ডা. শহিদুল্লাহর মৃত্যু
ডা. ইকবাল আনোয়ার

ডা. শহিদুল্লাহ ভাই আর নাই। তাঁর মতো একজন নেতা, একজন অভিভাবক হারিয়ে চিকিৎসকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। কুমিল্লাবাসীও।
তিনি কুমিল্লার প্রবীণ চিকিৎসক। ষাট ও সত্তোরের দশকে যে কয়জন চিকিৎসক কুমিল্লার মানুষকে চিকিৎসা দিতেন, ডাক পড়লে বাড়ি বাড়ি যেতেও কুণ্ঠিত হতেন না, তিনি তাঁদের অন্যতম। আমার শৈশবে তিনি আমাদের বাসায়ও গিয়েছেন।
স্পেসালিস্টদের যুগ এলে তাঁদের ব্যস্ততায় ভাটা পড়ে। তবে তিনি কখনো কম ব্যস্ত হননি। চিকিৎসা পেশার বাইরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর বিচরণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি কুমিল্লা বিএমএর সভাপতি ছিলেন, কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কুমিল্লার মিডল্যান্ড হাসপাতালটি তাঁর মতো কয়েকজন উদ্যোক্তার প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে। সাথে ছিলেন মরহুম ডা. হেদায়েতুল্লাহ। সেটা ছিল কুমিল্লার বেসরকারি চিকিৎসা সেবা সূচনার প্রথমকাল। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি নেতৃত্বে ছিলেন।
তাঁরা কয়েকজন-ডা. যোবায়দা হান্নান, ডা. হেদায়েতউল্লাহ, ডা. অলিউল্লাহ সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। তাদের এ গ্রুপে সর্বশেষজন তিনি, তিনিও রইলেন না। এভাবেই একটি যুগের, একটি ঘরানার সমাপ্তি ঘটল।
তিনি এক ক্ষণজন্মা মানুষ। অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন। ছিলেন স্পষ্টবাদী এবং একই সাথে উদার। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেউ হলে সুযোগ পেলেই তাকে দমিয়ে রাখা, কখনো হেনস্তা করা, দূরে পাঠিয়ে দেওয়া, যোগ্য হলেও তাঁকে দাবায়ে রাখার যে সংস্কৃতি, তার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ন্যায়সঙ্গত বিবেচনায় দলমত প্রাধান্য না দিয়ে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
মন খোলা এ মানুষটি নিরহংকারী ছিলেন। একই সাথে আধুনিক ও স্মার্ট। সহজে ছোট বড় সকলের সাথে হাসিমুখে মিশতেন তিনি। আড্ডা প্রিয়, আমুদে শহিদ্ল্লুাহ ভাই সঙ্গত কারণে আমাকে ভালবাসতেন, আমিও তাঁকে দেখলে চঞ্চল হতাম, এতটুকুই থাক তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের এক ঝলক কথা। অনেক কথা মনে জমা , স্পর্শকাতর তার কিছু, জানাবো স্মৃতিকথায়।
তিনি অনেক বড় বড় কবিতা মুখস্ত রাখতেন। তার কণ্ঠে বাংলার আইকন কবি কাজী নজরুল ইসলামের উমর ফারুক কবিতাটির আবৃত্তি মনকে ছুঁয়ে যেতো। বহুবার শুনেছি, অনুরোধ করলেই আবেগে ভরপুর হয়ে শোনাতেন।
সেই সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে আমরা যখন ছাত্র, তিনি ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, ছিলেন ছাত্রদের সহযোগিতায় অনন্য এক প্রিয়জন। আমরা তাঁকে হারিয়ে মনকষ্টে পড়েছি। তাঁর শূন্যতা বহুদিন ভোগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত বলি, অতি সম্প্রতি দুইজন চিকিৎসক ডেঙ্গুতে প্রাণ হারলেন। একজন তরুণ প্রতিশ্রুত ডা. কাকলি অপরজন প্রজ্ঞাবান প্রবীণ ডা. শহিদ্ল্লুাহ।
শহিদুল্লাহ ভাইয়ের সফল বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এটার রিকভারির সময়ে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সার্জারি তাঁর মৃত্যুর কারণ নয়, কারণ ডেঙ্গু। বার্ধক্য নয়, হার্ট অপারেশন নয়, মশায় তাঁর জীবন গেলো। তাঁর রোগ, বয়স ইত্যাদির সঙ্গে ডেঙ্গু যুক্ত হয়ে তাঁকে কেড়ে নিল। এটাই বড় আফসোস!
দুজন চিকিৎসক যদি অল্প সময়ের ব্যবধানে মশার কারণে মৃত্যবরন করেন, যাদের সামাজিক অবস্থান আমাদেরকে জানতে দিয়েছে এ খবর, তবে জনসাধারণের মধ্যে এর অবস্থান কি?
এ বিষয়ে কারো কোনো দায়িত্ব, জবাবদিহিতা, জানান দেয়া, কাজ, প্রচার, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, আইন ইত্যাদির ভূমিকা কি?
সিটি করপোরেশন কি করছে, অন্তত জনতা তা জানতে পারার অধিকার রাখে কি? আমরা তো ট্যাক্স দিয়ে থাকি!
প্রিয় চিকিৎসক সংগঠন, সুযোগ্য সমাজ সেবা সংস্থাসমূহ ভূমিকা রাখবেন আশা করি।

ডা. শহিদুল্লাহ ভাই আর নাই। তাঁর মতো একজন নেতা, একজন অভিভাবক হারিয়ে চিকিৎসকরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। কুমিল্লাবাসীও।
তিনি কুমিল্লার প্রবীণ চিকিৎসক। ষাট ও সত্তোরের দশকে যে কয়জন চিকিৎসক কুমিল্লার মানুষকে চিকিৎসা দিতেন, ডাক পড়লে বাড়ি বাড়ি যেতেও কুণ্ঠিত হতেন না, তিনি তাঁদের অন্যতম। আমার শৈশবে তিনি আমাদের বাসায়ও গিয়েছেন।
স্পেসালিস্টদের যুগ এলে তাঁদের ব্যস্ততায় ভাটা পড়ে। তবে তিনি কখনো কম ব্যস্ত হননি। চিকিৎসা পেশার বাইরে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর বিচরণ ছিল উল্লেখযোগ্য।
তিনি কুমিল্লা বিএমএর সভাপতি ছিলেন, কুমিল্লা ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কুমিল্লার মিডল্যান্ড হাসপাতালটি তাঁর মতো কয়েকজন উদ্যোক্তার প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে। সাথে ছিলেন মরহুম ডা. হেদায়েতুল্লাহ। সেটা ছিল কুমিল্লার বেসরকারি চিকিৎসা সেবা সূচনার প্রথমকাল। তিনি এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। ময়নামতি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি নেতৃত্বে ছিলেন।
তাঁরা কয়েকজন-ডা. যোবায়দা হান্নান, ডা. হেদায়েতউল্লাহ, ডা. অলিউল্লাহ সহপাঠী ও বন্ধু ছিলেন। তাদের এ গ্রুপে সর্বশেষজন তিনি, তিনিও রইলেন না। এভাবেই একটি যুগের, একটি ঘরানার সমাপ্তি ঘটল।
তিনি এক ক্ষণজন্মা মানুষ। অনেক গুণের অধিকারী ছিলেন। ছিলেন স্পষ্টবাদী এবং একই সাথে উদার। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের কেউ হলে সুযোগ পেলেই তাকে দমিয়ে রাখা, কখনো হেনস্তা করা, দূরে পাঠিয়ে দেওয়া, যোগ্য হলেও তাঁকে দাবায়ে রাখার যে সংস্কৃতি, তার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি ন্যায়সঙ্গত বিবেচনায় দলমত প্রাধান্য না দিয়ে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
মন খোলা এ মানুষটি নিরহংকারী ছিলেন। একই সাথে আধুনিক ও স্মার্ট। সহজে ছোট বড় সকলের সাথে হাসিমুখে মিশতেন তিনি। আড্ডা প্রিয়, আমুদে শহিদ্ল্লুাহ ভাই সঙ্গত কারণে আমাকে ভালবাসতেন, আমিও তাঁকে দেখলে চঞ্চল হতাম, এতটুকুই থাক তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের এক ঝলক কথা। অনেক কথা মনে জমা , স্পর্শকাতর তার কিছু, জানাবো স্মৃতিকথায়।
তিনি অনেক বড় বড় কবিতা মুখস্ত রাখতেন। তার কণ্ঠে বাংলার আইকন কবি কাজী নজরুল ইসলামের উমর ফারুক কবিতাটির আবৃত্তি মনকে ছুঁয়ে যেতো। বহুবার শুনেছি, অনুরোধ করলেই আবেগে ভরপুর হয়ে শোনাতেন।
সেই সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে আমরা যখন ছাত্র, তিনি ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, ছিলেন ছাত্রদের সহযোগিতায় অনন্য এক প্রিয়জন। আমরা তাঁকে হারিয়ে মনকষ্টে পড়েছি। তাঁর শূন্যতা বহুদিন ভোগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত বলি, অতি সম্প্রতি দুইজন চিকিৎসক ডেঙ্গুতে প্রাণ হারলেন। একজন তরুণ প্রতিশ্রুত ডা. কাকলি অপরজন প্রজ্ঞাবান প্রবীণ ডা. শহিদ্ল্লুাহ।
শহিদুল্লাহ ভাইয়ের সফল বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। এটার রিকভারির সময়ে তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সার্জারি তাঁর মৃত্যুর কারণ নয়, কারণ ডেঙ্গু। বার্ধক্য নয়, হার্ট অপারেশন নয়, মশায় তাঁর জীবন গেলো। তাঁর রোগ, বয়স ইত্যাদির সঙ্গে ডেঙ্গু যুক্ত হয়ে তাঁকে কেড়ে নিল। এটাই বড় আফসোস!
দুজন চিকিৎসক যদি অল্প সময়ের ব্যবধানে মশার কারণে মৃত্যবরন করেন, যাদের সামাজিক অবস্থান আমাদেরকে জানতে দিয়েছে এ খবর, তবে জনসাধারণের মধ্যে এর অবস্থান কি?
এ বিষয়ে কারো কোনো দায়িত্ব, জবাবদিহিতা, জানান দেয়া, কাজ, প্রচার, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, আইন ইত্যাদির ভূমিকা কি?
সিটি করপোরেশন কি করছে, অন্তত জনতা তা জানতে পারার অধিকার রাখে কি? আমরা তো ট্যাক্স দিয়ে থাকি!
প্রিয় চিকিৎসক সংগঠন, সুযোগ্য সমাজ সেবা সংস্থাসমূহ ভূমিকা রাখবেন আশা করি।