রাজনৈতিক চাটুকারিতায় কিশোর গ্যাং বিকশিত হচ্ছে

ড. রাশেদা রওনক খান
আপডেট : ১৭ মে ২০২৫, ১১: ৫২
Thumbnail image

কুমিল্লার কিশোর গ্যাংয়ের একটি ভিডিও গত মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম। দেখে অবাক হই। আমার প্রিয় শহরের কিশোরেরা নিজেদের জানান দিতে মহড়া দেয়। জনমনে আতংক ছড়ায়। নিজেদের আলাদা কিছু ভাবতে শুরু করে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণও রয়েছে। প্রথমত সাইবার ওয়ার্ল্ডের প্রভাব। বাচ্চাদের হাতে এখন স্মার্ট ফোন চলে গেছে। ওরা এতে সব কিছু দেখছে। ওদের বয়সটা চ্যালেঞ্জিং, ঝুঁকিপূর্ণ। ওরা ভিন্ন কিছু করে দেখাতে চায়। ওদের ওই দেখানোটা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এটা কেউ ওদেও আঙুল দিয়ে বলছে না। কেননা পারিবারিক বন্ধন এখন আর আগের মতো নেই। যৌথ পরিবার হারিয়ে গেছে। আগে যৌথ পরিবারের সদস্যরা বাবা, চাচা ,মামা, খালু তাঁদের ভয় পেতো। এখন সেই ডাক দেওয়ার মানুষ কমে গেছে। মানুষ একক পরিবারে অভ্যস্ত। শহর থেকে গ্রামের স্বজনেরা আগের মতো বেড়াতে আসে না। ওরা কারও সঙ্গে মিশে না। বাইরের ছেলেরাই ওদেও প্রাণ। ওদের জীবন যন্ত্রনির্ভর। ওরা যন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মোবাইলে দেখে বিভিন্ন অপরাধ মাথায় নিচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, বড় ভাই সংস্কৃতি আমাদের দেশে আগেও ছিল। এখনও আছে। এখন বড় ভাইয়েরা কিশোরদের মিছিলে নেওয়া, দল ভারি করার কাজে লাগান। মূলত রাজনৈতিক চাটুকারিতার মধ্য দিয়ে কিশোর গ্যাং বিকশিত হচ্ছে।

কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পারিবারিক বন্ধন, পারিবারিক শিক্ষা, পারিবারিক আচার আচরণ দেখতে হবে। বাবা মা কে সন্তানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, কি করে তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে গবেষণা করতে হবে। মানবাধিকারকর্মীদের সঙ্গে বসতে হবে। কিশোর অপরাধ সংশোধনের জন্য কাজ করতে হবে। শুধু আইন দিয়ে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিহত করা যাবে না।

কুমিল্লা আমার কাছে যাদুর শহর। এই শহর অদ্ভুত মায়াময় এক শহর। কুমিল্লা আমার অস্তিত্ব। এখানকার আলো বাতাসে আমার কৈশোর কেটেছে। কর্মজীবন ও পারিবারিক কারণে ঢাকায় থাকি। কিন্তু কুমিল্লার ভালো মন্দ সব খবরে নিজের বোধ বেশি করে জাগ্রত হয়। আমার বিশ্বাস এই শহর পারিবারিক ভালোবাসা, অপত্য স্নেহ ও যত্নের মধ্য দিয়ে কিশোর গ্যাং মুক্ত হবে।

( রাশেদা রওনক খান গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার শহর কার্যালয়ে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে আসেন। এ সময় তাঁর বড় ভাই কুমিল্লা নগরের বিশিষ্ট নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা, আরিফ মোর্শেদ খানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আমার শহর কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এখানকার কর্মীদের সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁর সঙ্গে নানা ধরনের আলাপচারিতা হয়। এতে কিশোর গ্যাং নিয়ে তিনি তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তা এখানে তুলে ধরা হল।)

ড. রাশেদা রওনক খান: সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত