বাড়ি ফিরে মা দেখেন একমাত্র সন্তানের লাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, দাউদকান্দি
Thumbnail image

বাজার থেকে ছেলের জন্য নতুন প্যান্ট, টি-শার্ট এবং প্রিয় খাবার দই-নিমকি নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাছলিমা আক্তার। ভেবেছিলেন, এগুলো পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হবে তাঁর ছয় বছর বয়সী ছেলে তাজিন ভূঁইয়া (৬)। কিন্তু ঘরে ঢুকেই দেখেন একমাত্র সন্তানের লাশ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কিছুক্ষণ আগেই লাশটি বাসায় আনেন প্রতিবেশীরা। এর আগে বাড়ির পাশের ডোবার পানিতে ডুবে শিশুটির মৃত্যু হয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ওলুকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত শিশুটি ওই এলাকার প্রবাসী মাসুদ মিয়ার ছেলে।

পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে বসত বাড়ির পাশে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল তাজিন। একপর্যায়ে বাড়ির পাশের ডোবায় হঠাৎ সে পড়ে যায়। ওই সময় অন্য শিশুদের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সেখানে জড়ো হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ডোবা থেকে থেকে তাজিনকে উদ্ধার করেন তাঁরা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

তাজিনের ফুফু রুমা আক্তার বলেন, সংসারের প্রয়োজন মেটাতে ও একমাত্র ছেলের জন্য শীতের পোশাক কিনতে ওমান থেকে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলেন মাসুদ মিয়া। সেই টাকা তুলতে তাঁর স্ত্রী তাছলিমা বাজারে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে তিনি দেখেন, ডোবার পানিতে ডুবে যাওয়া ছেলের লাশ বাসায় নিয়ে এসেছেন প্রতিবেশীরা।

গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওলুকান্দি গ্রামে শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের এক কোণে মাটিতে বসে আহাজারি করছেন তাজিনের মা তাছলিমা আক্তার। পাশে কাঁদছিলেন খালা শারমীন আক্তার, দাদা মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ও প্রতিবেশী দাদি নাছিমা আক্তার।

হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে তাছলিমা বলেন, ‘ভালা ছেলেরে বাড়িতে রাইখা, ওর জন্য গেঞ্জি, প্যান্ট আর দই-নিমকি বাজার থেকে কিনে আনলাম। আর বাড়িতে ফিরে দেখি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাশ হয়ে ফিরছে আমার আদরের ছেলে। এহন আমারে কে মা বইলা ডাকব? আমার কী দোষে আল্লাহ এমন পরীক্ষা করল? তারে নিয়া আমার অনেক স্বপ্ন আছিল। এহন তার বাপেরে কী বুজ দেমু? ছেলে ছাড়া আমি ক্যামনে বাঁচমু?’

তাছলিমাকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দেওয়া যাচ্ছে না। তবু নাছিমা আক্তার বলেন, ‘কাইন্দা কী করবি, খোদার বান্দা খোদায় নিয়ে গেছে?’

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, একমাত্র ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তাছলিমা। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা কারও নেই।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত