তিতাসে তিন বন্ধু মিলে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে আরেক বন্ধুকে : আটক ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

কুমিল্লার তিতাসে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে তিন বন্ধু পরিকল্পিতভাবে খুন করে আরেক বন্ধুকে। উক্ত ঘটনার ৯ ঘন্টার মধ্যে চারজনকে আটক করেছে তিতাস থানা পুলিশ।

গতকাল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বাদ মাগরিক উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের গাজীপুর বাস্তুহারা পল্লীতে মো. রুবেল মিয়া (২৭) খুন হয়। শুক্রবার রাতে আটক ৪ জনকে শনিবার দুপুরে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত আসামীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানান, বাস্তুহারা পল্লীর মোহাম্মদ আলীর ছেলে নিহত রুবেল মিয়া (২৭), আটককৃত একই এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোহাম্মদ আলী (৩০), শাহজাহানের ছেলে মো. ইয়াছিন (৩২) এবং কামাল খানের ছেলে মো. তোফাজ্জল (৪৫) পরস্পর চার বন্ধু। তারা এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এবং তিনজনই মাদকাসক্ত। কিছুদিন আগে ইয়াছিনের স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এই চলে যাওয়ার কারণ হিসেবে ইয়াছিন নিহত রুবেলের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। এছাড়াও সম্প্রতি সময়ে রুবেলের সাথে অপর তিন বন্ধুর ইয়াবা সেবন ও বিক্রির টাকা নিয়েও দণ্ড সৃষ্টি হয়। ঘটনার একদিন আগে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে চার বন্ধুর মধ্যে তর্কবির্তক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এইসব কারণে ইয়াছিন পরিকল্পনা করে তোফাজ্জল ও মোহাম্মদ আলীর সহযোগিতা তাকে উচিত শিক্ষা দিবে।

ঘটনার দিন শুক্রবার মাগরিক নামাজের আগে অন্যান্য দিনের মতো মোহাম্মদ আলীর ঘরে অপর তিনবন্ধু রুবেল, ইয়াছিন ও তোফাজ্জল একত্রিত হয়। চারজনের টাকার সমন্বয়ে ৬৫০ টাকা দিয়ে ৩টি ইয়াবা কিনে আনে। ঘরের মেঝে গোল করে বসে দুটি ইয়াবা তারা সেবন করে। তৃতীয় ইয়াবাটি যখন রুবেল সেবন করা অবস্থা ছিল তখন পেছন থেকে ইয়াছিন হাড়ুড়ি দিয়ে রুবেলের ঘাড়ে আঘাত করে। এতে রুবেলের ঘাড়ের উপরের অংশ ফেটে রক্তপাত শুরু হয় এবং রুবেল অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ইয়াছিন তার ঘর থেকে পেছনে করে হাতুড়ি এনে ছিল। অবস্থা বেগতি দেখে ঘরে থাকা কুড়াল দিয়ে মোহাম্মদ আলীসহ অন্য বন্ধুরা রুবেলের মাথায় একাধিকবার কোপ মারে। মুহুর্তের মধ্যে ঘরের মেঝ রক্তে ভরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ইয়াাছিন ও তোফাজ্জল কৌশলে চলে যায় এবং মোহাম্মদ আলী ঘরের পাশে টিউবওয়েলে গোসল করে রক্তাক্ত কাপড় পরিবর্তন করে।

এদিকে, ঘটনার পর মোহাম্মদ আলী একই গ্রামের রাশেদ ফরাজীকে তার বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে। রাশেদ তাদের ঘরে এসে রক্তাক্ত লাশ দেখে রুবেল খুন হয়েছে বলে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। এসময় স্থানীয় লোকজন মোহাম্মদ আলীকে আটক করে। ঘটনাস্থলে মোহাম্মদ আলীর পিতা জয়নাল আবেদীন উপস্থিত হলে স্থানীয় লোকজন তাকেও আটক করে বাবা-ছেলেকে পুলিশে দেয়।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে রাত ৯টায় লাশ থানায় নিয়ে আসে এবং আটক মোহাম্মদ আলীর স্বীকারোক্তিতে রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপর দুই বন্ধু ইয়াছিন ও তোফাজ্জলকে বাস্তুহারা এলাকা থেকে আটক করে। রুবেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার দুপুরে মোহাম্মদ আলীর পিতা জয়নাল আবেদীন, তিন বন্ধু মোহাম্মদ আলী, ইয়াছিন ও তোফাজ্জলকে কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে।

তিতাস থানার ওসি মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ জানান, মূলত বিভিন্ন কারণে জমে থাকা ক্ষোভ থেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তিন বন্ধু মিলে রুবেলকে খুন করে। নিহত রুবেল ও আসামী ইয়াছিন একাধিক হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতি মামলার আসামী। উক্ত ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জিয়াউল রহমান বাদী হয়ে আটককৃত ৪জনের নাম উল্লেখসহ ৩/৪জন অজ্ঞাতনামা রেখে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত