প্লাস্টিক ও পলিথিনের বর্জ্যে দূষণ কুমিল্লার পুকুর, খাল ও নালা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর হোটেল সালাউদ্দিন সংলগ্ন খাল থেকে দক্ষিণ চর্থা নবাব বাড়ি খালে প্লাস্টিকের পানির বোতল, বস্তা ও পলিথিনে সয়লাব। একই অবস্থা রেসকোর্স খাল, টমছমব্রীজ খাল, নোয়াপাড়া খালেরও। একেকটি খালে স্তুপ হয়ে আছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। ওই কারণে খালগুলোতে পানির প্রবাহ কমে গেছে। নগরের নালাগুলোতেও রয়েছে প্লাস্টিকের বর্জ্য। পুকুরেও ভাসছে পলিথিন। ডাস্টবিনেও প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্য। সামান্য বৃষ্টি হলে পানি জমে যায়। তখন নালা থেকে পঁচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে গতকাল রোববার দুপুর ও বিকেলে কুমিল্লা নগরের পশ্চিম বাগিচাগাঁও অস্থায়ী ডাস্টবিনে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিকের বোতল দেখা গেছে। একই চিত্র চোখে পড়ে তালপুকুরপাড় পুকুরে। সেখানে পুকুরের মধ্যে পলিথিন ও কচুরিপানা ভাসছে। নগরের ভারুল বাড়ির পেছনের পুকুর, বিসিক শিল্পনগরীর উত্তর পাশের পুকুরেও পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল দেখা গেছে। নগরের ছোটরা এলাকার জংলি বিবি মসজিদের সামনের পুকুরেও ভাসছে প্লাস্টিকের পানির বোতল ও পলিথিন। নগরের ছোটবড় অন্তত ১০ টি খালে আরও বাজে অবস্থা। মনোহরপুর থেকে দক্ষিণ চর্থা খালে হাজার হাজার প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে আছে। পুলিশ লাইন এলাকার নালার মধ্যেও প্লাস্টিকের বর্জ্য জমে আছে । নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরে ১৫৫ টি ডাস্টবিন আছে। এর মধ্যে বাদুরতলা এলাকার নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় লাগোয়া ডাস্টবিনে প্লাস্টিকের খালি বোতল সকালে পাওয়া গেছে। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সামনের ডাস্টবিনেও পলিথিন, প্লাস্টিকের বস্তা দেখা গেছে। নগরের ২৭ টি ওয়ার্ডে ১৫০ কিলোমিটার নালা আছে। এগুলোর বেশিরভাগে জন সাধারণ নিক্ষেপ

করেন প্লাস্টিকের পানির বোতল ও পলিথিন। কুমিল্লা টাউন হল মাঠেও ফেলা হচ্ছে পলিথিসহ প্লাস্টিক বর্জ্য কুমিল্লা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবীর মাসউদ বলেন, টমছমব্রীজ খালের মধ্যে শত শত খালি পানির বোতল । এগুলোর কারণে খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি নামতে পারছে না। পরিবেশ দূষণে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে ।

কুমিল্লা নগরের শুভপুর, কাপ্তানবাজার, গর্জনখোলা এলাকায় পুরাতন গোমতী নদীর তিনটি অংশে প্লাস্টিকের বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে। সেখানে নদীর মধ্যে এই বর্জ্য রয়েছে। এতে করে নদীতে মাছ বেড়ে ওঠতে পারছে না। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তা ও হালিমা গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে হাসান টগর বলেন, 'গোমতী নদীতে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন এগুলো ফেলা বন্ধ করতে হবে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, যত ধরণের বর্জ্য আমরা ডাস্টবিন, নালা ও খাল থেকে অপসারণ করি, এর মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল,বস্তা ও পলিথিন থাকেই। নগরবাসীকে এই ধরণের বর্জ্য ফেলার ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্থানে ফেলা উচিত। অন্যথায় পরিবেশ দূষণ আরও বাড়বে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, 'নগরবাসীকে পরিবেশ রক্ষায় সবার আগে সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে পুকুরে, নালায়, খালে, উন্মুক্ত স্থানে পানি খেয়ে প্লাস্টিকের বোতল ফেলি। উন্মুক্ত স্থানে পলিথিন ফেলি । এটা বন্ধ করতে হবে । সিটি করপোরেশন নালা, ডাস্টবিন থেকে প্রতিনিয়ন সব ধরণের বর্জ্য অপসারণ করে আসছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'প্লাস্টিকের বর্জ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো থেকে নানা ধরণের রোগ হয় । ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট করে। বিশ্বায়নের প্রভাবে মানুষ এখন প্লাস্টিকের বোতন, বস্তা, পলিথিন ব্যবহার করছে। কিন্তু ব্যবহারের পর নির্ধারিত স্থানে সেটি ফেলছেন না। এতে করে দূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। জনসাধারণ, সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কে এ ব্যাপারে আরও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে পরিবেশ ও শিল্প মন্ত্রনালয়কে যৌথ সভা করতে হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব বলেন, পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। সচেতনতার পাশাপাশি আমরা অভিযানও করি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত