয়া সহজ হিসেব না হলেও বাধ্য হয়েই এসবে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। নীতি নৈতিকতা ন্যায় অন্যায় বোধে পরিবর্তন আসবে আসুক। কিন্তু আমাদের কৃষ্টি ঐতিহ্য যেন এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেখানটায় খেয়াল রাখা জরুরী।অবশ্য ঐতিহ্যের সাথে নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হয়ে নানারকমের ফিউশন সৃষ্টি হচ্ছে। জানিনা সেটা কতটা মানসম্মত এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে। আমি আপনি চাইলেও পরিবর্তন আসবে, না চাইলেও আসবে। তাই পরিবর্তনকে সহজ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক হবে।
ফারহানা ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট।
পরিবারকে বলা হয় মৌল সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মানুষের জীবনে পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রতিষ্ঠানটি তার নানাবিধ কার্যক্রম দ্বারা মানবজাতির প্রাণ প্রবাহকে গতিশীল রেখে চলেছে। সন্তান জন্মদান, লালন পালন, প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি মনোবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াদি, সামাজিকীকরণ এবং ধর্মীয় অর্থনৈতিক কার্যাবলী ইত্যাদি অগ্রগণ্য। সময়ের পরিক্রমায় পারিবারিক মূল্যবোধে অনেক বেশি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বলা বাহুল্য আধুনিক সময়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অত্যাধিক ব্যবহার এ পরিবর্তন সাধনে কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে।
মূল্যবোধ একটি মানসিক অবস্থাগত ধারণা। ব্যক্তির সামগ্রিক কার্যাবলীতে এর প্রভাব ব্যাপক। ন্যায় -অন্যায় উচিত-অনুচিতের যে ধারণা ব্যক্তি ধারণ করে এর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানুষ তার সমগ্র ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে থাকে। দেশ জাতি বর্ণ স্থান কাল পাত্র ভেদে এর আবার রকমফের আছে। এক সমাজে যেটাকে স্বীকৃতি দেয় সহজেই অন্যত্র সেটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ বলেও স্বীকৃতি পেতে পারে। রয়েছে সমাজ স্বীকৃত ও আইনগত প্রচলিত নানা নিয়ম নীতি যা দ্বারা মূল্যবোধকে নিরূপণ করা হয়। পরিবারেই যেহেতু শিশুর জন্ম বেড়ে ওঠা তাই পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে ই প্রথম মূল্যবোধের ধারণার সাথে পরিচিতি লাভ করে। এক্ষেত্রে পরিবারটির সামাজিক অবস্থানও বেশ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
কোনো পরিবার যেসব আচরণ স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয় অন্য পরিবারে আবার সেসবই সৌজন্য পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। তাই পারিবারিক মূল্যবোধ ব্যক্তির মনন চিন্তন মেধা প্রতিভা প্রজ্ঞা ইত্যাদি সমস্ত কিছুকেই প্রভাবিত করে। যা দ্বারা চালিত হয়ে ব্যক্তি সমস্ত কার্যাদি সম্পন্ন করে থাকে। জেনারেশন গ্যাপ বলতে যে শব্দটি বহুল প্রচলিত রয়েছে তার ভাবগত অর্থ হতে পারে প্রজন্মগত ব্যবধান। স্বভাবতই পরবর্তী প্রজন্মের সাথে পূর্ববর্তী প্রজন্মের সময়গত পার্থক্য থাকবেই। সেই সময়গত পার্থক্যের সাথে যুক্ত হয়েছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ। প্রযুক্তি যখন হাতের মুঠোয় তখন মুহূর্তের মধ্যেই আমরা হাজারো রকম তথ্য অনায়াসেই পেতে পারি। আকাশ সংস্কৃতি এক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। ভিন দেশের সমাজ সংস্কৃতি পোশাক পরিচ্ছদ খাদ্যাভ্যাস কৃষ্টি কালচার ইত্যকার প্রপঞ্চের সাথে তরুণ প্রজন্ম খুব সহজেই অভিযোজন লাভ করছে।
একটা সময় ছিল যখন প্রবীণদের কথা অবধারিত ভাবে মান্য করা হতো।প্রতিবাদ তো দূরের কথা ভিন্ন মত প্রকাশ করলেও সেটা অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হতো। আগেকার রীতিনীতি কৃষ্টি কালচার নীতি নৈতিকতার ব্যাপক পরিবর্তনে আমরা যারা পূর্ব প্রজন্মের তাদের মনন চিন্তা ও ধারনায় দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ইদানিং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রীকরণের প্রভাব আমিত্ববোধ জাগতিক ব্যস্ততা নারী পুরুষের কর্মে অংশগ্রহণের ফলে সামাজিক জীবনে নতুন আবহ তৈরি করছে। ইদানিং শিশুরা চাইলেও খেলার সাথী পায় না প্রতিবেশীর সাথে মিশতে নানা জটিলতা আত্মীয়দের সাথে নিয়ম করে বেড়াতে পারে না নিয়ত ডিভাইস নির্ভরতা এবং অন্তর্মুখী স্বভাবের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা সমাজ বাস্তবতায় যান্ত্রিক এবং রোবোটিক প্রাণীতে পরিণত করছে। ছাড় দেয়ার মানসিকতার বদলে ভোগবাদের ক্রমবিকাশ নানাবিধ অস্থিরতা তৈরি করছে।
বর্তমানে প্রচার করা হয় তরুণদের কথা বেশি শুনতে হবে। তার মতামতকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। তার সাথে দ্বিমত প্রকাশ করলে আপনি মাঝে মধ্যে আত্মহত্যার হুমকির সম্মুখীন হতে পারেন। যা কিনা মূল্যবোধ পরিবর্তনের কারণে ঘটে চলেছে। শিক্ষার প্রসার সমাজ সচেতনতা যোগাযোগের অসামান্য অগ্রগতি যৌথ পরিবারের নিষ্ক্রিয়তা কৃষি থেকে নগর সমাজে রুপান্তর আর্থিক কাঠামোর শক্ত ভিত্তি উন্মুক্ত বাজার ব্যবস্থা প্রযুক্তি নির্ভরতা এসব ই নিয়ত পারিবারিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রভাব ই রয়েছে। মূল্যবোধের পরিবর্তনে প্রজন্ম রসাতলে চলে যাচ্ছে এমন ভাবার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
নতুন নতুন আইডিয়ার জন্ম কিন্তু তাদের হাত ধরেই আসছে।গুরুজনেরা যুগ যুগ ধরে যেসব মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেন তাদের পক্ষে এমন পরিবর্তন মেনে নেয়া সহজ হিসেব না হলেও বাধ্য হয়েই এসবে খাপ খাওয়াতে হচ্ছে। নীতি নৈতিকতা ন্যায় অন্যায় বোধে পরিবর্তন আসবে আসুক। কিন্তু আমাদের কৃষ্টি ঐতিহ্য যেন এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেখানটায় খেয়াল রাখা জরুরী।অবশ্য ঐতিহ্যের সাথে নতুন নতুন ধারণা যুক্ত হয়ে নানারকমের ফিউশন সৃষ্টি হচ্ছে। জানিনা সেটা কতটা মানসম্মত এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে। আমি আপনি চাইলেও পরিবর্তন আসবে, না চাইলেও আসবে। তাই পরিবর্তনকে সহজ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক হবে।
ফারহানা ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, মুরারিচাঁদ কলেজ, সিলেট।