কোরবানিতে খামারি ও পালা গরুর চাহিদা বেশি

৩৬ হাজার খামারির কাছে আড়াই লাখ গরু

গাজীউল হক সোহাগ
Thumbnail image

যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার ও মানুষের আয় বাড়ার কারণে কোরবানি দেওয়া লোকের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। ওই কারণে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু পালন করা ব্যক্তির সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। কুমিল্লা জেলায় ৩৬ হাজার ৭৪ টি ছোট বড় খামার আছে। এতে এবার ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৬টি গরু কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। শিক্ষিত তরুণদের পাশাপাশি আদর্শ কৃষক ও কৃষানি খামার গড়ে গরু লালন পালন ও মোটাতাজা করেছেন। গরুর গায়ের রঙ ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে দরদাম হয়ে থাকে। তবে পালা ও খামারিদের গরুর চাহিদা এই জেলায় বেশি। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। বৈরি আবহাওয়ায় এবার এখনও জমছে না কোরবানির হাট। কুমিল্লার বাজারে ভারতীয় গরু নেই। ভারতীয় গরু অসুস্থ ও বয়স্ক। ভারত ভালো গরু দেয় না। জেলার ১৭ উপজেলার হাটে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ৭৯টি মেডিকেল ভ্রাম্যমান দল গরুর স্বাস্থ সেবায় মোতায়েন আছে। কোন কোন হাটে স্থায়ী মেডিকেল দলও থাকবে।

এদিকে খামারিদের ভাষ্য, বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিন হাট বসতে পারছে না। ক্রেতাও যাচ্ছেন না। হাট যাঁরা ইজারা নিয়েছেন তাঁরাও বেকায়দায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে গরুর দাম কমতে পারে। তখন লোকসান হবে। এরপরেও খামারিদের আশা ঈদের আগের এক সপ্তাহের মধ্যে আবহাওয়া ঠিক হয়ে যাবে। হাটে ফিরে আসবে মানুষ।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় গরু( ষাঁড়, বলদ ও গাভী) ,মহিষ, ছাগল ও ভেড়াসহঅন্যান্য গবাদিপশু আছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৯১৬টি। জেলায় কোরবানির চাহিদা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি পশুর। উদ্বৃত্ত পশুরসংখ্যা ১০ হাজার ৩৩০ টি।

কুমিল্লায় এবার কোরবানির জন্য ১ লাখ ২৪ হাজার ৩০ টি ষাঁড় ( আঞ্চলিক নাম বেরস) ২৯ হাজার ৯৬৮ টি বলদ ( আবাল) ও ৩৭ হাজার ৮৪ টি গাভী (মা গরু) আছে। মহিষ আছে ৬০৮ টি, ছাগল(খাসি) ৫৬ হাজার ৯৪০টি, ভেড়া ১১ হাজার ৮০৫ টি ও অন্যান্য পশু ৩১৭ টি। তিতাসে ৩৭৮ টি ও নাঙ্গলকোটে ১৩৯টি মহিষ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে।

বরুড়া উপজেলায় খামারি ৩ হাজার ৫৬১ জন। তাঁদের কাছে ষাঁড় আছে ১৪ হাজার ৩৫৩ টি, বলদ ২ হাজার ১৫০ টি, গাভী ৩ হাজার ৭৯৬টি। জেলার মধ্যে বরুড়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ২০ হাজার ২৯৯ টি গরু আছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমলপুর এলাকার ফরিদ অ্যাগ্রো ফার্মে ২০ টি ষাঁড় আছে। ওই ফার্মের পরিচালক দেলোয়ার হোসেন মানিক বলেন, আমাদের ফার্মের গরুর দেখভাল করার জন্য তিনজন শ্রমিক কাজ করছেন। প্রতিদিন আমি নিজে ফার্মে যাই। পরিবারের কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে অন্যগুলো বিক্রি করে দেব। নিজের পালা গরু কোরবানি দিলে সওয়াব বেশি। দেশিয় ঘাস ও খাবার দিচ্ছি ওদের।

কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার রঘুরামপুর এলাকার এফ আর অগ্রো ফার্ম বড় ধরনের ফার্ম। এখানে সব ধরনের গরু আছে। বিশাল জায়গা নিয়ে ওই ফার্ম। পশু বিক্রি, দুধ বিক্রি সবই হচ্ছে এখানে। পরিষ্কার ও গুছানো ফার্ম এটি। এখানেও কোরবানির গরু আছে। ফার্ম থেকে কিনে নিচ্ছেন লোকজন।

আদর্শ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তানজিলা ফেরদৌসী বলেন,‘ গরমে, ভ্যাপসা গরমে ও বৃষ্টির সময় সাধারণত কোরবানির পশুর হাট বসে। এই সময়ে সকালে গরুকে এনে হাটে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে গবাদিপশু ক্লান্ত হয়ে শুয়ে যায়। তখন ভেটেরিনারি মেডিকেল দল তাদের সেবা করে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন, কুমিল্লায় কোরবানির গরুর অভাব নেই। গরু নিয়ে কোন ধরনের টেনশন করতে হবে না। ১০ হাজারের বেশি গরু আছে। বেশির ভাগ গরু খামারি ও কৃষকের। কুমিল্লার বাজারে ভারতীয় গরু আসে না, নেইও। ভারতীয় গরু বয়স্ক

ও অসুস্থ।

তিনি বলেন, জেলার এককটি খামারে আমাদের শিক্ষিত তরুণেরা গরু পালন শুরু করেছে। ওরা ভালো করছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওরা খামার গড়ে তুলেছে। ওজনে গরু বিক্রি করছে। সারাবছরই করছে। গরুর মাংসের চাহিদা সবসময়ই আছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত