সম্পাদকীয়

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিরপরাধ ইলেকট্রিশিয়ান আনোয়ার হোসেন বাবুর নির্মম মৃত্যু আরেকটি ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের-দেশজুড়ে ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাস। ‘চোর’ সন্দেহে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, কিংবা কোনো গুজবের ভিত্তিতে মানুষকে শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা এখন সমাজে এক বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। এটি শুধু একটি অপরাধ নয়; এটি আইন, ন্যায়বিচার ও সভ্য সমাজব্যবস্থার পরিপূর্ণ অস্বীকৃতি। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে দেশে অন্তত ২১৬ জন নাগরিক গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৭৫ জন। সাম্প্রতিক সময়েই গাইবান্ধা, ঢাকা, ভোলা-বিভিন্ন স্থানে এমন বর্বরতার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ বলছে, মব সহিংসতা রোধে চেষ্টা চলছে, তবে একার পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এই বক্তব্য আংশিক সত্য-কিন্তু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত হতে পারে না। কারণ আইনের প্রয়োগ ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশেরই সাংবিধানিক দায়িত্ব। সমাজবিজ্ঞানীরা যথার্থই বলেছেন, এ ধরনের মব আচরণ কেবল আকস্মিক নয়, বরং দীর্ঘদিনের আইনহীনতা, বিচারহীনতা ও সামাজিক অসহিষ্ণুতার ফসল। কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত, বিচার ও শাস্তির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি, অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক নাগরিক মনে করেন-বিচার পাবেন না; তাই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াই যেন একমাত্র উপায়। এই মানসিকতা সামাজিক অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণ। আরও উদ্বেগের বিষয়, অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যক্তিগত শত্রুতা বা গোষ্ঠীগত সংঘাত ‘চোর’ বা ‘অপরাধী’ তকমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধী যেমন আড়ালে থেকে যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের আইনের ওপর আস্থা আরও দুর্বল হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে নাগরিক নিরাপত্তা বিপন্ন হবে, সমাজে ভয় ও প্রতিশোধের সংস্কৃতি স্থায়ী রূপ নেবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ-আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। প্রত্যেকটি গণপিটুনির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে কেউ মনে না করে আইন নিজের হাতে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে নাগরিক সচেতনতা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় প্রশাসনকে মিথ্যা গুজব প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। আনোয়ার হোসেন বাবুর মতো নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু যেন আর কোনো মায়ের বুক না ভাঙে-এই দায়িত্ব কেবল পুলিশের নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের সকলের। আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনো ন্যায় নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতি, মানবতার প্রতি এক গভীর বিশ্বাসঘাতকতা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিরপরাধ ইলেকট্রিশিয়ান আনোয়ার হোসেন বাবুর নির্মম মৃত্যু আরেকটি ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে আমাদের-দেশজুড়ে ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে গণপিটুনি বা মব সন্ত্রাস। ‘চোর’ সন্দেহে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা, কিংবা কোনো গুজবের ভিত্তিতে মানুষকে শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা এখন সমাজে এক বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। এটি শুধু একটি অপরাধ নয়; এটি আইন, ন্যায়বিচার ও সভ্য সমাজব্যবস্থার পরিপূর্ণ অস্বীকৃতি। মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মাসে দেশে অন্তত ২১৬ জন নাগরিক গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৭৫ জন। সাম্প্রতিক সময়েই গাইবান্ধা, ঢাকা, ভোলা-বিভিন্ন স্থানে এমন বর্বরতার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। পুলিশ বলছে, মব সহিংসতা রোধে চেষ্টা চলছে, তবে একার পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এই বক্তব্য আংশিক সত্য-কিন্তু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত হতে পারে না। কারণ আইনের প্রয়োগ ও নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা পুলিশেরই সাংবিধানিক দায়িত্ব। সমাজবিজ্ঞানীরা যথার্থই বলেছেন, এ ধরনের মব আচরণ কেবল আকস্মিক নয়, বরং দীর্ঘদিনের আইনহীনতা, বিচারহীনতা ও সামাজিক অসহিষ্ণুতার ফসল। কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত, বিচার ও শাস্তির দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি, অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেক নাগরিক মনে করেন-বিচার পাবেন না; তাই নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াই যেন একমাত্র উপায়। এই মানসিকতা সামাজিক অস্থিরতা ও নৈতিক অবক্ষয়ের লক্ষণ। আরও উদ্বেগের বিষয়, অনেক সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, ব্যক্তিগত শত্রুতা বা গোষ্ঠীগত সংঘাত ‘চোর’ বা ‘অপরাধী’ তকমা দিয়ে নিরীহ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধী যেমন আড়ালে থেকে যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের আইনের ওপর আস্থা আরও দুর্বল হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে নাগরিক নিরাপত্তা বিপন্ন হবে, সমাজে ভয় ও প্রতিশোধের সংস্কৃতি স্থায়ী রূপ নেবে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ-আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা। প্রত্যেকটি গণপিটুনির ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে কেউ মনে না করে আইন নিজের হাতে নেওয়া যায়। একই সঙ্গে নাগরিক সচেতনতা, গণমাধ্যম ও স্থানীয় প্রশাসনকে মিথ্যা গুজব প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। আনোয়ার হোসেন বাবুর মতো নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু যেন আর কোনো মায়ের বুক না ভাঙে-এই দায়িত্ব কেবল পুলিশের নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের সকলের। আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনো ন্যায় নয়; এটি রাষ্ট্রের প্রতি, মানবতার প্রতি এক গভীর বিশ্বাসঘাতকতা।