জবাবদিহি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি
সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ খাতে একের পর এক অনিয়ম ও অস্বচ্ছ চুক্তির প্রমাণ মিলছে-এমন তথ্য উদ্বেগজনক হলেও নতুন নয়। তবে এবার বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিক, সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদ্যুতের দামে। প্রতিবেদনের উপাত্ত বলছে, গত ১৪ বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে ১১ গুণ।
২০১১ সালে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে যেখানে ৬৩.৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি ডলারে। এ বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিদ্যুতের দাম এখন ২৫ শতাংশ বেশি, ভর্তুকি বাদ দিলে যা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এতে শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা হ্রাস পাচ্ছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। কমিটির সদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আওতায় যেসব চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোতেই দুর্নীতি ও প্রক্রিয়াগত অনিয়ম রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন-বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এসব সার্বভৌম চুক্তি ইচ্ছামতো বাতিল করা সম্ভব নয়; আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতায় তা করলে রাষ্ট্রকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ফলে এখন জরুরি হলো, প্রতিটি চুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে আইনসঙ্গত পথে সংশোধন ও পুনর্গঠন করা। জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের বক্তব্যে আশার ইঙ্গিত আছে-অনিয়ম প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিলের দ্বিধা থাকবে না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন আইনি প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনগণের সামনে পূর্ণ স্বচ্ছতা। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যথার্থই বলেছেন, এসব অনিয়ম শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, পরিবেশ ও নৈতিক শাসনব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিদ্যুৎ খাত দেশের উন্নয়ন কাঠামোর মেরুদণ্ড। এই খাতে দুর্নীতি মানে শুধু অকার্যকর বিনিয়োগ নয়, সাধারণ মানুষের জীবনের ব্যয়ও বাড়ানো। তাই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, তার ভিত্তিতে দায় নির্ধারণ ও পুনর্গঠনই হতে হবে সরকারের প্রথম দায়িত্ব। জ্বালানি নীতি হতে হবে টেকসই, স্বচ্ছ ও জনস্বার্থনির্ভর। বিদেশি বিনিয়োগ বা দ্রুত উৎপাদনের অজুহাতে যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে তার খেসারত দিতে হবে জাতিকে। এখন সময় এসেছে-বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করে প্রকৃত জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার। এটাই হবে নতুন রাজনৈতিক যুগের প্রতি নাগরিক আস্থার প্রথম পরীক্ষা।

বিদ্যুৎ খাতে একের পর এক অনিয়ম ও অস্বচ্ছ চুক্তির প্রমাণ মিলছে-এমন তথ্য উদ্বেগজনক হলেও নতুন নয়। তবে এবার বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিক, সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীর যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে বিদ্যুতের দামে। প্রতিবেদনের উপাত্ত বলছে, গত ১৪ বছরে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে চার গুণ, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে ১১ গুণ।
২০১১ সালে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে যেখানে ৬৩.৮ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি ডলারে। এ বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বিদ্যুতের দাম এখন ২৫ শতাংশ বেশি, ভর্তুকি বাদ দিলে যা ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এতে শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা হ্রাস পাচ্ছে এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ছে। কমিটির সদস্যরা স্পষ্টভাবে বলেছেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আওতায় যেসব চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর অনেকগুলোতেই দুর্নীতি ও প্রক্রিয়াগত অনিয়ম রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন-বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে এসব সার্বভৌম চুক্তি ইচ্ছামতো বাতিল করা সম্ভব নয়; আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতায় তা করলে রাষ্ট্রকে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হতে পারে।
ফলে এখন জরুরি হলো, প্রতিটি চুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে আইনসঙ্গত পথে সংশোধন ও পুনর্গঠন করা। জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবিরের বক্তব্যে আশার ইঙ্গিত আছে-অনিয়ম প্রমাণিত হলে চুক্তি বাতিলের দ্বিধা থাকবে না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন আইনি প্রস্তুতি, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনগণের সামনে পূর্ণ স্বচ্ছতা। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যথার্থই বলেছেন, এসব অনিয়ম শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, পরিবেশ ও নৈতিক শাসনব্যবস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিদ্যুৎ খাত দেশের উন্নয়ন কাঠামোর মেরুদণ্ড। এই খাতে দুর্নীতি মানে শুধু অকার্যকর বিনিয়োগ নয়, সাধারণ মানুষের জীবনের ব্যয়ও বাড়ানো। তাই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ রাখা নয়, তার ভিত্তিতে দায় নির্ধারণ ও পুনর্গঠনই হতে হবে সরকারের প্রথম দায়িত্ব। জ্বালানি নীতি হতে হবে টেকসই, স্বচ্ছ ও জনস্বার্থনির্ভর। বিদেশি বিনিয়োগ বা দ্রুত উৎপাদনের অজুহাতে যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তবে তার খেসারত দিতে হবে জাতিকে। এখন সময় এসেছে-বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করে প্রকৃত জবাবদিহিমূলক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার। এটাই হবে নতুন রাজনৈতিক যুগের প্রতি নাগরিক আস্থার প্রথম পরীক্ষা।