ননী গোপাল সূত্রধর
সম্প্রতি ২০২৫ সনের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ বিরাজ করছে। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে সার্বিক ফলাফলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেকেই একে কেবল ুইংরেজিতে দুর্বলতা” বলে উল্লেখ করলেও, বাস্তবে এটি একটি গভীর শিক্ষা বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।এখন প্রশ্ন হলো—কেন শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ব্যর্থ হচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় আছে কি? এই রচনায় সেই প্রশ্নের আলোকে কিছু বাস্তব কারণ ও সমাধান প্রস্তাব উপস্থাপন করব।
ইংরেজি ভাষা না বিষয়: বিভ্রান্তির মূল। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি প্রায়ই কেবল একটি পরীক্ষার বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে তারা ভাষাটির চারটি মৌলিক দক্ষতা—খরংঃবহরহম, ঝঢ়বধশরহম, জবধফরহম, ডৎরঃরহম—এর কোনোটি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করে না। কেউ যদি ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে শেখে, তাহলে সে কখনই পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে না; কারণ ভাষা শেখা মানে যোগাযোগের সক্ষমতা অর্জন করা। কিন্তু যারা একে কেবল পরীক্ষার বিষয় হিসেবে মুখস্থ করে, প্রশ্নপত্রে অচেনা টপিক পড়লে তারা সহজেই ব্যর্থ হয়।
ইংলিশ ফোবিয়া একটি মানসিক প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের ুইংলিশ ফোবিয়া” বা ইংরেজি-ভীতি দেখা যায়। ইংরেজিকে কঠিন, জটিল ও ুবিদেশি” ভাষা হিসেবে দেখা হয়। অথচ আধুনিক বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইংরেজি অপরিহার্য। এই ভয় থেকে ভাষাটিকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রবণতা শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বিমুখ করে তুলছে, যা ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাইটিং স্কিলে দুর্বলতা ও মুখস্থনির্ভর শিক্ষা। বিশেষ করে মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি রাইটিং অংশে সবচেয়ে অত্যধিক দুর্বল। তারা প্যারাগ্রাফ, লেটার, এপ্লিকেশন, স্টোরি বা কম্পোজিশন মুখস্থ করে প্রস্তুতি নেয়। পরীক্ষায় মুখস্থ টপিক না পড়লে বিভ্রান্ত হয় এবং এলোমেলোভাবে লিখে ফেলে। ফলে উত্তরপত্রের লেখায় অসংখ্য বানান ভুল ব্যাকরণিক ভুল, অপ্রাসঙ্গিক বাক্য, ও অগোছালো উপস্থাপনা পরিলক্ষিত হয়।
এইচএসসিতে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে প্রায় ১০০ নম্বরই পুরোপুরি ক্রিয়েটিভ রাইটিং অংশ, যেখানে নম্বর তোলা অত্যন্ত কঠিন। সামান্য ভুলও নম্বর কমিয়ে দেয়। তদুপরি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছেযে,ুএক বা দুই পৃষ্ঠা লিখলেই পরীক্ষকরা অন্তত ৩/৪নম্বর দেবেনই।” কিন্তু বাস্তবে উত্তরপত্র মূল্যায়নে দেখা যায় উক্ত লেখায় শূন্য পেয়েছে।
ইংরেজি প্রশ্নপত্র কাঠামোর সীমাবদ্ধতা। ইংরেজি প্রশ্নপত্রের কাঠামোতেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। রাইটিং অংশে বিকল্প প্রশ্ন থাকে না—একটি মাত্র প্যারাগ্রাফ, একটি এপ্লিকেশন বা স্টোরি আসে। এতে শিক্ষার্থীরা বাছাইয়ের সুযোগ পায় না। পারুক বা না পারুক, যেভাবে হোক লিখতে হয়। ফলে নম্বর হারানো অনিবার্য হয়ে পড়ে।
উত্তরপত্র মূল্যায়নে অসতর্কতাও অকৃতকার্যতার অন্যতম কারণ। নিজে প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় যে, অনেক সময় শিক্ষার্থীর লেখা সুন্দর ও নিখুঁত হলেও পরীক্ষক অসতর্কতার কারণে তা উপেক্ষিত হয়। কখনো ভুলবশত কম নম্বর বা শূন্যও দেওয়া হয়। আবার বৃত্ত ভরাট বা মার্ক স্থানান্তরের ভুলও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, অতিমূল্যায়নের ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। সুতরাং পরীক্ষক প্রশিক্ষণ ও মডারেশন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্যতা নির্মূল করতে হলে প্রথমেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। ইংরেজিকে কেবল পাসের বিষয় নয়, বরং যোগাযোগের ভাষা হিসেবে শেখাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং প্রক্রিয়া। ক্লাসে বক্তৃতানির্ভর পাঠ বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম (যেমন: উরধষড়মঁব, চধরৎ ড়িৎশ, এৎড়ঁঢ় ড়িৎশ এবং চৎবংবহঃধঃরড়হ) বাড়াতে হবে। এছাড়া, স্কিল-বেইজড মূল্যায়ন দরকার।পরীক্ষায় চারটি ভাষা দক্ষতা খরংঃবহরহম,ঝঢ়বধশরহম,জবধফরহম ও ডৎরঃরহম যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি করা। বর্তমান মূল্যায়নে লিসেনিং ও স্পিকিং উপেক্ষিত।
অধিকন্তু, শিক্ষকদের ভাষা শিক্ষণ কৌশল বিষয়ে ধারাবাহিক ও ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণ চালু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা চর্চার পরিবেশ: স্কুল-কলেজে ুঊহমষরংয ঝঢ়বধশরহম তড়হব” চালু করা খুবই প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও প্রশ্নপত্রে রাইটিং অংশে বিকল্প প্রশ্ন রাখা ও প্রয়োগধর্মী রাইটিং অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করি।
পরিশেষে, ইংরেজি শিক্ষায় ব্যর্থতার দায় কেবল শিক্ষার্থীর নয়; শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসনেরও দায় রয়েছে। বাস্তবমুখী পাঠক্রম, যুগোপযোগী মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার্থীুপরীক্ষকের মধ্যে সমন্বিত বোঝাপড়াই ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতা দূর করার একমাত্র পথ। আমরা আশাবাদী, শিক্ষা প্রশাসন বিশেষকরে এনসিটিবি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ননী গোপাল সূত্রধর: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, ইংরেজি, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা।
সম্প্রতি ২০২৫ সনের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগ বিরাজ করছে। প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে সার্বিক ফলাফলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অনেকেই একে কেবল ুইংরেজিতে দুর্বলতা” বলে উল্লেখ করলেও, বাস্তবে এটি একটি গভীর শিক্ষা বৈজ্ঞানিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।এখন প্রশ্ন হলো—কেন শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে ব্যর্থ হচ্ছে? এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় আছে কি? এই রচনায় সেই প্রশ্নের আলোকে কিছু বাস্তব কারণ ও সমাধান প্রস্তাব উপস্থাপন করব।
ইংরেজি ভাষা না বিষয়: বিভ্রান্তির মূল। ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে এটি প্রায়ই কেবল একটি পরীক্ষার বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে তারা ভাষাটির চারটি মৌলিক দক্ষতা—খরংঃবহরহম, ঝঢ়বধশরহম, জবধফরহম, ডৎরঃরহম—এর কোনোটি নিয়মিতভাবে অনুশীলন করে না। কেউ যদি ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে শেখে, তাহলে সে কখনই পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে না; কারণ ভাষা শেখা মানে যোগাযোগের সক্ষমতা অর্জন করা। কিন্তু যারা একে কেবল পরীক্ষার বিষয় হিসেবে মুখস্থ করে, প্রশ্নপত্রে অচেনা টপিক পড়লে তারা সহজেই ব্যর্থ হয়।
ইংলিশ ফোবিয়া একটি মানসিক প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের ুইংলিশ ফোবিয়া” বা ইংরেজি-ভীতি দেখা যায়। ইংরেজিকে কঠিন, জটিল ও ুবিদেশি” ভাষা হিসেবে দেখা হয়। অথচ আধুনিক বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইংরেজি অপরিহার্য। এই ভয় থেকে ভাষাটিকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রবণতা শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বিমুখ করে তুলছে, যা ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
