নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া একের পর এক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিএনপি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই আসছেন। তাঁর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে আছে। তাঁর মুখের ভাষা জঘন্য রকমের খারাপ। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তিনি মা বাপ তুলে কথা বলেছেন। নিজ জেলা কুমিল্লাকে প্রস্রাব করার জেলা বলেছেন। তাঁর ভিডিও রেকর্ড শুনে ও দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক।
বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা তাঁর বক্তব্য শুনে বলেছেন, এমন নেতাকে বিএনপি কিভাবে অতীতে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে এবারও তিনি মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন বলে তাঁর অনুসারীরা মনে করছেন । ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কুমিল্লা-১০ আসন থেকে বিএনপির হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে হাজতখোলা এলাকায় আয়োজিত এক দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। এতে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন, মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন । একই সঙ্গে কুমিল্লাকে ‘প্রস্রাব’ করার জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেছেন ‘আবু এবং টিপু এই কমিটি তাদের দুজনকে দেওয়ার পরে, আবু ভাই এটাকে ইংরেজিতে কইল রিয়েক্ট করছে। মানে এটা মানি নিতে পারে নাই। না মানি ধর্মসাগর পাড়ে আমার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে। ঠ্যাং ভাঙ্গিয়ালামু ,কাডিয়ালামু এগুলা বলেন। কিন্তু নিয়তি দেখেন যার কারণে আবু ভাই আমার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে টিপু ভাই কিন্তু আমার পক্ষে সেদিন প্রতিবাদ করে নাই। তার মানে উনাদের স্বার্থে উনারা এক, উনারা অভিন্ন। উনাদের শত্রু আমরা বহিরাগতরা। আমরা উনাদের কাছে কি জানেন তো! উনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি? ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে যাত্রা বিরতি দিয়ে প্রস্রাব করার নাম হলো কুমিল্লা। কুমিল্লা কোথায় জানেন তো? আর আমরা বহিরাগতরা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন থানা থেকে আমরা হয়েছি হেতাগর লোক সাপ্লাই দেওইন্না।’
তিনি বলেন,‘আমাদের সাথে উনাদের প্রেম বুঝেন তো? আমরা লোক সাপ্লাই দিই, এই হলো উনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু উনারাদের স্বার্থে উনারা কারো ভাই না। উনারা কারো আত্মীয় না। আবু তখন ধর্মসাগর পাড়ে মোবাশ্বের ভাইয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে। আবুর এটাকে আমি সমর্থন করি। কারণ সে চায়নাই টিপুর লগে কমিটিতে আসতে। টিপুর এই এই দোষ আছে। কিন্তু টিপুতো -তহন যাই টোডা সিবি ধরইতো পারত, ওই বেডা কার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেস। উনি কিন্তু সেটা করে নাই। না করে এখন পর্যন্ত দুজনে সুখে শান্তিতে সংসার করে। তো কি হইছে আমার? আমার কি হইছে? কই আমরা যে একটা কেন্দ্রের ইফতার পার্টি করতেছি। এ রকম ১৫৫ টা তে যাওয়ার মতো, করার মতো আমাদের অবস্থান আছে। আপনাদের পুরো মহানগরের ২৭ নাম্বার ওয়ার্ডে ২৭ টা এরকম প্রোগ্রাম করতে পারবেন না। আমি ১৫৫ টা করতে পারব। ১৫৫ টা মনির ভাই করতে পারবে। ১৫৫ টার কাছাকাছি গফুর ভাইও করতে পারবে। আপনারাদের থেকে আমাদের পুঁজি খারাপ না। আমি কি কথা বুঝাইতে পারছি? আমি যদি আবুকে বাদ দিতাম তাহলে না আবু আমার বিরুদ্ধে যেত। কিন্তু উনারা পারে মাইনষেরে বাদ দিয়া লাইতো ,আমরা বাদ দেই না। আমরা যোগের রাজনীতি করি। কিন্তু এক মাঘে শীত যাবে না। ’
মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের উদ্দেশ্যে বলেন,‘ ইয়াছিন সাবের পরিণতি দেখেন নাই। আমারে ১৭ সালে দিছে পাকা সুপারি। কষ্ট হইছে সহ্য কইরালাইছি। কিন্তু উনার ২৫ সালে আসি বড় কাডল ( কাঁঠাল) হান্দাইয়া গেছে। উনি অহন আর কাডল সহ্য করতে পারে নাই। উপদেষ্টা না স্থায়ী কমিটির সদস্য হইছে, প্রমোশন হইছে। কিন্তু উনি জেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অপমানিত হয়ে। আরেকজন টাকা দিয়ে কমিটি কিনছে। যে কমিটি টিকে নাই, আর আমরা এখনো আমাদের সম্মান নিয়ে আছি । আর আমার এত অধপতন হয় নাই যে, আমি ছোট ভাইয়ের পিছে দি এন্নে করি খাড়ায় থাকতাম। বকুলের কণির গুতা খাইতাম। এত দূর্দিন এখনো আমার আসে নাই। তারপরেও ২-৪ টা বেয়াদব, বেয়াদবি করছে। যদি কোনদিন আল্লাহ সুযোগ দেয় সেই বেয়াদবির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিব। সর্বশেষ মনে আছে লোকমান ( স্থানীয় বিএনপি নেতা , মোবাশ্বেরের অনুসারি) আমি যখন কান্দিরপাড়ে উঠছি ,ছেগাই বসি রইছে চেয়ারে। এই ছেগাই এর মধ্যে রানের উপর রান রাখি সিরিয়ালামু। এজন্য আমি বেয়াদব ধরার ,মোনাফেক ধরার ফাঁদ বসাইছি। এই ফাঁদের মধ্যে দেখবেন অনেক বেয়াদব, অনেক মোনাফেক অনেক বেইমান, কিন্তু ধরা খাবে। সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।’
বক্তৃতায় মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী কে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ' নিজের নাক কেটে ভাতিজাদের প্রধান অতিথি করাইতে হয়। উনাকে মইননা চোরা কই বিল্লা মারে। আমি উনাকে আজকে বলব, ভাই গ্রুপিং বিলুপ্ত করেন। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া স্যালেন্ডার করবে। তাও আর নিজেদের কে অপমান করবেন না। আমার আরেক ভাই আছে, নাঙ্গলকোটের সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া। কুমিল্লা তে আমাগো আবু টিপুর পিছনদি যাই অসহায়ের মতো খাড়ি থায়। উনি যেদিন ২০০৮ সালে ( আসলে হবে ২০০১ সাল) এমপি ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল। তখন আবু টিপু কিছুই ছিল ন। উনি আকবর হোসেন সাহেবের কলিগ ছিল, মনির চৌধুরী সাহেবের কলিগ ছিল। আজকে ওই নিজেরা নিজেরা গুতাগুতি করে। অন হইননিও লাইততায়। যেডারে আমগো দেশে কয়,আতি খাদে পড়লে চামচিকাও লাইততায়।
তিনি বলেন, আমরা কুমিল্লা -১০ এ গ্রুপিং করি৷ এজন্য ছাগলনাইয়ার তুন আইওগুতা।আহারে অসহায়। কিন্তু আপনাদের দোয়ায় আমি এতো অসহায় নয়। আমি ১৭ বছর এই লালমাই, এই সদর দক্ষিণ, এই নাঙ্গলকোটে বিচরণ করেছি। আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আবার লগে ইরেজিও একট্ কইছি। আমেরিকান অ্যম্ববেসি কয় যে গুনছেন নি। উই আর কনসার্ন এবাউট বাংলাদেশ। আমি এই তিন উপজেলার রাজনীত নিয়ে কনসার্ন। আমি উনাকে এটা জানাই দিছি। উনি কমিটি দিল কি, দিল না। আমার কিচ্ছু আসে যায় না। মনির ভাই যে ১৫ বছর জেলা মানে নাই। উনি যে কমিটি মানে নাই, নেয় নাই।
মনিরুল হক চৌধুরীর নাম না নিয়ে বলেন, " ছোট্র ভাতিজার ( জাকারিয়া তাহের সুমন) কাছে প্রধান অতিথিগিরি বিছিয়েন না। পদের লাই। আমার পদ লাগবে না। তাই ওনাকে অনুরোধ করেন। যে নিজেকে ইজ্জত দিতে পারে না, তাকে সারা পৃথিবীর কেউ ইজ্জত দিবে না। যেতার ঘরের বউ যেতারে ইজ্জত দিতো না। হেতারে বারার (বাইরের) কেউ ইজ্জত দিতো না। আর আসন যদি কোন কারণে সদর দক্ষিণ যদি বরুড়ার লগে যায়গা ভাতিজা কিন্তু ৮ ( ২০০৮) সালের প্রতিশোধ আমনের তুন লই হালাইবো। আমনেরে কিন্তু ছাড় দিতো ন। ভাতিজা মাল ভালো। বুদ্ধিমান খেলোয়াড়। ঠান্ডা মাথার ভদ্রলোক। কইবো কাকু সেদিন তো বলেছিলেন, সুমনও বালা, নজরুলও ভালো ছেলে, না ভোটেরও বিধান আছে- আমার থেকে হালকা পাতলা হাদিয়াও নিয়েছিলেন।
কিছুক্ষণ থেমে মোবাশ্বের বলেছেন, কিরে কিতা অইছে ( মাইকের আওয়াজ না থাকায়) ষড়যন্ত্র নি কোন?
সুয়াগাজীর একটি সাংগঠনিক সভার প্রতি ইঙ্গিত করে মোবাশ্বের বলেন, প্রধান অতিথি আর মনির চৌধুরী উদ্বোধক। ইয়ানো কিয়া চা আর দোকান আছিল, উদ্বোধন করতো। না নাপিতের দোকান উদ্বোধন। উনি কিয়া উদ্বোধন কইরবো। কর্মী সভা আবার উদ্বোধন করবে কেমনে? আরে এই সভা কিভাবে হয়? এই সভা তো হইতে পারে না। প্রধান অতিথি সেই সভায় আসতে পারে না। কারণ গত ১৭ বছর আমি এই তিন উপজেলায় চাষাবাদ করেছি। মনির চৌধুরী এখানে বিএনপি করেনি। উনি ঐক্য সংহতি করেছে। আপনারা অনেকে উনার সাথে ঐক্য সংহতি করেছেন।কিছুদিন পরে ফিরা তো আইছেন। ভাই বুঝতে পাইরেন ন। এটা তো সন্তু লারমার দল। বিএনপি না। এরা কিন্তু অনেকে নামকরা। কারণ উনি এই এলাকার জনপ্রিয় এমপি ছিল। আপনাদের উনার প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা আছে। উনার কাছে আল্লাহর ওয়াস্তে হাত জোড় করে উনাকে বলেন- আর নিজেকে ছোট কইরেন না। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া মানুষ খুব একটা বেশি বালা ন। নাম বললে এরা অনেকে লজ্জা পাবে। এমন কি বিশ্বরোড কুমিল্লা ঢুকতেও পারব না। এ রকম কামলাও আছে। যারা উনাকে নিয়ে ওইসব বাজে শব্দটা বলে। বলে না। কই সেই টিপু তো তখন টোডা চিপি ধরতে পারতো। ওই বেডা কার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেস। উনি কিন্তু সেটা করেনি। না করে এখন পর্যন্ত দুইজন সুখে শান্তিতে সংসার করে। কি অইছে আমার।
সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাঙ্গলকোট হাছান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ মাঠে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেছেন, এখানে যারা এসেছেন, তারা আমাকে ভালোবেসে আসেননি। এখানে এসেছেন খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও ধানের শীষকে ভালোবেসে। ভবিষ্যতে কেউ যদি কুমড়া নিয়ে আসে লাভ হবে না। কুমড়া নয়, ধানের শীষ নিয়ে আসুন। কুমড়া নিয়ে আসলে, ওয়েলকাম ভেরি গুড, খেয়ে যান চা বিস্কুট।
তিনি বলেন, গত পাঁচ-সাতদিন আগে এক বেয়াদবের বাচ্চা, এক কুলাঙ্গারের বাচ্চা বলেছে, সে না কি ঘুরেফিরে দেখেছে, নাঙ্গলকোটে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার দশজন লোকও নেই। আরে বেয়াদব, তুই কোথায় গেছস। তুই নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গেছস। তুই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গিয়ে বিএনপির লোক কীভাবে পাবিরে বেয়াদব! তুই নাঙ্গলকোটে আসলে দেখবি সবাই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের লোক। আমি তাদের সেবক।
জানতে চাইলে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন,‘ আমি হাচা কতা কইছি। আগের অনুষ্ঠানে মনির ভাই প্রধান অতিথি ছিল না। এবার তো ঠিকই তা অইল। আমি দলের কারও নাম ধরি বেয়াদব বলিনি। যাঁরা কয়, আঁর লগে ১০জনও নাই, তাগোরে কইছি। আঁর কোন কতা মিছা না। আপনারা দেইখেন। দলীয় কর্মীরা কেউ কতা কইতে না পারলে তাঁরে বুঝাইছি। আমি আমার কতার তুন লড়তাম না। ’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, দলের হাইকমান্ড বিষয়টি অবহিত হয়েছে। আমার কাছে জানতে চেয়েছে। তাঁর বক্তব্য সুস্থ মানুষের বক্তব্য নয়। মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, তাঁর বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত। এটা কোন সুস্থ মানুষের বক্তব্য হতে পারে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া একের পর এক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিএনপি ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই আসছেন। তাঁর কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে আছে। তাঁর মুখের ভাষা জঘন্য রকমের খারাপ। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তিনি মা বাপ তুলে কথা বলেছেন। নিজ জেলা কুমিল্লাকে প্রস্রাব করার জেলা বলেছেন। তাঁর ভিডিও রেকর্ড শুনে ও দেখে মানুষ বিস্ময়ে হতবাক।
বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা তাঁর বক্তব্য শুনে বলেছেন, এমন নেতাকে বিএনপি কিভাবে অতীতে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে এবারও তিনি মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন বলে তাঁর অনুসারীরা মনে করছেন । ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর কুমিল্লা-১০ আসন থেকে বিএনপির হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
