খনন হচ্ছে বালাগাজীর মুড়া, লালমাইয়ে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

Thumbnail image

গত এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত লালমাই পাহাড়ের দক্ষিণ অংশে কথিত বালাগাজীর মুড়ায় পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে পরিচালিত এ অনুসন্ধানের ফলে ছোট ছোট প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসহ বের হয়ে আসতে শুরু করেছে প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। ১৯৪৫ সালে শিমলা গেজেটে কুমিল্লার ১৮টি প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট ঘোষণা করা হয়। পরে তা থেকে ১০ থেকে ১২ টি স্থান খনন করা হয় বিভিন্ন সময়। ওই গেজেটে এটিও ছিল। অনুমতি পাওয়ার পর এর খনন কাজ শুরু হয়।

পরিদর্শনে দেখা যায়, বড় বড় ইট দিয়ে তৈরি প্রায় ছয় ফুট চওড়া প্রাচীন একটি দেয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে। যা হয়তো কোনো স্থাপনার কর্নার। খননকালে মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরোবিশিষ্ট তিন চার ফুট পুরু একাধিক মাটির স্তর সরানোর পরে সন্ধান মেলে প্রাচীন সভ্যতার ঐতিহ্যবাহী দেয়ালের এ ধ্বংসাবশেষ।

বালাগাজীর মুড়া নামে পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে উন্মোচিত প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ লালমাই ময়নামতিতে আবিষ্কৃত হাজার বছর আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, ভোজ বিহার, ইটাখোলা ও রুপবান মুড়ার প্রাচীন মন্দির ও বিহারের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান টিম।

তবে টিমের অন্যতম সদস্য মো. শাহীন আলম বলেন, বালাগাজীর মুড়ায় মাত্রই তো খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকৃত সময় সম্পূর্ণ খনন ও গবেষণা কাজ সম্পন্ন করার পরে জানা যাবে। এই স্থানটি বালাগাজীর মুড়া স্থানীয়দের কাছে চারা বাড়ি নামে সুপরিচিত। মূলত এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির উপরিভাগে প্রচুর চারা অর্থাৎ মৃৎপাত্রের ভগ্ন টুকরো থাকায় স্থানীয়ভাবে এ নামকরণ হয়।

এ সময় তিনি বলেন, আমরা খনন কাজ করছি। এখনও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না আসলে এটি কি কোন মন্দির নাকি বাড়ি। তবে ধীরে ধীরে তা দৃশ্যমান হচ্ছে। এছাড়াও আশপাশের পূর্বে আবিষ্কৃত বিভিন্ন পুরাকীর্তি দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, এটি কোনো মন্দির হতে পারে। আমরা এখনও সেখান থেকে পূর্ণ কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র পাইনি। শুধুমাত্র কয়েকটি প্রত্নবস্তুর অংশবিশেষ পেয়েছি।

সরকার রাজস্ব পেতে পারে বলে ধারণা করে ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, এই সাইটটি যদি প্রকাশ্যে আসে এবং এতে যদি কোন প্রত্নতাত্ত্বিক ভালো নিদর্শন পাওয়া যায় তাহলে এটি হতে পারে শালবন বিহারসহ আশপাশের সাইটগুলোর মতো জনপ্রিয়। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেতে পারে। তবে এর জন্য অবশ্যই তার খনন কাজ করে প্রকাশ্যে আনতে হবে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানা বলেন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনা করে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে বালাগাজীর মুড়াকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৪৫ সালের শিমলা গেজেটে প্রকাশ করা হয়। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাবিনা আলম মহোদয়ের অনুমোদন ও নির্দেশনা নিয়ে এ বছর কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত বালাগাজীর মুড়ায় খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।

খনন ও অনুসন্ধান কাজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ফিল্ড অফিসার) মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল জানান, চলতি এপ্রিল ২০২৫ মাসের প্রথম দিক থেকে বালাগাজীর মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু করা হয়েছে, যা আগামী জুন পর্যন্ত চলবে।

উল্লেখ্য যে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক দপ্তর, কুমিল্লার একটি প্রত্নতাত্ত্বিক টিম কুমিল্লা জেলার এ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করছে। আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সাত সদস্যের খনন টিমে আরও আছেন ফিল্ড অফিসার মো. আবু সাইদ ইনাম তানভীরুল, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মো. শাহীন আলম, গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক, সার্ভেয়ার চাইথোয়াই মার্মা, ফটোগ্রাফার শঙ্খনীল দাশ এবং পটারি রেকর্ডার রিপন মিয়া।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত