নয় বছর ধরে অন্ধকারে আছি

আনোয়ারা বেগম
Thumbnail image

তনু ( সোহাগী জাহান) যখন জীবিত ছিল, তখন আমি আলোতে ছিলাম। গত নয় বছর ধরে অন্ধকারে আছি। আমার তরতাজা মেয়েরে ওরা বাঁচতে দিল না। গরিব বলে বিচারও পাই না। কত লোক আশ্বাস দিল, বিচার হইব, বিচার করব। কই, কিচ্ছু হয়নি। আল্লাহর কাছে বিচার দিচ্ছি। আল্লাহ যদি বিচার করে।

২০১৬ সালের পর ছয়বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল অইছে। এরা কোন কাম করেনি। তদন্ত-মদন্ত করেনি। মামলার আয়ুদের বিচারের আওতায় আনা হোক। তাঁরা এতোদিন কিতা করছে। বিচারটা নিয়ে গড়িমসি হচ্ছে।

তনুর বাবার এখন পিআরএলে। আমরা এখনও সেনানিবাসের কোয়ার্টারে থাকি। এরপর কি করব? মেয়েটা ছিল আমার অবলম্বন। ওর পেছনে মেলা টাকা খরচ করছি। নাচে গানে অভিনয়ে মেয়েটা পারদর্শী ছিল। আঁকাআঁকিও করতো। এখনও ওর জামা কাপড় রেখে দিয়েছি। কইলজা ফাইট্রা যায়, মনে হলে। কি চঞ্চল ছিল মেয়েটা। দুই ভাইয়ের একটা বোন। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর একটা মাত্র মেয়ে। মেয়ে সন্তানের প্রতি দরদ, ভালোবাসা বেশি আমরার।

তনুর বাবা মেয়ের সব বায়না মানত। পালন করতো। গরিব মানুষ আমরা। মেয়েকে সুন্দর ভাবে চালাতাম। তনু টিউশনি করতো। সুন্দর করে চলতো।

প্রতিবছর ২০ মার্চ আইলে সাংবাদিকরা ফোন করে। কিতা কইতাম তারারে। আমার কাছে কিছু নাই। মামলার আয়ুরা আমরার কাছে আইয়ে না। তারা তারার বাজে বাজে আইয়া চইলা যায়।

নয় বছরে এক মুহুর্তের জন্যও মেয়েটি চোখ থেকে সরে না। তনুর বিচার হয় না। দেশে ধর্ষণ বাড়ছে। নারী নির্যাতন বাড়ছে। কোনটার তো বিচার দেহি না। আল্লাহ যদি করে।

[ ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আজ তনু হত্যার নয় বছর পূর্ণ হল। এখনও মামলার তদন্ত চলছে। অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। আসামিও শনাক্ত হয়নি। মেয়ে কে নিয়ে তনুর মায়ের এই লেখা। অনুলিখন ]

আনোয়ারা বেগম: সোহাগী জাহান তনুর মা।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত