কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ সমাবেশে পূবালী চত্বর পূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে নগরের লিবার্টি চত্বর, রানীরবাজার, পুলিশ লাইন, রাজগঞ্জ ও টমছমব্রিজ সড়কে। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন এ মহাসমাবেশের।

বিকেল তিনটার পর কুমিল্লার পূবালী চত্বর লোকে লোকারণ্য। প্রত্যেকের হাতে ছিল ‘কুমিল্লা নামে বিভাগ চাই’ লেখা ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা। কুমিল্লার নামেই বিভাগ চাই এবং তুমি কে, আমি কে কুমিল্লা’ নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো সমাবেশস্থল, প্রকম্পিত হয় আশপাশের এলাকাও। ধীরে ধীরে যোগ দেয় কুমিল্লার সর্বস্তরের জনতা।

এদিন মহাসমাবেশে অংশ নিতে কুমিল্লা দোকান মালিক ফেডারেশনের উদ্যোগে নেওয়া হয় এক ব্যতিক্রমী কর্মসূচি। মহানগরীর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট ও শপিংমল এক ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়। ব্যবসায়ী থেকে শ্রমিক; সবাই দল মত নির্বিশেষে সমাবেশে যোগ দিয়ে কুমিল্লা বিভাগের দাবিতে একাত্মতা জানান। নারী-পুরুষ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে পূবালী চত্বর রূপ নেয় জনসমুদ্রে। হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন এই ঐতিহাসিক সমাবেশে।

এছাড়া সমাবেশে অংশ নেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কল্যাণ সমিতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর সমিতিসহ কুমিল্লার বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও দৃঢ় হবে এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেও অন্যতম সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিন। এসময় বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা দোকান মালিক ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক জামাল খন্দকার, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু, কুমিল্লা মহানগর হেফাজতে ইসলামের সেক্রেটারি ও জেলা কওমি মাদ্রাসা সংগঠনের সেক্রেটারি মাওলানা মুন্নীরুল ইসলাম কাসেমী এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম হৃদয়। সমাবেশে সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আমিন উর রশিদ ইয়াসিন বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিভাগ ঘোষণা না দিলে নিজেরাই নিজেদের চিঠিপত্রে লিখে ফেলব জেলা কুমিল্লা, বিভাগ কুমিল্লা। কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন। বিগত স্বৈরাচার সরকার এ দাবিকে উপেক্ষা করে বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছিল। বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবি অতি দ্রুত কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় কুমিল্লাবাসীকে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।

কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, বিগত সরকার কুমিল্লাকে নানান কারণে পিছিয়ে রেখেছে। কুমিল্লার মানুষকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এই সরকার যদি মানুষের আস্থা না রাখতে পাওে, তাহলে কুমিল্লার মানুষকে আটকানো যাবে না। এসময় বিভাগ নিয়ে কঠোর আন্দোলনে জামায়াতের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।