রুবাইয়া সুলতানা
প্রতিদিন গ্রামের শতশত শিশুরা স্কুলের পথে যায়; কেউ ফিরছে স্বপ্ন নিয়ে, কেউ আবার স্কুলই ছাড়ছে মাঝপথে। এই দ্বৈরথেই নিহিত বাংলাদেশের শিক্ষার বড় সংকট।
বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বৈপরীত্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হার শতভাগের কাছাকাছি, মেয়েদের শিক্ষায় এসেছে অগ্রগতি; অন্যদিকে গ্রামীণ স্কুলগুলোতে ঝরে পড়ার হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি। শিক্ষা যখন জাতির মেরুদণ্ড, তখন সেই মেরুদণ্ড গ্রামীণ বাংলাদেশে ভেঙে পড়ছে।
গবেষণা বলছে, ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপস্থিতি বেশি। গ্রামীণ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে মেয়েরা সংখ্যায় এগিয়ে, ফলাফলেও ভালো করছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অগ্রগতি কতটা টেকসই? কিশোরী বয়সে বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা হঠাৎ থেমে যায়। মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক। অর্থাৎ তারা শুরুতে এগিয়ে থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
ছেলেরা তুলনামূলকভাবে কম ভর্তি হলেও যারা ভর্তি হয়, তাদের অনেকেই দারিদ্র্যের চাপে শ্রমে নিযুক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের শিক্ষাজীবন মাঝপথে থেমে যাচ্ছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, গ্রামীণ জনশক্তি কখনো দক্ষ হয়ে উঠবে না।
মূল কারণগুলো সবারই জানা: দারিদ্র্য, পরিবারের অজ্ঞতা, স্কুলে অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, শিক্ষক সংকট, আর বাল্যবিবাহ। প্রশ্ন হলো, যা আমরা বহুদিন ধরে জানি, তা সমাধানে কেন কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না?
ঝরে পড়ার এই প্রবণতা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, জাতীয় বিপর্যয়ও বটে। শিক্ষাহীন জনগোষ্ঠী দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে না; তারা দারিদ্র্যের চক্রে আটকে থাকে, উৎপাদনশীলতা কমে যায়, সমাজে বৈষম্য বাড়ে। সরকারের অর্জনের বাহারি পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা পায়, কিন্তু বাস্তব গ্রামে স্কুল ফাঁকা হয়ে যাওয়া অস্বীকার করার উপায় নেই।
সমাধান স্পষ্ট: দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য কার্যকর স্টাইপেন্ড, গ্রামীণ স্কুলে অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষা চালু, এবং সবচেয়ে জরুরি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ। এগুলো ছাড়া অগ্রগতি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
আজকের শিশুই আগামী দিনের বাংলাদেশ। কিন্তু যদি মেয়েরা সংখ্যায় বেশি হয়েও শিক্ষাজীবনের মাঝপথে ঝরে পড়ে, আর ছেলেরা দারিদ্র্যের চাপে স্কুল ছাড়ে, তবে সেই বাংলাদেশ কেমন হবে তা ভেবে দেখার সময় এখনই। নীতিনির্ধারকরা যদি সত্যিই জবাবদিহি করতে চান, ঝরে পড়ার এই সংকট মোকাবিলা ছাড়া উপায় নেই।
রুবাইয়া সুলতানা: শিক্ষক, হাফিজ আহমেদ উচ্চবিদ্যালয়, একবাড়িয়া বরুড়া, কুমিল্লা।
প্রতিদিন গ্রামের শতশত শিশুরা স্কুলের পথে যায়; কেউ ফিরছে স্বপ্ন নিয়ে, কেউ আবার স্কুলই ছাড়ছে মাঝপথে। এই দ্বৈরথেই নিহিত বাংলাদেশের শিক্ষার বড় সংকট।
বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বৈপরীত্যের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হার শতভাগের কাছাকাছি, মেয়েদের শিক্ষায় এসেছে অগ্রগতি; অন্যদিকে গ্রামীণ স্কুলগুলোতে ঝরে পড়ার হার অস্বাভাবিকভাবে বেশি। শিক্ষা যখন জাতির মেরুদণ্ড, তখন সেই মেরুদণ্ড গ্রামীণ বাংলাদেশে ভেঙে পড়ছে।
গবেষণা বলছে, ছেলে শিক্ষার্থীর তুলনায় মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও উপস্থিতি বেশি। গ্রামীণ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে মেয়েরা সংখ্যায় এগিয়ে, ফলাফলেও ভালো করছে। এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক অর্জন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অগ্রগতি কতটা টেকসই? কিশোরী বয়সে বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েদের পড়াশোনা হঠাৎ থেমে যায়। মাধ্যমিক স্তরে পৌঁছে মেয়েদের ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক। অর্থাৎ তারা শুরুতে এগিয়ে থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
ছেলেরা তুলনামূলকভাবে কম ভর্তি হলেও যারা ভর্তি হয়, তাদের অনেকেই দারিদ্র্যের চাপে শ্রমে নিযুক্ত হয়ে পড়ে। এভাবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের শিক্ষাজীবন মাঝপথে থেমে যাচ্ছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, গ্রামীণ জনশক্তি কখনো দক্ষ হয়ে উঠবে না।
মূল কারণগুলো সবারই জানা: দারিদ্র্য, পরিবারের অজ্ঞতা, স্কুলে অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা, শিক্ষক সংকট, আর বাল্যবিবাহ। প্রশ্ন হলো, যা আমরা বহুদিন ধরে জানি, তা সমাধানে কেন কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না?
ঝরে পড়ার এই প্রবণতা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, জাতীয় বিপর্যয়ও বটে। শিক্ষাহীন জনগোষ্ঠী দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত হতে পারে না; তারা দারিদ্র্যের চক্রে আটকে থাকে, উৎপাদনশীলতা কমে যায়, সমাজে বৈষম্য বাড়ে। সরকারের অর্জনের বাহারি পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা পায়, কিন্তু বাস্তব গ্রামে স্কুল ফাঁকা হয়ে যাওয়া অস্বীকার করার উপায় নেই।
সমাধান স্পষ্ট: দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের জন্য কার্যকর স্টাইপেন্ড, গ্রামীণ স্কুলে অবকাঠামো উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, প্রযুক্তিনির্ভর ও কর্মমুখী শিক্ষা চালু, এবং সবচেয়ে জরুরি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ। এগুলো ছাড়া অগ্রগতি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
আজকের শিশুই আগামী দিনের বাংলাদেশ। কিন্তু যদি মেয়েরা সংখ্যায় বেশি হয়েও শিক্ষাজীবনের মাঝপথে ঝরে পড়ে, আর ছেলেরা দারিদ্র্যের চাপে স্কুল ছাড়ে, তবে সেই বাংলাদেশ কেমন হবে তা ভেবে দেখার সময় এখনই। নীতিনির্ধারকরা যদি সত্যিই জবাবদিহি করতে চান, ঝরে পড়ার এই সংকট মোকাবিলা ছাড়া উপায় নেই।
রুবাইয়া সুলতানা: শিক্ষক, হাফিজ আহমেদ উচ্চবিদ্যালয়, একবাড়িয়া বরুড়া, কুমিল্লা।