গত ২৮ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে হাজতখোলা এলাকায় আয়োজিত এক দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। এতে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক সংসদ সদস্য জাকারিয়া তাহের সুমন, মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু ও সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপুর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন । একই সঙ্গে কুমিল্লাকে ‘প্রস্রাব’ করার জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেছেন ‘আবু এবং টিপু এই কমিটি তাদের দুজনকে দেওয়ার পরে, আবু ভাই এটাকে ইংরেজিতে কইল রিয়েক্ট করছে। মানে এটা মানি নিতে পারে নাই। না মানি ধর্মসাগর পাড়ে আমার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে। ঠ্যাং ভাঙ্গিয়ালামু ,কাডিয়ালামু এগুলা বলেন। কিন্তু নিয়তি দেখেন যার কারণে আবু ভাই আমার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে টিপু ভাই কিন্তু আমার পক্ষে সেদিন প্রতিবাদ করে নাই। তার মানে উনাদের স্বার্থে উনারা এক, উনারা অভিন্ন। উনাদের শত্রু আমরা বহিরাগতরা। আমরা উনাদের কাছে কি জানেন তো! উনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি? ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে যাত্রা বিরতি দিয়ে প্রস্রাব করার নাম হলো কুমিল্লা। কুমিল্লা কোথায় জানেন তো? আর আমরা বহিরাগতরা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন থানা থেকে আমরা হয়েছি হেতাগর লোক সাপ্লাই দেওইন্না।’
তিনি বলেন,‘আমাদের সাথে উনাদের প্রেম বুঝেন তো? আমরা লোক সাপ্লাই দিই, এই হলো উনাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু উনারাদের স্বার্থে উনারা কারো ভাই না। উনারা কারো আত্মীয় না। আবু তখন ধর্মসাগর পাড়ে মোবাশ্বের ভাইয়ের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিছে। আবুর এটাকে আমি সমর্থন করি। কারণ সে চায়নাই টিপুর লগে কমিটিতে আসতে। টিপুর এই এই দোষ আছে। কিন্তু টিপুতো -তহন যাই টোডা সিবি ধরইতো পারত, ওই বেডা কার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেস। উনি কিন্তু সেটা করে নাই। না করে এখন পর্যন্ত দুজনে সুখে শান্তিতে সংসার করে। তো কি হইছে আমার? আমার কি হইছে? কই আমরা যে একটা কেন্দ্রের ইফতার পার্টি করতেছি। এ রকম ১৫৫ টা তে যাওয়ার মতো, করার মতো আমাদের অবস্থান আছে। আপনাদের পুরো মহানগরের ২৭ নাম্বার ওয়ার্ডে ২৭ টা এরকম প্রোগ্রাম করতে পারবেন না। আমি ১৫৫ টা করতে পারব। ১৫৫ টা মনির ভাই করতে পারবে। ১৫৫ টার কাছাকাছি গফুর ভাইও করতে পারবে। আপনারাদের থেকে আমাদের পুঁজি খারাপ না। আমি কি কথা বুঝাইতে পারছি? আমি যদি আবুকে বাদ দিতাম তাহলে না আবু আমার বিরুদ্ধে যেত। কিন্তু উনারা পারে মাইনষেরে বাদ দিয়া লাইতো ,আমরা বাদ দেই না। আমরা যোগের রাজনীতি করি। কিন্তু এক মাঘে শীত যাবে না। ’
মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের উদ্দেশ্যে বলেন,‘ ইয়াছিন সাবের পরিণতি দেখেন নাই। আমারে ১৭ সালে দিছে পাকা সুপারি। কষ্ট হইছে সহ্য কইরালাইছি। কিন্তু উনার ২৫ সালে আসি বড় কাডল ( কাঁঠাল) হান্দাইয়া গেছে। উনি অহন আর কাডল সহ্য করতে পারে নাই। উপদেষ্টা না স্থায়ী কমিটির সদস্য হইছে, প্রমোশন হইছে। কিন্তু উনি জেলা থেকে বঞ্চিত হয়েছে, অপমানিত হয়ে। আরেকজন টাকা দিয়ে কমিটি কিনছে। যে কমিটি টিকে নাই, আর আমরা এখনো আমাদের সম্মান নিয়ে আছি । আর আমার এত অধপতন হয় নাই যে, আমি ছোট ভাইয়ের পিছে দি এন্নে করি খাড়ায় থাকতাম। বকুলের কণির গুতা খাইতাম। এত দূর্দিন এখনো আমার আসে নাই। তারপরেও ২-৪ টা বেয়াদব, বেয়াদবি করছে। যদি কোনদিন আল্লাহ সুযোগ দেয় সেই বেয়াদবির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিব। সর্বশেষ মনে আছে লোকমান ( স্থানীয় বিএনপি নেতা , মোবাশ্বেরের অনুসারি) আমি যখন কান্দিরপাড়ে উঠছি ,ছেগাই বসি রইছে চেয়ারে। এই ছেগাই এর মধ্যে রানের উপর রান রাখি সিরিয়ালামু। এজন্য আমি বেয়াদব ধরার ,মোনাফেক ধরার ফাঁদ বসাইছি। এই ফাঁদের মধ্যে দেখবেন অনেক বেয়াদব, অনেক মোনাফেক অনেক বেইমান, কিন্তু ধরা খাবে। সেদিনের অপেক্ষায় রইলাম।’
বক্তৃতায় মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী কে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ' নিজের নাক কেটে ভাতিজাদের প্রধান অতিথি করাইতে হয়। উনাকে মইননা চোরা কই বিল্লা মারে। আমি উনাকে আজকে বলব, ভাই গ্রুপিং বিলুপ্ত করেন। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া স্যালেন্ডার করবে। তাও আর নিজেদের কে অপমান করবেন না। আমার আরেক ভাই আছে, নাঙ্গলকোটের সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া। কুমিল্লা তে আমাগো আবু টিপুর পিছনদি যাই অসহায়ের মতো খাড়ি থায়। উনি যেদিন ২০০৮ সালে ( আসলে হবে ২০০১ সাল) এমপি ছিল রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল। তখন আবু টিপু কিছুই ছিল ন। উনি আকবর হোসেন সাহেবের কলিগ ছিল, মনির চৌধুরী সাহেবের কলিগ ছিল। আজকে ওই নিজেরা নিজেরা গুতাগুতি করে। অন হইননিও লাইততায়। যেডারে আমগো দেশে কয়,আতি খাদে পড়লে চামচিকাও লাইততায়।
তিনি বলেন, আমরা কুমিল্লা -১০ এ গ্রুপিং করি৷ এজন্য ছাগলনাইয়ার তুন আইওগুতা।আহারে অসহায়। কিন্তু আপনাদের দোয়ায় আমি এতো অসহায় নয়। আমি ১৭ বছর এই লালমাই, এই সদর দক্ষিণ, এই নাঙ্গলকোটে বিচরণ করেছি। আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আবার লগে ইরেজিও একট্ কইছি। আমেরিকান অ্যম্ববেসি কয় যে গুনছেন নি। উই আর কনসার্ন এবাউট বাংলাদেশ। আমি এই তিন উপজেলার রাজনীত নিয়ে কনসার্ন। আমি উনাকে এটা জানাই দিছি। উনি কমিটি দিল কি, দিল না। আমার কিচ্ছু আসে যায় না। মনির ভাই যে ১৫ বছর জেলা মানে নাই। উনি যে কমিটি মানে নাই, নেয় নাই।
মনিরুল হক চৌধুরীর নাম না নিয়ে বলেন, " ছোট্র ভাতিজার ( জাকারিয়া তাহের সুমন) কাছে প্রধান অতিথিগিরি বিছিয়েন না। পদের লাই। আমার পদ লাগবে না। তাই ওনাকে অনুরোধ করেন। যে নিজেকে ইজ্জত দিতে পারে না, তাকে সারা পৃথিবীর কেউ ইজ্জত দিবে না। যেতার ঘরের বউ যেতারে ইজ্জত দিতো না। হেতারে বারার (বাইরের) কেউ ইজ্জত দিতো না। আর আসন যদি কোন কারণে সদর দক্ষিণ যদি বরুড়ার লগে যায়গা ভাতিজা কিন্তু ৮ ( ২০০৮) সালের প্রতিশোধ আমনের তুন লই হালাইবো। আমনেরে কিন্তু ছাড় দিতো ন। ভাতিজা মাল ভালো। বুদ্ধিমান খেলোয়াড়। ঠান্ডা মাথার ভদ্রলোক। কইবো কাকু সেদিন তো বলেছিলেন, সুমনও বালা, নজরুলও ভালো ছেলে, না ভোটেরও বিধান আছে- আমার থেকে হালকা পাতলা হাদিয়াও নিয়েছিলেন।
কিছুক্ষণ থেমে মোবাশ্বের বলেছেন, কিরে কিতা অইছে ( মাইকের আওয়াজ না থাকায়) ষড়যন্ত্র নি কোন?
