• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> কুমিল্লা জেলা

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী

রাশেদা আক্তার
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৯
logo

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী

রাশেদা আক্তার

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৩৯
Photo

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া একটি নক্ষত্র। এ ক্ষণজন্মা নারী স্বদেশে বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছেন অথচ ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়া এই অমূল্য রত্নকে যথাযথ সম্মানে ভূষিত করতে মোটেই কার্পণ্য করেননি। আনুমানিক ১৮৩৪ সালে লাকসামের অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে এক রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও মাতা জমিদার কন্যা আফরান্নেছা চৌধুরাণী। পর্দার অন্তরালে বাল্যকালে কিছুটা শিক্ষার আলো তিনি পেয়েছিলেন সত্য কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের আলো লুকিয়েছিল তাঁর অন্তরে। বেগম রোকেয়ার জন্মেরও ৫০ বছর আগে জন্ম নেয়া এ নারী বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর আগেই কুমিল্লার মত একটি মফস্বল শহরে মেয়েদের জন্য ‘ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করে শুধু দূরদর্শিতা নয় দুঃসাহসিকতারও পরিচয় দিয়েছেন। সাদামাটা ও অনাড়ম্বরভাবে জমিদারি পরিচালনা করেছেন মোড়ায় বসে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বিশাল এক ভূ-সম্পত্তির মালিক হন। অথচ তথাকথিত জমিদারদের মত তিনি শোষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রজাদরদী, প্রজাহিতৈষী, দানশীল ও প্রগতিশীল। নারী পুরুষ সবার জন্য তাঁর দানের হস্ত ছিল প্রসারিত। তাঁর দান কিন্তু অর্থ কড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব, স্কুল, কলেজ, এতিমখানা, রাস্তা, পুল ইত্যাদি জনকল্যানমূলক বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে মক্কা মদিনা পর্যন্ত তাঁর দানের ক্ষেত্র বিস্তৃত ছিল। তিনি পর্দানশীল ছিলেন অথচ গৃহবন্ধী ছিলেন না। পালকিতে চড়ে, জনশ্রুতি অনুযায়ী কখনও কখনও ঘোড়ায় চড়ে তিনি জমিদারি পরিদর্শনে বের হতেন এবং প্রজাসাধারনের দুঃখ কষ্ট নিজ চোখে দেখে তা লাঘবের চেষ্টা করতেন। তিনি সাহিত্যানুরাগী ও সাহিত্যসেবী ছিলেন। প্রথম মুসলমান বাঙ্গালী নারী লেখক হিসেবে পুস্তকাকারে প্রকাশিত ‘রূপজালাল’ নামক গ্রন্থটি তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। শুধুমাত্র মেয়েদের চিকিৎসার জন্য ‘জেনানা হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি পর্দানশীল মেয়েদের চিকিৎসায় যে অবদান রেখেছেন তা সত্যি বিরল। তিনি যেমন ছিলেন ধর্মানুরাগী তেমনি সমাজ সংস্কারক। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, তিনি শুধু তাঁর যুগকে নয় বর্তমান যুগকেও যেন ছাড়িয়ে গিয়েছেন অনেক দূর। নিরব বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারকে উপেক্ষা করে সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একজন সাহসী নারী কর্মের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করতে পারে। ‘নওয়াব’ খেতাব প্রাপ্তি জমিদার ফয়জুন্নেসার জীবনের একটি অনিন্দ্যসুন্দর ঘটনা। তৎকালীন ত্রিপুরার (বর্তমান কুমিল্লা) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. ডগলাস জনহিতকর কাজের জন্য অর্থ ঋণ চেয়ে বিভিন্ন জমিদারদের কাছে চিঠি পাঠান। কোন প্রতাপশালী জমিদার এই প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও জনদরদী ফয়জুন্নেসা কাঙ্খিত অর্থ (প্রায় ১ লক্ষ টাকা) প্রদান করেন। পরে মিস্টার ডগলাস অর্থ ফেরৎ দিতে গেলে জমিদার ফয়জুন্নেসা বলেন, ‘ফয়জুন্নেসা যা দেয় তা দান হিসাবেই দেন, কর্জ হিসাবে নয়।’ ফয়জুন্নেসার এমন আচরনে মুগ্ধ হয়ে মি. ডগলাস বৃটেনে মহারাণীর নিকট এই মহিয়সী রমণীর উপযুক্ত খেতাব প্রার্থনা করেন। মহারাণী ভিক্টোরিয়া ও তাঁর পরিষদ এই দুঃসাহসী রমণীকে ‘নওয়াব’ খেতাবে ভূষিত করেন। তিনিই উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা খেতাবপ্রাপ্ত 'নওয়াব'। মৃত্যুর পূর্বে তিনি নিজ বাড়িটি সহ অর্জিত সম্পদের অনেকটাই জনকল্যাণে দান করে যান। তাঁর ‘ওয়াকফ’ দলিলটি দানশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯০৩ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দশ গম্বুজ মসজিদের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

রাশেদা আক্তার: প্রধান শিক্ষক,নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুমিল্লা।

