অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ

২১ শে নভেম্বর ২৫ এর ১০ টা ৩৮ মিঃ ২৬ সে. এ হয়ে গেল এক ভয়ংকর ভূমিকম্প। রাজধানী থেকে প্রায় গোটা দেশেই এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদির মাধবদীতে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ছিল। নরসিংদির মাটিতে ফাটল পরিলক্ষিত হয়। এ পর্যন্ত যতগুলো ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।
গত পাঁচ বছরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় নাই। সারাদেশে দুই শতাধিক হতাহতের খবর জানা যায়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭ রিকটার স্কেল। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২ ব্যাচের ছাত্র রফিউল ইসলামসহ পুরানো ঢাকায় ৫ জন, নারায়নগঞ্জের ১ জন ও নরসিংদিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। বারিধারায় কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। কলাবাগান আবেদখালী রোডে ৭ তলা ভবন হেলে পড়ে। গাবতলীর ছাদ ধসে ৩ জন আহত হন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের থানায় ৫ টি ফাটল পরিলক্ষিত হয়। আরমানিটোলার স্বামীবাগে ৮ তলা হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সেনাকুঞ্জের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে হতাহতের জন্য ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কসাইটুলিতে ৮ তলা ভবন ধসের খরব পাওয়া যায়। একই সময় কলকাতায় ৫.৫ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ী ভাঙ্গাসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। শাহজালাল বিমানবন্দরে পলেস্তরা উঠে গেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়জুন্নেছা হলে ফাটল ও পলেস্তরা উঠে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়াছে।
এ জোনে যে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে যে কোন সময় ৮.২ থেকে ৮.৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য আমাদের করণীয় ও প্রস্তুতির কথাটিও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। নানারকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরাত গায়ে এসে না পড়া পর্যন্ত নজর দেই না। তাই দূর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু ভূমিকম্প এমন একটি দূর্যোগ, যার পূর্বাভাস জানার সুযোগ কম। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি রাখাই উত্তম। প্রকৃতি আমাদেরকে বারবার সতর্ক করছে কিন্তু আমরা সাবধান হচ্ছি না। ফলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখছে। আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে।
সিকিম, আসাম ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার জন্য দেশের ভেতরে ও বাহিরে ভূ- অভ্যন্তরে এত পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ভূমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসবে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস আগে থেকে জানা যায় না এবং একে আটকানোর কোন পথ নেই। এ অবস্থায় সচেতনতাবৃদ্ধি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই। যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় আর এ জন্য
প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কি করণীয় সে সম্পর্কে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনে জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমিকম্প সামলাতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সরকারি উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দালান ভেঙ্গে পড়ে মানুষের বেশি ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণাধীন ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, কর্তপক্ষকে সে ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে। উপকূলীয় এলাকা, যেখানে সুনামি, ভূমিকম্প ু সবধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংকা বেশি থাকে, সেখানে তৈরি করতে হবে অনেক আশ্রয় কেন্দ্র। যাতে মানুষ বিপদের সংকেত পাওয়া মাত্রই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারে। মানুষকে বোঝাতে হবে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
২রা ডিসেম্বর ২৪ এর ভূমিকম্পটি ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় অনুভূত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। ঐ দিন সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে ৩৩ সেকেন্ডে ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নগরবাসী। আতঙ্কে অনেকে ভবন ছেড়ে বাহিরেও বেড়িয়ে আসেন। উৎপত্তিস্থল যত কম গভীরে হবে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ততই বেশী হবে। ডিসেম্বর ২৪ এর ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও কুমিল্লায় আতংকে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক বলে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সৃষ্ট ভূকম্পনে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। রাজধানীতে ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নগরীগুলোতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। স্বল্প জায়গায় এত বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে এসব অট্টালিকা। যা স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনেই ভেঙ্গে পড়তে পারে। এছাড়া ভূমিকম্প পরবর্তী দূর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে বিপুল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঠেকানো সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা নিজেরাই যেন ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি না বাড়াই, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনে দেশবাসীর মনযোগ আকর্ষণের কোন বিকল্প নাই। ভবন নির্মানে বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা ভূমিকম্প নামক মহাবিপদকে ডেকে আনছি।
এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করা হলে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না, সামনে যে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে, ২১.১১.২০২৫ ভূমিকম্প সেই সতর্কবার্তাই দিচ্ছে। জানমাল রক্ষার্থে সরকার কালক্ষেপণ না করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ এখনই হাতে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।

২১ শে নভেম্বর ২৫ এর ১০ টা ৩৮ মিঃ ২৬ সে. এ হয়ে গেল এক ভয়ংকর ভূমিকম্প। রাজধানী থেকে প্রায় গোটা দেশেই এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এবার ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদির মাধবদীতে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ছিল। নরসিংদির মাটিতে ফাটল পরিলক্ষিত হয়। এ পর্যন্ত যতগুলো ভূমিকম্প সংঘটিত হয় তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।
গত পাঁচ বছরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয় নাই। সারাদেশে দুই শতাধিক হতাহতের খবর জানা যায়। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭ রিকটার স্কেল। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২ ব্যাচের ছাত্র রফিউল ইসলামসহ পুরানো ঢাকায় ৫ জন, নারায়নগঞ্জের ১ জন ও নরসিংদিতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। বারিধারায় কিছু ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। কলাবাগান আবেদখালী রোডে ৭ তলা ভবন হেলে পড়ে। গাবতলীর ছাদ ধসে ৩ জন আহত হন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের থানায় ৫ টি ফাটল পরিলক্ষিত হয়। আরমানিটোলার স্বামীবাগে ৮ তলা হেলে পড়ার খবর পাওয়া যায়। সেনাকুঞ্জের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে হতাহতের জন্য ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। কসাইটুলিতে ৮ তলা ভবন ধসের খরব পাওয়া যায়। একই সময় কলকাতায় ৫.৫ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ী ভাঙ্গাসহ অনেক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। শাহজালাল বিমানবন্দরে পলেস্তরা উঠে গেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফয়জুন্নেছা হলে ফাটল ও পলেস্তরা উঠে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়াছে।
এ জোনে যে বিপুল শক্তি প্রায় হাজার বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে যে কোন সময় ৮.২ থেকে ৮.৯ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য আমাদের করণীয় ও প্রস্তুতির কথাটিও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। নানারকম পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরাত গায়ে এসে না পড়া পর্যন্ত নজর দেই না। তাই দূর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের উদাসীনতার বিষয়টি স্পষ্ট। কিন্তু ভূমিকম্প এমন একটি দূর্যোগ, যার পূর্বাভাস জানার সুযোগ কম। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি রাখাই উত্তম। প্রকৃতি আমাদেরকে বারবার সতর্ক করছে কিন্তু আমরা সাবধান হচ্ছি না। ফলে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আমাদের ঘিরে রাখছে। আতঙ্কগ্রস্থ করে তুলছে।
সিকিম, আসাম ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায়ই ভূমিকম্প সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার জন্য দেশের ভেতরে ও বাহিরে ভূ- অভ্যন্তরে এত পরিমাণ শক্তি জমা হয়েছে। যেকোন মুহূর্তে ভূমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসবে। ভূমিকম্পের পূর্বাভাস আগে থেকে জানা যায় না এবং একে আটকানোর কোন পথ নেই। এ অবস্থায় সচেতনতাবৃদ্ধি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই। যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় আর এ জন্য
প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা। ভূমিকম্পের সময় ও তারপর কি করণীয় সে সম্পর্কে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহনে জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ভূমিকম্প সামলাতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারাভিযান। সরকারি উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিস, ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। ভূমিকম্পের সময় দালান ভেঙ্গে পড়ে মানুষের বেশি ক্ষতি হয়। তাই নির্মাণাধীন ভবনগুলো বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি হচ্ছে কিনা, কর্তপক্ষকে সে ব্যাপারে তদারকি জোরদার করতে হবে। উপকূলীয় এলাকা, যেখানে সুনামি, ভূমিকম্প ু সবধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের আশংকা বেশি থাকে, সেখানে তৈরি করতে হবে অনেক আশ্রয় কেন্দ্র। যাতে মানুষ বিপদের সংকেত পাওয়া মাত্রই আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারে। মানুষকে বোঝাতে হবে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী।
২রা ডিসেম্বর ২৪ এর ভূমিকম্পটি ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় অনুভূত হয়েছে। কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী এ ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৬। ঐ দিন সকাল ৯ টা ৩৫ মিনিটে ৩৩ সেকেন্ডে ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নগরবাসী। আতঙ্কে অনেকে ভবন ছেড়ে বাহিরেও বেড়িয়ে আসেন। উৎপত্তিস্থল যত কম গভীরে হবে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা ততই বেশী হবে। ডিসেম্বর ২৪ এর ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও কুমিল্লায় আতংকে একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৮০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক ভবনের দেয়ালে ফাটল ধরেছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।
দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা লক্ষাধিক বলে এক পরিসংখ্যানে জানা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে সৃষ্ট ভূকম্পনে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। নতুন ভবন নির্মাণে সরকারি তদারকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। রাজধানীতে ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য নগরীগুলোতে দিন দিন বাড়ছে আকাশচুম্বী অট্টালিকার সংখ্যা। স্বল্প জায়গায় এত বড় বড় স্থাপনা ভূমিকম্পের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি করা হচ্ছে এসব অট্টালিকা। যা স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনেই ভেঙ্গে পড়তে পারে। এছাড়া ভূমিকম্প পরবর্তী দূর্যোগ মোকাবেলায়ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। তৈরি করতে হবে বিপুল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। জনসচেতনার জন্য চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঠেকানো সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা নিজেরাই যেন ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি না বাড়াই, সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনে দেশবাসীর মনযোগ আকর্ষণের কোন বিকল্প নাই। ভবন নির্মানে বিল্ডিং কোড মেনে না চলা, বন উজাড়, পাহাড় কেটে ধ্বংস করাসহ নানা উপায়ে আমরা ভূমিকম্প নামক মহাবিপদকে ডেকে আনছি।
এখনই সারা দেশে ভবনগুলোর নিরাপত্তা যাচাই, সঠিক নির্মাণবিধি প্রয়োগ এবং নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়া চালু না করা হলে ভবিষ্যতে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ভয়াবহ। ফলে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ নির্মাণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করি আমরা। ভুলে গেলে চলবে না, সামনে যে আরও বড় ভূমিকম্প হতে পারে, ২১.১১.২০২৫ ভূমিকম্প সেই সতর্কবার্তাই দিচ্ছে। জানমাল রক্ষার্থে সরকার কালক্ষেপণ না করে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ এখনই হাতে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ।