• কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
  • আদর্শ সদর
  • বরুড়া
  • লাকসাম
  • দাউদকান্দি
  • আরও
    • চৌদ্দগ্রাম
    • সদর দক্ষিণ
    • নাঙ্গলকোট
    • বুড়িচং
    • ব্রাহ্মণপাড়া
    • মনোহরগঞ্জ
    • লালমাই
    • চান্দিনা
    • মুরাদনগর
    • দেবীদ্বার
    • হোমনা
    • মেঘনা
    • তিতাস
  • সর্বশেষ
  • রাজনীতি
  • বাংলাদেশ
  • অপরাধ
  • বিশ্ব
  • বাণিজ্য
  • মতামত
  • খেলা
  • বিনোদন
  • চাকরি
  • জীবনযাপন
  • ইপেপার
  • ইপেপার
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
স্বত্ব: ©️ আমার শহর

সম্পাদক ও প্রকাশক : মো. গাজীউল হক ভূঁইয়া ( সোহাগ)।

নাহার প্লাজা, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা-৩৫০০

ই-মেইল: [email protected]

ফোন: 01716197760

> পর্যটন

দেশের প্রথম গাইডবিহীন জাদুঘর কুমিল্লার ময়নামতি

আবদুল্লাহ আল মারুফ
প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ১১: ৩৭
logo

দেশের প্রথম গাইডবিহীন জাদুঘর কুমিল্লার ময়নামতি

আবদুল্লাহ আল মারুফ

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ১১: ৩৭
Photo

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর। দেশের পুরোনো কয়েকটি জাদুঘরের মধ্যে এর নাম সামনের সারিতে। এই জাদুঘরে আছে সপ্তম শতক থেকে ১৯ শতাব্দীর প্রত্নবস্তুও। এই জাদুঘর এখন দেশের প্রথম ‘গাইডলেস জাদুঘর’। অর্থাৎ কোন গাইড ছাড়াই এটি পরিদর্শন করতে পারবেন একজন দর্শনার্থী। তাই এর দর্শনার্থী যেমন বাড়বে, তেমনই বাড়বে সরকারি রাজস্বও।

গাইডলেস জাদুঘর

ময়নামতি জাদুঘর দেশের প্রথম গাইডলেস জাদুঘর। কর্তৃপক্ষ বলছে এই জাদুঘরে পূর্বে গাঢ় খয়েরি রংয়ের একটি আবদ্ধ ঘরে প্রত্নবস্তুগুলো রাখা হতো। নতুন করে এর মানোন্নয়ন করা হয়েছে। এতে অন্ধকার রঙের পরিবর্তে সাদা রঙের প্রদর্শনী আঁধারে লাইটিং করে প্রত্নবস্তুগুলো রাখা হয়েছে। এতে করে দর্শনার্থীরা খুব স্পষ্টভাবেই প্রত্নবস্তুগুলো দেখতে ও বুঝতে পারেন। পূর্বে প্রতিবন্ধকতা ছিল।

জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, ৯০টি প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী আঁধারের ৩৫টির মানোন্নয়ন করা হয়েছে। এতে করে সেগুলো প্রত্নবস্তুর ইতিহাস ও তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। সাথে রাখা হয়েছে স্ক্যানার কোড। এতে যে কেউ চাইলে স্ক্যান করে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব। যার কারণে এই জাদুঘরে কেউ আসলে কারও গাইডের প্রয়োজন পড়ে না। যা জানার বা বোঝার থাকে তা স্ক্যান করলেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনে প্রদর্শন করে।

বুধবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখাল এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক মো. আবুল কালাম বলেন, আমি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একাধিকবার এসেছি। এবার এসে ভিন্ন চিত্র দেখলাম। পুরো জাদুঘর আঙিনা নতুন করে সাজানো। এর বাইরে ফুল ফুটে আছে। যেন সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। বাইরে রঙের সমারোহ। আগের তুলনায় এটির ভালো কিছু পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।

কী আছে ময়নামতি জাদুঘরে

কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে চোখে পড়বে ১৯ শতাব্দীর পাথরে লেখা বাংলা শিলালিপি। আর মাঝে বসে থাকা ব্রোঞ্জের একটি বজ্র সত্ত্ব যেন সবাইকে স্বাগত করছে। ধারণা করা হয় এটি দশম শতাব্দীর। বাম পাশ ধরে হাঁটলে দ্বিতীয় ডিসপ্লেতে আছে ১৮ থেকে ১৯ শতাব্দীর পুঁথির অলংকৃত পাটা। একই ডিসপ্লেতে আছে বার্মিজ এ লিপির পুঁথি, তাল পাতার পুঁথি। যেগুলোতে লেখা আছে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন ইতিহাস। অনেকে এসব পুঁথিকে তখনকার পড়াশোনার বইও বলে থাকেন। তৃতীয় ডিসপ্লেতে আছে বিংশ শতাব্দীর ওজন মাপার পিতলের যন্ত্র। তবে এর পূর্ণাঙ্গ অংশ নেই। আর এক ঝটকায় যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যেতে পাবে ১৮-১৯ শতাব্দীর দুই খোলা তলোয়ার। লোহার তৈরি এই তলোয়ারের হাতল তামার শংকর দিয়ে ঘেরা। পরে ক্রমান্বয়ে আছে আগ্নেয়শিলা জাত পাথরের নবগ্রহ মূর্তি, চামুন্ডা মূর্তি, মনসা মূর্তি, নটরাজ মূর্তি, উমা মহেশ্বর মূর্তি, ১০-১১ শতাব্দির পার্বতী মূর্তি, ১১-১২ শতাব্দির গৌরী মূর্তি, মহিষ মর্দিনী দুর্গা, সূর্য, ৭ম শতাব্দীর লোকোত্তর বুদ্ধ, ভেনু গোপাল মূর্তি, ১১-১২ শতাব্দির ষড়ক্ষড়ী লোকেশ্বর, জটামুকুট লোকেশ্বর, লোকেশ্বর, ধ্যানী বুদ্ধ, মঞ্জুবর, মারীচী মূর্তি, গৌরীপট্টসহ শিবলিঙ্গ।

একে একে কোনো দর্শনার্থী যদি ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শিত প্রত্নবস্তুগুলো দেখেন, তাহলে তার ৭ম কিংবা ৮ম অথবা ১২ শতাব্দীতে হারিয়ে যাওয়া একেবারেই সহজ। কিছুদূর এগুলো চোখ পড়বে কয়েক ফুট লম্বা একটি বেলে পাথরের মূর্তির। এরপরেই সরাসরি যাওয়ায় যায় চন্দ্রদের শাসন আমলে। ১২ থেকে ১৩ শতাব্দীর দক্ষিণ পূর্ব বাংলার চন্দ্র দের তাম্র শাসনের এক ফলকে চোখ আটকাবে সবার। তামার পাতের ওপর লেখা দলিল। এই জাদুঘরে আছে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের কীর্তিমুখ, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার অনুকৃতি, মাটির নিবেদন স্তূপ, ৭ম শতকের পোড়া মাটির সিল, ৮-১২ শতাব্দীর পোড়া মাটির দ্রব্যাদি, প্রণয়াসক্ত যুগলমূর্তি, উড়ন্ত স্ত্রী মূর্তি, ধনুক ও তীর হাতে তীরন্দাজ, বানর বন্যবরা, মকর, সিংহের মুখ, কোরাকসহ পদ্ম, পদ্ম। তবে আকস্মিকভাবেই চোখে পড়বে চার আঙ্গুল বিশিষ্ট শিশুর পদচিহ্ন। যার পাশে আছে একটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের পায়ের ছাপ। আছে ক্ষুদ্রাকৃতির ধ্যানী বুদ্ধ অক্ষোভ্য, অবলোকিতেশ্বর, তারাসহ অসংখ্য প্রত্নবস্তু।

ময়নামতি জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ময়নামতি জাদুঘর ১৯৬৬ সালের ১২ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। কুমিল্লার শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, শ্রীভবদের মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, রানির বাংলো, ভোজ বিহারসহ বিভিন্ন বিহার খননকালে পুরোনো দিনের অনেক অমূল্য পুরাসামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়। এসব পুরাবস্তু সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্যই শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই জাদুঘরে আছে প্রায় সাড়ে ৭০০ প্রদর্শিত প্রত্নবস্তু। জাদুঘরের প্রবেশ পথের বাম দিকে থেকে ১নং প্রদর্শনী আঁধারে রাখা নিদর্শন দিয়ে প্রদর্শনী শুরু করে ক্রমান্বয়ে চারদিক ঘুরে ঘুরে প্রবেশ দ্বারের ডান দিকে ৪২ নং প্রদর্শনীতে এসে শেষ হয়েছে। ভবনের উত্তর দিকে পরিসর বাড়িয়ে আরো ২১টি আধার সংযুক্ত করা হয়েছে। এ জাদুঘরে রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি বিশালাকায় একটি ঘণ্টা। যার ওজন আনুমানিক ৩৭০ কেজি। এর ব্যাস ৮৪ সেন্টিমিটার, এর ওপরের বেড়িসহ উচ্চতা ৭৩ সেন্টিমিটার। এ জাদুঘরের আধারে সুরক্ষিত রয়েছে ময়নামতিতে পাওয়া প্রাচীনকালের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ ও তামার তৈরি সামগ্রী, লোহার তৈরি সামগ্রী, মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রকারের খেলনা, কাঠের কাজের নিদর্শন, তুলট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন নমুনার মৃৎপাত্র প্রভৃতি।

ময়নামতি জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি

ময়নামতি প্রত্মতাত্ত্বিক জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে রবিবার ব্যতীত অপর ছয়দিন খোলা থাকে। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি সোমবার অর্ধ দিবস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। মধ্যাহ্ন বিরতি হলো দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা এবং বিকেল আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রদর্শনের সময়। মধ্যহ্নবিরতি ১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এ ছাড়া জাদুঘরটি সরকারের অন্যান্য নির্বাহী আদেশে ঘোষিত সব ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে সরকার ঘোষণা করলে তা খোলা থাকে।

যেভাবে ঢুকবেন জাদুঘরে

ময়নামতি জাদুঘরে ঢোকার জন্য দুইটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হতে হয়। প্রথমটি টিকিক সংগ্রহ ও পরে টিকিট প্রদর্শন। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ফ্রি। ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত টিকিট মূল্য ১০ টাকা। এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৩০টাকা। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য টিকিট মূল্য ২০০ এবং বাকি দেশের নাগরিকদের জন্য তা ৪০০ টাকা।

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, জাদুঘরে পূর্বে যে ডিসপ্লে ছিল তা ছিল খুবই অস্পষ্ট। এর কারণ রঙয়ের বিভ্রান্তি। কিন্তু আমরা সরকারের সহযোগিতায় তার মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি। প্রায় ৩৫টি প্রদর্শনী আঁধারের কাজ শেষ করেছি আমরা। কাজ চলমান। গত বছর আমাদের রাজস্ব ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আমরা ভেবেছিলাম এ বছর তা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু আন্দোলনের সময় দর্শনার্থী কম ছিল। এছাড়াও রমজান মাসে দর্শনার্থী কম। তাই এবছর একটু কম রাজস্ব। আমরা এ অর্থবছর বছর এক কোটি ছয় লাখ টাকা এখনও পেয়েছি। আমরা আশা করছি, তা এই মাসে আরও বাড়বে।

Thumbnail image

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর। দেশের পুরোনো কয়েকটি জাদুঘরের মধ্যে এর নাম সামনের সারিতে। এই জাদুঘরে আছে সপ্তম শতক থেকে ১৯ শতাব্দীর প্রত্নবস্তুও। এই জাদুঘর এখন দেশের প্রথম ‘গাইডলেস জাদুঘর’। অর্থাৎ কোন গাইড ছাড়াই এটি পরিদর্শন করতে পারবেন একজন দর্শনার্থী। তাই এর দর্শনার্থী যেমন বাড়বে, তেমনই বাড়বে সরকারি রাজস্বও।

গাইডলেস জাদুঘর

ময়নামতি জাদুঘর দেশের প্রথম গাইডলেস জাদুঘর। কর্তৃপক্ষ বলছে এই জাদুঘরে পূর্বে গাঢ় খয়েরি রংয়ের একটি আবদ্ধ ঘরে প্রত্নবস্তুগুলো রাখা হতো। নতুন করে এর মানোন্নয়ন করা হয়েছে। এতে অন্ধকার রঙের পরিবর্তে সাদা রঙের প্রদর্শনী আঁধারে লাইটিং করে প্রত্নবস্তুগুলো রাখা হয়েছে। এতে করে দর্শনার্থীরা খুব স্পষ্টভাবেই প্রত্নবস্তুগুলো দেখতে ও বুঝতে পারেন। পূর্বে প্রতিবন্ধকতা ছিল।

জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, ৯০টি প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী আঁধারের ৩৫টির মানোন্নয়ন করা হয়েছে। এতে করে সেগুলো প্রত্নবস্তুর ইতিহাস ও তুলনামূলক আলোচনা করা হয়েছে। সাথে রাখা হয়েছে স্ক্যানার কোড। এতে যে কেউ চাইলে স্ক্যান করে আরও বিস্তারিত জানা সম্ভব। যার কারণে এই জাদুঘরে কেউ আসলে কারও গাইডের প্রয়োজন পড়ে না। যা জানার বা বোঝার থাকে তা স্ক্যান করলেই হাতে থাকা মোবাইল ফোনে প্রদর্শন করে।

বুধবার কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখাল এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক মো. আবুল কালাম বলেন, আমি স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একাধিকবার এসেছি। এবার এসে ভিন্ন চিত্র দেখলাম। পুরো জাদুঘর আঙিনা নতুন করে সাজানো। এর বাইরে ফুল ফুটে আছে। যেন সবাইকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। বাইরে রঙের সমারোহ। আগের তুলনায় এটির ভালো কিছু পরিবর্তন হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।

কী আছে ময়নামতি জাদুঘরে

কুমিল্লার কোটবাড়িতে অবস্থিত ময়নামতি জাদুঘরে ঢুকতেই হাতের বাঁ পাশে চোখে পড়বে ১৯ শতাব্দীর পাথরে লেখা বাংলা শিলালিপি। আর মাঝে বসে থাকা ব্রোঞ্জের একটি বজ্র সত্ত্ব যেন সবাইকে স্বাগত করছে। ধারণা করা হয় এটি দশম শতাব্দীর। বাম পাশ ধরে হাঁটলে দ্বিতীয় ডিসপ্লেতে আছে ১৮ থেকে ১৯ শতাব্দীর পুঁথির অলংকৃত পাটা। একই ডিসপ্লেতে আছে বার্মিজ এ লিপির পুঁথি, তাল পাতার পুঁথি। যেগুলোতে লেখা আছে তৎকালীন সময়ের বিভিন্ন ইতিহাস। অনেকে এসব পুঁথিকে তখনকার পড়াশোনার বইও বলে থাকেন। তৃতীয় ডিসপ্লেতে আছে বিংশ শতাব্দীর ওজন মাপার পিতলের যন্ত্র। তবে এর পূর্ণাঙ্গ অংশ নেই। আর এক ঝটকায় যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যেতে পাবে ১৮-১৯ শতাব্দীর দুই খোলা তলোয়ার। লোহার তৈরি এই তলোয়ারের হাতল তামার শংকর দিয়ে ঘেরা। পরে ক্রমান্বয়ে আছে আগ্নেয়শিলা জাত পাথরের নবগ্রহ মূর্তি, চামুন্ডা মূর্তি, মনসা মূর্তি, নটরাজ মূর্তি, উমা মহেশ্বর মূর্তি, ১০-১১ শতাব্দির পার্বতী মূর্তি, ১১-১২ শতাব্দির গৌরী মূর্তি, মহিষ মর্দিনী দুর্গা, সূর্য, ৭ম শতাব্দীর লোকোত্তর বুদ্ধ, ভেনু গোপাল মূর্তি, ১১-১২ শতাব্দির ষড়ক্ষড়ী লোকেশ্বর, জটামুকুট লোকেশ্বর, লোকেশ্বর, ধ্যানী বুদ্ধ, মঞ্জুবর, মারীচী মূর্তি, গৌরীপট্টসহ শিবলিঙ্গ।

একে একে কোনো দর্শনার্থী যদি ধারাবাহিকভাবে প্রদর্শিত প্রত্নবস্তুগুলো দেখেন, তাহলে তার ৭ম কিংবা ৮ম অথবা ১২ শতাব্দীতে হারিয়ে যাওয়া একেবারেই সহজ। কিছুদূর এগুলো চোখ পড়বে কয়েক ফুট লম্বা একটি বেলে পাথরের মূর্তির। এরপরেই সরাসরি যাওয়ায় যায় চন্দ্রদের শাসন আমলে। ১২ থেকে ১৩ শতাব্দীর দক্ষিণ পূর্ব বাংলার চন্দ্র দের তাম্র শাসনের এক ফলকে চোখ আটকাবে সবার। তামার পাতের ওপর লেখা দলিল। এই জাদুঘরে আছে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের কীর্তিমুখ, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার অনুকৃতি, মাটির নিবেদন স্তূপ, ৭ম শতকের পোড়া মাটির সিল, ৮-১২ শতাব্দীর পোড়া মাটির দ্রব্যাদি, প্রণয়াসক্ত যুগলমূর্তি, উড়ন্ত স্ত্রী মূর্তি, ধনুক ও তীর হাতে তীরন্দাজ, বানর বন্যবরা, মকর, সিংহের মুখ, কোরাকসহ পদ্ম, পদ্ম। তবে আকস্মিকভাবেই চোখে পড়বে চার আঙ্গুল বিশিষ্ট শিশুর পদচিহ্ন। যার পাশে আছে একটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের পায়ের ছাপ। আছে ক্ষুদ্রাকৃতির ধ্যানী বুদ্ধ অক্ষোভ্য, অবলোকিতেশ্বর, তারাসহ অসংখ্য প্রত্নবস্তু।

ময়নামতি জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, ময়নামতি জাদুঘর ১৯৬৬ সালের ১২ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়। কুমিল্লার শালবন বিহার, আনন্দ বিহার, শ্রীভবদের মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, রানির বাংলো, ভোজ বিহারসহ বিভিন্ন বিহার খননকালে পুরোনো দিনের অনেক অমূল্য পুরাসামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়। এসব পুরাবস্তু সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্যই শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই জাদুঘরে আছে প্রায় সাড়ে ৭০০ প্রদর্শিত প্রত্নবস্তু। জাদুঘরের প্রবেশ পথের বাম দিকে থেকে ১নং প্রদর্শনী আঁধারে রাখা নিদর্শন দিয়ে প্রদর্শনী শুরু করে ক্রমান্বয়ে চারদিক ঘুরে ঘুরে প্রবেশ দ্বারের ডান দিকে ৪২ নং প্রদর্শনীতে এসে শেষ হয়েছে। ভবনের উত্তর দিকে পরিসর বাড়িয়ে আরো ২১টি আধার সংযুক্ত করা হয়েছে। এ জাদুঘরে রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি বিশালাকায় একটি ঘণ্টা। যার ওজন আনুমানিক ৩৭০ কেজি। এর ব্যাস ৮৪ সেন্টিমিটার, এর ওপরের বেড়িসহ উচ্চতা ৭৩ সেন্টিমিটার। এ জাদুঘরের আধারে সুরক্ষিত রয়েছে ময়নামতিতে পাওয়া প্রাচীনকালের স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, ব্রোঞ্জ ও তামার তৈরি সামগ্রী, লোহার তৈরি সামগ্রী, মাটির তৈরি বিভিন্ন প্রকারের খেলনা, কাঠের কাজের নিদর্শন, তুলট কাগজে লেখা প্রাচীন হস্তলিপির পাণ্ডুলিপি বিভিন্ন নমুনার মৃৎপাত্র প্রভৃতি।

ময়নামতি জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি

ময়নামতি প্রত্মতাত্ত্বিক জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে রবিবার ব্যতীত অপর ছয়দিন খোলা থাকে। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি সোমবার অর্ধ দিবস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। মধ্যাহ্ন বিরতি হলো দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা এবং বিকেল আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রদর্শনের সময়। মধ্যহ্নবিরতি ১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এ ছাড়া জাদুঘরটি সরকারের অন্যান্য নির্বাহী আদেশে ঘোষিত সব ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে সরকার ঘোষণা করলে তা খোলা থাকে।

যেভাবে ঢুকবেন জাদুঘরে

ময়নামতি জাদুঘরে ঢোকার জন্য দুইটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হতে হয়। প্রথমটি টিকিক সংগ্রহ ও পরে টিকিট প্রদর্শন। কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাইমারি শিক্ষার্থীদের জন্য টিকিট ফ্রি। ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত টিকিট মূল্য ১০ টাকা। এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৩০টাকা। সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য টিকিট মূল্য ২০০ এবং বাকি দেশের নাগরিকদের জন্য তা ৪০০ টাকা।

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. শাহীন আলম বলেন, জাদুঘরে পূর্বে যে ডিসপ্লে ছিল তা ছিল খুবই অস্পষ্ট। এর কারণ রঙয়ের বিভ্রান্তি। কিন্তু আমরা সরকারের সহযোগিতায় তার মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি। প্রায় ৩৫টি প্রদর্শনী আঁধারের কাজ শেষ করেছি আমরা। কাজ চলমান। গত বছর আমাদের রাজস্ব ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আমরা ভেবেছিলাম এ বছর তা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু আন্দোলনের সময় দর্শনার্থী কম ছিল। এছাড়াও রমজান মাসে দর্শনার্থী কম। তাই এবছর একটু কম রাজস্ব। আমরা এ অর্থবছর বছর এক কোটি ছয় লাখ টাকা এখনও পেয়েছি। আমরা আশা করছি, তা এই মাসে আরও বাড়বে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১

ঈদে বালাগাজীর মুড়াও দেখতে যান পর্যটকেরা

২

কোরবানির ঈদের ছুটিতে শালবন বিহারে পর্যটক কম

৩

কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লেগেছে আনন্দের ছোঁয়া

৪

এবারের ঈদে লম্বা ছুটিতে বেড়িয়ে যান বাড়ির কাছে কুমিল্লায়

৫

দেশের প্রথম গাইডবিহীন জাদুঘর কুমিল্লার ময়নামতি

সম্পর্কিত

ঈদে বালাগাজীর মুড়াও দেখতে যান পর্যটকেরা

ঈদে বালাগাজীর মুড়াও দেখতে যান পর্যটকেরা

৯ দিন আগে
কোরবানির ঈদের ছুটিতে শালবন বিহারে পর্যটক কম

কোরবানির ঈদের ছুটিতে শালবন বিহারে পর্যটক কম

৯ দিন আগে
কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লেগেছে আনন্দের ছোঁয়া

কুমিল্লার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে লেগেছে আনন্দের ছোঁয়া

১০ দিন আগে
এবারের ঈদে লম্বা ছুটিতে বেড়িয়ে যান বাড়ির কাছে কুমিল্লায়

এবারের ঈদে লম্বা ছুটিতে বেড়িয়ে যান বাড়ির কাছে কুমিল্লায়

১৭ দিন আগে