অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
অতিরিক্ত তাপ ও আদ্রতায় সাধারণত বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশংকা অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই ঋতু অনুসারে শিশুদের যত্নের ধরণও পরিবর্তন করতে হবে। গ্রীষ্মকালে শিশুদের সুস্থ রাখতে ঘরোয়া প্রস্তুতি প্রয়োজন।
প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৩০ সেলসিয়াসের উপর থাকছে। এ সময় খাবার সেলাইন, থার্মোমিটার, পানির বোতল, তোয়ালে, রিচার্জেবল ফ্যানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
গরমে ভারী পোষাক পরলে অতিরিক্ত ঘাম হয়, যা থেকে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই হালকা, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড়ের পোষাক পরাতে হবে।
এ সময়ে ভাইরাস সম্ভাবনা বেশী। ভাইরাস জ্বরে সাধারণত এন্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। জ্বরের জন্য পেরাসিটামল দেয়া ভালো। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের রেনু যা এলার্জেন হিসাবে কাজ করে। এ সময় ধুলোবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এ সকল কারণে এলার্জিক রাইনাইটিস, হাপানী ও অন্যান্য এলার্জি জাতীয় রোগের প্রকোপ বাড়ে যা চিকিৎসকের পরামর্শের দাবী রাখে।
পানি শুন্যতা দেখা দিলে শিশুর শরীর কিছুক্ষণ পর পর বিশুদ্ধ পানি তরল খাবার ও মৌসুমি ফলের রস খাইতে দিতে হবে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শিশুরা কোল্ড ড্রিংক্স, ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম বেশি খেতে পছন্দ করে যার পরিমাণটা নিয়ন্ত্রণ করা মায়েদের কাজ। বড় শিশুদের প্রতিও নজর বাড়াতে হবে, তারা সুযোগ পেলেই তৃষ্ণা নিবারণে রাস্তার পাশের আইসক্রিম অথবা জুস পান করে, যা ভাইরাসের ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের প্রধান কারণ।
ছোট শিশুরা সবসময় তাদের পছন্দ মাফিক খাবার খেয়ে থাকে। অনেক শিশুই ফল ও সবজি খেতে চায় না। এজন্য ফল ও সবজি তাদের সামনে আকর্ষনীয়ভাবে পরিবেশন করতে হয়। এগুলোতে আছে ভিটামিন, খনিজ লবন, পানি ও ফাইট নিউট্রিয়েন্ট। সকাল ও বিকালের নাস্তায় হালকা খাবারের সঙ্গে আস্ত ফল খেতে দিলে ভাল হয়। যদি কখনো ফল সহজলভ্য না হয় তাহলে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, পেঁপে, ব্রকলি ইত্যাদি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দিতে পারেন। অথবা সবজি দিয়ে চপ বানিয়েও দেয়া যায়।
ছয়মাসের কমবয়সী শিশুদের ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়াবেন। তাদেরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয়মাসের বেশি বয়সী শিশুদের দুই তিন ঘন্টা পর পর পানি পান করানো উচিত। গোসলের পর শিশুর মাথা ভালভাবে শুকাতে হবে যেন চুল ভেজা না থাকে। ভেজা চুলের কারণে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে এবং এভাবে জ্বর বা কাশিও হতে পারে।
বিভিন্ন রং এর খাবারসমূহ যেমন কমলা রঙ্গের —মিষ্টি কুমড়া, গাজর, মালটা, কমলালেবু, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। বেগুনি রঙ্গের —বেগুনি বাঁধাকপি, বেগুনি বরবটি, বেগুন আঙ্গুর ইত্যাদি। লালরঙ্গের — ক্যাপসিকাম, টমেটো, স্ট্রোবেরি, চেরি ইত্যাদি মেজেন্ডা রঙ্গের —লালশাক, ড্রাগন, বিট, তরমুজ ইত্যাদি। হলুদ রঙ্গের —পাকা কলা, পাকা আনারস, মাখন, ঘি ইত্যাদি। সবুজ রঙ্গের —শাকসবজি, মটরশুটি, বরবটি, সীম, আপেল ইত্যাদি। সাদা রঙ্গের —ভাত, চিড়া, মুড়ি, দুধ, দই সাগু, পনির, নারিকেল ইত্যাদি। রাঙ্গানো খাদ্যে শিশুদের আকর্ষণ অনেক বেশী। তাদের প্লেটে বিভিন্ন রঙ্গের খাবার পরিবেশন করবেন, তারা খুশী মনে খেয়ে ফেলবে।
এ সময় বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় ভাইরাস সংক্রমণে সর্দি—কাশি ও নিউমোনিয়া হতে পারে। এতে নাক বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের বেঘাত ঘটায়, সেক্ষেত্রে নাকে ড্রপ দিতে হবে। কাশি হলে লেবুর রস, তুলসি পাতার রস ও আদা নিয়ে চা খাওয়ালে শিশু অনেকটা আরামবোধ করবে। ঘরোয়া চিকিৎসায় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কফ, সর্দি, হলুদ বা সবুজ ভাব হলে এবং জ্বর না কমলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
দিনের গরম সময়ে শিশুদের বাহিরে না নেয়াই ভাল। বাহিরে বের হওয়ার সময় মেডিকেটেড সানস্ক্রিন লাগিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকাই উত্তম। তাপদাহ থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে টুপি পরাতে হবে। বাহিরে বের হলে আবশ্যই ছাতা ব্যবহার প্রয়োজনীয়। সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে দৈনিক ২/৩ বার শিশুর সমগ্র শরীর মুছে দিতে হবে।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
অতিরিক্ত তাপ ও আদ্রতায় সাধারণত বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশংকা অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই ঋতু অনুসারে শিশুদের যত্নের ধরণও পরিবর্তন করতে হবে। গ্রীষ্মকালে শিশুদের সুস্থ রাখতে ঘরোয়া প্রস্তুতি প্রয়োজন।
প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৩০ সেলসিয়াসের উপর থাকছে। এ সময় খাবার সেলাইন, থার্মোমিটার, পানির বোতল, তোয়ালে, রিচার্জেবল ফ্যানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
গরমে ভারী পোষাক পরলে অতিরিক্ত ঘাম হয়, যা থেকে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই হালকা, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড়ের পোষাক পরাতে হবে।
এ সময়ে ভাইরাস সম্ভাবনা বেশী। ভাইরাস জ্বরে সাধারণত এন্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। জ্বরের জন্য পেরাসিটামল দেয়া ভালো। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের রেনু যা এলার্জেন হিসাবে কাজ করে। এ সময় ধুলোবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এ সকল কারণে এলার্জিক রাইনাইটিস, হাপানী ও অন্যান্য এলার্জি জাতীয় রোগের প্রকোপ বাড়ে যা চিকিৎসকের পরামর্শের দাবী রাখে।
পানি শুন্যতা দেখা দিলে শিশুর শরীর কিছুক্ষণ পর পর বিশুদ্ধ পানি তরল খাবার ও মৌসুমি ফলের রস খাইতে দিতে হবে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শিশুরা কোল্ড ড্রিংক্স, ফ্রিজের পানি, আইসক্রিম বেশি খেতে পছন্দ করে যার পরিমাণটা নিয়ন্ত্রণ করা মায়েদের কাজ। বড় শিশুদের প্রতিও নজর বাড়াতে হবে, তারা সুযোগ পেলেই তৃষ্ণা নিবারণে রাস্তার পাশের আইসক্রিম অথবা জুস পান করে, যা ভাইরাসের ডায়রিয়া ও টাইফয়েডের প্রধান কারণ।
ছোট শিশুরা সবসময় তাদের পছন্দ মাফিক খাবার খেয়ে থাকে। অনেক শিশুই ফল ও সবজি খেতে চায় না। এজন্য ফল ও সবজি তাদের সামনে আকর্ষনীয়ভাবে পরিবেশন করতে হয়। এগুলোতে আছে ভিটামিন, খনিজ লবন, পানি ও ফাইট নিউট্রিয়েন্ট। সকাল ও বিকালের নাস্তায় হালকা খাবারের সঙ্গে আস্ত ফল খেতে দিলে ভাল হয়। যদি কখনো ফল সহজলভ্য না হয় তাহলে আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, পেঁপে, ব্রকলি ইত্যাদি দিয়ে স্যুপ বানিয়ে দিতে পারেন। অথবা সবজি দিয়ে চপ বানিয়েও দেয়া যায়।
ছয়মাসের কমবয়সী শিশুদের ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়াবেন। তাদেরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয়মাসের বেশি বয়সী শিশুদের দুই তিন ঘন্টা পর পর পানি পান করানো উচিত। গোসলের পর শিশুর মাথা ভালভাবে শুকাতে হবে যেন চুল ভেজা না থাকে। ভেজা চুলের কারণে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে এবং এভাবে জ্বর বা কাশিও হতে পারে।
বিভিন্ন রং এর খাবারসমূহ যেমন কমলা রঙ্গের —মিষ্টি কুমড়া, গাজর, মালটা, কমলালেবু, পাকা আম, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। বেগুনি রঙ্গের —বেগুনি বাঁধাকপি, বেগুনি বরবটি, বেগুন আঙ্গুর ইত্যাদি। লালরঙ্গের — ক্যাপসিকাম, টমেটো, স্ট্রোবেরি, চেরি ইত্যাদি মেজেন্ডা রঙ্গের —লালশাক, ড্রাগন, বিট, তরমুজ ইত্যাদি। হলুদ রঙ্গের —পাকা কলা, পাকা আনারস, মাখন, ঘি ইত্যাদি। সবুজ রঙ্গের —শাকসবজি, মটরশুটি, বরবটি, সীম, আপেল ইত্যাদি। সাদা রঙ্গের —ভাত, চিড়া, মুড়ি, দুধ, দই সাগু, পনির, নারিকেল ইত্যাদি। রাঙ্গানো খাদ্যে শিশুদের আকর্ষণ অনেক বেশী। তাদের প্লেটে বিভিন্ন রঙ্গের খাবার পরিবেশন করবেন, তারা খুশী মনে খেয়ে ফেলবে।
এ সময় বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় ভাইরাস সংক্রমণে সর্দি—কাশি ও নিউমোনিয়া হতে পারে। এতে নাক বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের বেঘাত ঘটায়, সেক্ষেত্রে নাকে ড্রপ দিতে হবে। কাশি হলে লেবুর রস, তুলসি পাতার রস ও আদা নিয়ে চা খাওয়ালে শিশু অনেকটা আরামবোধ করবে। ঘরোয়া চিকিৎসায় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কফ, সর্দি, হলুদ বা সবুজ ভাব হলে এবং জ্বর না কমলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
দিনের গরম সময়ে শিশুদের বাহিরে না নেয়াই ভাল। বাহিরে বের হওয়ার সময় মেডিকেটেড সানস্ক্রিন লাগিয়ে ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকাই উত্তম। তাপদাহ থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে টুপি পরাতে হবে। বাহিরে বের হলে আবশ্যই ছাতা ব্যবহার প্রয়োজনীয়। সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে সুতি কাপড় ভিজিয়ে দৈনিক ২/৩ বার শিশুর সমগ্র শরীর মুছে দিতে হবে।
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