সুয়াগাজীর একটি সাংগঠনিক সভার প্রতি ইঙ্গিত করে মোবাশ্বের বলেন, প্রধান অতিথি আর মনির চৌধুরী উদ্বোধক। ইয়ানো কিয়া চা আর দোকান আছিল, উদ্বোধন করতো। না নাপিতের দোকান উদ্বোধন। উনি কিয়া উদ্বোধন কইরবো। কর্মী সভা আবার উদ্বোধন করবে কেমনে? আরে এই সভা কিভাবে হয়? এই সভা তো হইতে পারে না। প্রধান অতিথি সেই সভায় আসতে পারে না। কারণ গত ১৭ বছর আমি এই তিন উপজেলায় চাষাবাদ করেছি। মনির চৌধুরী এখানে বিএনপি করেনি। উনি ঐক্য সংহতি করেছে। আপনারা অনেকে উনার সাথে ঐক্য সংহতি করেছেন।কিছুদিন পরে ফিরা তো আইছেন। ভাই বুঝতে পাইরেন ন। এটা তো সন্তু লারমার দল। বিএনপি না। এরা কিন্তু অনেকে নামকরা। কারণ উনি এই এলাকার জনপ্রিয় এমপি ছিল। আপনাদের উনার প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা আছে। উনার কাছে আল্লাহর ওয়াস্তে হাত জোড় করে উনাকে বলেন- আর নিজেকে ছোট কইরেন না। মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া মানুষ খুব একটা বেশি বালা ন। নাম বললে এরা অনেকে লজ্জা পাবে। এমন কি বিশ্বরোড কুমিল্লা ঢুকতেও পারব না। এ রকম কামলাও আছে। যারা উনাকে নিয়ে ওইসব বাজে শব্দটা বলে। বলে না। কই সেই টিপু তো তখন টোডা চিপি ধরতে পারতো। ওই বেডা কার বিরুদ্ধে বক্তৃতা দেস। উনি কিন্তু সেটা করেনি। না করে এখন পর্যন্ত দুইজন সুখে শান্তিতে সংসার করে। কি অইছে আমার।
সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নাঙ্গলকোট হাছান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ মাঠে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপি সাবেক সহসভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেছেন, এখানে যারা এসেছেন, তারা আমাকে ভালোবেসে আসেননি। এখানে এসেছেন খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও ধানের শীষকে ভালোবেসে। ভবিষ্যতে কেউ যদি কুমড়া নিয়ে আসে লাভ হবে না। কুমড়া নয়, ধানের শীষ নিয়ে আসুন। কুমড়া নিয়ে আসলে, ওয়েলকাম ভেরি গুড, খেয়ে যান চা বিস্কুট।
তিনি বলেন, গত পাঁচ-সাতদিন আগে এক বেয়াদবের বাচ্চা, এক কুলাঙ্গারের বাচ্চা বলেছে, সে না কি ঘুরেফিরে দেখেছে, নাঙ্গলকোটে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার দশজন লোকও নেই। আরে বেয়াদব, তুই কোথায় গেছস। তুই নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গেছস। তুই আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গিয়ে বিএনপির লোক কীভাবে পাবিরে বেয়াদব! তুই নাঙ্গলকোটে আসলে দেখবি সবাই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের লোক। আমি তাদের সেবক।
জানতে চাইলে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন,‘ আমি হাচা কতা কইছি। আগের অনুষ্ঠানে মনির ভাই প্রধান অতিথি ছিল না। এবার তো ঠিকই তা অইল। আমি দলের কারও নাম ধরি বেয়াদব বলিনি। যাঁরা কয়, আঁর লগে ১০জনও নাই, তাগোরে কইছি। আঁর কোন কতা মিছা না। আপনারা দেইখেন। দলীয় কর্মীরা কেউ কতা কইতে না পারলে তাঁরে বুঝাইছি। আমি আমার কতার তুন লড়তাম না। ’
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, দলের হাইকমান্ড বিষয়টি অবহিত হয়েছে। আমার কাছে জানতে চেয়েছে। তাঁর বক্তব্য সুস্থ মানুষের বক্তব্য নয়। মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী আবু বলেন, তাঁর বক্তব্য শিষ্টাচার বহির্ভূত। এটা কোন সুস্থ মানুষের বক্তব্য হতে পারে না।