নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে এবার এলাকা থেকে লোক এনে মানববন্ধন করালেন ডা. মাসুম হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার ভাগাভাগিতে জড়িত নন এমন দাবি ও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এবার এলাকা থেকে লোক এনে মানববন্ধন করিয়েছেন বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কুমিল্লা জেলা শাখার স্থগিত কমিটির সভাপতি ডা. মো. মাসুম হাসান। গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে ‘কুমিল্লার সচেতন নাগরিক’ ব্যানারে ওই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে কোন চিকিৎসকেরা ছিলেন না। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা ডা. হাসানের অনুসারী ও কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কালীরবাজার ইউনিয়নের কয়েকজন বাসিন্দা। ডা. মাসুম হাসানের বাড়িও কালীরবাজার এলাকায়।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা বলেছেন, ডা. মাসুম হাসানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বরের এক প্রতিবাদ সভায় ড্যাবের কুমিল্লা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফ হাসান বলেছিলেন, কেনাকাটা থেকে ৮০ লাখ টাকা নিয়েছেন ডা. মাসুম হাসান। মাসুমের উপস্থিতিতেই ওই বক্তব্য দেন আরিফ হায়দার। একই সভায় মাসুম ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন ‘ না না না’ ধ্বনি করে। ওই অভিযোগ ওঠার পর ড্যাবের তিনটি কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কেন্দ্রীয় ড্যাব কুমিল্লার ড্যাবের নেতাদের ডেকে নিয়ে বক্তব্য জানতে চান। এরই মধ্যে ডা. মাসুম হাসান নিজেকে নিদোর্ষ প্রমাণ করতে মানববন্ধন করান বলে অভিযোগ করেছেন ড্যাব নেতারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন. ডা. হাসানের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। আরিফ হায়দার মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। আরিফ হায়দার নিজেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁরা তাঁর বিচার চান।ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকেই আরিফ হায়দার এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

মানববন্ধনের বিষয়ে মোহাম্মদ আরিফ হায়দার বলেন, ‘আমি ওই সভায় দীর্ঘ বক্তব্যে তাঁর (এম এম হাসান) অনিয়ম ও দুর্নীতির সব তথ্য ফাঁস করে দিয়েছি। ২৪ কোটি টাকার কেনাকাটায় এম এম হাসান ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে নিয়েছেন, পরিচালক নিয়েছেন ২ কোটির বেশি। তিনি আর পরিচালক মিলে কেনাকাটায় লুটপাট করেছেন।’

ডা. মাসুম হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ড্যাবের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব থেকে আরিফ হায়দার মিথ্যাচার করেছেন।

তবে ড্যাবের কুমিল্লার অন্তত ২০ জন নেতার ভাষ্য, কুমিল্লায় ড্যাবের মধ্যে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব নেই। ভাগাভাগি নিয়ে ডা. মাসুম হাসান ও আরিফ হায়দারের মধ্যে লেনদেনের ঝামেলা থাকতে পারে। তাঁরা দুইজন দুইজনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও কুমিল্লা মহানগর শাখা ড্যাবেও দ্বন্দ্ব নেই। এটা ভাগাভাগির খেলা। ড্যাব তহবিলে কোন টাকা রাখে না। চাঁদা তুলে না। অনুষ্ঠান হলে নিজেরা সংগঠন চালায় নিজেদের টাকায়। কারও ভাগাভাগিকে ‘দ্বন্দ্ব’ বলা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। এক শাখা আরেক শাখাতে গিয়ে অনিয়ম করবে এটা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে তাও মানব না আর। গরিব রোগীদের ওষুধের দরপত্র থেকে টাকা নিয়ে ভাগাভাগি করতে হবে এই জন্য চিকিৎসক হননি তাঁরা।

উল্লেখ, গত ২২ সেপ্টেম্বর আমার শহর পত্রিকার প্রথম পাতায় সোয়া দুই কোটি টাকা ড্যাবের জেলা সভাপতি ডা. হাসান ও হাসপাতালের পরিচালকের নেতৃত্বে ভাগাভাগির অভিযোগ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়। ড্যাবের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। অভিযোগ উত্থাপনকারী ডা. মোহাম্মদ আরিফ হায়দায় পরে হত্যার হুমকির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেন। বর্তমানে বিষয়টির তদন্ত চলছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত