ফাতেমা শওকত জাহান রোজী
স্কুলশিক্ষক মৌলভী আবদুল গনির কন্যা রাশেদা বেগম, জীবনের শুরুতে মাধ্যমিকে পড়াকালীন সময়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তরুণ বয়সে পরপর তিন সন্তানের মৃত্যুর কঠিন অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীর এক শোকের সাগরে ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু সেই শোককে তিনি পরিণত করেন মমতায়, প্রতিটি বেঁচে থাকা সন্তানকে ঘিরে গড়ে তোলেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক পরিসর।
একটি একটি করে পাঁচ সন্তান জন্ম দিয়ে যখন তিনি সংসারকে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড় করাতে শুরু করেন, তখনই জীবনের আরেক কঠিন ধাক্কা আসে—১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে স্বামী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার আকস্মিক মৃত্যু। স্বামীর অভাব, সমাজের চাপ, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা—কোনোটিই তাঁকে দমাতে পারেনি। সন্তানদের আঁকড়ে ধরে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন তাদের প্রেরণা, আশ্রয় ও পথপ্রদর্শক।
রাশেদা বেগমের সেই নিরলস সংগ্রাম এবং সন্তানদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রম মিলিয়ে আজ যেই পরিবার গড়ে উঠেছে, তা কেবল একটি পরিবারের নয়—এটি এক পিতার অপূর্ণ স্বপ্নপূরণ এবং এক মায়ের মমতা-ভরা স্থিতধী যাত্রার নিঃশব্দ দলিল।
সন্তানদের কথা:
প্রথম সন্তান, এন এম কামরুল আলম ভূইয়া, বিএসএস ডিগ্রিধারী এবং মেসার্স ভূইয়া ব্রাদার্সের প্রোপ্রাইটর। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরেন তিনিই। সততা আর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত করেন ব্যবসায়িক ভিত। সহধর্মিণী আছিয়া আক্তার উর্মি, বিএসএস (সম্মান), একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং পরিবারে শান্তি ও শৃঙ্খলার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দ্বিতীয় সন্তান, ফাতেমা শওকত জাহান রোজী—একজন মেধাবী, আত্মপ্রত্যয়ী নারী, যিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে বিএসএস (সম্মান) এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন সিনিয়র উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত, দেশে বিদেশে সুনামের সাথে নিজ কর্মের ছাপ রেখে যাচ্ছেন। তাঁর পেশাগত জীবন যেমন গৌরবময়, ছাত্রজীবনও ছিল ততটাই বর্ণাঢ্য—জাতীয় পর্যায়ে বিতার্কিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন, ছিলেন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অধিনায়ক।
একজন নারী হিসেবে তিনি নিজের যোগ্যতায় যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, তা কেবল পরিবার নয়—সমাজের জন্যও এক অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনসঙ্গী কে এম মোসাদ্দেকুল হক, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
তৃতীয় সন্তান, এন এম ইফতেখারুল আলম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আন্তর্জাতিক এন্টি-করাপশন একাডেমি (অস্ট্রিয়া) থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে কানাডায় প্রফেশনাল লিডারশিপে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং প্রোলিগ্যাল-এর হেড অব চেম্বারস। গ্রামীণফোন, বিকাশ ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং-এ মাস্টার্স করে পেশাগত জীবনে সক্রিয়।
চতুর্থ সন্তান, এন এম আফতাবুল আলম ভূইয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিম্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে বর্তমানে ফ্রান্সভিত্তিক হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল-এ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। কিন ও লাইটার ইউথ ফাউন্ডেশন-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। সহধর্মিণী নুসরাত জাহান মুন, বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত।
পঞ্চম সন্তান, এন এম মাহমুদুল আলম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে বি.ফার্ম ও এম.ফার্ম ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়াতে পিএইচডি করছেন। তিনি আমেরিকার এথেন্স শহরের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী সানজিদা ইসলাম, প্রকৌশলী এবং ঢাবি থেকে এমবিএ শেষ করে পেশাজীবনে যুক্ত।
রাশেদা বেগমের মতো একজন মা—যিনি ত্যাগে, সাহসে আর অসীম ভালোবাসায় সন্তানদের আলোকিত করেছেন—তিনি শুধু একটি পরিবারের কেন্দ্র নন, বরং বাংলার হাজারো সংগ্রামী মায়ের প্রতিচ্ছবি।
ফাতেমা শওকত জাহান রোজী, সিনিয়র উপ পরিচালক, পার্টনার্স ইন হেল্থ এন্ড ডেভেলপসেন্ট
স্কুলশিক্ষক মৌলভী আবদুল গনির কন্যা রাশেদা বেগম, জীবনের শুরুতে মাধ্যমিকে পড়াকালীন সময়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তরুণ বয়সে পরপর তিন সন্তানের মৃত্যুর কঠিন অভিজ্ঞতা তাঁকে গভীর এক শোকের সাগরে ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু সেই শোককে তিনি পরিণত করেন মমতায়, প্রতিটি বেঁচে থাকা সন্তানকে ঘিরে গড়ে তোলেন নিঃস্বার্থ ভালোবাসার এক পরিসর।
একটি একটি করে পাঁচ সন্তান জন্ম দিয়ে যখন তিনি সংসারকে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড় করাতে শুরু করেন, তখনই জীবনের আরেক কঠিন ধাক্কা আসে—১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে স্বামী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার আকস্মিক মৃত্যু। স্বামীর অভাব, সমাজের চাপ, অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা—কোনোটিই তাঁকে দমাতে পারেনি। সন্তানদের আঁকড়ে ধরে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন তাদের প্রেরণা, আশ্রয় ও পথপ্রদর্শক।
রাশেদা বেগমের সেই নিরলস সংগ্রাম এবং সন্তানদের নিষ্ঠা ও পরিশ্রম মিলিয়ে আজ যেই পরিবার গড়ে উঠেছে, তা কেবল একটি পরিবারের নয়—এটি এক পিতার অপূর্ণ স্বপ্নপূরণ এবং এক মায়ের মমতা-ভরা স্থিতধী যাত্রার নিঃশব্দ দলিল।
সন্তানদের কথা:
প্রথম সন্তান, এন এম কামরুল আলম ভূইয়া, বিএসএস ডিগ্রিধারী এবং মেসার্স ভূইয়া ব্রাদার্সের প্রোপ্রাইটর। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরেন তিনিই। সততা আর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠিত করেন ব্যবসায়িক ভিত। সহধর্মিণী আছিয়া আক্তার উর্মি, বিএসএস (সম্মান), একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন এবং পরিবারে শান্তি ও শৃঙ্খলার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
দ্বিতীয় সন্তান, ফাতেমা শওকত জাহান রোজী—একজন মেধাবী, আত্মপ্রত্যয়ী নারী, যিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে বিএসএস (সম্মান) এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি একজন সিনিয়র উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত, দেশে বিদেশে সুনামের সাথে নিজ কর্মের ছাপ রেখে যাচ্ছেন। তাঁর পেশাগত জীবন যেমন গৌরবময়, ছাত্রজীবনও ছিল ততটাই বর্ণাঢ্য—জাতীয় পর্যায়ে বিতার্কিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন, ছিলেন আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অধিনায়ক।
একজন নারী হিসেবে তিনি নিজের যোগ্যতায় যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, তা কেবল পরিবার নয়—সমাজের জন্যও এক অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনসঙ্গী কে এম মোসাদ্দেকুল হক, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনে সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
তৃতীয় সন্তান, এন এম ইফতেখারুল আলম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে আন্তর্জাতিক এন্টি-করাপশন একাডেমি (অস্ট্রিয়া) থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বর্তমানে কানাডায় প্রফেশনাল লিডারশিপে উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত। তিনি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী এবং প্রোলিগ্যাল-এর হেড অব চেম্বারস। গ্রামীণফোন, বিকাশ ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন মার্চেন্ডাইজিং-এ মাস্টার্স করে পেশাগত জীবনে সক্রিয়।
চতুর্থ সন্তান, এন এম আফতাবুল আলম ভূইয়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিম্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে বর্তমানে ফ্রান্সভিত্তিক হ্যান্ডিক্যাপ ইন্টারন্যাশনাল-এ সাপ্লাই চেইন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। কিন ও লাইটার ইউথ ফাউন্ডেশন-এর মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। সহধর্মিণী নুসরাত জাহান মুন, বিবিএ ও এমবিএ ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত।
পঞ্চম সন্তান, এন এম মাহমুদুল আলম ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ থেকে বি.ফার্ম ও এম.ফার্ম ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়াতে পিএইচডি করছেন। তিনি আমেরিকার এথেন্স শহরের স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী সানজিদা ইসলাম, প্রকৌশলী এবং ঢাবি থেকে এমবিএ শেষ করে পেশাজীবনে যুক্ত।
রাশেদা বেগমের মতো একজন মা—যিনি ত্যাগে, সাহসে আর অসীম ভালোবাসায় সন্তানদের আলোকিত করেছেন—তিনি শুধু একটি পরিবারের কেন্দ্র নন, বরং বাংলার হাজারো সংগ্রামী মায়ের প্রতিচ্ছবি।
ফাতেমা শওকত জাহান রোজী, সিনিয়র উপ পরিচালক, পার্টনার্স ইন হেল্থ এন্ড ডেভেলপসেন্ট