বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে, টাকা পয়সা এবং মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয়-বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিবেদক মুঠোফোনে ভিন্ন একটি সংবাদের জন্য বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আপনাকে কে পাঠিয়েছে এটা জানা আমার খুব দরকার। আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকাপয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।’
এছাড়া অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য দেখেন কি না-এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইলে প্রতিবেদককে উপাচার্য করে বলেন, ‘আপনি কীভাবে জানলেন, আমাকে বলেন আপনাকে কে পাঠিয়েছে? প্লিজ, আমাকে নিশ্চিতভাবে জানাবেন! আপনি কী জানেন সব কিছুর জন্য দায়ী ভিসি? সব কিছু হলে ভিসির দোষ। আরেকজন কীভাবে দেখভাল করেন? স্যরি টু সে, আপনাকে কোন শিক্ষক পাঠিয়েছে। সে শিক্ষকটা কে আমাকে বলেন একটু।'
কোনো শিক্ষক আমাকে পাঠায়নি এবং সংবাদের স্বার্থেই জানতে চেয়েছে বলে প্রতিবেদক জানালে তিনি বলেন, ‘ডেফিনেটলি পাঠিয়েছে প্লিজ, আপনি এখানকার ছাত্র। আমি আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারব, বলেন।’
পরবর্তীতে আবারও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর কাছে উক্ত অভিযোগের তথ্য প্রমাণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি একা না, এটা প্রচলিত। সব সময় শুনছি সাংবাদিকরা শিক্ষকের ঘরে যাচ্ছে, শিক্ষকের সাথে বসছে, শিক্ষকরা এদের উপহার দিচ্ছে এসব আমার কানে অহরহ আসছে। এনটিভির প্রতিবেদক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি প্রমাণ দিতে পারব কি না? আমি বলেছি— হ্যাঁ, অবশ্যই পারব। কারণ আমি তো এটা অহরহ শুনেছি। একজন-দুজন থেকে নয়। শিক্ষক সাংবাদিককে মোবাইল ফোন দিয়েছে এটা শুনেছি; টাকা-পয়সাও দিয়েছে, এটাও শুনেছি।’
শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলা যায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক কথাই তো ফরমালভাবে বলা যায় না।’
ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম ছাত্র সাংবাদিক দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ছাত্র সাংবাদিক দেখিনি।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে এবং সংগঠনও রয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘করতেই পারে। তবে আমার সামনে কখনো পড়েনি। আমার বিভাগেও এমন কাউকে দেখিনি যে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে। ওখানে কোনো সাংবাদিকের বিভাগে ঢোকার ক্ষমতাও নেই। তারা টিএসসি ব্লকেই থাকে, ওই এলাকাটাই তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিএসসিতে অসংখ্য ঘর আছে, ওখানেই সাংবাদিক সংগঠনের ঘরও আছে। তারা টিএসসি থেকে কলা ভবনের সামনের এলাকায় চলাফেরা করে। কিন্তু, বিভাগে ঢোকার জায়গা তাদের আছে কি না আমি জানি না। আমরা তো সায়েন্সের এই দিকে এখানে এমন কাউকে দেখি না যে পড়াশোনাও করছে আবার সাংবাদিকতাও করছে। এখানে এসেই প্রথম এমন দেখলাম।’
প্রমাণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রমাণ জোগাড় করতে পারব। যারা আমাকে এসব বিষয় জানিয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে উপাচার্যের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মোজাহিদ বলেন, 'একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তিনি যেভাবে কথা বললেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মাহত করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে অবদান রেখেছে এটা সর্বজনস্বীকৃত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করেছে তাদের উনি যেভাবে ছোট করেছেন আমি মনে করি সেটা একটা অশোভনীয় কাজ হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নয় বরং ফ্যাসিবাদের আমল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যেভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে সেখানে ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা জড়িত ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'স্যার (কুবি উপাচার্য) হয়তো ওইভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি মেকিং কিংবা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ওইভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। সেজন্য উনি এই বিষয় সম্পর্কে অবগতও না কারা কীভাবে কাজ করছে। উনি কখনো কোনো হলের প্রভোস্টও ছিলেন না, ডিনও ছিলেন না। আমি মনে করি, উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো স্টেক হোল্ডার বা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ওইভাবে ধারণা রাখেন না সে কারণেই উনি এই কথাটা বলেছেন।'
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি ফরহাদ হোসাইন হিমু বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি মাননীয় উপাচার্যকে ২১ অক্টোবর ফোন দেই। উনার কাছ থেকে এধরনের মন্তব্য কখনো প্রত্যাশা করিনি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গে আছি, সবসময় গুড জার্নালিজম প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করি। উপাচার্য স্যারের এধরনের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রতবোধ করি। উনি শোনা কথার ভিত্তিতে সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিককে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, এটা দুঃখজনক।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রিফাত বলেন, ‘একজন উপাচার্য; যিনি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক তিনি শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। গত জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের যে অবদান ছিল, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রেখেছে তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে তা অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি, শিক্ষকদেরও তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে অপমান করেছেন বলে আমি মনে করি। এমন মন্তব্যের জন্য তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।'
উপাচার্যের বিতর্কিত মন্তব্যে শিক্ষকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর বক্তব্য নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। সম্প্রতি এনটিভি প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বলেছিলেন ‘সাংবাদিকদের টাকা-মোবাইল দেয় শিক্ষকরা’। ওই কারণে শিক্ষকেরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য স্যার যে মন্তব্য করেছে সেটা উনার ব্যক্তিগত মন্তব্য। শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে এ ধরণের লেনদেন হয় কিনা আমার জানা নাই। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি উনার এ ধরণের মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী প্রক্টর মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, 'মাননীয় উপাচার্য স্যারের বক্তব্যে উনি কিছু শিক্ষক এবং কিছু সাংবাদিকের কথা বলেছেন। যদি এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ থাকে, তাহলে এই কথা বলার সুযোগ আছে। আর যদি তথ্য প্রমাণ ছাড়া শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলে এই কথা বলা ঠিক হয়নি।'
ইউট্যাবের সাধারণ সম্পাদক ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, এখন শিক্ষক হিসেবে আছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ সময়ে ৪-৫ জন উপাচার্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেই এমন অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করতে শুনিনি। এটি সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যান। তাই প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য করা অপমানজনক ও এক ধরনের হুমকি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'নিউজে উপাচার্য স্যারের মন্তব্যটা পড়েছি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে এবং শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজন শব্দচয়ন করেছেন। উপাচার্য স্যারের এ ধরনের শব্দচয়ন আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনা ক্যাম্পাসের জন্য ইতিবাচক। ওনার এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।'
ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম. এম. শরীফুল করিম বলেন, 'আমি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে তিনি এমন কথা বলেছেন। যদি তিনি শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলে থাকেন তাহলে বলবো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও তাদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষক ও সাংবাদিক দুই পক্ষই অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যদি সত্যিই এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে স্যার সেই তথ্য সামনে আনলে দোষীদের পরিচয় স্পষ্ট হবে।'
মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, 'উপাচার্য মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি কিছু শিক্ষক বলেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক শিক্ষক, সেক্ষেত্রে উনাকে এটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কারা আসলে এ ধরণের কাজ করেছে। আপনারা অপেক্ষা করেন এবং দেখেন উনি প্রমাণ দিতে পারেন কিনা। যদি প্রমাণ না দিতে পারে সেটাও আপনারা জানতে চাইবেন। সর্বোপরি, তথ্য প্রমাণ ছাড়া এধরণের মন্তব্য করা অপ্রাসঙ্গিক।'
উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর ভিন্ন সংবাদের প্রসঙ্গে এক বক্তব্য নিতে গেলে মুঠোফোনে তিনি এই কথা বলেন। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকা পয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।'
শিক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য:
সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে আমার বক্তব্যের একটি অংশ উদ্ধৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে—“শিক্ষকরা সাংবাদিকদের টাকা ও মোবাইল দেয়।” উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজের অনেকেই এতে মর্মাহত হয়েছেন।
আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমার বক্তব্য কোনোভাবেই শিক্ষক বা সাংবাদিক সমাজের প্রতি সার্বিকভাবে করা হয়নি। এটি কেবল কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
আমি নিজেও একজন শিক্ষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন এবং একটি অগ্রগামী ও আদর্শিক জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, অল্পসংখ্যক শিক্ষক মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন এবং শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৎপর হন। আমার মন্তব্য শুধুমাত্র সেই সীমিত পরিসরের শিক্ষকদের সম্পর্কেই ছিল।
আমি পুনরায় স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমার বক্তব্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের কোনো শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি। তাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষককে অনুরোধ করছি, আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা না করার জন্য। বাস্তবে আমার বক্তব্যের মূল ভাব কিছু গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
সাংবাদিকরা দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা ঐতিহাসিক ও প্রশংসনীয়। তাঁরা মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি সে সময়ের ঘটনাবলি জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমার মন্তব্য কোনোভাবেই দেশের সকল সাংবাদিক বা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নয়। এটি কেবল কিছু বিপথগামী সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে, যারা অর্থের বিনিময়ে সংবাদ বিকৃতভাবে প্রচার করে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিকের প্রতি আহ্বান জানাই, আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে। শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজ দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সমর্থন রয়েছে।
আমাদের কাছে কিছু প্রাথমিক তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে, যা প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হবে।
আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজ একসাথে কাজ করলেই শিক্ষাঙ্গন হবে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও অগ্রগতিমুখী।

কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে, টাকা পয়সা এবং মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয়-বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিবেদক মুঠোফোনে ভিন্ন একটি সংবাদের জন্য বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
উপাচার্য বলেন, ‘আপনাকে কে পাঠিয়েছে এটা জানা আমার খুব দরকার। আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকাপয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।’
এছাড়া অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য দেখেন কি না-এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইলে প্রতিবেদককে উপাচার্য করে বলেন, ‘আপনি কীভাবে জানলেন, আমাকে বলেন আপনাকে কে পাঠিয়েছে? প্লিজ, আমাকে নিশ্চিতভাবে জানাবেন! আপনি কী জানেন সব কিছুর জন্য দায়ী ভিসি? সব কিছু হলে ভিসির দোষ। আরেকজন কীভাবে দেখভাল করেন? স্যরি টু সে, আপনাকে কোন শিক্ষক পাঠিয়েছে। সে শিক্ষকটা কে আমাকে বলেন একটু।'
কোনো শিক্ষক আমাকে পাঠায়নি এবং সংবাদের স্বার্থেই জানতে চেয়েছে বলে প্রতিবেদক জানালে তিনি বলেন, ‘ডেফিনেটলি পাঠিয়েছে প্লিজ, আপনি এখানকার ছাত্র। আমি আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারব, বলেন।’
পরবর্তীতে আবারও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর কাছে উক্ত অভিযোগের তথ্য প্রমাণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি একা না, এটা প্রচলিত। সব সময় শুনছি সাংবাদিকরা শিক্ষকের ঘরে যাচ্ছে, শিক্ষকের সাথে বসছে, শিক্ষকরা এদের উপহার দিচ্ছে এসব আমার কানে অহরহ আসছে। এনটিভির প্রতিবেদক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি প্রমাণ দিতে পারব কি না? আমি বলেছি— হ্যাঁ, অবশ্যই পারব। কারণ আমি তো এটা অহরহ শুনেছি। একজন-দুজন থেকে নয়। শিক্ষক সাংবাদিককে মোবাইল ফোন দিয়েছে এটা শুনেছি; টাকা-পয়সাও দিয়েছে, এটাও শুনেছি।’
শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলা যায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক কথাই তো ফরমালভাবে বলা যায় না।’
ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম ছাত্র সাংবাদিক দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ছাত্র সাংবাদিক দেখিনি।’
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে এবং সংগঠনও রয়েছে।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘করতেই পারে। তবে আমার সামনে কখনো পড়েনি। আমার বিভাগেও এমন কাউকে দেখিনি যে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে। ওখানে কোনো সাংবাদিকের বিভাগে ঢোকার ক্ষমতাও নেই। তারা টিএসসি ব্লকেই থাকে, ওই এলাকাটাই তাদের।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিএসসিতে অসংখ্য ঘর আছে, ওখানেই সাংবাদিক সংগঠনের ঘরও আছে। তারা টিএসসি থেকে কলা ভবনের সামনের এলাকায় চলাফেরা করে। কিন্তু, বিভাগে ঢোকার জায়গা তাদের আছে কি না আমি জানি না। আমরা তো সায়েন্সের এই দিকে এখানে এমন কাউকে দেখি না যে পড়াশোনাও করছে আবার সাংবাদিকতাও করছে। এখানে এসেই প্রথম এমন দেখলাম।’
প্রমাণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রমাণ জোগাড় করতে পারব। যারা আমাকে এসব বিষয় জানিয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে উপাচার্যের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মোজাহিদ বলেন, 'একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তিনি যেভাবে কথা বললেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মাহত করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে অবদান রেখেছে এটা সর্বজনস্বীকৃত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করেছে তাদের উনি যেভাবে ছোট করেছেন আমি মনে করি সেটা একটা অশোভনীয় কাজ হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নয় বরং ফ্যাসিবাদের আমল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যেভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে সেখানে ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা জড়িত ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'স্যার (কুবি উপাচার্য) হয়তো ওইভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি মেকিং কিংবা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ওইভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। সেজন্য উনি এই বিষয় সম্পর্কে অবগতও না কারা কীভাবে কাজ করছে। উনি কখনো কোনো হলের প্রভোস্টও ছিলেন না, ডিনও ছিলেন না। আমি মনে করি, উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো স্টেক হোল্ডার বা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ওইভাবে ধারণা রাখেন না সে কারণেই উনি এই কথাটা বলেছেন।'
এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি ফরহাদ হোসাইন হিমু বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি মাননীয় উপাচার্যকে ২১ অক্টোবর ফোন দেই। উনার কাছ থেকে এধরনের মন্তব্য কখনো প্রত্যাশা করিনি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গে আছি, সবসময় গুড জার্নালিজম প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করি। উপাচার্য স্যারের এধরনের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রতবোধ করি। উনি শোনা কথার ভিত্তিতে সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিককে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, এটা দুঃখজনক।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রিফাত বলেন, ‘একজন উপাচার্য; যিনি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক তিনি শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। গত জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের যে অবদান ছিল, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রেখেছে তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে তা অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি, শিক্ষকদেরও তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে অপমান করেছেন বলে আমি মনে করি। এমন মন্তব্যের জন্য তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।'
উপাচার্যের বিতর্কিত মন্তব্যে শিক্ষকদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর বক্তব্য নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। সম্প্রতি এনটিভি প্রতিবেদককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উপাচার্য বলেছিলেন ‘সাংবাদিকদের টাকা-মোবাইল দেয় শিক্ষকরা’। ওই কারণে শিক্ষকেরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী প্রক্টর মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘উপাচার্য স্যার যে মন্তব্য করেছে সেটা উনার ব্যক্তিগত মন্তব্য। শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের মধ্যে এ ধরণের লেনদেন হয় কিনা আমার জানা নাই। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি উনার এ ধরণের মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং সহকারী প্রক্টর মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, 'মাননীয় উপাচার্য স্যারের বক্তব্যে উনি কিছু শিক্ষক এবং কিছু সাংবাদিকের কথা বলেছেন। যদি এ ধরনের ঘটনার প্রমাণ থাকে, তাহলে এই কথা বলার সুযোগ আছে। আর যদি তথ্য প্রমাণ ছাড়া শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাহলে এই কথা বলা ঠিক হয়নি।'
ইউট্যাবের সাধারণ সম্পাদক ও লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহীন উদ্দিন বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, এখন শিক্ষক হিসেবে আছি। সব মিলিয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ সময়ে ৪-৫ জন উপাচার্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। কিন্তু কাউকেই এমন অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করতে শুনিনি। এটি সাংবাদিকদের জন্য অপমানজনক। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যান। তাই প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য করা অপমানজনক ও এক ধরনের হুমকি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. মো. আবু তাহের বলেন, 'নিউজে উপাচার্য স্যারের মন্তব্যটা পড়েছি, এটা আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে এবং শিক্ষকদের জন্য অসম্মানজন শব্দচয়ন করেছেন। উপাচার্য স্যারের এ ধরনের শব্দচয়ন আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। সাংবাদিকদের গঠনমূলক সমালোচনা ক্যাম্পাসের জন্য ইতিবাচক। ওনার এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।'
ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম. এম. শরীফুল করিম বলেন, 'আমি সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে তিনি এমন কথা বলেছেন। যদি তিনি শিক্ষক এবং সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এমন কথা বলে থাকেন তাহলে বলবো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া এমন মন্তব্য অপ্রাসঙ্গিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, জুলাইয়ের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও তাদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। এমন মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষক ও সাংবাদিক দুই পক্ষই অনিচ্ছাকৃতভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যদি সত্যিই এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে স্যার সেই তথ্য সামনে আনলে দোষীদের পরিচয় স্পষ্ট হবে।'
মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, 'উপাচার্য মহোদয় যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি কিছু শিক্ষক বলেছেন। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক শিক্ষক, সেক্ষেত্রে উনাকে এটা অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে কারা আসলে এ ধরণের কাজ করেছে। আপনারা অপেক্ষা করেন এবং দেখেন উনি প্রমাণ দিতে পারেন কিনা। যদি প্রমাণ না দিতে পারে সেটাও আপনারা জানতে চাইবেন। সর্বোপরি, তথ্য প্রমাণ ছাড়া এধরণের মন্তব্য করা অপ্রাসঙ্গিক।'
উল্লেখ্য, গত ২১ অক্টোবর ভিন্ন সংবাদের প্রসঙ্গে এক বক্তব্য নিতে গেলে মুঠোফোনে তিনি এই কথা বলেন। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকা পয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।'
শিক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে উপাচার্যের বক্তব্য:
সম্প্রতি কিছু গণমাধ্যমে আমার বক্তব্যের একটি অংশ উদ্ধৃত করে প্রকাশ করা হয়েছে—“শিক্ষকরা সাংবাদিকদের টাকা ও মোবাইল দেয়।” উক্ত সংবাদ প্রকাশের পর শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজের অনেকেই এতে মর্মাহত হয়েছেন।
আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমার বক্তব্য কোনোভাবেই শিক্ষক বা সাংবাদিক সমাজের প্রতি সার্বিকভাবে করা হয়নি। এটি কেবল কিছু ব্যক্তি সম্পর্কে, যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত।
আমি নিজেও একজন শিক্ষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন এবং একটি অগ্রগামী ও আদর্শিক জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রয়েছে। তবে বাস্তবতায় দেখা যায়, অল্পসংখ্যক শিক্ষক মাঝে মাঝে সাংবাদিকদের ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেন এবং শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৎপর হন। আমার মন্তব্য শুধুমাত্র সেই সীমিত পরিসরের শিক্ষকদের সম্পর্কেই ছিল।
আমি পুনরায় স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমার বক্তব্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বা দেশের কোনো শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে করা হয়নি। তাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষককে অনুরোধ করছি, আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা না করার জন্য। বাস্তবে আমার বক্তব্যের মূল ভাব কিছু গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।
সাংবাদিকরা দেশের চতুর্থ স্তম্ভ। বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের ভূমিকা ঐতিহাসিক ও প্রশংসনীয়। তাঁরা মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি সে সময়ের ঘটনাবলি জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আমার মন্তব্য কোনোভাবেই দেশের সকল সাংবাদিক বা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে নয়। এটি কেবল কিছু বিপথগামী সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে, যারা অর্থের বিনিময়ে সংবাদ বিকৃতভাবে প্রচার করে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিকের প্রতি আহ্বান জানাই, আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা না করতে। শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজ দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সমর্থন রয়েছে।
আমাদের কাছে কিছু প্রাথমিক তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে, যা প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করা হবে।
আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষক ও সাংবাদিক সমাজ একসাথে কাজ করলেই শিক্ষাঙ্গন হবে আরও স্বচ্ছ, দায়িত্বশীল ও অগ্রগতিমুখী।