রাইটিং স্কিলে দুর্বলতা ও মুখস্থনির্ভর শিক্ষা। বিশেষ করে মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ইংরেজি রাইটিং অংশে সবচেয়ে অত্যধিক দুর্বল। তারা প্যারাগ্রাফ, লেটার, এপ্লিকেশন, স্টোরি বা কম্পোজিশন মুখস্থ করে প্রস্তুতি নেয়। পরীক্ষায় মুখস্থ টপিক না পড়লে বিভ্রান্ত হয় এবং এলোমেলোভাবে লিখে ফেলে। ফলে উত্তরপত্রের লেখায় অসংখ্য বানান ভুল ব্যাকরণিক ভুল, অপ্রাসঙ্গিক বাক্য, ও অগোছালো উপস্থাপনা পরিলক্ষিত হয়।
এইচএসসিতে ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে প্রায় ১০০ নম্বরই পুরোপুরি ক্রিয়েটিভ রাইটিং অংশ, যেখানে নম্বর তোলা অত্যন্ত কঠিন। সামান্য ভুলও নম্বর কমিয়ে দেয়। তদুপরি, শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণা রয়েছেযে,ুএক বা দুই পৃষ্ঠা লিখলেই পরীক্ষকরা অন্তত ৩/৪নম্বর দেবেনই।” কিন্তু বাস্তবে উত্তরপত্র মূল্যায়নে দেখা যায় উক্ত লেখায় শূন্য পেয়েছে।
ইংরেজি প্রশ্নপত্র কাঠামোর সীমাবদ্ধতা। ইংরেজি প্রশ্নপত্রের কাঠামোতেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। রাইটিং অংশে বিকল্প প্রশ্ন থাকে না—একটি মাত্র প্যারাগ্রাফ, একটি এপ্লিকেশন বা স্টোরি আসে। এতে শিক্ষার্থীরা বাছাইয়ের সুযোগ পায় না। পারুক বা না পারুক, যেভাবে হোক লিখতে হয়। ফলে নম্বর হারানো অনিবার্য হয়ে পড়ে।
উত্তরপত্র মূল্যায়নে অসতর্কতাও অকৃতকার্যতার অন্যতম কারণ। নিজে প্রধান পরীক্ষক ও পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায় যে, অনেক সময় শিক্ষার্থীর লেখা সুন্দর ও নিখুঁত হলেও পরীক্ষক অসতর্কতার কারণে তা উপেক্ষিত হয়। কখনো ভুলবশত কম নম্বর বা শূন্যও দেওয়া হয়। আবার বৃত্ত ভরাট বা মার্ক স্থানান্তরের ভুলও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, অতিমূল্যায়নের ঘটনাও মাঝে মাঝে ঘটে। সুতরাং পরীক্ষক প্রশিক্ষণ ও মডারেশন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
প্রকৃতপক্ষে, ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্যতা নির্মূল করতে হলে প্রথমেই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। ইংরেজিকে কেবল পাসের বিষয় নয়, বরং যোগাযোগের ভাষা হিসেবে শেখাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ইন্টারঅ্যাকটিভ লার্নিং প্রক্রিয়া। ক্লাসে বক্তৃতানির্ভর পাঠ বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রম (যেমন: উরধষড়মঁব, চধরৎ ড়িৎশ, এৎড়ঁঢ় ড়িৎশ এবং চৎবংবহঃধঃরড়হ) বাড়াতে হবে। এছাড়া, স্কিল-বেইজড মূল্যায়ন দরকার।পরীক্ষায় চারটি ভাষা দক্ষতা খরংঃবহরহম,ঝঢ়বধশরহম,জবধফরহম ও ডৎরঃরহম যাচাইয়ের সুযোগ তৈরি করা। বর্তমান মূল্যায়নে লিসেনিং ও স্পিকিং উপেক্ষিত।
অধিকন্তু, শিক্ষকদের ভাষা শিক্ষণ কৌশল বিষয়ে ধারাবাহিক ও ফলপ্রসূ প্রশিক্ষণ চালু করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা চর্চার পরিবেশ: স্কুল-কলেজে ুঊহমষরংয ঝঢ়বধশরহম তড়হব” চালু করা খুবই প্রাসঙ্গিক। এছাড়াও প্রশ্নপত্রে রাইটিং অংশে বিকল্প প্রশ্ন রাখা ও প্রয়োগধর্মী রাইটিং অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে মনে করি।
পরিশেষে, ইংরেজি শিক্ষায় ব্যর্থতার দায় কেবল শিক্ষার্থীর নয়; শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসনেরও দায় রয়েছে। বাস্তবমুখী পাঠক্রম, যুগোপযোগী মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার্থীুপরীক্ষকের মধ্যে সমন্বিত বোঝাপড়াই ইংরেজি বিষয়ে দুর্বলতা দূর করার একমাত্র পথ। আমরা আশাবাদী, শিক্ষা প্রশাসন বিশেষকরে এনসিটিবি দ্রুত এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
ননী গোপাল সূত্রধর: জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, ইংরেজি, শশীদল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আবু তাহের কলেজ, কুমিল্লা।