Thumbnail image

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া একটি নক্ষত্র। এ ক্ষণজন্মা নারী স্বদেশে বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছেন অথচ ইংল্যান্ডের মহারাণী ভিক্টোরিয়া এই অমূল্য রত্নকে যথাযথ সম্মানে ভূষিত করতে মোটেই কার্পণ্য করেননি। আনুমানিক ১৮৩৪ সালে লাকসামের অন্তর্গত পশ্চিমগাঁয়ে এক রক্ষনশীল মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা জমিদার আহম্মদ আলী চৌধুরী ও মাতা জমিদার কন্যা আফরান্নেছা চৌধুরাণী। পর্দার অন্তরালে বাল্যকালে কিছুটা শিক্ষার আলো তিনি পেয়েছিলেন সত্য কিন্তু প্রকৃত জ্ঞানের আলো লুকিয়েছিল তাঁর অন্তরে। বেগম রোকেয়ার জন্মেরও ৫০ বছর আগে জন্ম নেয়া এ নারী বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর আগেই কুমিল্লার মত একটি মফস্বল শহরে মেয়েদের জন্য ‘ফয়জুন্নেসা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করে শুধু দূরদর্শিতা নয় দুঃসাহসিকতারও পরিচয় দিয়েছেন। সাদামাটা ও অনাড়ম্বরভাবে জমিদারি পরিচালনা করেছেন মোড়ায় বসে। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত জমিদারি দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে বিশাল এক ভূ-সম্পত্তির মালিক হন। অথচ তথাকথিত জমিদারদের মত তিনি শোষক ছিলেন না। তিনি ছিলেন প্রজাদরদী, প্রজাহিতৈষী, দানশীল ও প্রগতিশীল। নারী পুরুষ সবার জন্য তাঁর দানের হস্ত ছিল প্রসারিত। তাঁর দান কিন্তু অর্থ কড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। তিনি মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তব, স্কুল, কলেজ, এতিমখানা, রাস্তা, পুল ইত্যাদি জনকল্যানমূলক বহু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে মক্কা মদিনা পর্যন্ত তাঁর দানের ক্ষেত্র বিস্তৃত ছিল। তিনি পর্দানশীল ছিলেন অথচ গৃহবন্ধী ছিলেন না। পালকিতে চড়ে, জনশ্রুতি অনুযায়ী কখনও কখনও ঘোড়ায় চড়ে তিনি জমিদারি পরিদর্শনে বের হতেন এবং প্রজাসাধারনের দুঃখ কষ্ট নিজ চোখে দেখে তা লাঘবের চেষ্টা করতেন। তিনি সাহিত্যানুরাগী ও সাহিত্যসেবী ছিলেন। প্রথম মুসলমান বাঙ্গালী নারী লেখক হিসেবে পুস্তকাকারে প্রকাশিত ‘রূপজালাল’ নামক গ্রন্থটি তাঁর উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। শুধুমাত্র মেয়েদের চিকিৎসার জন্য ‘জেনানা হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি পর্দানশীল মেয়েদের চিকিৎসায় যে অবদান রেখেছেন তা সত্যি বিরল। তিনি যেমন ছিলেন ধর্মানুরাগী তেমনি সমাজ সংস্কারক। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, তিনি শুধু তাঁর যুগকে নয় বর্তমান যুগকেও যেন ছাড়িয়ে গিয়েছেন অনেক দূর। নিরব বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারকে উপেক্ষা করে সমাজকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন একজন সাহসী নারী কর্মের মাধ্যমে বিশ্ব জয় করতে পারে। ‘নওয়াব’ খেতাব প্রাপ্তি জমিদার ফয়জুন্নেসার জীবনের একটি অনিন্দ্যসুন্দর ঘটনা। তৎকালীন ত্রিপুরার (বর্তমান কুমিল্লা) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. ডগলাস জনহিতকর কাজের জন্য অর্থ ঋণ চেয়ে বিভিন্ন জমিদারদের কাছে চিঠি পাঠান। কোন প্রতাপশালী জমিদার এই প্রস্তাবে সাড়া না দিলেও জনদরদী ফয়জুন্নেসা কাঙ্খিত অর্থ (প্রায় ১ লক্ষ টাকা) প্রদান করেন। পরে মিস্টার ডগলাস অর্থ ফেরৎ দিতে গেলে জমিদার ফয়জুন্নেসা বলেন, ‘ফয়জুন্নেসা যা দেয় তা দান হিসাবেই দেন, কর্জ হিসাবে নয়।’ ফয়জুন্নেসার এমন আচরনে মুগ্ধ হয়ে মি. ডগলাস বৃটেনে মহারাণীর নিকট এই মহিয়সী রমণীর উপযুক্ত খেতাব প্রার্থনা করেন। মহারাণী ভিক্টোরিয়া ও তাঁর পরিষদ এই দুঃসাহসী রমণীকে ‘নওয়াব’ খেতাবে ভূষিত করেন। তিনিই উপমহাদেশের একমাত্র মহিলা খেতাবপ্রাপ্ত 'নওয়াব'। মৃত্যুর পূর্বে তিনি নিজ বাড়িটি সহ অর্জিত সম্পদের অনেকটাই জনকল্যাণে দান করে যান। তাঁর ‘ওয়াকফ’ দলিলটি দানশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯০৩ সালের ২৩ শে সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দশ গম্বুজ মসজিদের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

রাশেদা আক্তার: প্রধান শিক্ষক,নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুমিল্লা।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী ও মা হত্যাকাণ্ড; আসামির ফাঁসির দাবি

২

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকসুর পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

৩

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী

৪

দেবীদ্বারে ১০০ শয্যার হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরের আশ্বাস

৫

নওয়াব ফয়জুন্নেছার ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সম্পর্কিত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যলয়ের  শিক্ষার্থী ও মা হত্যাকাণ্ড; আসামির ফাঁসির দাবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী ও মা হত্যাকাণ্ড; আসামির ফাঁসির দাবি

১৩ ঘণ্টা আগে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকসুর পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কুকসুর পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

১৩ ঘণ্টা আগে
দেবীদ্বারে ১০০ শয্যার হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরের আশ্বাস

দেবীদ্বারে ১০০ শয্যার হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজে রূপান্তরের আশ্বাস

১৭ ঘণ্টা আগে
নওয়াব ফয়জুন্নেছার ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নওয়াব ফয়জুন্নেছার ১২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

১৭ ঘণ্টা আগে