অধ্যাপক ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ

ধরুন একজন রাস্তায় বেরুনুর পর মিশুক চালক সামনের বিপত্তি মনে করে লোকটাকে একটা ধাক্কা দিল। লোকটি রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভাঙ্গল। স্থানীয় হাসপাতালে রুগীটিকে নেয়ার পর একটু চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিল। কিন্তু এই চিকিৎসায় সুবিধা না হলে কয়েকদিন পর বড় হাসপাতালে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ভর্তি করাল। হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন এসে দেখার পর বলবে অপারেশন করে হাড্ডি জোড়া লাগাতে হবে। অপারেশন করে হাঁড় জোড়া লাগানোর পর দেখা যায় অপারেশনের জায়গায় পুঁজ জমেছে এবং তীব্র ব্যথা দেখা দিয়েছে, সার্জন এটা দেখে বলবেন পায়ে ইনফেকশন হয়েছে তাই পুঁজের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর চিকিৎসায় পা কেটে ফেলাও হয়। আর এ ইনফেকশনই হচ্ছে জীবাণু দ্বারা আক্রমন।
সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির সিনিয়ার রিসার্চ ইনভেস্টিগেটরদের গবেষণায় বেরিয়েছে —“আমরা গত ২০২২ সালের জুলাই থেকে এ বছর পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্স করেছি। সাধারণভাবে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলতে নখ, ত্বক কিংবা শরীরের বাইরের অংশের ছত্রাক সংক্রমনকে বুঝি। এ ইনফেকশনগুলো হচ্ছে ত্বকের উপরিভাগের ছত্রাক সংক্রমণ। আর আমরা কাজ করছি যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা সিস্টেম যেমন-ফুসফুস, ব্রেইন, রক্ত ইত্যাদির ভিতরে ঘটে সেগুলো নিয়ে। এ ধরনের সংক্রমণ সাধারণত সুস্থ মানুষের হয় না। রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেলে যেমন —ক্যান্সার রোগী, আইসিইউর রোগী, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগীর এ ধরনের জটিল ছত্রাক সংক্রমণে ঝুঁকি বাড়ে”।
এ সার্ভেইলেন্স সাধারণত বাংলাদেশে হয় না, তাঁহারা দেখতে পান যে, এ ধরনের পরিবেশে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশ ভয়াবহ হয়ে থাকে। আইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস নামে একটি ছত্রাকের ইনফেকশন পাওয়া যায়, যাকে ছত্রাকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসাবে মনে করা হয়। এ ইনফেকশনে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি। আইসিইউতে থাকা নবজাতকের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ক্যান্ডিডা ব্ল্যাংকি নামে একটি ছত্রাক নবজাতকদের রক্তে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়া নবজাতকদের মৃত্যুহার এনআইসিইউ’এর গড় মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, বাজারে যে এন্টি ফাংগাল ঔষুধগুলো সহজলভ্য সেগুলো এ দুই ধরনের ফাংগাসকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মারতেই পারছে না। কার্যকর যে ঔষুধগুলোর আছে সেগুলো দামি, সহজে পাওয়া যায় না। সেগুলো বেশি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে কাজ নাও করতে পারে। তাই তাদের মতে এনআইসিইউর ছত্রাক সংক্রমণ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সংক্রমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আইপিসি শক্তিশালী করা। তাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, একটি হাসপাতালের আইপিসি ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে হাসপাতালে চলতি বছরে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেকটা কমে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে হাতধোঁয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমেই এর বিস্তার কমানো সম্ভব বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের নিত্যদিনের দৃশ্য হচ্ছে —রোগীর শয্যায় বসে কেউ ফল খাচ্ছেন, কেউ ভাত খাচ্ছেন, অনেকে শয্যায় রোগীর চারপাশে গোল হয়ে বসে গল্প করছেন। অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়ায় আবার ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তাঁর চারপাশ ঘিরেও গল্প করতে দেখা যায় আত্মীয় স্বজনকে। পাউরুটি, কলার ধুম চলছে বেডে বসেই। দায়িত্বরত নার্সদের বলতে শোনা যায় —রোগীর স্বজনদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বললে তারা অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে বাজে আচরণ করেন।
দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে বিভিন্ন জীবণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার অভাবে বিপত্তি বাড়ছে। ইনফেকশনের কারণে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যথাযথ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন হাসপাতালই হয়ে উঠছে জীবাণুর কারখানা, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ বলছেন অসুস্থতাকে অবহেলা না করে দ্রুত কার্যকর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং হাসপাতালে ভীড় না করে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে একটি জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা সেবায় জাতিকে অগ্রগামী করতে হবে। (সংগৃহিত)

ধরুন একজন রাস্তায় বেরুনুর পর মিশুক চালক সামনের বিপত্তি মনে করে লোকটাকে একটা ধাক্কা দিল। লোকটি রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভাঙ্গল। স্থানীয় হাসপাতালে রুগীটিকে নেয়ার পর একটু চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিল। কিন্তু এই চিকিৎসায় সুবিধা না হলে কয়েকদিন পর বড় হাসপাতালে নিয়ে আত্মীয়-স্বজন ভর্তি করাল। হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন এসে দেখার পর বলবে অপারেশন করে হাড্ডি জোড়া লাগাতে হবে। অপারেশন করে হাঁড় জোড়া লাগানোর পর দেখা যায় অপারেশনের জায়গায় পুঁজ জমেছে এবং তীব্র ব্যথা দেখা দিয়েছে, সার্জন এটা দেখে বলবেন পায়ে ইনফেকশন হয়েছে তাই পুঁজের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এর চিকিৎসায় পা কেটে ফেলাও হয়। আর এ ইনফেকশনই হচ্ছে জীবাণু দ্বারা আক্রমন।
সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির সিনিয়ার রিসার্চ ইনভেস্টিগেটরদের গবেষণায় বেরিয়েছে —“আমরা গত ২০২২ সালের জুলাই থেকে এ বছর পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে সার্ভেইল্যান্স করেছি। সাধারণভাবে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বলতে নখ, ত্বক কিংবা শরীরের বাইরের অংশের ছত্রাক সংক্রমনকে বুঝি। এ ইনফেকশনগুলো হচ্ছে ত্বকের উপরিভাগের ছত্রাক সংক্রমণ। আর আমরা কাজ করছি যে ফাঙ্গাল ইনফেকশন শরীরের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা সিস্টেম যেমন-ফুসফুস, ব্রেইন, রক্ত ইত্যাদির ভিতরে ঘটে সেগুলো নিয়ে। এ ধরনের সংক্রমণ সাধারণত সুস্থ মানুষের হয় না। রোগ প্রতিরোধে ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেলে যেমন —ক্যান্সার রোগী, আইসিইউর রোগী, অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা রোগীর এ ধরনের জটিল ছত্রাক সংক্রমণে ঝুঁকি বাড়ে”।
এ সার্ভেইলেন্স সাধারণত বাংলাদেশে হয় না, তাঁহারা দেখতে পান যে, এ ধরনের পরিবেশে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশ ভয়াবহ হয়ে থাকে। আইসিইউতে ক্যান্ডিডা অরিস নামে একটি ছত্রাকের ইনফেকশন পাওয়া যায়, যাকে ছত্রাকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসাবে মনে করা হয়। এ ইনফেকশনে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মৃত্যুহার শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি। আইসিইউতে থাকা নবজাতকের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ক্যান্ডিডা ব্ল্যাংকি নামে একটি ছত্রাক নবজাতকদের রক্তে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। এ ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়া নবজাতকদের মৃত্যুহার এনআইসিইউ’এর গড় মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি। সবচেয়ে দুঃখজনক হল, বাজারে যে এন্টি ফাংগাল ঔষুধগুলো সহজলভ্য সেগুলো এ দুই ধরনের ফাংগাসকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মারতেই পারছে না। কার্যকর যে ঔষুধগুলোর আছে সেগুলো দামি, সহজে পাওয়া যায় না। সেগুলো বেশি ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে কাজ নাও করতে পারে। তাই তাদের মতে এনআইসিইউর ছত্রাক সংক্রমণ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে সংক্রমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আইপিসি শক্তিশালী করা। তাদের আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, একটি হাসপাতালের আইপিসি ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে হাসপাতালে চলতি বছরে ছত্রাক সংক্রমণের হার অনেকটা কমে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে হাতধোঁয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমেই এর বিস্তার কমানো সম্ভব বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালের নিত্যদিনের দৃশ্য হচ্ছে —রোগীর শয্যায় বসে কেউ ফল খাচ্ছেন, কেউ ভাত খাচ্ছেন, অনেকে শয্যায় রোগীর চারপাশে গোল হয়ে বসে গল্প করছেন। অপারেশনের জায়গায় ইনফেকশন দেখা দেয়ায় আবার ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। তাঁর চারপাশ ঘিরেও গল্প করতে দেখা যায় আত্মীয় স্বজনকে। পাউরুটি, কলার ধুম চলছে বেডে বসেই। দায়িত্বরত নার্সদের বলতে শোনা যায় —রোগীর স্বজনদের সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বললে তারা অনেক সময় ক্ষিপ্ত হয়ে বাজে আচরণ করেন।
দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এক রোগের চিকিৎসা নিতে এসে বিভিন্ন জীবণুতে সংক্রমিত হচ্ছে মানুষ। পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতনতার অভাবে বিপত্তি বাড়ছে। ইনফেকশনের কারণে অঙ্গহানি থেকে শুরু করে রোগীর মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যথাযথ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় দিন দিন হাসপাতালই হয়ে উঠছে জীবাণুর কারখানা, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ বলছেন অসুস্থতাকে অবহেলা না করে দ্রুত কার্যকর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং হাসপাতালে ভীড় না করে স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে একটি জীবাণুমুক্ত চিকিৎসা সেবায় জাতিকে অগ্রগামী করতে হবে। (সংগৃহিত)