আগামী পৃথিবী হচ্ছে দক্ষতা নির্ভর পৃথিবী

মো. দুলাল হোসেন
Thumbnail image

আজ যারা কষ্ট করে মাটির দিকে তাকিয়ে, বিভিন্ন ঘাত, প্রতিঘাত সহ্য করে শিক্ষা অর্জন করছে তারাই বয়স ত্রিশের পর কিছু না কিছু একটা করে চলতে পারছে। পাশাপাশি শিক্ষা ছাড়া যে মানুষগুলো ইচ্ছেমত মজা করছে সে মানুষগুলো বয়স ত্রিশের পর দিনকে দিন নি:স্ব হচ্ছে। এর কাছে ওর কাছে হাত পাতবে, সাহায্য চাইবে, অনুশোচনা করবে।

শিক্ষা বলতে কেবল বই, স্কুল এবং সার্টিফিকেট অর্জনকে বলছি না। দক্ষতা অর্জনে মনোযোগী হওয়া দরকার। আগামী পৃথিবী হচ্ছে দক্ষতা নির্ভর পৃথিবী। জীবন ও জীবিকার জন্য যেকোনো এক অথবা একাধিক বিষয়ে দক্ষ হতেই হবে। একাধিক ভাষা জানতে হবে। ছাত্রজীবনে পড়াশোনা বাদ দিয়ে উৎসব-উল্লাস করে কাটালে পরিণামে দুঃখ ভোগ করতেই হবে। যদি বাপ- দাদার উত্তরাধিকারসূত্রে স্বচ্ছল সন্তান না হও, তবে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা উচিত তার কোনো বিকল্প নেই।

“জীবনে যত ঝড় আসুক, পড়াশোনা শেষ করতেই হবে”- এমন প্রতিজ্ঞা মধ্যবিত্তদের হওয়া উচিত। বিশ্বের কত দেশের তরুণ-তরুণীরা হাজারো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে-বিদেশে ছুটছে। অথচ আমাদের দেশে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ যতটুকুই আছে প্রায় দুয়ারে দুয়ারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিক সেবায় নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং শিক্ষা উপকরণে বিশেষ কোনো অপ্রতুলতা নেই।

দুঃখ শুধু, শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম। অভিভাবককে লেগে থাকতে হয়। আজকালকার শিক্ষার্থীদের দিয়ে বড় ভাই, ছোট ভাই, সমাজ, রাষ্ট্রের সব কাজ করানো যায়, কেবল পড়াশোনা বাদে।

ক্লাসে উপস্থিতি নেই। পরীক্ষার খাতা পড়ে নম্বর দিলে পাশ করানো কঠিন। হোমওয়ার্ক বা একটু কড়া শিক্ষক হলে সে শিক্ষক অপ্রিয় হয়ে ওঠে।

যাদের অভিভাবক সচেতন, শুধু তাদের কতিপয় সন্তানেরা ভালো করছে। বাকিদের অবস্থা গতানুগতিক-কেবল সার্টিফিকেট সর্বস্ব পড়াশোনা। এহেন পড়াশোনা জাতিকে হাজার বছর পিছিয়ে দিচ্ছে।

আজ যারা নামকাওয়াস্তে পড়াশোনা করছে, তাদের সামনের দুর্দিন তারা অনুধাবন করতে পারছে না। ঠিকমতো পড়াশোনা না করলে সার্টিফিকেট গলার কাঁটা হবে।

কাজেই মধ্যবিত্ত থেকে উত্তরণের জন্য দক্ষতানির্ভর পড়াশোনা করতে হবে। আর কিছু না হোক, শিক্ষার নিজস্ব মূল্য আছে। পরিণামে যদি ধ্বংসও থাকে, তবুও তা যদি শিক্ষিতের পন্থানুসরণে হয়-তাহলেও তা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

পড়াশোনায় মনোযোগী হও। রোজ নিজেকে অতিক্রম করো। পড়াশোনা কোনোদিন কাউকে ন্যায্যতা থেকে বঞ্চিত করেনি। পড়াশোনায় ভালো না হলে সারা দুনিয়া তোমাকে লজ্জা দেবে।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে স্বাক্ষর না হলে রোজ পিছিয়ে পড়বে। নিজেকে আবিষ্কারের জন্য, জাত চেনানোর জন্য বই মানুষকে পথ দেখায়। যারা তোমায় পড়তে বলে, রোজ নতুন কিছু শিখতে বলে-তাদের কথা ও ভাষা এই সময়ে তিক্ত মনে হতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে আফসোস করবে।

মাত্র কয়েকটি বছর জ্ঞানসাধনায় ব্যয় করলে সারাজীবন সুখের মধ্যে কাটানো সম্ভব। জ্ঞানের নিজস্ব আলো আছে। সকল সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণের জন্য জ্ঞান পথ সৃষ্টি করে।

শিক্ষার্থীরা, পড়ো, পড়ো এবং পড়ো। শিক্ষা অর্জনে ‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন’ সূত্রে দশটি বছর বিনিয়োগ করো। বাকি সত্তর বছর সেটার ফল পাবে। উত্তরাধিকারের জন্য রেখে যেতে পারবে সোনালি দিন।

তুমি অন্ধকারে থেকে এই সমাজের কাউকে আলোর সন্ধান দিতে পারবে না। অথচ প্রত্যেকের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে হওয়ার সুযোগ আছে।

শিক্ষা সেই সুযোগ সবার সামনে এনে দিয়েছে। কেউ হাত বাড়িয়ে নিয়েছে, কেউ পিঠ দেখিয়ে অবহেলা করেছে। কে জিতেছে আর কে ঠকেছে-ইতিহাস থেকে শিখো।

তুমি আজকে ভেবে নিচ্ছ কাল থেকেই পড়া শুরু করব,এমন অভ্যাস কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয় না, আজকের পড়া এখনই শুরু করা এইটাই একজন শিক্ষার্থীর ব্রত হওয়া উচিত। বহির্বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের তুলনায় অনেক উন্নত এবং প্রায় প্রতিটি নাগরিকই সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে যে কোনো কাজ বা চাকরি করতে প্রস্তুত। তাঁদের শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষ নাগরিক হিসেবে তৈরি করতে সরকার বদ্ধপরিকর।তাই আমার দেশেও শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যদি দক্ষ নাগরিকে রুপান্তর করা যায় তাহলে তোমার জীবনের ধাপগুলো চমৎকার হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই মধ্যবিত্তদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌছানোর একমাত্র পথ শিক্ষা।

শিক্ষা আলোর পথ, যার পাশে হেঁটে তুমি হতে পারো উজ্জ্বল নক্ষত্র। নিজেকে গড়ার শ্রেষ্ঠ সময় হলো আজ, এখনই। বিলম্ব মানেই পিছিয়ে যাওয়া। পড়ো, শিখো, জ্ঞানী হও-

মো. দুলাল হোসেন: সহকারি শিক্ষক, পুলিশ লাইন্স হাই স্কুল, কুমিল্লা।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সম্পর্কিত